ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ৫ বৈশাখ ১৪৩১, ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ০৮ শাওয়াল ১৪৪৫

শিল্প-সাহিত্য

কলকাতা বইমেলায় বাংলাদেশ দিবসে আলোচনা

শিলাইদহ পর্বই রবীন্দ্র সাহিত্যসৃষ্টির স্বর্ণযুগ

রক্তিম দাশ, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট, কলকাতা | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২৩৫৬ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ৫, ২০১১
শিলাইদহ পর্বই রবীন্দ্র সাহিত্যসৃষ্টির স্বর্ণযুগ

৫ ফেব্রুয়ারি শনিবার ৩৫তম কলকাতা আন্তর্জাতিক বইমেলায় বাংলাদেশ দিবসরূপে পালিত হলো। এদিন দুপুর ২টায় মেলা প্রাঙ্গণের ইউবিআই অডিটোরিয়ামে কলকাতাস্থ বাংলাদেশে উপহাইকমিশন ও জাতীয় গ্রন্থকেন্দ্রের উদ্যোগে কবিগুরুর জন্মের সার্ধশতবর্ষ উপলক্ষে আয়োজন করা হয় ‘বাংলাদেশে রবীন্দ্রনাথ’ শীর্ষক আলোচনা সভার।



আলোচনা সভায় মূল প্রবন্ধ পাঠ করেন বাংলা একাডেমীর মহাপরিচালক শামসুজ্জমান খান। আলোচক হিসেবে অংশ নেন নজরুল ইনস্টিউটের নির্বাহী পরিচালক কথাশিল্পী রশীদ হায়দার, আগামী প্রকাশনীর কর্ণধার ওমসান গনি, রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের উপচার্য করুণাসিন্ধু দাস ও রবীন্দ্রগবেষক বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক অমিত্রসূদন ভট্টাচার্য। সভা পরিচালনা করেন কলকাতাস্থ উপহাইকমিশনার মুহম্মদ মুস্তাফিজুর রহমান। উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ সরকারের সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব মুহম্মদ মোশারফ হোসেন।

মূল প্রবন্ধে বাংলা একাডেমীর মহাপরিচালক শামসুজ্জমান খান বলেন, ‘রবীন্দ্রনাথ বঙ্গ বা বাংলার। তা পূর্ব, পশ্চিম, উত্তর বা দক্ষিণ যে অংশের ক্ষেত্রেই হোক, তিনি প্রায়শ বলতেন বাংলাদেশ। বাংলাদেশ নামের একটি রাষ্ট্রের আবির্ভাব কি তিনি দিব্যদৃষ্টিতে প্রত্যক্ষ করেছিলেন?’

তিনি বলেন, পাকিস্তান আমলে খাজা শাহাবুদ্দিনের রবীন্দ্রসঙ্গীতের ওপর বিধিনিষেধ আরোপ আমাদের জাতিসত্তার আন্দোলনকে আরো বেগবান করে তোলে। প্রতিটি মিছিলে, সভায়, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে রবীন্দ্রনাথের ‘আমার সোনার বাংলা’ গান ভবিষৎ বাঙালি রাষ্ট্রের জাতীয় সঙ্গীত বিবেচনায়ই গাওয়া হয়েছে বারংবার। এ গানটি বঙ্গবন্ধুর খুব প্রিয় ছিল। এ গানকে জাতীয় সঙ্গীত করার সুচিন্তিত সিদ্ধান্ত তারই। আর তাই যে কবি ছিলেন আমাদের সাংস্কৃতিক উত্তরাধিকারের অবিচ্ছেদ্য অংশ, জাতীয় সঙ্গীত স্রষ্টারূপে তিনি চিরকালের জন্য বাংলাদেশের রাষ্ট্রীয় সত্তারও অবিচ্ছেদ্য অংশ হলেন।

আগামী প্রকাশনীর কর্ণধার ওমসান গনি বলেন, বাংলা প্রকাশনা, বিশেষ করে বাংলাদেশের প্রকাশনাও তাকে ছাড়া ভাবা সম্ভব নয়। বাংলাদেশে এমন কোনো প্রকাশনা প্রতিষ্ঠান খুঁজে পাওয়া যাবে না রবীন্দ্র রচনা বা তার বিষয়ে কোনো বই প্রকাশ করেননি। আমরা প্রকাশকরা রবীন্দ্রনাথের নিকট ক্রমাগত ঋণী হয়ে আছি এবং হতেই থাকবো, যতদিন বাংলাভাষা সচল থাকবে।

রবীন্দ্র-গবেষক বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক অমিত্রসূদন ভট্টাচার্য বলেন, তার জন্ম কলকাতায় হলেও তার সাহিত্যচর্চার মূল পীঠস্থান বাংলাদেশ। ১৮৮৯ তিনি যদি শিলাইদহে না যেতেন বা দীর্ঘ বিশ বছর না কাটাতেন তাহলে আমরা রবীন্দ্রসাহিত্যের মূল গৌরবের অধ্যায় থেকে বঞ্চিত হতাম। রবীন্দ্রনাথের প্রকৃত শিক্ষা লাভ ঘটেছে শিলাইদহে। শিলাইদহ পর্বই রবীন্দ্র সাহিত্যসৃষ্টির স্বর্ণযুগ।

কথাশিল্পী রশীদ হায়দার বলেন, তিনি শুধু সাহিত্যিক নন, একজন মানবতাবাদী। তার কৃষিভাবনা বা ব্যাঙ্ক স্থাপন করে গরিব কৃষকদের ঋণ দিয়ে আমাদের চোখ খুলে দিয়েছিলেন। দেশভাগের পর থেকেই তাকে অবমূল্যায়ন করার চেষ্টা হলেও বাঙালি তা মানেনি কখনও। ১৯৪৮ সাল থেকে ১৯৮৪ এই সময় কালে তাকে নিয়ে ২ হাজারের ওপর প্রবন্ধ, নিবন্ধ, আলোচনা পক্ষে বিপক্ষে লেখা হয়েছে, যা আর কাউকে নিয়ে হয়েছে বলে আমার জানা নেই।


বাংলাদেশ সময় ২৩১০, ৫ ফেব্রুয়ারি, ২০১১

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।