ঢাকা, শনিবার, ৬ বৈশাখ ১৪৩১, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫

শিল্প-সাহিত্য

একুশের ষাট বছর

আমাদের অর্জন, আমাদের দায়

গ্রন্থনা : ফেরদৌস মাহমুদ | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২১৫৯ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ২০, ২০১১
আমাদের অর্জন, আমাদের দায়

রাষ্ট্রভাষা বাংলার দাবিতে বাঙালির রক্তদানের প্রায় ষাট বছর হতে চলল। আর এ রক্তদান কেবল ভাষার অধিকারের দাবিতেই ছিল না, ছিল ভাষাভিত্তিক একটি স্বাধীন রাষ্ট্র অর্জনের স্বপ্ন।

সেই স্বপ্নও অর্জিত হয়েছে। কিন্তু যে মাতৃভাষার জন্য আমাদের এত আত্মত্যাগ ও সংগ্রাম, তার উদ্দেশ্য কতটুকু সফল হয়েছে- এরকম একটি জিজ্ঞাসাচিহ্ন সবসময়ই খুব বড়ভাবে আমাদের সামনে উপস্থিত থাকে।

এজন্য বাংলানিউজ দেশের গুণীজনদের কাছে দুটি প্রশ্ন রেখেছিল :  

১. ১৯৫২ সালের পর গত প্রায় ষাট বছরে আমাদের ভাষার অর্জন কী বলে আপনার মনে হয়?
২. একজন লেখক হিসেবে বাংলা ভাষার বিস্তারে আপনি কী দায় অনুভব করেন?
এ সম্পর্কে নিজেদের প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন অধ্যাপক মুস্তাফা নূরউল ইসলাম, চিন্তাবিদ বদরুদ্দীন উমর, গবেষক শামসুজ্জামান খান, কবি মোহাম্মদ রফিক, প্রাবন্ধিক যতীন সরকার, অধ্যাপক আবুল কাশেম ফজলুল হক ও কথাসাহিত্যিক হরিপদ দত্ত।


 ভাষা আন্দোলনের স্বর্ণফসল হচ্ছে মুক্তিযুদ্ধে বাঙালিত্বের বিজয় : মুস্তাফা নূরউল ইসলাম

১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলনে আমাদের অর্জন হচ্ছে প্রথমত উর্দুর দাসত্ব থেকে মুক্তিলাভ। এর চেয়েও বড় কথা আমি মনে করি, ভাষা আন্দোলনের স্বর্ণফসল হচ্ছে মুক্তিযুদ্ধে বাঙালিত্বের বিজয়, একাত্তর সালে স্বাধীন-সার্বভৌম বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠা। এরও ৩০ বছর পর ২০০০ সালে আমাদের ভাষা আন্দোলন লাভ করে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের স্বীকৃতি। এটা আমি মনে করি একটা বড় অর্জন।

আর ভাষার প্রশ্নে বাংলা ভাষার প্রতি আমি নাগরিক হিসেবে যেমন, তেমনি লেখক হিসেবে নিজেকে দায়বদ্ধ মনে করি। অর্থাৎ ‘মাতা, মাতৃভূমি ও মাতৃভাষা এর উপরে আর নাই’- এ সত্যের কাছে লেখক হিসেবে এবং বাঙালি নাগরিক হিসেবে আমি দায়বদ্ধ।


১৯৭১ সালের পর বাংলা ভাষা রাষ্ট্রীয়ভাবে শুকনা স্বীকৃতি পেয়েছে : বদরুদ্দীন উমর
’৫২ সাল থাকে এ পর্যন্ত বাংলা ভাষার অর্জন বলতে এ ভাষা রাষ্ট্রীয়ভাবে স্বীকৃতি পেয়েছে, এই-ই। ১৯৫৬ সালের পাকিস্তানের সংবিধানে এ স্বীকৃতি পেয়েছিল বাংলা ভাষা। সরকারিভাবে না হলেও ব্যক্তিগতভাবে শিক্ষা-সংস্কৃতি ও নানা ক্ষেত্রে তখন বাংলার ব্যবহার বৃদ্ধি পেয়েছিল। তবে ১৯৭১ সালের পর বাংলা ভাষা রাষ্ট্রীয়ভাবে শুকনা স্বীকৃতি পেয়েছে। বাংলা ভাষায় হাজার হাজার বই বের হয়েছে। সেসব বইয়ের বেশির ভাগই ভুলে ভরা। আমার মনে হয় এগুলো বের না হলে কাগজ কম খরচ হতো, গাছও কম কাটা হতো। এই জাতীয় বই লেখার ফলে ভাষার গুণগত মান একদমই বৃদ্ধি পায়নি।

