ঢাকা, বুধবার, ৩ বৈশাখ ১৪৩১, ১৭ এপ্রিল ২০২৪, ০৭ শাওয়াল ১৪৪৫

শিল্প-সাহিত্য

লেখক ও চিন্তাবিদদের চোখে

একুশ শতকে রবীন্দ্রনাথ

গ্রন্থনা : ফেরদৌস মাহমুদ | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১২৫৮ ঘণ্টা, মে ১০, ২০১১
একুশ শতকে রবীন্দ্রনাথ

রবীন্দ্রনাথ ছড়িয়ে আছেন আমাদের নিঃশ্বাসে-প্রশ্বাসে। তাই তাঁর জন্মের দেড়শত বছর পরও তিনি হয়ে আছেন সমকালীন ও প্রাসঙ্গিক।

এখনো রবীন্দ্রনাথ নানাভাবে আবিষ্কৃত হওয়ার অপেক্ষায় আছেন, তাঁকে ঘিরে এখনো অপেক্ষা করছে নতুনতর বিশ্লেষণ। এই ভাবনাকে সামনে রেখেই আমাদের বরেণ্য লেখক-কবি-চিন্তাবিদদের কাছে বাংলানিউজ রেখেছিল তিনটি প্রশ্ন :

১. এ বছর পালিত হচ্ছে রবীন্দ্রনাথের দেড়শোতম জন্মদিন। আপনার অনুভূতি কী?
২. একুশ শতকে রবীন্দ্রনাথের কী কী প্রাসঙ্গিকতা আছে বলে মনে করেন?
৩. রবীন্দ্রনাথের কবিতা, গান, গল্প, উপন্যাস, নাটক বা প্রবন্ধ কোনটি আপনার পছন্দের?

প্রিয় পাঠক, আসুন জানা যাক এর জবাবে তাঁরা কী বলেছেন।



বাংলাদেশকে তিনিই সর্বপ্রথম আবিষ্কার করেন : মুস্তাফা নূরউল ইসলাম

Mustafa_Nur-ul_Islamআমাদের দেশজুড়ে এ বছর বিশদভাবে উদযাপিত হচ্ছে সার্ধশত রবীন্দ্রজয়ন্তী। এ উপলক্ষে হচ্ছে নানা অনুষ্ঠানমালা। আমি মনে করি এবং বিশ্বাস করি এ আনুষ্ঠানিকতা মাত্র নয়। এর গভীরে রয়েছে রবীন্দ্র-সত্য; আজকের অবকাশে চিহ্নিত করে নেওয়ার প্রয়াস পাচ্ছি সেই বিশেষ রবীন্দ্র-সত্য। সৃজনের ভুবনে রবীন্দ্রনাথ-- সেইখানে কবিতা-সঙ্গীত-নাটক-কথাসাহিত্য থেকে শুরু করে কত অজস্র যে তার গদ্যরচনা, পত্রগুচ্ছ, স্মৃতিচারণা। এবং একই সাথে দেশের বিশাল আর্থ-সামাজিক কর্মকাণ্ডে, শিক্ষাক্ষেত্রে, এমনকি রাজনীতিতে তার সক্রিয় অংশগ্রহণ, তাৎপর্যবাহী ভূমিকা।

বলেছি অবকাশ এসেছে। এই অবকাশে মিলেছি আমরা রবীন্দ্রবরণের মিলনমেলায়। তাকে ঘনিষ্ঠ করে, কাছের করে পেতে চাইছি। রবীন্দ্রনাথে দেখি ‘আমার বাংলার মুখ’।

যোগ করি আরও বিশেষ ইতিহাস-সত্য`-- একাত্তরে আমাদের মুক্তিযুদ্ধের কালে কোটি মুক্তিযোদ্ধার কণ্ঠে সেই প্রেরণার ডাক, স্মরণ করি তার স্বদেশ পর্যায়ের গানসমূহ। যেমন-
- ‘আমাদের যাত্রা হলো শুরু’
-‘আমি ভয় করবো না ভাই ভয় করবো না’
-‘সার্থক জনম আমার জন্মেছি এই দেশে’
-‘ও আমার দেশের মাটি, তোমার পরে ঠেকাই মাথা’

বিশ্ব কবি রবীন্দ্রনাথ, তথা সুকুমার শিল্প সৃজনের মহত্তম রবীন্দ্রনাথ। তারপরেতেও মনে করি বাংলাদেশে-বাঙালি আমাদের কাছে একই সাথে বড় হয়ে আসে ‘আমার বাংলার রবীন্দ্রনাথ’। আমাদের মাতৃভাষার শ্রেষ্ঠতম সন্তান এই রবীন্দ্রনাথ। এবং আমাদের এই বাংলাকে সর্বপ্রথম মর্মস্পর্শী করে আবিষ্কার করেন। চিহ্নিত করেন রবীন্দ্রনাথ।   এবং তুলে ধরেন এই রবীন্দ্রনাথ। লক্ষ করবেন নদী মেঘমালার বাংলাদেশ, ষড়ঋতুর বাংলাদেশ, তৃণমূল সাধারণ মানুষের বাংলাদেশ, কারা এই সাধারণ মানুষ। যারা কাজ করেন কৃষিতে-নদীতে। তারই বর্ণনা অমন স্পষ্ট করে রয়েছে : ‘ওরা টানে দাড়, ধরে থাকে হাল/ওরা মাঠে মাঠে বীজ বোনে/ ওরা কাজ করে নগরে বন্দরে।

