ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১২ বৈশাখ ১৪৩১, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫

শিল্প-সাহিত্য

মজিদ মাহমুদের একগুচ্ছ প্রেমের কবিতা

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২১১৮ ঘণ্টা, এপ্রিল ১৩, ২০১১
মজিদ মাহমুদের একগুচ্ছ প্রেমের কবিতা

ভালোবাসার সুর

সময় ছিল, সময় আছে, সময় থাকবে
মানুষ তার সময়কে জানে এবং জানতে পারবে
ভালোবাসা ছিল, ভালোবাসা আছে, ভালোবাসা থাকবে
কিন্তু মানুষ কখনো তা আবিষ্কার করতে পারবে না
পারলে ঘড়ির মতো তা ব্যবহার করতো
ঘড়ির কাঁটা এক থেকে বার পর্যন্ত যেতে পারে
তুমি ইচ্ছামতো তা দেখতে ও পড়তে পার
এবং ঠিক ঠিক সময় বলে দিতে পার
কিন্তু কে আছে যে ভালোবাসা পড়তে পারে
কে বলতে পারে ঠিকমত ভালোবাসার সংখ্যা ও মাত্রা
ভালোবাসা শক্ত করে ধরে রাখো
যতই ভালোবাসাকে দড়ি দিয়ে বেঁধে রাখো না কেন
বলতে পারবে না, ভালোবাসা এখানে আছে এবং
        চিরদিন থাকবে
কখনো ভালোবাসাকে অযত্ন করো না
অবহেলায় ছেড়ে দিও না
ভালোবাসা খুব দামী, ভালোবাসা খুব সহজ নয়
ভালোবাসা ইতঃস্তত খসে পড়া নক্ষত্রের ধূলিকণা নয়
প্রতিদিন ফুল ফোটা ও খসে পড়াও ভালোবাসা নয়
ভালোবাসা একটি শাদাঘোড়া-যার উপরে তুমি সওয়ার
যার চাবুক জিন তোমাকে একা করে দিচ্ছে
চাঁদের আলো ভেতর দিয়ে তুমি দেখতে পাও পর্বত
তার গাত্র বেড়ে নেমে যাচ্ছে তরঙ্গায়িত সমুদ্র
যার ফেনার সাম্পান তোমাকে ভাসিয়ে নিয়ে যাচ্ছে
ভালোবাসার সুদীর্ঘ ছায়া তোমার কানের কাছে
    সারাক্ষণ ফিসফিস করে কথা বলে
হতে পারে এসব তোমার কাঁধের উপর তৈরি করে
        ভালোবাসার রঙধনু
অথচ বিশাল সব ভালোবাসা বহন করছে
        পলকা গোলাপ পাপড়ি
তুমি ভুলে যাও শব্দ ও সঙ্গীত
কান পাতো ভালোবাসার গভীর সুর ও লয়ে
যার অদৃশ্য তান তোমাকে ভাসিয়ে রেখেছে।


আমি তোকে ধরতেও পারি না
ছাড়তেও পারি না

আমি তোমাকে ধরতেও পারি না
ছাড়তেও পারি না
তোমাকে ধরার এবং ছাড়ার কারণ খুঁজতে থাকি
আমি খুঁজে পাই তোমাকে ভালোবাসার একটি সঠিক উপায়
অথচ তোমকে পরিত্যাগ করার অসংখ্য কারণ

কিন্তু তুমি না পরিবর্তিত হবে; না আমাকে পরিত্যাগ করবে
আমার হৃদয়কে তাই তোমার কাছ থেকে রক্ষা করি
যার অর্ধেকটা সর্বদা তোমাকে দূরে রাখতে চাইবে
এবং বাকি অর্ধেকটা কাছে পাওয়ার জন্য ব্যাকুল হবে

তাই আমাদের ভালোবাসা যদি ভালোবাসা পেয়ে থাকে
তাহলে আমরা তাকে উৎপীড়িত করবো না
আমরা আর সন্দেহে কিংবা ঈর্ষার সঙ্গে কথা বলবো না

