ঢাকা, মঙ্গলবার, ৩ বৈশাখ ১৪৩১, ১৬ এপ্রিল ২০২৪, ০৬ শাওয়াল ১৪৪৫

শিল্প-সাহিত্য

বইমেলায় সেমিনার

‘রবীন্দ্রনাথ চীনের গণমানুষের সঙ্গে নিজেকে একাত্ম করেছিলেন’

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৪৪০ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ২৬, ২০১১

ঢাকা: ‘দূরপ্রাচ্যের জাপান থেকে পাশ্চাত্যের মার্কিন মুল্লুক পর্যন্ত রবীন্দ্রনাথ তার অনন্য লেখার যে দ্যুতি ছড়িয়েছেন, তার বেশ অনেকখানি চীনে গিয়ে পড়ার অনেক কারণের মধ্যে ঐতিহাসিক, সামাজিক ও মনস্তাত্ত্বিক কারণও রয়েছে। কবিগুরু চীনের গণমানুষের সঙ্গে নিজেকে একাত্ম করেছিলেন।

বিশেষ করে সামন্ত ও বহিঃশক্তির বিরুদ্ধে চীনাদের সংগ্রামে তার ছিল প্রত্য সমর্থন। ’

শনিবার সকালে অমর একুশে বইমেলার মূলমঞ্চে ‘চীনে রবীন্দ্রসাহিত্য’ শীর্ষক আলোচনা অনুষ্ঠানে মূল প্রবন্ধে কথাগুলো বলেন সিআরআই-এসএমএফ কুনফুসিয়াস কাসরুম, ঢাকা’র পরিচালক ইয়াং ওয়েইমিং (স্বর্ণা)।

প্রাবন্ধিক বলেন, ‘চীনের অসংখ্য তরুণ-যুবার আবেগময়তায় রবীন্দ্রনাথের অবস্থান পর্বতপ্রমাণ। তাদের সংগ্রহে মহা-মনীষীদের অমূল্য বাণীর তালিকায় রবীন্দ্রনাথ শীর্ষে। ’

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক আবদুল খালেকের সভাপতিত্বে এতে অন্যদের মধ্যে আলোচনায় অংশ নেন দণি এশিয়া গবেষণা কেন্দ্রের পরিচালক ও পেইচিং বিদেশি ভাষা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রফেসর দং ইউছেন, পিকিং বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাচ্য ভাষা ও সাহিত্য বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ওয়েই লিমিং, ঢাকাস্থ চীনা দূতাবাসের রাজনৈতিক কাউন্সিলর ওয়াং ইয়ু, ইউনিভার্সিটি অব লিবারেল আর্টসের সাধারণ শিা বিভাগের অধ্যাপক বেগম জাহানারা, জাদুঘর বিশেষজ্ঞ ড. ফিরোজ মাহমুদ ও লেখক-গবেষক ম. মনিরউজ্জামান।

প্রফেসর দং ইউছেন বলেন, ‘চীনে সর্বপ্রথম রবীন্দ্রনাথ চর্চা করেছিলেন পেইচিং বিশ্ববিদ্যালয়ের বিখ্যাত পণ্ডিত চি সিয়েন লিন। তিনি যৌবনকালে জার্মানে সংস্কৃত ও পালি ভাষা শিখতে গিয়েছিলেন। চি সিয়েন লিন রবীন্দ্রনাথ চর্চা প্রসঙ্গে অনেক প্রবন্ধ লিখেছেন। ’

তিনি বলেন, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বাংলা ভাষার মহান কবি। চীনা জনগণের মাঝে তিনি প্রিয়তম কবি ও মহান বন্ধু। চীনা পাঠকেরা তার সাহিত্য ভালবাসে। রবীন্দ্র-রচনাবলীর অধিকাংশই চীনা ভাষায় অনুবাদ করা হয়েছে। ’

অধ্যাপক ওয়েই লিমিং বলেন, ‘চীনে জনপ্রিয় সাহিত্যিকদের মধ্যে রবীন্দ্রনাথ অন্যতম। সেখানকার বিভিন্ন স্কুলসহ বেইজিং বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঠ্যসূচিতেও রবীন্দ্রসাহিত্য অন্তর্ভুক্ত হয়েছে। ’

কাউন্সিলর ওয়াং ইয়ু বলেন, ‘রবীন্দ্রনাথের সাহিত্য বহুমাত্রিক গবেষণার বিষয়। কেবল গভীর অধ্যয়নের মাধ্যমেই রবীন্দ্রসাহিত্যের নানামুখী দিক উন্মোচন করা সম্ভব। ’

অধ্যাপক বেগম জাহানারা বলেন, ‘বিশ্বায়নের বহু আগেই বাংলা ভাষা বিশ্বে প্রতিষ্ঠা লাভ করে। রবীন্দ্রনাথের সাহিত্য আমাদের নিত্য সহচর। চীনের বিভিন্ন অনুবাদক, গবেষক চীনা ভাষায় রবীন্দ্রসাহিত্য নিয়ে কাজ করে যাচ্ছেন। ’

তিনি বলেন, ‘দ্বিপাকি সাংস্কৃতিক আদান-প্রদানের মাধ্যমে চীন ও রবীন্দ্রনাথ সম্পর্কে বাংলাদেশের পাঠকেরা আরও বেশি জানতে পারবে। ’

ড. ফিরোজ মাহমুদ বলেন, ‘এটা অত্যন্ত আনন্দের যে চীনে রবীন্দ্রপ্রেমিদের সংখ্যা উত্তরোত্তর বাড়ছে। চীনারা বলেন, বাংলাভাষা শুনতে ঠিক সংগীতের মতোই মাধুর্যময়। রবীন্দ্রনাথের ভাষা মানুষকে আকৃষ্ট করে, তার সুর ও ছন্দ পৃথিবীকে আলোড়িত করে। বিশ্বশান্তি সৃষ্টিতেও রবীন্দ্রনাথের ভূমিকা অনন্য। ’

ম. মনিরউজ্জামান বলেন, ‘বাংলা ও চীনা ভাষায় রবীন্দ্রনসাহিত্য অধ্যয়নের মাধ্যমে দুই দেশের পাঠকরা রবীন্দ্রনাথ সম্বন্ধে আরও সমৃদ্ধ হবেন। ’

সভাপতির ভাষণে অধ্যাপক আবদুল খালেক বলেন, ‘চীনে রবীন্দ্রনাথকে নিয়ে অনেক গবেষণা হয়েছে এটা সত্যিই আনন্দের ব্যাপার। দুই দেশের মধ্যে মৈত্রী বৃদ্ধির ল্েয আমাদেরও উচিত অনুবাদের মাধ্যমে চীনের বিখ্যাত সাহিত্যিকদের চর্চা করা। ’

সন্ধ্যায় একই মঞ্চে অনুষ্ঠিত সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে বিধান চন্দ্র সিংহ ও জ্যোতি সিনহার পরিচালনায় মনিপুরী আঙ্গিকে রবীন্দ্রসংগীতের সঙ্গে নৃত্য পরিবেশন করে আদিবাসী সাংস্কৃতিক সংগঠন ‘মনিপুরী থিয়েটার’ এবং জাগরণের গান পরিবেশন করেন ‘জাগরণ সংস্কৃতিচর্চা ও গবেষণা কেন্দ্রে’র শিল্পীরা।

বাংলাদেশ সময়: ২১৫৯ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ২৬, ২০১১

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।