আজকের এই দিনে বিশেষ করে পাঠ করি মহাপ্রয়াণের পূর্বলগ্নে তাঁর সেই অমন করে জানান দেওয়া : ‘মোর নাম এই বলে খ্যাত হোক/ আমি তোমাদেরই লোক। ’

এ বছর আবারও ফিরে এসেছে সেই পঁচিশে বৈশাখ। আমার, আমাদের অন্তর থেকে তাঁর উদ্দেশে আমাদের যত ভালোবাসা আর শ্রদ্ধাভাব নিবেদন।

অবশ্যই এই বিষয়টা আসতে পারে, তার দেহাবসানের দীর্ঘ ৬০ বছর পরে এই একুশ শতকে আমাদের কাছে রবীন্দ্র-প্রাসঙ্গিকতা কী? জবাবে বলতে চাই, এই রবীন্দ্রনাথই সর্বপ্রথম আমাদের বাংলাদেশ আবিষ্কারক।

আমাদের বাংলাদেশকে তিনিই সর্বপ্রথম আবিষ্কার করেন। আমাদের এই বাংলা ভূমিনির্ভর এবং নদীনির্ভর- তিনি আমাদের কৃষিতে নিয়োজিত, নাব্য নদীতে নিয়োজিত, সাধারণ মানুষের জয়গান করেছেন। অতএব বাংলাদেশের মানুষের কাছে রবীন্দ্রসত্তা এবং রবীন্দ্রপ্রতীক সদাই প্রাসঙ্গিক।

দ্বিতীয় আমাদের চণ্ড পাকিস্তানত্বের আমলে আমাদের বাঙালিত্ব অর্জনের সড়কে রবীন্দ্রনাথ, রবীন্দ্র সৃজন সদাই হাতিয়ার হয়ে এসেছে। স্মরণ করি ১৯৬৯-এ গণঅভ্যুত্থানের সেই সময় বঙ্গবন্ধুর সেই ঘোষণা ‘আমরা রবীন্দ্রনাথের বই পড়িবোই, আমরা রবীন্দ্রনাথের গান গাহিবোই- রবীন্দ্রসঙ্গীত এই দেশে গীত হইবেই’। তারপরেই তো যেনবা ইতিহাসেরই অনিবার্যতায় এসে পড়ে বাংলাদেশ-বাঙালির একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধ। আর সেই মুক্তিযুদ্ধের রণাঙ্গনে তার স্বদেশপর্যায়ের গানগুলো দুঃসাহসী যোদ্ধাদের কী অসীম প্রেরণা যুগিয়েছে!



আমরা অল্পে সন্তুষ্ট হই কিন্তু তিনি কখনই অল্পে সন্তুষ্ট হননি : সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী

Sirajul_Islam_Choudhuryরবীন্দ্রনাথের দেড়শো বছর পালিত হচ্ছে এ বিষয়ে যদি আমার অনুভূতির কথা জানতে চাওয়া হয়, বলব- ব্যক্তিগত অনুভূতি হচ্ছে কৃতজ্ঞতা। তিনি কেবল আমাদের ভাষাকে উন্নত করেছেন তা-না, তিনি আমাদের শিক্ষিত করে তুলেছেন। তিনি কেবল কবি ছিলেন না, দার্শনিকও ছিলেন। বিজ্ঞানচেতনায় সমৃদ্ধ একজন দার্শনিক। তার মধ্যে চিন্তা ও কর্মের এই যে সমন্বয়, এটা অসাধারণ।

আসলে তার মেধার সঙ্গে যোগ হয়েছিল শ্রম। আমরা অল্পে সন্তুষ্ট হই কিন্তু তিনি কখনই অল্পে সন্তুষ্ট হননি, বিচিত্র কাজ করেছেন। আজকের দিনে তার ‘ওরে নবীন ওরে আমার কাঁচা, আধমরাদের ঘা মেরে তুই বাঁচা’- এ পঙক্তি গত ১০০ বছর ধরে আমাদের জাতিকে নানাভাবে জাগাতে চেয়েছে। তরুণদের উপর এজন্যই এ পঙক্তির ব্যাপক প্রভাব রয়েছে।

অবশ্য নবীন বলতে তিনি যে কেবল বয়সে নবীনদেরই বুঝিয়েছেন তা নয়, মানসিকভাবে পরিবর্তনপ্রত্যাশী যে কাউকেই বুঝিয়েছেন। তার কবিতার-- আধমরাদের ঘা মারার, আধমরাদের ডেকে তোলার প্রাসঙ্গিকতা এখনও আছে।

