ঢাকা, বুধবার, ১১ বৈশাখ ১৪৩১, ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ শাওয়াল ১৪৪৫

শিল্প-সাহিত্য

মার্কিন কবি ও সঙ্গীতজ্ঞ গিল স্কটের জীবনাবসান

আন্তর্জাতিক ডেস্ক | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২২২৩ ঘণ্টা, মে ২৮, ২০১১
মার্কিন কবি ও সঙ্গীতজ্ঞ গিল স্কটের জীবনাবসান

নিউইয়র্ক: পশ্চিমা র‌্যাপ সঙ্গীতের জনক মার্কিন কবি ও সঙ্গীতজ্ঞ গিল স্কট-হেরন মারা গেছেন। শুক্রবার নিউইয়র্কের একটি হাসপাতালে ৬২ বছর বয়সে তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন।



হেরনের বন্ধু ডোরিস নোলান জানিয়েছেন, তিনি নিউইয়র্কের সেন্ট লুকস হাসপাতালে শুক্রবার বিকেলে মারা গেছেন।
তার এ অকাল প্রয়াণের কারণ জানা যায়নি। তবে সম্প্রতি ইউরোপ সফর থেকে ফিরেই তিনি অসুস্থ হয়ে পড়েন বলে জানা গেছে।
 
সোল, জ্যাজ, ব্লুজ এবং তার বাণীর মধ্যেই অনন্তকাল বেঁচে থাকবেন এ প্রথিতযশা শিল্পী ও কবি। ১৯৭০ এর দশকে সঙ্গীত ও কবিতার অঙ্গণে তার কাজ পরবর্তীতে মার্কিন হিপহপ এবং র‌্যাপ সঙ্গীতে ব্যাপক প্রভাব ফেলেছে। তার কর্মে রাজনৈতিক উপাদান ছিল তীব্র ভাবেই। তার রাজনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গি ছিল দারূণভাবে বিপ্লবী। তার সবচেয়ে বিখ্যাত অ্যালবাম ‘বিপ্লব প্রচারের বিষয় নয়’ (দ্য রেভ্যুলুশন উইল নট বি টেলিভাইজড).

বিপ্লবী কবি স্কট হেরন জন্মগ্রহণ করেন ১৯৪৯ সালে শিকাগোতে। বড় হয়েছেন টেনেসিতে। পরে তিনি নিউইয়র্কে চলে যান।

বিখ্যাত পিয়ানো বাদক এবং বংশিবাদক ব্রায়ান জ্যাকসনের সঙ্গে স্কটের প্রথম দেখা হয় লিংকন বিশ্ববিদ্যালয়ে। এর পর গভীর বন্ধুত্ব। তারা যৌথভাবে অসংখ্য গান রচনা করেছেন।

জ্যাকসনের সঙ্গে কাজ করার সময় তিনি কবিতায় নিজস্ব স্টাইল উদ্ভাবন করেন। কবিতার সঙ্গে বাগাড়ম্বরপূর্ণ শব্দের মিশ্রণে তিনি নতুন ধারার যে গান রচনা করেন পরবর্তীতে তা আধুনিক র‌্যাপ সঙ্গীতের জন্ম দেয়। এ জন্য জীবদ্দশাই তাকে র‌্যাপ সঙ্গীতের জনক বলা হতো। তবে তিনি বরাবর এ অভিধাকে প্রত্যাখ্যান করেছেন।

স্কট হেরন ন্যায় ও নাগরিক অধিকার প্রতিষ্ঠার আন্দোলনে ছিলেন সোচ্চার। তার গান-কবিতায় এর সুস্পষ্ট ছাপ পাওয়া যায়। তিনি ১৯৭০ ও ৮০’র দশকের ভোগবাদি সমাজের বিরুদ্ধে তীব্র ভাষায় নিন্দা জানিয়েছেন। একই সঙ্গে সে সময় পারমাণবিক প্রযুক্তি বিকাশের বিরুদ্ধেও কথা বলেছেন তিনি।

শিল্পীদের মধ্যে তিনিই প্রথম তার গানে দক্ষিণ আফ্রিকায় প্রতিষ্ঠিত বর্ণবাদের বিরুদ্ধে আক্রমণ করেছেন। তার বহু বছর পর এ বর্ণবাদের বিষয়টি একটি জনপ্রিয় বিশ্ব আন্দোলনের বিষয় হয়ে ওঠে।

