ঢাকা, শুক্রবার, ১২ বৈশাখ ১৪৩১, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫

শিল্প-সাহিত্য

ভালোবাসা দিবস শুধু ভিড় বাড়িয়েছে, বিক্রি নয়

সালাম ফারুক, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২২৫১ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১৪, ২০১১
ভালোবাসা দিবস শুধু ভিড় বাড়িয়েছে, বিক্রি নয়

ঢাকা: ‘ফেব্রুয়ারি’ শব্দটিকে আমরা বাংলা করে নিয়েছি। এ মাসটি আমাদের ভাষা, আমাদের জীবনের সঙ্গে মিশে গেছে।

আর একুশের চেতনার এ মাসে এ বইমেলায় আমরা সবাইকে এক সঙ্গে পাচ্ছি। সাধারণ মানুষজন আসছে। দেশে অনেক বইমেলা হয়, কিন্তু উৎসবের বইমেলা এই একটিই। নতুন বইয়ের গন্ধ, নতুন বইয়ের আনন্দ, সুন্দর সুন্দর প্রচ্ছদ, অনেক পাঠক- সব মিলিয়ে একটি ভালো মাসই বলা যায় ফেব্রুয়ারিকে।

কথাগুলো বাংলা ভাষার ‌`প্রেমের কবি` বলে পরিচিত মহাদেব সাহার। সোমবার বিশ্ব ভালোবাসা দিবসে অমর একুশে বইমেলার প্রাঙ্গনে দাঁড়িয়ে তিনি এ কথা বলেন।

‘আর এ মাসেই ভালোবাসা দিবসটি পড়েছে, যদিও সব দিনই ভালোবাসার দিন। তাই ভালোবাসা দিবস আর বইমেলার সংযুক্তি আমাদের সৌভাগ্যই বটে। বই হোক এ দিনে ভালোবাসার মানুষটির জন্য সর্বশেষ্ঠ উপহার। ’- যোগ করেন তিনি।

তবে মহাদেব সাহার এ কথাটির প্রতিফলন সোমবারের বইমেলায় দেখা যায়নি। ভালোবাসা দিবস ভিড় বাড়ালেও প্রকাশকদের মুখে হাসি ফুটাতে পারেনি।

এ প্রসঙ্গে সময় প্রকাশনের কর্ণধার ফরিদ আহমেদ বাংলানিউজকে বলেন, ‘এ দিবসটি ভিড়ের ক্ষেত্রে প্রচণ্ড প্রভাব ফেললেও বিক্রির ক্ষেত্রে ফেলেনি। বরং স্বাভাবিক দিনগুলোর চেয়ে বিক্রি কিছু কমই হয়েছে। ’

একই সুর পাওয়া গেল অ্যাডর্ন পাবলিকেশনের প্রকাশক সৈয়দ জাকির হোসেইনের কণ্ঠেও। তিনি বললেন, ‘বিক্রির ক্ষেত্রে কোনও প্রভাব পড়েনি। এখানে অনেকেই জুটি বেঁধে বেড়াতে এসেছে, বই কিনতে নয়। ভালোবেসে প্রিয়জনকে বই গিফট করেছে এমনটি আমার চোখে পড়েনি। বরং দু’এক জন লেখককে তার নিজের বই গিফট করতে দেখেছি। ’

আগামী প্রকাশনীর প্রকাশক ওসমান গনির মতে, পহেলা ফাল্গুন ও ভালোবাসা দিবসে সবাই ঘোরাঘুরি আর ভালোবাসা বিনিময়ে ব্যস্ত থাকে। বই কেনার প্রতি তাদের মনযোগ কম থাকে। তাই গত দু’দিন বিশেষ দিবসের কোনও প্রভাব পড়েনি বইমেলায়।

তবে অন্যপ্রকাশের প্রকাশক মাযহারুল ইসলাম বললেন অন্যকথা। বললেন, শুক্রবার ও শনিবার ছাড়া বাকি স্বাভাবিক দিনগুলোর তুলনায় সোমবার বিক্রি বেশি হয়েছে।

