ঢাকা, শুক্রবার, ৬ বৈশাখ ১৪৩১, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫

শিল্প-সাহিত্য

কিম এডওয়ার্ডসের সাক্ষাৎকার

‘পুনরাবৃত্তির চেয়ে কিছুটা নতুন কাজ অনেক বেশি মজার’

শিল্প-সাহিত্য ডেস্ক | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২০৩৯ ঘণ্টা, জানুয়ারি ২৭, ২০১১
‘পুনরাবৃত্তির চেয়ে কিছুটা নতুন কাজ অনেক বেশি মজার’

[কথাসাহিত্যিক কিম এডওয়ার্ডস। জন্মগ্রহণ করেন ৪ মে ১৯৫৮ সালে যুক্তরাষ্ট্রে।

গ্রাজুয়েট ডিগ্রি লাভের পর তিনি তার স্বামীর সাথে চলে আসেন এশিয়াতে। এখানে তিনি ৫ বছরের মত মালয়শিয়া, জাপান ও কম্বোডিয়ায় বাস করেন। এই সময়কালে কিম এডওয়ার্ড লেখালেখির পাশাপাশি শিক্ষকতা পেশার সাথে যুক্ত থাকেন।   তার প্রকাশিত ছোটগল্প ও উপন্যাসের বইয়ের মধ্যে রয়েছে Sky Juice, The Secrets of a Fire King,  The Memory Keeper`s Daughter। ১৯৯০ সালে ছোটগল্পের বই Sky Juice এর জন্য লাভ করেন Nelson Algren পুরস্কার। ২০০৫ সালে প্রকাশিত তার প্রথম উপন্যাস The Memory Keeper`s Daughter নিউইয়র্ক টাইমসের বেস্টসেলিংয়ের তালিকায় ছিল। বইটি একইসাথে ৩৮টি দেশে প্রকাশিত হয়। পরে এ উপন্যাসটির গল্প অবলম্বনে টিভি সিরিয়াল তৈরি হয়।

২০১১ সালের ১ জানুয়ারি প্রাকশিত হয়েছে তার দ্বিতীয় উপন্যাস ‘দ্য লেক অফ ড্রিম’। উপন্যাসটি কিম এডওয়ার্ডের  শৈশবের দেখা নিউইয়র্কের ফিঙ্গার লেক এরিয়াকে কেন্দ্র করেই লিখিত হয়েছে। এখানে দেখা যায়, বিশ্বভ্রমণকারী লুসি নানা দেশ ঘুরে শেষে সে তার নিজের শহরে ফিরে আসে। এখানে এসে সে তার বাবার মৃত্যুর সংবাদ পায় এবং পারিবারিক খুব গোপন একটি বিষয় জানতে পারে যা সে আগে জানত না। পারিবারিক এই গুপ্ত বিষয়ের আকস্মিক আবিষ্কারই এই উপন্যাসকে সামনের দিকে এগিয়ে নিয়ে যায়।

‘দ্য লেক অফ ড্রিমস’ উপন্যাসটি নিয়ে goodreads-এর পক্ষ থেকে সম্প্রতি সাক্ষাৎকারটি নিয়েছেন ওয়াশিংটন ডিসির সাংবাদিক বেথান পেটরিক। ]

‘দ্য লেক অফ ড্রিমস’-এর প্লট নির্বাচনের ক্ষেত্রে কী আপনাকে অনুপ্রাণিত করেছে?

 কিম এডওয়ার্ডস : নানা ব্যতিক্রম জায়গা থেকে একটি বইয়ের গল্প আসতে পারে। এটা বিভিন্ন আকৃতিতে বিভিন্নভাবে লেখা হতে পারে। বছরখানেক আগে আমি ‘দ্য লেক অফ ড্রিমস’ উপন্যাসটির ড্রাফট তৈরি করে ড্রাফটি বাতিল করে দিয়ে একটি বাক্সের মধ্যে ফেলে রাখি। লিখতে শুরু করি ‘দ্য ‘সিকরেট অব এ ফায়ার কিং’-এর গল্পগুলি। অবশ্য তখন আমি লিখছিলাম এই বইয়ের আরেকটি প্রাথমিক ড্রাফট। পাশাপাশি চলছিল ‘দ্য মেমোরি কিপার’স ডটার’ উপন্যাসটি লেখা।