আজকাল তো আবার বইপত্র লেখাটা হয়ে দাঁড়িয়েছে সামাজিক মর্যাদার বিষয়। ফলে দেখা যায়, যে কেউই বই বের করে বসে, ভেতরে সে কী লিখল তা না ভেবেই। আর প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ে ইংরেজিই তো সব, বাংলার কোনো বালাই নেই। এখন এ সময়ে অনেকে ইংরেজি মিডিয়ামে পড়তে আগ্রহী। ফলে কারও কারও মধ্যে দেখা যায়, বাংলা জানে না এটা বলাই গৌরবের বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে।

কয়েক দিন আগে দেখলাম একজন বললেন, আদালতের রায়ের ভাষা বাংলা হওয়া উচিত। কিন্তু এতদিন ধরে এটা হলো না কেন? যদি না হয় তাহলে এটা রাষ্ট্রভাষা হলো কীভাবে? তবে ভাষাকে পুনরায় প্রতিষ্ঠা করার জন্য আমাদের আরও সংগ্রাম দরকার।

ইংরেজি ভাষাও আমাদের ভাষাকে গ্রাস করতে ব্যর্থ হয়েছে : শামসুজ্জামান খান

গত প্রায় ষাট বছরে আমাদের ভাষার তো কিছু অগ্রগতি হয়েছেই। এখন আমাদের সাহিত্যের যে অবস্থা, ভাষা আন্দোলনের সময় তো এখানকার সাহিত্য এত উন্নত ছিল না। ভাষা আন্দোলনের পরই  তো আমরা পেলাম সৈয়দ ওয়ালী উল্লাহর মতো একজন শক্তিশালী কথাসাহিত্যিক, শওকত ওসমানের মতো সাহিত্যিক, শামসুর রাহমান বা আল মাহমুদের মতো কবি।

তবে এ কথাও ঠিক ভাষা চর্চার ক্ষেত্রে যে নিষ্ঠা, যে শ্রম থাকা দরকার ছিল তা আমাদের হয়ে ওঠেনি। ভাষার ব্যবহারে গ্রাম্যতা বা আঞ্চলিকতা যথেষ্ট পরিমাণেই আছে। আমি  দেখেছি শিক্ষিত লোকেরাও আঞ্চলিক টান এড়িয়ে যেতে পারে না। এর একটা কারণ হতে পারে, এ দেশের বেশির ভাগ লোকই কৃষি সমাজ থেকে উঠে এসেছে। তবে এটা একসময় ধীরে ধীরে থিতু হয়ে যাবে।

তবে আমাদের নিজেদের ভাষা নিয়ে ভয়ের কিছু নেই, কেননা এ ভাষার ওপর আধিপত্য বিস্তার করার চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়েছে ফার্সি, তুর্কি বা উর্দু ভাষা। কিন্তু পারেনি। এদিকে ইংরেজি ভাষাও আমাদের ভাষাকে গ্রাস করতে ব্যর্থ হয়েছে। এর একটা কারণ হতে পারে, বাংলা ভাষার গ্রহণ ক্ষমতা সাংঘাতিক, যা অন্য ভাষার নেই। বাংলাভাষা অসংখ্য ভাষা থেকে শব্দ নিয়ে নিজেদের মতো করে ফেলতে পারে।  

