রবীন্দ্রনাথ অসম্ভব সৃজনশীল একজন আধুনিক মানুষ। নিজের কর্মের মাঝে নিজের সত্তাকে আবিষ্কার করেছেন।
শুক্রবার বিকালে অমর একুশে বইমেলার মূলমঞ্চে আয়োজিত ‘দেখা দিক আরবার জন্মের প্রথম শুভণ’ শীর্ষক আলোচনা অনুষ্ঠানে সভাপতির বক্তৃতায় তিনি এ কথা বলেন।
অনুষ্ঠানে মূল প্রবন্ধে ঢাকা বিশ্ববিদালয়ের বাংলা বিভাগের অধ্যাপক বেগম আকতার কামাল বলেন, ‘অপরকে নিজের সত্তার অন্তর্গত করার মধ্যদিয়ে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর আসলে নিজেকেই বহুগুণে ফিরে পান। নিজত্ব ও অপরত্বের সেতুবন্ধন রবীন্দ্রচেতনার বাণী-ই শুধু নয়, এটি তার সাহিত্যতত্ত্বেরও মূলকথা। ’
তিনি বলেন, ‘মানুষ তার দ্বন্দ্ব ও অপূর্ণতার বিভিন্ন অসংগতির ভেতরেও উৎসবকে কেন্দ্র করে সবার সঙ্গে একাত্ম হয়। তাই জন্মোৎসব প্রয়োজন। রবীন্দ্রনাথ তার তত্ত্বে আত্মমুক্তির যে প্রশ্ন রেখেছিলেন তা নিজের শোধন-মোণ নয়, ব্যক্তির বিকাশ ও উত্তরণ। ’
কবি নাসির আহমেদ তার আলোচনায় বলেন, ‘রবীন্দ্রনাথ আজীবন সৌন্দর্য ও কল্যাণের সাধনা করেছেন। তিনি চেয়েছিলেন নিজেকে উজ্জীবিত করার মাধ্যমে সমাজকে বিকশিত করতে। জন্মের মাঝে মৃত্যুর মহিমা এবং জীবন ও মৃত্যুর মধ্যে যে দার্শনিক সত্য তা তিনি উপলব্ধি করেছেন। তিনি বিশ্বাস করতেন মানুষের মুক্তিতেই সভ্যতার মুক্তি, মানুষের মর্যাদায়ই সভ্যতার ক্রমোন্নতি। ’
সাংবাদিক ও গবেষক ড. অনু হোসেন বলেন, ‘যিনি সৃষ্টিশীল তিনি চিরন্তন। যার সৃষ্টিশীলতা নেই তিনি নশ্বর। শরীরী অস্তিত্বের প্রশ্নে মানুষ সীমাবদ্ধ। রবীন্দ্রনাথ তা জেনেও মহাকালের বিস্মৃতির মধ্যে তার জীবনদর্শনকে বিকশিত করতে চেয়েছেন। রবীন্দ্রনাথের জন্মবিষয়ক কবিতায় তার জীবন-সাহিত্য-দর্শন উপস্থাপিত হয়েছে। মূলত এসব কবিতা রচনার মধ্যদিয়ে রবীন্দ্রনাথ সাধারণ জনগণের খুব কাছে চলে এসেছেন। ’
গবেষক ও জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের প্রভাষক তারেক রেজা বলেন, ‘রবীন্দ্রনাথ মানুষকে অমৃতের সন্তান বলেছেন। অমৃতের সন্তান কখনো পরাজিত হয় না। তার জন্মদিনের কবিতায় তিনি নিজের আবির্ভাবই ঘোষণা করেননি বরং নিজস্ব সত্তার প্রকাশ ঘটিয়েছেন। আমরা তার কাছে বহুলাংশে ঋণী। কেননা আমরা তার শব্দচয়ন ছাড়া তাকেও শ্রদ্ধা জানাতে পারি না। ’
শনিবার একই মঞ্চে বিকেল চারটায় অনুষ্ঠিত হবে ‘ছিন্নপত্রে নদী ও মানুষ’ শীর্ষক আলোচনা অনুষ্ঠান।
বাংলাদেশ সময়: ২৩১৮ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১১, ২০১১