এটা কোনো বিষয় নয়- যে পুরোটা গ্রহণ করবে
সুতরাং আমি জানি- যখন তোমার ইচ্ছে হবে
আমাকে ভালোবাসতে পারবে-
যে অর্ধেক তোমাকে ধরতে চায়।




ভালোবাসার বাস

ভালোবাসা বাস করতে পারে না মাটির পৃথিবী কিংবা
কবরগাহে- এসব তো ভোরের শিশিরের মতো স্বল্পপ্রাণ
আমি ভালোবাসাকে ভালোবাসি
তার প্রতি বিশ্বস্ত ও নির্ভরশীল

ভালোবাসা ঘুমের মধ্যে শুয়ে থাকে
সুখনিদ্রার মধ্যে গেজে থাকে
ইভের অশ্রু শিশির হয়ে ঝরে পড়লে
ভালোবাসার মতো তা আনন্দময় হয়ে ওঠে

ফুলের পাপড়ির মধ্যে দেখ
মুক্তার মতো শিশির জমে আছে
পৃথিবীতে বয়ে যাচ্ছে সবুজ সময়
ভালোবাসার অবিনশ্বর নীলের ভেতর

বসন্তের বাতাসে কান পাতে শোনো
সূর্যের কোমল ও উষ্ণ আলোর আহ্বান
তখন দেখ ফেরেশতারা ছড়িয়ে দিচ্ছে
ভালোবাসার সঙ্গীত ও গান

যখন শুনতে পাও তারণ্যের কণ্ঠস্বর
সৌন্দর্য এবং সুমধুর সুর
তখন জেনে রেখ ভালোবাসার জন্য
এ সব প্রকৃতির নির্বাচন

ভালোবাসা কখনো পারে না করতে সঙ্কীর্ণতায় বাস
স্বার্থচেতনায় ভালোবাসার সর্বনাশ।


জমি ও কৃষক

এই যে আমার উৎসারণ, বাক্যের ফূর্তি
একজন প্রকৃত উপনিবেশবাদীর মতো আমি
তোমার জমিতে উৎপন্ন করছি ফসল
যদিও এর কারিগরি বিদ্যা- এর সার ও টেকনোলজি
তোমার আয়ত্তের অতীত
তবু এটা তো সত্য তুমি ছাড়া, তোমার অস্তি¡ত্ব ও
        সর্বংসহা জমি ছাড়া
কোথায় ফলত আমার এই ফসল

তাই এখন আমি বড় দ্বিধাগ্রস্ত- প্রকৃতপক্ষে
আমার এই সম্পদ ও অর্জনের কে আসল মালিক
অবশ্য ভাবি, আগেও তো তোমার জমি ছিল
হয়তো এসেছিল কোনো এক কৃষক
ফলাতে চেয়েছিল ফসল
তুমিও সর্বস্ব দিতে চেয়েছিলে তাকে
কিন্তু ব্যর্থ কৃষক ফিরে গেল জমির দোষে
কয়লার গভীর থেকে হিরে তোলার ধৈর্য ছিল না তার

আজ দেখ একই জমিতে ফলছে কি সব ফসল
দ্রাক্ষা ও আপেল, লাল টকটকে পেয়ারা- কুল ও আতা
আমার আঙিনা ভরে যাচ্ছে পরিপক্ক অজানা ফসলে
প্রতিবেশিরা ভাবছে এই কি সেই কৃষক-
এই কি সেই বন্ধ্যা জমি, উঁকিঝুকি মারছে
নানা কথার ঘায়ে আমাকে ক্ষতাক্ত করছে
আমি নাকি নষ্ট করে দিচ্ছি এলাকার আদি চাষের পদ্ধতি