আমাদের ভাষা সামনের দিকেই এগোবে : মোহাম্মদ রফিক

গত প্রায় ষাট বছরে আমাদের বাংলা ভাষার অর্জন তো কিছু না কিছু হয়েছেই। তবে এখন তো বাংলা ভাষাকে হজম করতে হচ্ছে অনেক বৈশ্বিক ভাষার চাপ, তা স্যাটেলাইট চ্যানেলের কারণেই হয়তো। তবে এ ভাষা আগেও বহুবার চাপের মুখোমুখি হয়েছিল এবং টিকে আছে। আমাদের ভাষার আসলে হারিয়ে যাওয়ার কোনো সম্ভাবনা নেই। আমাদের ভাষা সামনের দিকেই এগোবে।

বাংলা ভাষার সামাজিক, একাডেমিক বা অফিসিয়াল ব্যবহার আগের চেয়ে বেড়েছে, তবে যতটা হওয়া উচিত ছিল ততটা হয়নি। এর কারণ হচ্ছে জাতি হিসেবে আমরা নিজেদের চিনতে পারিনি, নিজেদের সম্মান দেখাতে আমরা জানি না। তাছাড়া আমাদের অর্থনীতি অন্যের ওপর নির্ভরশীল। অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী হতে পারলে আমরা আমাদের ভাষাকে আন্তর্জাতিকভাবে একটা জায়গায় নিয়ে যেতে পারব বলে মনে করি।

লেখক-কবির মূল বিষয়ই হচ্ছে ভাষা। এই ভাষাকে বাদ দেওয়ার তো প্রশ্নই আসে না। আমাদের দেশ এগিয়ে গেলেই আমাদের ভাষাও এগিয়ে যাবে। আমি বাংলা ছাড়া অন্য ভাষায় লেখার কথা ভাবতেই পারি না।

বাংলা ভাষা আন্তর্জাতিক ভাষার মর্যাদা পেয়েছে : যতীন সরকার

১৯৫২ সালে, আমাদের এখানে, বাংলা সাহিত্যে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক বাংলা বই ছিল না। ভাষা আন্দোলনের পর আমরা ভাষাকে তো নতুনভাবে অর্জন করেছিই, আমাদের বাংলা লিখিত বইয়ের সংখ্যাও বেড়েছে অনেক। শুধু সংখ্যায়ই বাড়েনি, গুণগত মানও বেড়েছে। বাংলা ভাষা আন্তর্জাতিক ভাষার মর্যাদা পেয়েছে।

যদিও যে সমস্ত ক্ষেত্রে বাংলার ব্যবহার আরও হওয়া উচিত ছিল, তা হয়নি। বিশেষ করে উচ্চশিক্ষার ক্ষেত্রে বাংলা ভাষার ব্যবহার খুব একটা চোখে পড়ে না। উচ্চশিক্ষার বইপত্রগুলো বাংলায় নেই। তাছাড়া ইদানীং প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর দিকে তাকালে তো হতাশই হতে হয়, সেখানে বাংলার ব্যবহার একদমই হয় না। তারা বাংলা সাবজেক্টটা পর্যন্ত রাখে না। এসব দেখলে মনে হয়, যা হওয়া উচিত ছিল তা আসলে হয়নি।

লেখক হিসেবে বাংলা ভাষার প্রতি দায়বদ্ধতার কথা বললে বলব, বাংলা ভাষা ছাড়া তো অন্য ভাষায় আমি লিখতে পারি না। সমাজের প্রতি আমি যে দায় অনুভব করি, তা বাংলাভাষায়ই প্রকাশ করে থাকি। আমার মনে হয়, বাংলা ভাষার প্রকৃত ব্যবহারের ক্ষেত্রে রাষ্ট্রের যে দায়িত্ব পালন করা উচিত ছিল, তা তারা পালন করছে না।

