বাংলা ভাষার মর্যাদা রক্ষা এবং ভাষাভিত্তিক জাতিরাষ্ট্র অর্জনে যেসব আলোকময় মানুষ প্রাণ বিসর্জন দিয়েছিলেন, সাহসের তর্জনী উঁচিয়ে মিছিলে স্লোগানে যোগ দিয়েছিলেন এবং ভাষা আন্দোলনের সময় বিভিন্ন কর্মকান্ডে অংশগ্রহণ করেছিলেন, তাঁদের নিয়ে মূল্যায়নধর্মী সংখ্যা প্রকাশ করে ‘প্রতিবুদ্ধিজীবী’ আবারো প্রমাণ করল তার নামের সার্থকতা। ভাষা শহীদদের নিয়ে এই সংখ্যাটি বাঙালি জাতির আত্মপরিচয়ের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
বাঙালির স্বাধীনসত্তা ও বাংলাদেশের স্বাধীনতা অর্জনের সঙ্গে যে বিষয়টি ওতপ্রোতভাবে জড়িত সে ঘটনার নায়কদের সম্পূর্ণ পরিচয় আমরা এখনো জানি না। স্বাধীনতার চার দশক পরও তাঁদের জীবনচরিত নিয়ে পূর্ণাঙ্গ কোনো কোষগ্রন্থ বা ইতিহাস রচিত হয়নি। দেশের দায়িত্বশীল কর্তাব্যক্তিরাও এটা নিয়ে তেমন মাথা ঘামাননি। ফলে যে ইতিহাসের সিঁড়ি বেয়ে আমরা উঠে এসেছি স্বাধীনতার চূড়ায়, সে ইতিহাসকেই বিস্মৃত হতে চলেছি।
এ উপলব্ধি থেকেই অনেক শ্রম দিয়ে সুপরিসর ভাষাসৈনিক সংখ্যাটি ‘প্রতিবুদ্ধিজীবী’ সম্পাদক সাদাত উল্লাহ খান জাতির সামনে উপস্থাপিত করেছেন। বাংলাদেশের রাষ্ট্রিক, সাহিত্যিক, সামাজিক ইতিহাসকে কাছ থেকে দেখলে বলা যায়, এটা অন্য ধরনের একটি কাজ। ১৫০ জন ভাষাসৈনিকের জীবনচরিত গ্রন্থিত করে ৩০০ পৃষ্ঠার এই গবেষণাকর্মটি ইতিহাসের একটি দায় পালন করেছে। বাঙালির ভাষা ও রাষ্ট্র অর্জনের ইতিহাসের তথ্য জানার জন্য অনুসন্ধিৎসু গবেষক, লেখক, ঐতিহাসিকদের ‘প্রতিবুদ্ধিজীবী : ভাষাসৈনিক সংখ্যা’র কাছে বার বার ফিরে আসতে হবে।
সংখ্যাটিতে তিন অধ্যায়ে তুলে ধরা হয়েছে দেশের ভাষাসৈনিকদের। প্রথম অধ্যায়ে রয়েছেন ভাষাশহীদরা, দ্বিতীয় অধ্যায়ে আছেন ভাষাসৈনিক রাষ্ট্রনায়কেরা, শেষ অধ্যায়ে আছেন দেশের নানা প্রান্তে ছড়িয়ে থাকা জীবিত ও মৃত ভাষাসৈনিকরা। এই অধ্যায়ে উঠে এসেছেন এমন অনেক ভাষাসৈনিক যারা বিস্মৃতির অতলে তলিয়ে ছিলেন।
সংক্ষিপ্ত কিন্তু জরুরি তথ্যপূর্ণ এ সংখ্যাটি ভাষা-আন্দোলনের ইতিহাস চর্চায় অনেক উপাদান জোগাবে।
প্রতিবুদ্ধিজীবী : ১৩ ‘ভাষাসৈনিক সংখ্যা’
সেপ্টেম্বর ২০১০
সম্পাদক : সাদাত উল্লাহ খান
প্রচ্ছদ : শীবু কুমার শীল
মূল্য : ৩০০.০০
বাংলাদেশ সময় ১৮৪৫, জানুয়ারি ১৫, ২০১১