আজ আমি বুঝতে পারি না- কে আসলে ফসল ফলায়
জমি না কৃষক, জমি তো আগেও ছিল, থাকবে
হবে কেবল কৃষকের পরিবর্তন
জমির কাজ শুধু কৃষককে সমর্থন।


দুধ-সমাচার

তুমি তো জানো, আমি ছিলাম এক মৃতবৎস গাভী
আজীবন লালিত ছিল তার বাছুরের স্বপ্ন
কানায় কানায় ভরে উঠেছিল তার পয়োধর
হয়তো তার মায়ের জন্ম হয়েছিল নিউজিল্যান্ডের
কোনো এক খামারে
হয়তো পিতার বীজ ছিল উন্নতজাতের
কিন্তু সে পালিত হয়েছিল সাধারণ কৃষকের গোষ্ঠে
তার এই সব নির্জন বেড়ে উঠা
পুচ্ছ তুলে তেপান্তরে ছুটে বেড়ানো
কেউ জানতো না এমন দুধেলা ছিল এই বকনা
যদিও তার উলানের ভার দেখে অনেক লোলুপ কৃষাণী
চেয়েছিল করতে ক্রয় নগদ দামে
তাতে গাভীর কি-ই বা এসে যায় বল
গাভীর কাজ বছরে একবার মিলিত হওয়া
গাভীর কাজ নিয়মিত দুগ্ধ দেয়া
সে জানে না কে তার দুগ্ধ করবে পান
কে তার দুধ বাজারে বিকাবে
কিন্তু কোনো বাছুর যদি না থাকে তার
প্রতিদিন প্রত্যুষে যদি উলানে না দেয় গুঁতা
তাহলে কোত্থেকে আসবে বল তার তরল সোনা
তুমি ভাবো- দুধ বুঝি ঘাস ও গাভীর
        শরীরের বিক্রিয়া
তুমি কি শোন নাই-গাভীর দুধ-সাফাইয়ের কাহিনী
দুধ হলো গাভীর ইচ্ছে-
গাভীর কাছে তার বাছুর আসে দেবদূতের মতো
উলানে মুখ রেখে গুঁতায়
আশীর্বাদ করে ঈশ্বরের কাছে- তারপর গাভীর
ইচ্ছার পরিপূর্ণতা দুধ হয়ে ঝরে

অথচ আমি তো পাইনি টের বাছুরের টান
হয়তো ছিলাম আমি মৃতবৎস গাভী
কিংবা কখনো পাইনি দেখা ষাঁড়ের দর্শন
কিন্তু আজ যখন তুমি একটি গোবৎস ছোঁয়ালে
        আমার উলানে
হয়তো তা হতে পারে অবাস্তব খড়ের প্রমূর্তি
তবু দেখ, আমার উলান কি কানায় কানায় পূর্ণ
তোমার মুঠোর ফাঁক দিয়ে গড়িয়ে পড়ছে শাদা সোনা
এতটা দুধ রাখবে কোথায়-
তোমার পাত্রর মাপ আমি তো জানি না।
 
 
বিপরীত-কাঙ্ক্ষা

আমি তো প্রান্তে দাঁড়িয়ে আছি- তুমি এখনো মধ্যবর্তিনী
তুমি যতই আসছ এগিয়ে আমার দিকে
আমার পথ ফুরিয়ে যাচ্ছে ততই
এ এমনই একটা যাত্রা- যা একত্রে চলে না কখনো

তোমার আসার কথা ছিল এবং তুমি আসছ
আমি দূর থেকে দেখতে পাচ্ছি তোমার মাস্তুল
তোমার সাম্পান এগিয়ে আসছে ছেঁড়াপালে লাগিয়ে হাওয়া
কিন্তু আজ আমি মোহনার কাছে-
দেখতে পাচ্ছি নদী ও সমুদ্রের মিলনের তোড়জোর
আমিও ভেসে যাচ্ছি প্রবল টানে