আমরা বহুবার জেগে ওঠার চেষ্টা  করেছি কিন্তু ওইটাকে ধরে রাখতে পারিনি। ওই জেগে ওঠার চেতনা মানুষের মধ্যে ছড়িয়ে দিতে পারিনি। আসলে যে অগ্রগতি আমাদের প্রয়োজন সেটা সকল মানুষের অংশগ্রহণেই সম্ভব, আর এজন্য রবীন্দ্রনাথের ওই বাণী সকলের মধ্যেই ছড়িয়ে দেওয়া প্রয়োজন।

একুশ শতকে তো রবীন্দ্রনাথের প্রাসঙ্গিকতা আছে...নিশ্চয়ই আছে। একুশ শতকে এখন যেটা চলছে সেটা পুঁজিবাদে অর্পিত। রবীন্দ্রনাথ দেশভাগ, ভারতের স্বাধীনতা দেখে যাননি। তিনি সরাসরি পুঁজিবাদের কথা ব্যবহার না করলেও এর বিরুদ্ধে ছিলেন। তিনি সোভিয়েতে গিয়ে সেখানকার সমাজতান্ত্রিক অবস্থা দেখে মুগ্ধ হয়েছেন।

তিনটি দেশের জাতীয় সঙ্গীতের রচয়িতা রবীন্দ্রনাথ। তিনি নিজেই বলেছিলেন বাঙালিকে তার গান গাইতে হবে। তার গদ্য লেখারও গুরুত্ব আছে, তবে তিনি বিশেষ করে তার গানকে মূল্যায়ন করেছেন।   বলা চলে তার গানের সাথে কবিতার ব্যবধান খুব কমই। গানগুলো তার কবিতাই। ছোটগল্প অসাধারণ।   তবে আমার মতে গানই তার সবচেয়ে আবেদনময় কাজ।



রবীন্দ্রনাথ হচ্ছেন একটা গৃহের মতো : হাসান আজিজুল হক

Hasan_Azizul_Haqueরবীন্দ্রনাথের সার্ধশত জন্মবার্ষিকীতে এত বেশি উচ্চারিত হচ্ছে তার নাম, এত বেশি তাঁর সম্পর্কে বলতে হচ্ছে, তাঁকে নিয়ে আর নতুন কথা কী বলব? ঘুরিয়ে-ফিরিয়ে তো সব জায়গায় একই কথা বলতে হচ্ছে! এদিকে রবীন্দ্রনাথের জন্মদিন উদযাপনের ব্যাপারে এখন পর্যন্ত নির্দিষ্ট  সিদ্ধান্তে যেতে পারল না দুই দেশ। পশ্চিমবঙ্গ রবীন্দ্রনাথের সার্ধশত জন্মবার্ষিকী পালন করছে ৯ মে আর আমরা করছি ৮ মে। এক্ষেত্রে ওরা শুনছে না আমাদের কথা, আবার আমরা শুনছি না ওদের কথা।

রবীন্দ্রনাথ হচ্ছেন একটা গৃহের মতো। ‘বাড়ি’ এক জিনিস আর ‘গৃহ’ আরেক জিনিস। গৃহ মানে কেবল শারীরিক নয়, মানসিকও আশ্রয়ের জায়গা। এখানে কখনও সে ছাদে গিয়ে দাঁড়ায়, কখনও সে বারান্দায় গিয়ে দাঁড়ায়, কখও সে অন্য কোনো রুমে গিয়ে দাঁড়ায়। রবীন্দ্রনাথ এরকম একজন মানুষ, যাকে গৃহ হিসেবে ব্যবহার করা যায়। ঠিক এইভাবে সমগ্র রবীন্দ্র-রচনাবলিকে যদি গৃহ হিসেবে মনে করি তাহলে তার সৃষ্টির নানান কক্ষে ঘুরে বেড়ানো যায়।

যেমন তাঁর ছোটগল্প, সেখানে এক ফাঁকে যাওয়া। যখন পড়ি হয়তো টানা ১০ দিন ছোটগল্পই পড়ছি। রবীন্দ্রনাথ গল্প লিখেছেন ৯৮টি। ৫-৭টি গল্প হয়তো পড়িনি। এভাবে রবীন্দ্রনাথ পড়ার মানে কিন্তু এই নয় যে, কেবল রবীন্দ্রনাথের কাছ থেকে আমি সব পেয়েছি। আমি অনেক কিছুই বিশ্বের অন্য অনেক লেখকের কাছ থেকেও পেয়েছি। আমার কাছে চেখভ, মোপাসাঁ, হেমিংওয়ে বা ফকনারের গল্প অসাধারণ লাগে। দস্তয়েভস্কিও ভালো লাগে। আমি এসব লেখকের কাছ থেকেও অনেক কিছু পেয়েছি। প্রশ্ন উঠতে পারে এই লেখকদের তালিকায় রবীন্দ্রনাথকে কোথায় রাখছি- আসলে এইভাবে বিভাগীয়করণ হয় না।   রবীন্দ্রনাথের কাছ থেকে যা পেয়েছি তা অন্য কারও কাছ থেকে পাইনি।

