ধোঁয়া
শকুন্তলা বসুকে
ধোঁয়াও বড় বেশি অনুভূতিপ্রবণ
জানলাটা খোলা ছিল, তবু
ভীরুভাবে উড়ে গেল ঘুলঘুলি মুখে।
হাওয়াতে সে এতবার খেয়েছে ওলট
তবু সেই হাওয়ার পুরুষালী হাতে রেখে
দেহের সুষমা ও ভার
ব্যালেরিনা নর্তকীর মত সে নেচেছে দারুণ!
সকালের চায়ের টেবিল ছেড়ে
খুকুর রিবনের সাথে উড়ে গেল
বাড়িটার শ্যাওলা-আঁশটে ছাদে,
খোকার পায়ের কাছে বলের লভ্যতায়
খেল ডিগবাজী
গিন্নীর বিষণ্ণ গ্রীবা ঘেঁষে
ধোঁয়া ফের হয়েছে একাকী।
ওরা আলোর ইশকুলে চলে গেলে
শকুন্তলা আর আমি মুখোমুখি বসে থাকি
কম্পমান এক দেহ ধোঁয়ার ভেতর তরুণ তপতী,
‘একি স্বর্ণপ্রভা, চোখে টলটলে কান্না কেন’,
‘দূর, কি যে ছাইপাশ ধোঁয়া গেল চোখে’।
আসমানী প্রভুর পোশাক
কাকভোরে খুলে যায় জানলা অবাক
কাকেরা একটু পরে, জেগে ওঠে কেবল বালক
উঠোনে কে ছুঁড়ে দিল পরীর পালক?
ফর্সা কুয়াশায় সুনসান গলে পড়ে কাহার সন্তাপ?
দয়ার্দ্র ঝুরে পড়ে, চোখের সতরঞ্চ জুড়ে তাঁহার পতন?
অলৌকিক বৃষ্টিপাতের মত পেঁজাতুলোর অনায়াসে
সামান্য প্রাঙ্গণে নামে জ্যোৎস্নার নম্র খেলাচ্ছল
কুয়াশার ঘন মাতামাতি
নাকি তারা শুদ্ধ শেফালী ফুল, বালকের মুগ্ধতার ঘরে
কেবলি ঝরেছে, এনেছে বিস্ময়, আর ঢেলেছে শুদ্ধতা।
পুনর্জন্ম
তাহলে তুই স্রোতে ভেসে যা!
অগ্নিতে আহুতি দিয়ে দিলেন আজন্মের শাপ
কৈলাশে নন, ছিলেন এ মর্ত্যরে চেনা ফুটপাতে।
তখন স্রোতের মাঝে মিশে গেল জবা ও চন্দন
দগ্ধকাঠ, তেজারতি, কোঠা বাড়ির উৎসব-
আকুল ক্রন্দন গেল চক্রাকার সিঁড়ি বেয়ে বেয়ে
ত্রিতল আকাশে, কিংবা সে ফিরে আসে স্রোতে
আসে শিশুর ছদ্মবেশে, মস্তমাতৃস্তন ধরে ঝোলে
বয়োবৃক্ষ বটবৃক্ষ পৃথিবীর ঘরে। জলে ভাসে
তাহিতি পূর্ণিমা, পুষ্পগন্ধ, রক্তিম কাহার আঁচল?
তারপর সে ঝাঁপ দেয় নিত্যের অসংবৃত স্রোতে।
ও সংবেদন
তোমার সংবেদন ছুঁয়ে রোদজলে একা-
ঘূর্ণাবর্ত উড়িয়ে নিল স্থিরতার মাপ
বালুচরে চখাচখি মেখে ছিল পড়ন্ত সন্তাপ!
মেঘের অপর পিঠে সূর্যের ঘরোয়া কোলাজ
প্লাবনের জল দেখ ঢুকে যায় বিশ্বস্ত গহ্বরে।
কেন কাঁপি, কেঁপে উঠি সম্মোহনে, ধীরতা-মমতা
ঠেলে দেয় স্নিগ্ধ সর, ধবধবে প্রান্তর ছুঁয়ে
এই রাতে ফিরে আসে বসন্তের শেষ দীর্ঘশ্বাস,
সে কি হাওয়া? হাওয়ার কেশর পাশে ঝুলে আছে
উন্মুল আরোহী এক-
আমি নই ধবল ধারালোপাতে পড়ে আছে
সংবেদন-কর্তিত কেউ!
একদিন সমুদ্রে চলে যাবো
সারারাত হাওয়ার জন্য বসে আছি
সে কোথায় খাচ্ছে টাল, আটকে আছে
কোথাকার বেভুল সীমায়।
যে ফুল স্পর্শ করি, সে খুব সহজে ঝরে যায়
যে গানে ভরি সুর, সে গানেই করুণ বিলাপ।
লোকালয় রাখেনি কোন নির্ভার আশ্রয়
যেখানে খুব দ্বিধাহীন চলে যেতে পারি
কোন নারী রাখেনি পেতে তার মখমল প্রশ্রয়
ঠোঁটের আকুতি কিংবা স্নেহের-ডিভান
সহজে যার কাছে স্বীকার করা যায়
দিন-যাপনের পাপক্ষয়,
আবার শুদ্ধ হবার উচ্চারণ...
দেখ, একদিন আমি ঠিক সমুদ্রে চলে যাবো।
বাংলাদেশ সময় ১৫৪০, এপ্রিল ০৫, ২০১১