অথচ তোমার গজেন্দ্রগমন- নিশ্চিন্ত ছড়িয়ে বেড়ানো
মনে হয়, আমার সাথে মিলনের ব্যাপারে ততোধিক নিশ্চিত তুমি
যেহেতু তোমার গমন আমার দিকে
যেহেতু আমি তোমার চূড়ান্ত বিন্দু
তাই ভাবছ- অনেকটা ঘুরপথে, বন্ধুদের সঙ্গে সময় কাটিয়ে
শেষমেষ আমার সমুদ্রে নেবে আশ্রয়

কিন্তু তুমি তো জানো সূর্যোদয় ও সূর্যান্ত সব সৈকতে
একত্রে ঘটে না
তুমি ব্যাকুল- সূর্যাস্তের সৌন্দর্য দেখতে
আর আমি চাই সূর্যোদয়ের মহিমা
আজি না, কীভাবে হবে আমাদের এই বিপরীত কাক্সক্ষার মিলন।


স্বেচ্ছাচারী সম্রাজ্ঞী

তুমিই সেই অত্যাচারী সম্রাজ্ঞী- যে অন্যের
কৃত অপরাধের শাস্তি আমাকে দিয়েছ
আমি জানি সম্রাজ্ঞীরা এমনই হয়-
আমার জানা আছে তাদের মর্জি;
কিন্তু সবার তো মুক্তির উপায় থাকে না

যখন তোমার বিশাল ঐশ্বর্যকে উপেক্ষা করে
আনুগত্যের পরিবর্তে দিয়েছিল কেউ ঘৃণা
যে যুবরাজ্ঞীর সহবত জানে না
পথের ধুলা কী করে বুঝবে প্রাসাদের মহিমা

তোমার বন্ধনহীন বেড়ে ওঠা-
দিগন্ত প্রসারিত চেতনার ঢেউ
তুমি জানতে, ইঙ্গিতে তোমার পায়ের কাছে
নেমে আসবে পরাক্রান্ত সেনাপতির তরবারি

ভাবতে, পৃথিবীতে এমন কে আছে- মাতৃজঠর-প্রসবিত
যে তোমাকে নিক্ষেপ করবে অবজ্ঞার বাণ
যদিও এসবই তোমার বহিরাবরণ
যেমন শক্তখোলসের মধ্যে ঢাকা থাকে সুমিষ্ট তালশাঁস

কিন্তু পৃথিবীতে সবাই তো তেমন ডুবুরি নয়
সবাই তো পারে না সমুদ্রের তলদেশ থেকে মুক্তোকুড়াতে
কে আর বোঝে বল মুক্তার গর্ভধারিণী ঝিনুকের কষ্ট
বরং বাড়ন্ত ভাতের উপর ছাই দেয়া মানুষের স্বভাব

যাক, এখন তো আর তুমি সেই ঔদ্ধত-কোমল সম্রাজ্ঞী নও
অনেক অভিজ্ঞতায় হয়েছ ঋদ্ধ- প্রতিপদে শঙ্কিত পরাজয় ভয়ে
কিন্তু আমি তো তেমন যোদ্ধা নই- পরাস্তের পতাকা নিয়ে
সর্বদা পালিয়ে বেড়াই;
তবু আমার দৃষ্টি নিবদ্ধ হয়েছে তোমার ঐশ্বর্যের প্রতি
আমি সেই সব গেঁথে দিচ্ছি আমার গান ও কবিতায়

অথচ তুমি আছ প্রতিশোধের নেশায় মত্ত
ভাবছÑ চোর পালিয়েছে বটে-
হোক সে কবি- তবু সে প্রতারক পুরুষের দলে
তাকেই নিতে হবে আমার বঞ্চনার সকল শাস্তি।


অবাস্তব বাস্তবতা

কী অদ্ভুত আজ তোমার আকৃতি- রূপ ও সৌন্দর্য
তোমার নাচের মুদ্রা, বাক্যের ঢেউ- স্বরের ওঠানামা-
ন্যানো টেকনোলজির মতো ছড়িয়ে পড়েছে আমার মস্তিষ্কে
আজ আর আমি পারব না করতে পৃথক-
কোনটি তোমার প্রকৃত রূপ