ভাষা আন্দোলনের ঐতিহাসিক তাৎপর্য আমরা হারিয়ে ফেলেছি : আবুল কাশেম ফজলুল হক

আমাদের রাষ্ট্রভাষা আন্দোলন ছিল একটি রাজনৈতিক আন্দোলন। এটি আসলে ভাষাতাত্ত্বিক আন্দোলন ছিল না, রাষ্ট্রভাষা আন্দোলন ছিল। কোনো ভাষাকে রাষ্ট্রভাষা হিসেবে স্বীকৃতি নিতে হলে সব দিক থেকে ব্যবহার হওয়া দরকার। ১৯৭১ সাল পর্যন্ত বাংলাকে বিভিন্ন স্তরে ব্যবহারের নানা উদ্যোগ নিতে দেখা গেছে। কিন্তু ১৯৭২ সালের পর থেকেই যেন সব পরিবর্তন হয়ে গেল।

আগে একুশে ফেব্রুয়ারিতে আমাদের চিন্তার নবায়ন হতো, কিন্তু এখন এমনটা হয় না। এখন একুশ আমাদের এখানে কেবল উৎসবে পরিণত হয়েছে। ভাষা আন্দোলনের যে ঐতিহাসিক তাৎপর্য তা যেন আমরা হারিয়ে ফেলেছি।  

বাংলা বানান, বাংলা বর্ণমালা নিয়ে রয়েছে অনেক বিভ্রান্তি। ফলে বই শুদ্ধভাবে বের হওয়া কঠিন হয়ে দাঁড়িয়েছে। আমি বলব বাংলা বানানের সংস্কারের প্রয়োজন আছে। বানানটা স্থির হতে সময় লাগবে। অষ্টাদশ শতকে ইংরেজি বানানও এরকম সংকটের মধ্যে ছিল। বাংলা একাডেমী একরকমের বানান লিখছে, পশ্চিমবঙ্গ আরেক রকম করছে, আনন্দ পাবলিশার্স আরেক রকমের করছে। এভাবে যার যার নিজেদের মতো করে বানানরীতি বের করা তো যুক্তিসঙ্গত না। নতুন অভিধান দরকার। অনেকেই আছেন প-িত, যারা পেছনের বানানরীতিতে ফিরে যেতে চান। আমার মনে হয় না আমরা আসলে পেছনের দিকে যাবো। তাছাড়া বানানের ক্ষেত্রে শুধু গল্প-উপন্যাস বা কবিতার ভাষা দেখলে হবে না, আমাদের বিজ্ঞান, সমাজ, দর্শনের ক্ষেত্রেও বানানরীতিকে একটা নির্দিষ্ট রীতিতে আসতে হবে।

লেখক হিসেবে বাংলা ভাষাকে তো আমি আমার অস্তিত্ব হিসেবে মনে করি। বাংলা ভাষা আছে বলে আমি আছি। আমার চিন্তা-আবেগ সবই তো বাংলায়। পৃথিবীর দুর্বল জাতিরা নিজেদের ভাষা সম্পর্কে সচেতন নয়, কিন্তু উন্নত জাতিরা নিজেদের ভাষার বিষয়ে সচেতন। যেমন- চীনারা। তারা কি তাদের ভাষা ত্যাগ করবে? করবে না। চীনা ও জাপানিরা তাদের নিজেদের ভাষা ত্যাগ করতে চায় না। ফরাসিরা কি কোনোভাবে নিজেদের ভাষা ত্যাগ করবে? ইংরেজি অনেকেই শিখছে, তবে তা দ্বিতীয় ভাষা হিসেবে।

বাংলাদেশে ৪৫টি আদিবাসী ভাষা আছে। এদের জনসংখ্যা শতকরা ১ ভাগ। এই আদিবাসীদের নিয়ে জাতিসংঘের কতগুলি নীতিমালা রয়েছে। আমার মনে হয় জাতিসংঘের আদিবাসী নীতি পুরোপুরি ভুল। জাতিসংঘ চিরকালই তাদের আদিবাসী করে রাখতে চাচ্ছে।   বাংলাদেশের সাঁওতাল, রাখাইন, মারমারা তাদের মাতৃভাষা শেখে এবং বাংলা ভাষাও শেখে। আমার কথা হলো, যারা আদিবাসী তারা নিজেদের ভাষা রক্ষা করুক, তবে তাদের চিরকাল আদিবাসী করে পেছনে রাখা হবে, তা আমার কাম্য নয়।