শেষ পর্যন্ত, ‘দ্য মেমোরি কিপার’স ডটার’ প্রকাশের পর, আমি প্রস্তুত হচ্ছিলাম ফেলে রাখা পুরনো লেখাটায় হাত দেওয়ার। বাতিল ও প্রাথমিক ড্রাফটি হাতে নিয়ে আমি উপলব্ধি করি, এই সমস্ত লেখা আমাকে গল্পের ভেতরের দিকে নিয়ে আসছে, যা একজন নারীর তার ফেলে আসা জায়গায় ফিরে যাওয়ার একটি অনুসন্ধনী গল্প ।


: এই উপন্যাসের প্রধান চরিত্র লুসি জারেট দীর্ঘ সময় জাপানে থাকার পর নিউইয়র্কের আপস্টেইটে তার বাড়িতে ফিরে আসে। এখানে এসে সে তার পরিবারের কিছু গুপ্ত ইতিহাস জানতে পারে যা সে আগে জানত না। ‘দ্য মেমোরি কিপার’স ডটার’-এর মতো এ নতুন বইটিও একটি পরিবারের গুপ্ত বিষয় নিয়ে, যেখানে অতীত প্রভাব ফেলে বর্তমানের ওপর। আপনি যখন লেখাটা শুরু করেন তখন কি ভেবেছিলেন লেখাটা ওই রকমের হবে?

কিম এডওয়ার্ডস : এই নতুন উপন্যাসটির কিছু অংশ আমি আমার মধ্যে বহন করছিলাম ‘দ্য মেমোরি কিপার’স ডটার’ উপন্যাসটি লেখার আগে থেকেই। এই বইয়ের পরিবারের গোপন ইতিহাস বা রহস্য অবশ্যই ওই বইটার চেয়ে ভিন্ন ধরনের। একটি ভিন্ন জায়গা থেকে জটিল রহস্যময় গল্প বলার ক্ষেত্রে কাঠামোগতভাবে নিজেকে আমি চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি করি।

নিজের পুনরাবৃত্তির চেয়ে কিছুটা নতুন কাজ করা আমার কাছে অনেক বেশি মজার। এ কারণে আমার কাছে লেখালেখির সমস্ত আনন্দ হচ্ছে গল্পটাকে আবিষ্কার করা।

লেখার শুরুতে আমি জানতাম না আমার উপন্যাসের মূল চরিত্র অতীত থেকে কী আবিষ্কার করবে। এরকম অবস্থা চলছিল, যতক্ষণ না আমি এই উপন্যাসের কেন্দ্রীয় চরিত্র লুসির পয়েন্ট অব ভিউ থেকে লিখতে শুরু করেছিলাম যা গল্পটাকে প্রাচীনতা থেকে বর্তমান রূপে আনে।

আমি জানতাম এখানে দেশ সম্পর্কে আলোচনার অনেক জায়গা রয়েছে, যা ছিল তিনটি প্রজন্মের গল্প। এ ধরনের গল্প বলার তাগাদা থেকেই আমি রোজি চরিত্রের মাধ্যমে প্রজন্ম বদলের ইতিহাস লিখি [লুসির গ্রেট গ্রেট আন্ট]। লিখি অতীতে এই চরিত্রগুলির জীবনে কী ঘটেছিল, বর্তমানেই বা এগুলির কী অবস্থা।

পদ্ধতিটা খুবই রহস্যময় এবং অন্তর্জ্ঞানলব্ধ। কিন্তু বিষয়টাকে দুই দিক থেকেই দেখা যায়- ইঙ্গিতময় অন্তঃসারশূন্যভাবে আবার অতিমাত্রায় বুদ্ধিবৃত্তিক গল্পের ছাঁচে। যখন আমি শুনি কেউ বলে, গল্প লেখার আগেই শেষটা জোনে ফেলে, আমি ভাবি ওয়াও, এটা আমার ক্ষেত্রে কেন কখনো ঘটে না!

