ঢাকা, বুধবার, ৩ বৈশাখ ১৪৩১, ১৭ এপ্রিল ২০২৪, ০৭ শাওয়াল ১৪৪৫

শিল্প-সাহিত্য

রবীন্দ্র সংগীতহীন প্রথম গানের সন্ধ্যা

বসন্ত আর বাউলিয়ানায় একাকার বইমেলা

সালাম ফারুক, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২২৩৫ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১৩, ২০১১
বসন্ত আর বাউলিয়ানায় একাকার বইমেলা

ঢাকা: ‘প্রথম যেদিন দেখেছি, মনে আপন জেনেছি... তুমি বন্ধু আমার ব্যথা বোঝ না... তুমি জানো না রে প্রিয়, তুমি মোর জীবনের সাধনা’। সুধীর মন্ডলের কণ্ঠে মনে দাগ কাটা বিজয় সরকারের এ জনপ্রিয় গানটির সঙ্গে সঙ্গে দর্শক-শ্রোতারা উপভোগ করলেন মাথা দুলিয়ে দুলিয়ে।



শুধু এই একটি গানই নয়, বাংলার আনাচে-কানাচে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা বাউল শিল্পীরা এমন অনেক গান শুনিয়ে মুগ্ধ করেছেন অমর একুশে বইমেলায় আসা সংগীতপ্রেমীদের।

দিল আফরোজ রেবার কণ্ঠে লালন শাহ’র গান ‘তিন পাগলে হলো মেলা নদে এসে... তোরা কেউ যাসনে ও পাগলের কাছে’, আলম দেওয়ানের কণ্ঠে ‘এমন সুখ বসন্তের কালে রে, প্রাণের বন্ধু কই রইলি রে’, টুকু বাউলের ‘ভাবের উদয় যেদিন হবে’, দেলোয়ার হোসেন বয়াতির কণ্ঠে ‘উদাসী বানাই গেল বসন্তের কালে রে, মরার কোকিলে’, আনোয়ার শাহ’র কণ্ঠেমন জানে আর জানে মরণ, মজেছি মন দিয়ে যারে... মনের কথা বলব কারে’ ও ‘নৌকার উপর গঙ্গা বোঝাই, নৌকা ডাঙ্গা দিয়ে যায়... লীলা দেখে লাগে ভয়’ ইত্যাদি জনপ্রিয় বাউল সংগীতে মুখর হয়ে উঠেছিল একুশে বইমেলার মূল মঞ্চ।

গান গেয়েছেন সাইদুর রহমান বয়াতি, কাঙ্গালিনী সুফিয়া, কুদ্দুস বয়াতি, মমতা দাসী বাউল, বিমল বাউলরাও। আর বেণু চক্রবর্তী, আবদুস সোবহান, আশুতোষ শীল, হাসান আলী ও মিলন বাউলের যন্ত্রের শৈল্পিক সংমিশ্রণ তো ছিলই। সব মিলিয়ে মেলার সাংস্কৃতিক সন্ধ্যা পরিণত হয়েছিল বাংলার পল্লী সংগীতের মহামিলনমেলায়।

রোববার, অমর একুশে বইমেলার ত্রয়োদশ দিনটি পহেলা ফাল্গুন, বসন্তের প্রথম দিন। এদিনই ছিল রবীন্দ্র সংগীতবিহীন প্রথম একটি সংগীত সন্ধ্যা। আর এ অনুষ্ঠান থেকেই বোঝা যায়, আবহমান বাংলার গ্রাম-গঞ্জ থেকে উঠে আসা এ সংগীত এখনও কতোটা জনপ্রিয়। মূলমঞ্চের সামনের দেড় হাজার চেয়ার আর বর্ধমান হাউসসংলগ্ন সিঁড়ি উপচে চারপাশের রাস্তাও ছিল শ্রোতাদের দখলে।

এ তো গেল শুধু বাউলিয়ানার কথা। ফাগুন আর বসন্তের ছোঁয়ায় যে বাসন্তী উৎসবে মেতেছিল এদিনের বইমেলাও। মেলার গায়ে লেগেছিল বসন্তের রঙ। বাসন্তী রঙের শাড়ির সঙ্গে খোঁপায় হলুদ গাঁদা ফুল ছিল কিশোরী-তরুণী, এমনকি মাঝবয়সীদের সাজেও। ছিল মালা- কারও গলায়, কারওবা মাথায়। আর গালে মায়াবী আল্পনা তো ছিলই। কাচের চুড়ির রিনিঝিনি শব্দও ভাসছিল মেলার বাতাসে। অপরদিকে লাল, হলুদ আর বর্ণিল পাঞ্জাবিতে সেজেছিলেন তরুণেরা।

এতো গেল ক্রেতা-দর্শকদের কথা। মেলায় বিভিন্ন স্টলের বিক্রয়কর্মী তরুণ-তরুণীরাও কি পিছিয়ে ছিলেন? না, তাদের মনে লাগা বসন্তের রঙও স্পর্শ করেছে মেলাকে। কোনও কোনও স্টলেও ছিল বসন্তের সাজসজ্জা।

এদিকে, রোববার সন্ধ্যার পরপরই বইমেলায় ভিড় বাড়তে পারে। তবে বিক্রির হার কম ছিল বলে জানান প্রকাশক-বিক্রেতারা। সোমবার বিশ্ব ভালোবাসা দিবস (ভ্যালেন্টাইন ডে) উপলক্ষে প্রচুর বিক্রির আশা করছেন তারা।

শুধু বিক্রিই কম নয়, এদিন মেলায় আসা নতুন বইয়ের সংখ্যাও কিছুটা কম ছিল। এমনকি তালিকাভুক্ত ৮৪টি বইয়ের মধ্যে হাতেগোনা ১০/১২টি ছিল মানসম্মত। এদিন নজরুল মঞ্চে ১৯টি বইয়ের মোড়ক উন্মোচন করা হয়। মোড়ক উন্মোচনকারীদের মধ্যে ছিলেন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা মাহবুবুল আলম, সংসদ সদস্য আবদুল জলিল, ছড়াকার রফিকুল হক দাদুভাই প্রমুখ।

বিকালে মূলমঞ্চে কথাসাহিত্যিক আবু বকর সিদ্দিকীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত ‘রবীন্দ্রনাথ ও বাউলসংস্কৃতি’ শীর্ষক আলোচনা সভায় মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন কুষ্টিয়া ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের অধ্যাপক আবুল আহসান চৌধুরী। এতে আলোচনায় অংশ নেন ফোকলোরবিদ শাহিদা খাতুন, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ফোকলোর বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক আবুল হাসান চৌধুরী এবং সিলেট শাহ্জালাল বিশ্ববিদ্যালয়ের ফোকলোর বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক শরদিন্দু ভট্টাচার্য।

বাংলাদেশ সময়: ২১১৮ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১৩, ২০১১

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।