রবীন্দ্রনাথের প্রথম তিনটি উপন্যাস পড়িনি। আমি প্রথমে তার ‘নৌকাডুবি’ পড়েছি। তারপর পড়েছি রবীন্দ্রনাথের যাবতীয় উপন্যাস ‘চোখের বালি’, ‘গোরা’, ‘ঘরে-বাইরে’, ‘যোগাযোগ’, ‘চার অধ্যায়’, ‘চতুরঙ্গ’। ছোট উপন্যাস ‘দুই বোন’, ‘মাল্যবান’, ‘শেষের কবিতা’। সময়ের দাগ সরাসরি কথাসাহিত্যে পড়ে। ১৯০৩-এ রবীন্দ্রনাথ যেখানে ‘চোখের বালি’, লিখেছেন সেখানে ১৯১০-এ লেখা ‘গোরা’ সম্পূর্ণ ভিন্ন।

আমার মতে রবীন্দ্রনাথের সেরা উপন্যাস ‘গোরা’। এরকম উপন্যাস রবীন্দ্রনাথ, বালজাক বা তলস্তয়ের মতো লেখকরা কেবল লিখতে পারেন। বাঙালিদের মধ্যে এমন রেঞ্জ আর কারও নেই।

রবীন্দ্রনাথের গানের কথা কী বলব, নিত্যদিনের সঙ্গী। তার মানে এই নয় যে আমি অন্য কোনো সঙ্গীত শুনি না। উচ্চাঙ্গ শুনি, মোজার্ট-বেটোফেন শুনি। শুনি আরও অনেকেরই গান। রবীন্দ্রনাথের নাটকের প্রতি আমার আগ্রহ একটু কম। তবে তার সমাজচিন্তা, দেশচিন্তার প্রতি আমার যথেষ্ট আগ্রহ রয়েছে। আর তার কবিতাগুলো তো আছেই, এগুলোর তো কোনো তুলনা হয় না।

একুশ শতকে রবীন্দ্রনাথের প্রাসঙ্গিকতা আছে কিনা, কোনো মহাজ্ঞানী রবীন্দ্রপাঠকের কাছ থেকে এটা শুনে লাভ হবে না। তারা হয়তো ভাসা-ভাসাভাবে বলবেন। কেউ হয়তো রবীন্দ্রনাথের ছোটগল্পের কথা বলবেন, কেউ উপন্যাসের কথা, কেউ তাঁর কবিতার কথা, কেউ বা তাঁর গান-নাটক-প্রবন্ধের কথা বলবেন। কেউ তাঁর শিল্প-সাহিত্য-সমাজ-রাষ্ট্র ভাবনার কথা বলবেন।

আমার কথা হলো, রবীন্দ্রনাথের এই ১৫০তম জন্মবার্ষিকীতে সত্যি সত্যি আমরা যদি কোনো রকমের আত্মপ্রতারণা না করতে চাই, তবে সরাসরি রবীন্দ্রনাথের সমগ্র সৃষ্টির কাছে যাওয়াই সঠিক। আমরা তাঁর সমগ্র কর্মযজ্ঞের দিকে যদি তাকাই, দেখবো, আজ যে পৃথিবীটা বর্তমান, তা রবীন্দ্রনাথের আদর্শ পৃথিবী থেকে সম্পূর্ণ ভিন্ন এক জায়গায় পৌঁছে গেছে। তিনি এ পৃথিবী কখনই অনুমোদন করতেন না। আমরা যা করেছি শিল্পে-সাহিত্যে, রাজনীতিতে, গ্রামোন্নয়নের ক্ষেত্রে আমার ধারণা তিনি তাও অনুমোদন করতে পারতেন না।



রবীন্দ্রনাথের গান আমার খুব পছন্দ : শামসুজ্জামান খান

Samsuzzaman_Khanরবীন্দ্রনাথের লেখা আমার কাছে তো মনে হয়, একুশ শতকে খুবই প্রাসঙ্গিক। আমরা এ উপলক্ষে বাংলা একাডেমীর পক্ষ থেকে ‘একুশ শতকে রবীন্দ্রনাথ’ নিয়ে সেমিনারের আয়োজন করেছি। রবীন্দ্রনাথের ওপর বক্তৃতা করার জন্য ইউরোপ থেকে বিভিন্ন পণ্ডিত এসেছেন। আজকের পৃথিবী প্রযুক্তিগতভাবে অনেক দূর এগিয়েছে এটা সত্য কিন্তু এ যন্ত্রসভ্যতায় এসেও তাঁর লেখার প্রাসঙ্গিকতা একটুও কমেনি।

রবীন্দ্রনাথের গান আমার খুব পছন্দ। গল্পগুচ্ছের গল্পগুলো পছন্দ। এছাড়া তাঁর কিছু কবিতা, প্রবন্ধ আমার খুবই পছন্দ। সমগ্রিকভাবে বললে তাঁর সমগ্র রচনার অর্ধেক রচনা আর গান আমার পছন্দ।