বাংলাদেশে ভালোবাসা দিবসের প্রবর্তক শফিক রেহমানও বইমেলায় এসেছিলেন সোমবার। তিনি সাংবাদিকদের সঙ্গে আলোচনাকালে দিবসটিতে সরকারি ছুটি ঘোষণা করা প্রয়োজন বলে মন্তব্য করেন।

এসেছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের এমিরেটাস অধ্যাপক আনিসুজ্জামান, সৈয়দ শামসুল হক, বিচারপতি গোলাম রব্বানী, অধ্যাপক আবদুল্লাহ আবু সায়ীদ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক, নাট্যজন রামেন্দু মজুমদার, ড. মুনতাসীর মামুন, কবি মহাদেব সাহা, সাবেক সেনাপ্রধান হারুন অর রশীদ বীরপ্রতীক, সংসদ সদস্য ফজলে হোসেন বাদশা, প্রধানমন্ত্রীর প্রেসসচিব আবুল কালাম আজাদ, কবি কামাল চৌধুরী (শিক্ষাসচিব ড. কামাল আবদুল নাসের চৌধুরী), অভিনেতা মজিবুর রহমান দিলু, ভাস্কর রাশা, অভিনেত্রী শিরীন বকুলসহ আরও অনেক গুণীজন।

মঙ্গলবার প্রথম শিশুপ্রহর
এবারই প্রথমবারের মতো তিনদিন শিশু প্রহর ঘোষণা করেছে বাংলা একাডেমী। মঙ্গলবার এর প্রথম দিন। এছাড়া পরদিন বুধবার ও পরের বুধবারও থাকবে শিশুদের জন্য বিশেষ সময়। এ দিনগুলোতে সকাল ১১টা থেকে প্রতিদিনকার মেলা শুরুর স্বাভাবিক সময়ের আগ পর্যন্ত থাকবে শুধু শিশুদের প্রবেশের সুযোগ। তবে অভিভাবকসহ।

২৮টি কবিতার বই
সোমবার একুশে বইমেলার চতুর্দশ দিনে মেলায় মোট ৯২টি বই এসেছে। এর মধ্যে ২৮টিই কবিতার বই। এছাড়া ১৫টি করে গল্প ও উপন্যাস পাঁচটি ভাষা আন্দোলন/মুক্তিযুদ্ধ, চারটি ছড়া, তিনটি ভ্রমণবিষয়ক, দু’টি করে ইতিহাস, চিকিৎসা/স্বাস্থ্য ও অভিধান, একটি করে গবেষণা, শিশুতোষ, নাটক, বিজ্ঞান/গণিত, সায়েন্স ফিকশন/গোয়েন্দা এবং অন্যান্য ক্যাটাগরির আটটি বই এসেছে।

মোড়ক উন্মোচন
সোমবার বইমেলায় নতুন বই কম এলেও মোড়ক উন্মোচনের ঘটনা ছিল এ বারের মেলার সর্বাধিক। এদিন নজরুল মঞ্চে মোট ২৯টি বইয়ের মোড়ক উন্মোচন করা হয়। বিকাল চারটা থেকে রাত আটটা পর্যন্ত চলে একের পর এক বইয়ের মোড়ক উন্মোচন।

আলোচনা অনুষ্ঠান
সোমবার বিকেলে গ্রন্থমেলার মূলমঞ্চে আয়োজিত আলোচনা অনুষ্ঠানে ‘পরবর্তী লেখকদের উপর রবীন্দ্রনাথের প্রভাব’ শীর্ষক আলোচনা অনুষ্ঠিত হয়। এতে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের অধ্যাপক বিশ্বজিৎ ঘোষ। শিাবিদ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের এমিরেটাস অধ্যাপক আনিসুজ্জামানের সভাপতিত্বে আলোচনায় অংশ নেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের অধ্যাপক খোন্দকার আশরাফ হোসেন, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের অধ্যাপক মহীবুল আজিজ এবং রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক সৌভিক রেজা।

বাংলাদেশ সময়: ২২৩৮ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১৪, ২০১১

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।