ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১২ বৈশাখ ১৪৩১, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫

শিল্প-সাহিত্য

বইমেলার আলোচনায় বক্তারা

বৌদ্ধধর্মের দর্শনের প্রতি রবীন্দ্রনাথের আকর্ষণ ছিল প্রবল

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২২৫২ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ২৩, ২০১১

ঢাকা: বিচারপতি মুহাম্মদ হাবিবুর রহমান বলেছেন, ‘বৌদ্ধধর্মের করুণা-প্রেম-মৈত্রী ও মানবতাবোধ অনেক লাককে আকৃষ্ট করেছে। তাই বিশ্বের অনেক জায়গায় নতুন করে বৌদ্ধ-পল্লী গড়ে উঠেছে।

রবীন্দ্রনাথের জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত বৌদ্ধধর্মের দর্শনের প্রতি প্রবল আকর্ষণ ছিল। ’

বুধবার বিকেলে বইমেলার মূলমঞ্চে আয়োজিত ‘বৌদ্ধকাহিনী ও রবীন্দ্রনাথ’ শীর্ষক আলোচনা অনুষ্ঠানে সভাপতির বক্তৃতায় তিনি এ কথা বলেন।

তিনি বলেন ‘রবীন্দ্রদর্শনে বৌদ্ধধর্মের নানা দিক প্রতিফলিত হয় আর রবীন্দ্রনাথ হয়ে ওঠেন আমাদের আত্মশুদ্ধির এক মহামানব। ’

অনুষ্ঠানে মূল প্রবন্ধে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের অধ্যাপক জুলফিকার মতিন বলেন, ‘বৌদ্ধকাহিনী নিয়ে রবীন্দ্রনাথের লেখা কবিতাগুলোর একটি আলাদা তাৎপর্য আছে। তার অন্তর্গূঢ় স্বভাবে, প্রসারিত চেতনার ধ্রুবশিখায়, উপলব্ধির গহীনতম প্রদেশে কিংবা মানবকল্যাণবোধের সীমাহীন আকাক্সার মাধ্যমেই এর বিস্তার ঘটেছে।

প্রাবন্ধিক বলেন, ‘মানুষের অভাব, খাওয়া-পরার সমস্যা, চিকিৎসা, বাসস্থান ও অন্যান্য মৌলিক চাহিদাগুলো তাকে প্রতিনিয়ত তাড়িত করছে। কিন্তু তা সত্ত্বেও তার চেতনাগত উপাদানগুলোর ক্রিয়াশীলতাও সত্য। বাস্তবতা যত ক্রুরই হোক, মানুষ তো স্বপ্ন দেখতে ভুলে যায় না। আত্মিক সম্প্রসারণের ভেতর দিয়েই ঘটতে পারে মুক্তি। আর এই মুক্তিই কাম্য ছিল রবীন্দ্রনাথের। ’

তিনি বলেন, ‘আধ্যাত্মবাদের পাশাপাশি বৌদ্ধধর্মের মানবতাবাদের শিাটি একইভাবে কাজ করেছে রবীন্দ্রনাথের মনে। বৌদ্ধকাহিনীগুলোর মধ্যে মানবিকতার যে উদ্বোধন ঘটেছে, ত্যাগের যে মহিমা প্রকাশিত হয়েছে, জীবনের সত্যরূপের যে পরিচয় ফুটে উঠেছে তা রবীন্দ্রজীবনদর্শনের সঙ্গেই সঙ্গতিপূর্ণ। ’

কথাসাহিত্যিক বিপ্রদাশ বড়–য়া বলেন, ‘রবীন্দ্রসাহিত্যে বৌদ্ধ তথা ভারতীয় সংস্কৃতি যেভাবে প্রকাশিত হয়েছে বাংলা সাহিত্যে তা বিরল। রবীন্দ্রনাথ তার সাহিত্যকর্মে বুদ্ধদেবকে ‘পরম করুণার অবতার’ রূপে বিশ্লেষণ করেছেন। তার সাহিত্যে বৈদিক যুগ থেকে আধুনিক কাল পর্যন্ত বুদ্ধদেবের নানাকাহিনী প্রতিফলিত হয়। ’

তিনি বলেন, ‘রবীন্দ্রনাথের কাব্যে বাঁধন ছেঁড়া বিদ্রোহ ও প্রেমের মূলে রয়েছে বৌদ্ধদর্শন। মূলত বুদ্ধের বাণী রবীন্দ্রনাথ মর্মে মর্মে গ্রহণ করেছেন এবং তার নাটক-উপন্যাস-প্রবন্ধ-গল্পে স্পষ্টভাবে তার ছাপ রেখেছেন। ’

আলাচনায় নাট্যবিশেষজ্ঞ বিপ্লব বালা বলেন, ‘দাসত্ব-মান্যতা-অন্যায়-অসত্য-সাধারণ মানুষের অনুভূতি-জীবনাচরণ এসবই রবীন্দ্রসাহিত্যের প্রধানতম উপকরণ। রবীন্দ্রনাথ গভীরভাবে বিশ্বাস করতেন, সত্য কাজ ব্যক্তিকেই করতে হয় এবং সত্য ছাড়া ধর্ম নিষ্প্রাণ। উপমহাদেশে যত বড় বড় ধর্ম এসেছে সব ধর্মকেই রবীন্দ্রনাথ গ্রহণ করেছেন অতি সহজভাবে। তাই তো তিনি ভারতীয় উপমহাদেশের সবচেয়ে বড় অর্জন, তার সাহিত্য বিশ্বসাহিত্যের একটি বড় ভা-ার। তিনি কোনও নির্দিষ্ট ধর্মের নন, তার ধর্ম সামগ্রিক। ’

বাংলা একাডেমীর উপপরিচালক ড. তপন বাগচী বলেন, ‘রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের পরিবারেই বৌদ্ধধর্ম ও বৌদ্ধসংস্কৃতি চর্চার একটি আবহ ছিল। তাই তিনি তার রচনায় এ বিষয়টি এড়িয়ে যেতে পারেননি। রবীন্দ্রনাথের কবিতা কিংবা নাটক নয়, উপন্যাস-প্রবন্ধ ও অন্যান্য রচনায়ও মহামানব গৌতম বুদ্ধের কথা এসেছে কখনও সরাসরি আবার কখনও প্রসঙ্গক্রমে। ’

সন্ধ্যায় একই মঞ্চে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে আবৃত্তি পরিবেশন করেন শিল্পী বেলায়েত হোসেন ও আসলাম শিহির। ডা. লিয়াকত আলীর পরিচালনায় দলীয় আবৃত্তি পরিবেশন করে আবৃত্তি সংগঠন ‘সংস্কৃতি বিকাশ কেন্দ্র’। এছাড়া মিলন কান্তি দে’র নির্দেশনায় রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘সামান্য তি’ কবিতা অবলম্বনে ব্রজেন্দ্র কুমার দে রচিত যাত্রাপালা ‘সতী করুণাময়ী’ মঞ্চস্থ করে মানিকগঞ্জের ‘লোকনাট্য গোষ্ঠী’।

বাংলাদেশ সময়: ২২২৮ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ২৩, ২০১১

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।