রবীন্দ্রনাথের মতো একজন কবির সার্ধশততম জন্মদিন উদযাপন নিয়ে আমার অনুভূতি, আমরা যেন  যথাযথভাবে তাঁর লেখা পাঠ করি। একুশ শতকে এসে তাঁর লেখা থেকেও আমাদের নেওয়ার আছে অনেক কিছু।



তিনি ছিলেন অবিচল সাম্রাজ্যবাদ বিরোধী : সৈয়দ আবুল মকসুদ

Abul_Makshudএকুশ শতকে রবীন্দ্রনাথের প্রাসঙ্গিকতা অসামান্য। রবীন্দ্রনাথ শুধু কবি ও কথাশিল্পী নন, তিনি তার সময়ের সবচেয়ে বড় চিন্তাবিদ ছিলেন। তিনি ছিলেন অবিচল সাম্রাজ্যবাদ বিরোধী, শোসন-নির্যাতন বিরোধী। দেশের বাইরে যখনি তিনি গেছেন, তিনি কবিতা ও সাহিত্য নিয়ে বক্তৃতা অল্পই দিয়েছেন, তিনি কথা বলেছেন মানবজীবন নিয়ে। পৃথিবীতে মানুষ ধর্ম-বর্ণ-ভাষা ভেদাভেদ ভুলেই শান্তিতে বসবাস করবে, পরস্পর পরস্পরের থেকে ভালো জিনিস গ্রহণ করবে, সব রকমের সংকীর্ণতার ঊর্ধ্বে এক শান্তিপূর্ণ কল্যানকর জীবন যাপন করবে-- এই ছিলো তার মূল জীবন দর্শন।

বর্তমান সময়ের অন্যায়, অবিচার ও সংঘাতময় পৃথিবীতে রবীন্দ্রনাথের চিন্তা আরও বেশি প্রাসঙ্গিক। তিনি ছিলেন সাম্প্রদায়িকতা বিরোধী, ধর্মান্ধতার বিরোধী এবং সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির অবিচল প্রবক্তা। মানুষের মর্যাদার কথা তিনি বলেছেন, ব্যক্তির মর্যাদার কথা তিনি বলেছেন, আত্মউন্নতির কথা বলেছেন। ন্যায় ভিত্তিক সমাজ প্রতিষ্ঠার জন্য বর্তমানকালে তার প্রাসঙ্গিকতা বরং বেড়েছে।

বর্তমানে তার সব কবিতা যে এখন আমাদের ভালোলাগে তা নয়। তবে তার গান চির নতুন। ছোটগল্প অসামান্য। এসব কোনোদিনই পুরোনো হবে না।

আমি কয়েক বছর যাবত রবীন্দ্রনাথের গল্প-উপন্যাস ও নাটকের বাইরে তার গদ্যরচনাবলী পড়ছি। বিশেষ করে প্রবন্ধ-নিবন্ধ-অভিভাষণ, বক্তৃতা-বিবৃতি, চিঠিপত্র প্রভৃতি যাতে তার জীবনদর্শন পাওয়া যায়। অত্যন্ত মূল্যবান সব দার্শনিক সুলভ কথা তাতে আছে। সেসবের ভিত্তিতে আমার একটি বইও প্রকাশ হবে শীঘ্রই।



তোমার পায়ের পাতা সবখানে পাতা, কোনখানে রাখবো প্রণাম : মহাদেব সাহা

Mahadev_Shahaএই প্রশ্নটা আমাদের মধ্যে ওঠে যে, একুশ শতকে যখন জীবন যান্ত্রীকতা ও স্বয়ংক্রিয়তায় অধিকমাত্রায় কৃত্তিম ও যান্ত্রীক, তখন সত্যি সত্যি আমাদের জীবনের সঙ্গে আমাদের কালের সঙ্গে রবীন্দ্রনাথের আর কোনো প্রাসঙ্গিকতা আছে কিনা। এ প্রশ্নটা শুধু আমরা নই আরও অনেকেই এমনকি বিশ্বের মনীষীরাও কেউ কেউ ভেবেছেন বা কথা বলেছেন। মাত্র সেদিনই আমি কবি শঙ্খ ঘোষের একটি লেখায় দেখলাম বিখ্যাত লেখক হেনরী মিলার এমনি এক প্রশ্নের উত্তরে প্রায় অর্ধশতাব্দী আগেই বলেছিলেন, তাদের সময়ে রবীন্দ্রনাথের প্রাসঙ্গিকতা হয়তবা ফুরিয়ে গেছে বলে মনে হবে। কিন্তু পরে, আরও পরে ভবিষ্যৎ পৃথিবীতে রবীন্দ্রনাথের প্রাসঙ্গিকতা আরও নতুন করে অনুভূত হবে। ভবিষ্যৎ পৃথিবীর মানুষ তাদের চিন্তার সঙ্গী হিসেবে রবীন্দ্রনাথেরই স্বরণাপন্ন হবে। তাই-ই কিন্তু হচ্ছে।