: আপনার লেখার ক্ষেত্রে ভূগোলবিদ্যা একটা গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। ‘দ্য মেমোরি কিপার’স ডটার’ উপন্যাসে  কেনটাকির ভূগোল একটা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। নিউইয়র্কের আপস্টেইট সম্পর্কে কিছু বলুন, যেখানে আপনি ফিঙ্গার লেক অঞ্চলের মাঝে বেড়ে উঠেছেন।

কিম এডওয়ার্ডস : এই বই লিখতে আমি আমার দেখা ফিঙ্গার লেককে ব্যবহার করেছি! এটা এমন একটা জায়গা যেখানে আমি একটি কাল্পনিক গল্প তৈরি করেছিলাম। এক্ষেত্রে সব সময় আমার চেষ্টা ছিল বাস্তবসম্মতভাবে জায়গাটাকে তুলে ধরা। আমি জানতাম আমার বইটি ওই ফিঙ্গার লেকের পরিবেশের দিকে বিস্তারিতভাবে এগিয়ে যাচিছল। আমি এটা ভালোবাসি, এটা একটি সুন্দর জায়গা। উপন্যাসে এ জায়গার বিস্তারিত ব্যাবহর ছিল আমার জন্য একটি আনন্দদায়ক কাজ।

ফিঙ্গার লেক খুব শীতল একটি লেক যা একসময় ছিল নদী। তাই এই লেকটি দীর্ঘ, সরু এবং অস্বাভাবিক গভীর। কোনো কোনো জায়গায় সেনেকা ৮০০ ফিট গভীর।

উপন্যাসের কাহিনীতে ব্যবহৃত জয়াগাগুলিতে ওই গভীরতাই তুলে আনা হয়েছে, যেমন- একটি হচ্ছে লুসির স্বপ্নের দৃশ্যগুলো। লুসির কাছে তার স্বপ্নগুলো খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এখানে সে তার অতীতকে অনুসন্ধান করে। কিন্তু গল্পের মধ্যে লুসির অনুসন্ধানী আত্মভ্রমণও খুবই গুরুত্বপূর্ণ। তার স্বপ্নগুলি তার মনের ভেতরের অন্তর্দ্বন্দ্বেরই বহিঃপ্রকাশ যা তার বর্তমানের মধ্যে অতীতকে নিয়ে আসে।  

: আমি শুনতে চাচ্ছি আপনার নতুন বইটার পাশাপাশি এটি লেখার একটি মুহূর্ত সম্পর্কে।

কিম এডওয়ার্ডস : বইটি লেখার শুরুতে আমার ধারণা ছিল আমাদের সংস্কৃতি ও গির্জায় নারীদের স্থান কতখানি ছিল এই বিষয়ে। তখন আমার একটি চমৎকার মুহূর্তের অভিজ্ঞতা হয়েছিল, আমি গির্জার জানালা দিয়ে দেখেছিলাম কয়েকটি প্রতীক। তখনি সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম আমার উপন্যাসের লুসিও ওইরকম কিছু দেখবে। এগুলি অন্তর্জ্ঞানলব্ধ, প্রাচীন প্রতীক- এসব বিষয়ে আমি একসময় অনেক পড়াশোনা করি। আমার এই পাঠের বিষয়গুলো বইয়ে চমৎকার সুর হয়ে মিশে যায় এবং খুব গুরুত্বপূর্ণ প্রতীক হয়ে ওঠে।
 
এ বইতে চার্চের নারীদের ভূমিকা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। আমার জীবদ্দশায় এপিসোপাল চার্চে যা ঘটেছিল নিঃসন্দেহে এটা এক ধরনের বিপ্লবী পরিবর্তন। কয়েক বছর আমি চার্চে যাইনি, কেননা নরীরা ছিল সেখানে প্রান্তিক। কিন্তু এখন নারীরা মূল জায়গায় চলে এসেছে, এটি বিস্ময়করভাবে লক্ষণীয় বিষয়। আমি রেভ চরিত্রটি তৈরি করতে পেরে খুবই গর্বিত ছিলাম।
‘দ্য লেক অব ড্রিম’ উপন্যাসে সুজি এক শক্তিশালী নারী চরিত্র, যে ধরনের চরিত্র এর আগে খুব বেশি লেখা হয়নি।  

: আপনার লেখালেখির একটি দিনের বর্ণনা আমি শুনতে চাচ্ছি। লেখালেখির ক্ষেত্রে আপনার কি বিশেষ কোনো অভ্যাস আছে?