তার বিখ্যাত গান "দ্য রেভ্যুলুশন উইল নট বি টেলিভাইজড" ১৯৭০ সালে রেকর্ড করা হয়। এ গানে তিনি তৎকালীন গণমাধ্যম এবং বিজ্ঞাপনের যুগে বর্ণবাদের প্রভাব নিয়ে তীব্র সমালোচনা করেন। এ গানটি পরে তার ও  ভক্তদের জাতীয় সঙ্গীতে পরিণত হয়।

স্কট হেরনের বন্ধু লেন সিসে বন্ধুর স্মৃতি চারণ করে বলেন, তিনি ছিলেন বহুমুখী প্রতিভার অধিকারী। তিনি কৃষ্ণাঙ্গদের অধিকার নিয়ে কথা বলতে কখনো কসুর করেননি।

তিনি বলেন, ‘৬০ এর দশকের শেষের দিকে এবং ৭০ এর প্রথম দিকে কৃষ্ণাঙ্গ কবিরা ছিলেন একেক জন বার্তা বাহক। কারণ সে সময় তাদের সত্যিকার অবস্থা মূলধারার কোনো গণমাধ্যমে প্রকাশিত হতো না।

তৎকালীন গণমাধ্যমের প্রতি বিতশ্রদ্ধ স্কট হেরন তাই বাক স্বাধীনতা নিয়ে বলেছেন, ‘বাক স্বাধীনতার বিষয়টা যেমন হওয়ার কথা সত্যিকার অর্থে তেমনটিই যদি হয়, তাহলে তুমি যা বলবে তাই ঠিক। ‘

পরে অবশ্য তার অবস্থান কিছুটা পাল্টে যায়। ১৯৯৮ সালে শিকাগো ট্রিবিউনকে দেওয়া এক সাক্ষাতকারে হেরন তার কাজের রাজনৈতিক দিকগুলো বেশি বেশি তুলে ধরার ব্যাপারে সতর্ক করে দেন।

তিনি বলেন, ‘যদি আমাদের কাজের শুধু রাজনৈতিক অংশটা তুমি তুলে ধর তাহলে তুমি আমাদের বদলে ফেলবে। আমরা ২০টি অ্যালবাম করেছি। সেখানে সব গানই রাজনৈতিক নয়। ’

শুধু সমাজের অসঙ্গতি নিয়েই তিনি লেখেননি। লিখেছেন নিজের জীবনের অন্ধকার দিক নিয়েও। গানে-কবিতায় পূর্ণ সততার সঙ্গে তুলে ধরেছেন মাদক ও অ্যালকোহলের বিরুদ্ধে তার সংগ্রাম। মাদকদ্রব্য রাখার দায়ে তিনি দেড় বছর কারাগারেও কাটিয়েছেন।

২০০৯ সালে বিবিসির সঙ্গে এক সাক্ষাতকারে তিনি বলেন, ‘কারাবাসের দিনগুলো আমাকে আমার জীবনের বাস্তবতার মুখোমুখি ঠেলে দিয়েছে। ’

সঙ্গীত এবং সাহিত্য শাখার সঙ্গে জড়িত খ্যাতিমান সব মানুষের কাছ থেকে গভীর শ্রদ্ধা ও সম্মান পেয়েছেন তিনি। র‌্যাপার ক্যানি ওয়েস্ট ২০১০ সালে প্রকাশিত ‘মাই ডার্ক টুইস্টেড ফ্যানটাসি’ প্রকাশিত অ্যালবাম স্কট হেরনকে উৎসর্গ করেছেন।  

দীর্ঘ বিরতির পর গত বছর ‘আই এম নিউ হেয়ার’ নামের অ্যালবাম দিয়ে আবার ফিরে আসেন স্কট। অ্যালবামটি দারুণ জনপ্রিয়তাও পায়। এর মাধ্যমে প্রমাণ করলেন, নতুন প্রজন্মের মধ্যে কী দুর্নিবার আকর্ষণ তৈরি করতে পারে তার গান, কথা ও কবিতা।

স্কট হেরনের গানের অ্যালবাম:
দ্য রেভ্যুলুশন উইল নট বি টেলিভাইজড প্রকাশকাল- ১৯৭০ সাল
জোহানেসবার্গ- ১৯৭৫
হোম ইজ হোয়ার দ্য হ্যাট্রেড ইজ- ১৯৭১
উই অল মোস্ট লস্ট ডেট্রোইট- ১৯৭৭
ম্যাসেজ টু দ্য ম্যাসেঞ্জার- ১৯৯৩

বাংলাদেশ সময়: ২১৫০ ঘণ্টা, মে ২৮, ২০১১

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।