রবীন্দ্রনাথের জন্মের ১৫০ বছর পর, তার সাহিত্যকর্মেরও প্রায় ১৩০ বছর পর আমরা দেখতে পাচ্ছি  রবীন্দ্রনাথ আরও বেশি প্রিয় ও ঘনিষ্ঠ হয়ে উঠছেন। তার কবিতা ও গান, তার ছোটগল্প ও উপন্যাস আমাদের মুগ্ধ করছে। পশ্চিমের পাঁচ রোমান্টিক  কবি ওয়ার্ডস ওয়ার্থ, কোলরিজ, শেলি, কিটস ও বায়রন মিলে যা করেছেন রোমান্টিক রবীন্দ্রনাথ একা তার চেয়ে করেছেন অনেক বেশি। তার ‘নির্ঝরের স্বপ্নভঙ্গ’, ‘নিরুদ্দেশ যাত্রা’, ‘মানস সুন্দরী’, ‘স্বপ্ন’, ‘বিদায় অভিশাপ’ বা ‘শেষ বসন্ত’-এর মতো কবিতা বিশ্বসাহিত্যেই দুর্লভ। রবীন্দ্রনাথ শুধু কোনো এক কালের কবি নন, এক দেশের কবি নন, তিনি সর্বকালের সারা পৃথিবীর কবি। এই কবির প্রাসঙ্গিকতা শেষ হয় না।

রবীন্দ্রনাথের সমস্ত কর্মের মধ্যে আমার সবচেয়ে পছন্দ হলো তার গান। রবীন্দ্রনাথের গান আমার সবচেয়ে প্রিয়, তার গীতবিতান আমার সবচেয়ে প্রিয় বই। আমি রবীন্দ্রনাথের গান শুধু শুনি না, পাঠ করি, উপভোগ করি। এছাড়া রবীন্দ্রনাথের ছোটগল্প, তার ‘রক্তকরবী’ নাটক, আমাকে প্রায় সর্বদা আলোড়িত করে।

আমার কাছে মনে হয় ১৫০ বছর রবীন্দ্রনাথের জন্য খুব কম সময়। আরও বহু শত শত বছর রবীন্দ্রনাথের আবেদন থাকবে। যেমন আছে  শেক্সপিয়রের, দান্তের, গ্যেটের, বাল্মিকীর, ব্যাসদেবের, হোমারের, ফেরদৌসীর। রবীন্দ্রনাথের ১৫০ বছরের জন্মদিন উপলক্ষে আমার অনুভূতি এরকমই। একজন কবির রবীন্দ্রনাথকে নিয়ে শ্রদ্ধা নিবেদন আছে এভাবে ‘তোমার পায়ের পাতা সবখানে পাতা, কোনখানে রাখবো প্রণাম’।



রবীন্দ্রনাথকে একজন মনিষী হিসেবে দেখি : যতীন সরকার

Jotin_Sarkarরবীন্দ্রনাথের সার্ধশততম জন্মবার্ষিকীতে সারা পৃথিবীর মানুষই যে রবীন্দ্রনাথকে নিয়ে নতুন করে ভাবছে এটিই আমার কাছে সবচেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে হচ্ছে। আমি সেই বিষয়টাকে লক্ষ করে বিশেষ আনন্দিত।

একুশ শতকে রবীন্দ্রনাথের প্রাসঙ্গিকতা যে কত বেশি তা বলে শেষ করা যায় না। রবীন্দ্রনাথ তার জীবনের শেষ ভাষণে বলেছিলেন, ‘মানুষের প্রতি বিশ্বাস হারানো পাপ’ সে কথাই আজ আমাদের বেশি করে মনে হচ্ছে। মানুষ আজ পৃথিবীময় জেগে উঠেছে। যেসব দেশ স্বৈরাচারের কবলে দীর্ঘদিন ধরে কবলিত ছিল সেইসব দেশের মানুষ আজ অধিকার সচেতন হয়ে উঠেছে। সা¤্রাজ্যবাদ আজ নতুন রূপে বিশ্বায়নের নাম ধরে সারা পৃথিবীতে যে আধিপত্য বিস্তার করে চলেছে সেই আধিপত্যের অবসান যে জাগ্রত মানুষদের হাতেই ঘটবে সে কথা আজ নিঃসন্দেহে বলা যায়। এই অবস্থায় রবীন্দ্রনাথের কাছ থেকে সারা পৃথিবীর মানুষ প্রেরণা গ্রহণ করতে পারে। রবীন্দ্রনাথ বলেছিলেন যে ‘পৃথিবীতে যে কালের মহাযাত্রা চলছে, সেই যাত্রায় শুভ্র জনগণ অর্থাৎ যারা সবার পিছে সবার নিচে পড়ে আছে সেইসব সর্বহারাই উঠে দাঁড়াবে। ’ রবীন্দ্রনাথেরে এই প্রত্যাশাই আজ বাস্তব হয়ে উঠছে।