কিম এডওয়ার্ডস : [শব্দ করে হেসে] আপনি কি আমার লেখালেখির একটি ভালো দিন আর খারাপ দিন সম্পর্কে শুনতে চাচ্ছেন?

 [এখান থেকেই এগুনো যাক] প্রতিদিন আমি আমার মেয়েদের স্কুলে রেখে বাসায় চলে আসি। এ সময় সাধারণত কফি খাই না [বদভ্যাস মনে হয়!]। ইন্টারনেট লাইন বন্ধ করে দেই। আগের দিন যা লিখেছিলাম ওইগুলি মন দিয়ে পড়ি। এরপর ধ্যানমগ্ন হয়ে বসে নতুন কিছু ভাবতে চেষ্টা করি, যা আমাকে দিয়ে সৃজনশীল কিছু করাতে পারে।

বছর কয়েক আগে আমি রিকি মোডির এক লেখায় পড়ি, প্রতিদিন অন্তত ১০০০ শব্দ লেখা উচিত। কথাটা আমার ভালো লাগে, আমি ওইভাবেই প্রতিদিন চেষ্টা করি। তার মানে এই নয় যে আপনাকে প্রতিদিন ১০০০ ভালো শব্দই কেবল লিখতে হবে, অথবা কেবল ১০০০ শব্দই। এর মানে হলো আপনি যতক্ষণ আপনার বিস্ময়কর জায়গাটা খুঁজে পাচ্ছেন না ততক্ষণ পর্যন্ত চেষ্টা চালিয়ে যান। আপনাকে একটি উপন্যাসের অংশগুলি খণ্ড-খণ্ড ভাবে লিখতে হবে, তারপর দেখবেন কেমন করে সর্বোত্তমভাবে সবগুলি খণ্ড একত্র হয়। প্রতিদিনের নির্দিষ্ট একটি লক্ষ্যে যেতে নিয়মিত ১০০০ শব্দ লেখা আমাকে দুশ্চিন্তা থেকে বের করে আনে।
এভাবেই আমি লিখি। অনেক সময় বেশি লিখি, কখনই কম না।

: কোন ঔপন্যাসিক, বই বা কাদের চিন্তা লেখালেখির ক্ষেত্রে আপনাকে প্রেরণা জোগায়?

কিম এডওয়ার্ডস : যে সমস্ত লেখক লেখালেখির ক্ষেত্রে আমাকে অনুপ্রাণিত করেছে, তারা হলেন উইলিয়াম ট্রেভর, অ্যালিস মুনরো এবং ভার্জিনিয়া উলফ। তাদের চরিত্র নির্মাণের অন্তর্দৃষ্টি এবং কাব্যিক ভাষার ব্যবহার আমাকে আকৃষ্ট করে। এছাড়া আন্তন চেখভ ও গ্যাব্রিয়েল গারসিয়া মার্কেজের লেখাও আমাকে প্রেরণা জোগায়।

: এখন আপনি কী পড়ছেন ?

কিম এডওয়ার্ডস : সম্প্রতি আমি পড়ে শেষ করেছি জেফরি ইউজেনিডসের বই Middlesex, ক্রিস ক্লেভের Little Bee, ক্যারল শিলডসের স্মৃতিকথা Breaking Night ও The Stone Diaries। পড়ার জন্য ডেস্কে আপাতত রেখেছি অ্যালিস মুনরোর Too Much Happiness। এছাড়া আমার সম্পাদক আমাকে এইমাত্র পড়ার জন্য দিলো ট্রেভোরের Collected Stories।

বাংলাদেশ সময় ২০১৫, জানুয়ারি ২৭, ২০১১

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
welcome-ad