ছাব্বিশ বসন্তে সূর্য যে আহ্নিক গতির উপর দাঁড়িয়ে ছিল
তার আল্ট্রা ভায়োলেট রশ্মি, তার সালোক-সংশ্লেষণ
তার সব- বৃক্ষের মতো তোমার শরীরের পল্লব ধরে আছে
আমি তো গৌতম বুদ্ধ- ছেড়ে ছিলাম ঘর
গৃহ আগলে ছিল মহামায়া দেবী-
রাহুল পুত্রের কথা মনে আছে সবই

যদিও আমার আসন ছিল অশ্বত্থের মূলে
যদিও আমি ঘর করেছি বাহির শান্তির লাগি
তবু একভাণ্ড পায়েসান্ন নিয়ে তোমার উপস্থিতি
তুমি আজো জেগে আছ বৌদ্ধ ভাস্কর্যের সুজাতা
বনান্তরের নির্জন প্রান্তরে শুনি কেবল তোমার নাচের মুদ্রা
রাগের আলাপন, আমাদের মনোলগ

যে তুমি আমার মস্তিষ্কে, যে তুমি ওয়ারিতে থাক
তাদের উভয়ের যোগাযোগ সম্পূর্ণ হয় না কখনো
তারা হয়তো মহামায়া, তারা হয়তো সুজাতা
আমার সাধনাÑ আমার ধ্যানমগ্নতার তীব্র উপস্থিতকালে
আমার মস্তিষ্কে তোমার অদৃশ্য টুকরো টুকরো অস্তিত্ব
সংগঠিত করে গড়ে তোলে তোমার অসংখ্য প্রমূর্তি

আমি জানি না তাদের অবাস্তব বাস্তবতা
তোমার চেয়ে অধিক বাস্তব কিনা।

সুনামির পূর্বাভাস

আমার স্কুলগামী কন্যা এখন পড়ার টেবিলে ব্যস্ত
পুত্র ঘুমায় আমার স্ত্রীর বুকের ভেতর-
সেও আজ আর আমার কথা ভাবে না তেমন
একজন সুখী দম্পতির সকল ইঙ্গিত রয়েছে আমাদের ভেতর
স্ত্রী ও সন্তানের প্রতি আমার কর্তব্যজ্ঞান
আমাদের ভাবী ও বোনদের কাছে প্রবাদপ্রমাণ
সাতজন্মের সৌভাগ্যে কারো ভাগ্যে জোটে এমন স্বামী
আমিও এই সব ভেবে এতদিন ঈর্ষান্বিত ছিলাম
প্রতিযোগিতায় সবাইকে হারিয়ে পোক্ত করেছি
আদর্শ স্বামীর আসন
আমিও আমার স্ত্রীর কাছে এখনো নিরাপদ বাড়ির মতো
ঝড় ও ঝঞ্ঝায় বুকের ভেতর দিয়েছি আশ্রয়
যদিও নিরন্তর রোদের উত্তাপে প্রচণ্ড গা গরম
বৃষ্টির ঝাপ্টায় ফ্যাকাশে হয়েছে বাহারি রঙ
হয়তো বৃদ্ধের মতো নড়ে গেছে ইঁটের গাঁথুনি
কিন্তু আমার পরিবার- স্ত্রী ও সন্তান
একটি নিরাপদ আশ্রয়ের চেয়ে তাদের কাছে
        আমি বেশি আর কি ছিলাম

এ সব কথা আজ অহেতুক মনে হচ্ছে আমার
যখন তোমার দৃষ্টির তরুণ রোদ্দুর
মায়াময় দ্ব্যর্থময় চাহনি-
আমাকে আহ্বান করে নিয়ে গেল অতীতের গহ্বরে
পর্বতের গাত্র বেড়ে আমার এখন কেবল ওঠানামা
গুহাগাত্রের সেইসব আঁকিবুকি- তীর ও ধনুক
        মহিষবধের কাহিনী
এইসব উদ্ধারহীন প্রত্নপাঠ-
আমাকে নিয়ে যেতে চাই পরিত্যক্ত জীবনের পথে
 