এ যুগে মানুষ পরিবেশ সচেতন হয়ে উঠছে। এই পরিবেশ সচেতনতার বিষয়টিও রবীন্দ্রনাথের মনে বহুকাল আগে দানা বেঁধে উঠেছিল। তার ‘বনমালী’ কাব্যে সেই সচেতনতারই প্রকাশ ঘটিয়েছিলেন তিনি। আজকে মানুষের হাতেই বিধ্বস্ত পরিবেশকে মানুষই পুনরুদ্ধার করবে। এই আশাবাদও আজ আমরা ছড়িয়ে যেতে দেখছি। এভাবেই মানুষের জয় ঘটবে। রবীন্দ্রনাথ যে দানবের সাথে সংগ্রামের জন্য পৃথিবীর মানুষকে ডাক দিয়েছিলেন সেই ডাক আজ যেন সবার কানে কানে পৌঁছে গেছে। কাজেই রবীন্দ্রনাথের সকল আশাবাদই যে সফল হয়ে উঠবে এ বিষয়ে কোনই সন্দেহ নেই।

এ ব্যপারে আমাদের বাংলাভাষী জনগণের কর্তব্যসচেতনতা অনেক বেশি পরিমানে কাম্য। রবীন্দ্রনাথের জন্মের সার্ধশততম বার্ষিকী পালন করতে গিয়ে আমরা যদি কেবল আনুষ্ঠানিকতার  স্রোতে গা ভাসিয়ে দেই তবে তা হবে একান্তই অপরাধ। রবীন্দ্রনাথের বানীকে, তার চিন্তাকে বাস্তবে রূপদান করার শপথই গ্রহণ করতে হবে আজ। তাহলেই রবীন্দ্রনাথের সার্ধশততম জন্মবার্ষিকী পালন সার্থক হয়ে উঠবে।

আমি রবীন্দ্রনাথকে একজন মনিষী হিসেবে দেখি। শুধু মনিষী নয়, মহা মনিষী। এই মহা মনিষী তার মনীষা প্রকাশের জন্য বিভিন্ন প্রকরণ বেছে নিয়েছেন। সেইসব প্রকরনের মধ্যে কোনো একটা বিশেষ প্রকরণকেই আলাদা করে দেখা যায় না। সবটা নিয়েই রবীন্দ্রনাথ। কাজেই সেই রবীন্দ্রনাথকে সামগ্রিকভাবে দেখা বলেই আমি সঙ্গত মনে করি।



ওনার মতো লোকের আর জন্ম হবে না : ফরহাদ মজহার

Farhad_Majharরবীন্দ্রনাথ তো আসলে একজন মহামানব। ওনার মতো লোকের আর জন্ম হবে না। উনি যে বংশ থেকে এসেছেন, ওনার যে পরিবার তা অনেক সম্ভ্রান্ত। জমিদারী প্রথার মধ্যে থেকেও উনি গ্রামবাংলার লোক নিয়ে কথা বলতেন,  গ্রাম বাংলার প্রকৃতি নিয়ে লিখতেন।

একটা কবিতা আছে  তার ‘আমাদের ছোট নদী চলে বাকে বাকে, বৈশাখ মাসে তার হাটু জল থাকে’ এই যে কথাটা এটা তার আগে কেউ এভাবে বলেননি। তার এই কবিতাটা আমার খুব পছন্দের। রবীন্দ্রনাথ যেসব গান রচনা করেছেন, তার তো কোনো গানই মূল্যহীন নয়। তার গানের কোনো মৃত্যু নেই।



রবীন্দ্রনাথ একজন প্রকৃত ভাববাদী : আবুল কাসেম ফজলুল হক

Professor AKM Fazlul_Haqueরবীন্দ্রনাথ হলেন কালজয়ী লেখক। দীর্ঘ সময়ের ব্যবধানে পড়লেও এই সময়ে এসেও তার লেখার বিষয়ে কথা থাকে। সে হিসেবে রবীন্দ্রনাথ বাঙালি পাঠকদের আবিষ্ট করে রাখে।

একেবারে ছোটবেলা থেকেই রবীন্দ্রনাথ গান লিখতেন, গাইতেন; কবিতা লিখতেন, নাটক লিখতেন, অভিনয় করতেন। তার চিন্তা-চেতনা এসবের মধ্য দিয়ে প্রকাশ পেয়েছে। কালজয়ী লেখকরা পৃথিবীকে জানতে চান। সর্বোপরি তারা পৃথিবীর মানুষ, পরিবেশ, বাস্তবতা সব কিছুই বুঝতে চান। রবীন্দ্রনাথও ছিলেন তেমনই একজন মানুষ। আসলে রবীন্দ্রনাথ ছিলেন অনুভব ও উপভোগের মানুষ। রবীন্দ্রনাথ অন্যকেও তা করতে চেয়েছেন।
 
ঊনবিংশ শতকের বাংলা বা বিংশ শতকের শুরুতে, সেইকালের বাংলায় বসে লিখলেও রবীন্দ্রনাথ চেয়েছেন ভবিষ্যতের মানুষ তা লেখা পড়ুক। তিনি ধারণা করতেন, গান তার টিকে থাকবে। গল্প-উপন্যাসে জীবনের মাধুর্য চিত্রিত করেছেন তিনি।