আমরা বাঙালিরা আমাদের নিজেদের পথ হারিয়েছি : হরিপদ দত্ত

বায়ান্নর পরে বাংলা ভাষার অর্জন একেবারেই যে নেই এটা বলব না। এ ভাষার পরিধি, শব্দভা-ার বিবর্তনের মধ্য দিয়ে এগিয়ে গেছে অনেক, যথেষ্ট আধুনিক হয়েছে চরিত্রগতভাবে। তবে রাষ্ট্রের সঙ্গে বাংলা ভাষার যে সম্পর্ক, সর্বত্র ব্যবহারের যে অঙ্গীকার, এটা পূরণ হওয়া আদৌ সম্ভব বলে মনে হয় না। শুনতে দুঃখজনক হলেও, এটা তো সত্যি, বাংলা ভাষার এমন কোনো শক্তি নেই যা দিয়ে ইংরেজির সাথে লড়াই করতে পারে। জীবনের প্রয়োজনেই আজ আমরা ইংরেজি শিখছি। রাজনৈতিক টানপোড়েনে, ’৫২ সালে যারা ভাষার বিরুদ্ধে ছিল, স্বাধীনতার পর তাদের উত্থান হওয়াই এটার কারণ।

আমরা বাঙালিরা আমাদের নিজেদের পথ হারিয়েছি। আমরা বাংলা ভাষা কেন, যে কোনোভাবেই যেন নিজেদের অস্তিত্ব বিলিয়ে দিতে পারি। বাংলা ভাষা ভবিষ্যতে বিশাল কিছু করবে, এটা বোধ হয় আশা করা যায় না।

এ ভাষাকে আসলে বাঁচিয়ে রাখছে গ্রামের কৃষকেরা। তারা তাদের ফসল চাষের হিসাব-নিকাশ করে বাংলা মাস অনুযায়ী। এদিকে অদ্ভুত ব্যাপার হলো বিভিন্ন পীর-ফকিরের যে ওরশ হয়, তাও কিন্তু হয় বাংলা মাস অনুযায়ী। ইংরেজিকে তারা গুরুত্ব দেয় না। কৃষকপুত্র যখন নগরে আসে তারা নিজেদের অস্তিত্ব হারিয়ে ফেলে। আমরা যাই-ই করি না কেন, একুশে ফেব্রুয়ারি একটা উৎসব হয়ে গেছে। এ নিয়ে যে গান হয়, তার উদ্দেশ্যও যেন আজ বিনোদনদান। আমি দেখেছি, প্রতি বইমেলাকে কেন্দ্র করে প্রচুর অনুবাদের বই বের হয়। এগুলির বেশির ভাগই ভুল, এই ভুল অনুবাদ লোকেরা পড়ছে। এটা তো অর্জন না, এটা ব্যবসা।

বাংলা ভাষার একজন লেখক হিসেবে আমার তো অনেক কিছু করার ইচ্ছে আছে। কিন্তু ভাবলে দুঃখ হয়, এমন এক ভাষায় লিখি বাংলাদেশ থেকে পশ্চিমবঙ্গ পেরুলেই এর কোনো পাঠক নেই। এ ভাষার কোনো আন্তর্জাতিকতা নেই। ভাবি এই ভাষার আন্তর্জাতিক না হওয়ার সীমাবদ্ধতা কীভাবে কাটবে। এটা হলে তো মানিক বন্দ্যোপাধ্যায় বহু আগেই নোবেল পেতেন। রবীন্দ্রনাথ যদি ইংরেজিতে নিজের লেখা অনুবাদ না করাতেন তাহলে হয়তো বিশ্ববাসী তাকে চিনতই না। ওয়ালী উল্লাহর বই যদি ঠিকমতো অনুবাদ হতো, তাহলে নিশ্চয়ই তিনিও অনেক কিছুই পেতেন।

বাংলাদেশ সময় ২১৩৬, ফেব্রুয়ারি ২০, ২০১১

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।