আমার স্ত্রীর নির্ভরতার আশ্রয়
আমার সন্তানের অনভিজ্ঞ ভবিষ্যৎ
সুনামির পূর্বাভাসের মতো কেঁপে উঠছে এই পুরনো বাড়ি।

প্রেমের কবিতা

এতদিন ভাবতাম, সব কবির জীবনে থাকে-
প্রেমের কবিতা লেখার একটি নির্দিষ্ট বয়স
সবাইকে লিখতে হয় মিলিত হবার তীব্র আকাক্সক্ষার কথা
স্বর্গ বিচ্যুতকালে যে নারী হারিয়েছিল বাহুলগ্ন থেকে
যে নারী লুকিয়ে দিয়েছিল তাকে নিষিদ্ধ বৃক্ষের ফল
যে নারী জানতো, এই ফলের গভীরে লুকানো আছে
        জীবনের বীজ
ঈশ্বরের বাগান থেকে যদি তারা হারিয়ে যায় কখনো
ঈশ্বর যদি কখনো অবসর চান সৃষ্টির একঘেয়েমি থেকে
তাহলে সেই বীজ থেকে গড়িয়ে পড়বে মানুষের ধারা
অসংখ্য নগ্নপদ আদম ও ইভ জেগে রবে অনন্তের বাগানে

ঈশ্বর তাই প্রেমকে পান সর্বাধিক ভয়
প্রেমকে রুখে দিতে নানা আয়োজন
সংসার সন্তান, বয়স ও মৃত্যু- সব প্রেমবিরোধী উপাখ্যান
প্রেম প্রবহমান সময়ের মতো
বাতাস পানির মতো জীবনের অক্ষয় উৎস
প্রেমকে অবলম্বন করে জীবনের চক্রমণ

আজ তাই ভাবি কবির তো কোনো বয়স
নেই রচনার শ্রেণীকরণ
কবির কাজ কবিতা লেখা-
সর্বদা প্রেমের কবিতা।



নিকোটিন

কি নিশ্চিত নির্ভরতায়- কাকে তুমি পোড়ালে বলো
ধোঁয়ার গম্বুজের মধ্যে হারিয়ে গেল তোমার মায়াময় ঠোঁট
প্রাচীন দার্শনিকের মতো প্রতিটি টানের আড়ালে
তুমি আরো বেশি দুর্বোধ্য হয়ে ওঠো
তোমার বাণীর অর্থ তখন অর্থ ও নিরর্থের মধ্যে হারিয়ে যায়
তুমি তখন হয়ে যাও আমার প্রশ্রয় ও উপেক্ষার অতীত
তোমার ধোঁয়ার কুণ্ডলী এক তীব্র জাদুকরের মতো
আমাকে রহস্যের গভীরে নিমজ্জিত করে
ধীরে ধীরে বিলুপ্ত হয় উদ্ধারের সকল পথ
আমি চেতনা হারিয়ে ফেলি

তুমি তো জানো, আমি ধোঁয়া পছন্দ করি না
ধোঁয়া ও ধোঁয়াশার বিরুদ্ধে আমার জেগে থাকা
তবু জানি ধোঁয়ার মধ্যে আছে পারফিউম
ধোঁয়ার মধ্যে আছে নিকোটিন
তুমি বাতাসকে উড়িয়ে দিলেও
নিকোটিনের তীব্র ঘ্রাণ আমাকে টানতে থাকে
তখন তোমার ঠোঁট যার একমাত্র আশ্রয়।

বাংলাদেশ স্থানীয় সময় ২১১০, এপ্রিল ১৩, ২০১১

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
welcome-ad