রবীন্দ্রনাথ তার সমসাময়িক আন্তর্জাতিক ও জাতীয় ঘটনাবলী লক্ষ করেছেন। তার নৈতিকতাবোধ তৈরি হয়েছে বিংশ শতাব্দীর প্রথমার্ধের ভারতকে সামনে রেখে। আজকাল সময় অনেক বদলে গেছে। রবীন্দ্রনাথ টেলিভিশন-কম্পিউটার দেখেননি।   রবীন্দ্রনাথ দারিদ্র দূর করতে চেয়েছেন, কিন্তু আজকে কৃষিক্ষেত্রে, চিকিৎসাক্ষেত্রে, শিক্ষাক্ষেত্রে যে উন্নয়ন ঘটেছে তা তিনি দেখেননি।

কিন্তু ঘটনা যাইহোক, আজকের পৃথিবীতে এখনো ন্যায় বিচার খুব কম। এই যে আজকের দিনের আনন্দ বেদনা এই বিষয়গুলোর সমাধান তিনি দিয়ে যাননি। এগুলির জন্য প্রগতীশিল মানষীকতার দরকার। রবীন্দ্রনাথ পড়লে বড় কাজ করার অনুপ্রেরণা পেতে পারি। আজকের দিনের যে সমস্যা তা আজকের দিনের মানুষকেই করতে হবে।

পরাধীন ভারতবর্ষের মানুষ ছিলেন তিনি, কিন্তু এ ব্যপারে তার ভূমিকা নেই।   প্রাচীন ভারতে তিনি সৃষ্টিশীলতা দেখেছেন। আধুনিক ইউরোপ তাকে অনুপ্রাণীত করেছে। অপর দিকে তিনি লক্ষ্য করেছেন ইউরোপেরা সাম্রাজ্যবাদী। তিনি যুদ্ধবাজ ইউরোপের বিরোধীতা করেছেন কিন্তু ভারতবর্ষে ইংরেজ শাসনের বিরোধীতা করেন নাই। আসলে তার জন্মের আগে থেকেই ঠাকুর পরিবার ইংরেজদের সাথে পারিবারিকভাবে সম্পৃক্ত।

রবীন্দ্রনাথের গান-কবিতা-ছোটগল্প পড়লে মনে হয় রবীন্দ্রনাথ একজন প্রকৃত ভাববাদী। রবীন্দ্রনাথকে বিজ্ঞান মনস্ক হিসেবে দেখা যায় না। তিনি সর্বদায় দেবতার কাছে যেন আশ্রয় খুঁজেছেন। তবে রবীন্দ্রনাথ হিন্দু-মুসলমানের মিলন চেয়েছেন। তিনি বাঙালিদের কঠোর সমালোচক  ছিলেন। তিনি চাইতেন বাঙালিদের চরিত্র উন্নত হোক। আমি রবীন্দ্রনাথের ‘গীতবিতান’ পড়ি, ভেবে বিস্মিত হই।



রবীন্দ্রনাথের আগে আমাদের গল্প লেখার কোনো ভাষা ছিল না : বিশ্বজিৎ ঘোষ

Biswajit_Ghoshরবীন্দ্রনাথের এই সার্ধশত জন্মদিন পালন আমার তো মনে হয়, আমাদের নতুন করে রবীন্দ্র সাহিত্য অবলোকনের সুযোগ করে দিয়েছে। এ সুযোগে আমরা নতুন করে রবীন্দ্র-সাহিত্য ও জীবনের নানা দিক আবিস্কার করতে পারবো।

আজকে একুশশতকে দাঁড়িয়ে রবীন্দ্রনাথকে উপলব্ধি করতে হলে, তাকে কেবল একজন সাহিত্যিক হিসেবে দেখলে চলবে না। তিনি একজন সমাজসংস্কারকও ছিলেন । সমাজের উন্নয়নের জন্য তিনি অনেক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছেন।

আর সাহিত্যিক হিসেবেতো তিনি বিস্ময়কর। একজন সাহিত্যিক টিকে থাকেন তার উত্তর কালকে তিনি প্রভাবিত করতে পেরেছেন কিনা তার উপর। রবীন্দ্রনাথ তো আজও প্রভাবিত করে যাচ্ছেন। রবীন্দ্রনাথের আগে আমাদের গল্প লেখার কোনো ভাষা ছিল না। আজও প্রভাবিত করে যাচ্ছেন তিনি। বঙ্কিম উপন্যাস লিখেছিলেন তার আগে কিন্তু রবীন্দ্রনাথ ওপথে যাননি। তিনি তার মত করেই লিখেছেন।

১১৭ বছর আগে লেখা রবীন্দ্রনাথের ‘শাস্তি’ গল্পের প্রাসঙ্গিকতা আজও আছে। তার ‘বিসর্জন’ নাটক এখনও আধুনিক। ১১৫ বছর আগে লেখা এ নাটক ভাষা, ভাব ও বিষয়ের দিক থেকে এখনও প্রাসঙ্গিক।

আমার কাছে তো মনে হয় রবীন্দ্রনাথের এ সার্ধশতজন্মউদযাপন আমাদের নতুন করে রবীন্দ্র অবলোকনের সুযোগ করে দিয়েছে।


বাংলাদেশ সময় ১২০০,  মে ০১০, ২০১১

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।