ঢাকা, শুক্রবার, ৬ বৈশাখ ১৪৩১, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫

শিল্প-সাহিত্য

বইমেলায় আলোচনা অনুষ্ঠানে বক্তারা

‘ছিন্নপত্রে’ই বহুমাত্রিক রবীন্দ্রনাথকে খুঁজে পাওয়া যায়

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৩২৪ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১৩, ২০১১

ঢাকা: রবীন্দ্রনাথের ‘ছিন্নপত্রে’ প্রকৃতি ও নিঃসর্গের পাশাপাশি বাংলার দুঃস্থ মানুষের জীবনগাঁথাও সমানভাবে উজ্জ্বল। তিনি পূর্ববাংলার বিভিন্ন স্থান শিলাইদহ-পতিসর ও শাহজাদপুরের সাধারণ মানুষের বর্ণিল জীবন চিত্রকলার মতো উপস্থাপন করেছেন।

এতে রবীন্দ্রচেতনায় দার্শনিকতার পরিচয় মেলে। মূলত ‘ছিন্নপত্রে’ই বহুমাত্রিক রবীন্দ্রনাথকে খুঁজে পাওয়া যায়।

অমর একুশে বইমেলার দ্বাদশ দিনে শনিবার আয়োজিত ‘ছিন্নপত্রে’ নদী ও মানুষ শীর্ষক আলোচনা অনুষ্ঠানে সভাপতির বক্তৃতায় এ কথা বলেন গবেষক ও ভাষাসৈনিক আহমদ রফিক।

বিকেলে গ্রন্থমেলার মূলমঞ্চে আয়োজিত এ অনুষ্ঠানে কথাসাহিত্যিক সেলিনা হোসেনের  ‘ছিন্নপত্রে’ নদী ও মানুষ শীর্ষক প্রবন্ধ পাঠ করেন বাংলা একাডেমীর কর্মকর্তা সাহেদ মন্তাজ।

কথাসাহিত্যিক সেলিনা হোসেন তার প্রবন্ধে বলেন, ‘বাংলাদেশের নদী ও মানুষ দ্বারা রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর গভীরভাবে অনুপ্রাণিত হয়েছিলেন। লব্ধ বোধকে তিনি সঞ্চারিত করেছেন তার শিল্প-সাহিত্যে। তার নানা ভাবনার প্রকাশ ঘটেছে গল্পে, কবিতায়, গানে, নাটকে উপন্যাসে এবং প্রবন্ধে। জীবনের সবটুকু অনুভবের মাত্রা কোথাও কোনোভাবে হাত গলিয়ে পড়ে গেছে বলে মনে করা যায় না। যা কিছু জীবন ও জগতের পে তা তিনি বিমূর্ত করেছেন। যে জানাটা সত্য বলে উপলব্ধি করেছেন তা তিনি পড়ে থাকতে দেননি। এখানেই একজন জীবন নির্মাতার সাহিত্য সাধনার বিস্তৃতি। ’

প্রাবন্ধিক বলেন, গভীরভাবে পর্যালোচনা করলে দেখা যায়, রবীন্দ্রনাথ বাংলাদেশের তিনটি এলাকায় বসবাস করতে গিয়ে এখন থেকে ১১৭ বছর আগে যে কথাগুলো উপলব্ধি করেছেন আজকের দিনে ‘গুড গভর্নেন্স’ তার থেকে খুব বড় কিছু নয়। এর সঙ্গে মানুষের জীবনমান উন্নয়নের দিকগুলো সুস্পষ্টভাবে উল্লেখ করেছেন। তাই ‘ছিন্নপত্র’ শুধু প্রকৃতির বর্ণনা নয়, পরিবেশ ও মানবজীবন রার দিকনির্দেশনাও।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের অধ্যাপক রফিকউল্লাহ খান বলেন, ‘ছিন্নপত্র একটি বহুমুখী ব্যঞ্জনাময় গ্রন্থ। এর সাহিত্যকর্ম অসাধারণ, এর বিস্তৃতি ব্যাপক। এতে রবীন্দ্রনাথ তার কর্মকে শিল্পে রূপ দিয়েছেন। বাংলার এই নদী, এই সহজ-সরল মানুষ তাঁর জীবন দর্শনকেই পাল্টে দিয়েছে। ’

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের অধ্যাপক মাহবুবুল হক বলেন, ‘ছিন্নপত্রে’র অধিকাংশ চিঠি বাংলাদেশকেন্দ্রিক। রবীন্দ্রনাথ বাংলাদেশের নদী ও মানুষের সম্পর্ক অনুধাবন করেছেন দার্শনিক চোখে। ছিন্নপত্রে প্রকৃতি ও মানুষ সম্পর্কে তার গভীর দর্শনকে ফুটিয়ে তুলেছেন বিস্ময়কর সাহিত্যগুণে। তার দার্শনিক বোধ দ্বারা ত্বারিত হয়েছে বাংলার দারিদ্র্য ঘেরা মানুষের কর্ম ও জীবন-স্রোত। আর এসব সত্যকে অসম্ভব বাস্তবতায় হৃদয়গ্রাহী করে উপস্থাপন করেছেন ছিন্নপত্রে। ’

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের অধ্যাপক সৌমিত্র শেখর বলেন, ‘ছিন্নপত্রে রবীন্দ্রনাথের আবির্ভাব ভিন্নভাবে। ছিন্নপত্রের রবীন্দ্রনাথ যেন মাটি ও মানুষের রবীন্দ্রনাথ, আমাদের রবীন্দ্রনাথ। প্রকৃতপে ছিন্নপত্র নিছক কতকগুলো পত্রসমষ্টিই নয়, একটি মহা ইঙ্গিত। এতে ধ্যানী মনের বাসনা রয়েছে যার মাধ্যমে অন্য একজন মানুষকে গভীরভাবে উপলব্ধি করা যায়। ’

বাংলাদেশ সময়: ০২০৯ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১৩, ২০১১

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।