ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১২ বৈশাখ ১৪৩১, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫

শিল্প-সাহিত্য

অকাল প্রয়াত কবি আপন মাহমুদ স্মরণে

আপনস্মৃতি আপনকথা

ফারুখ সিদ্ধার্থ | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৮৫১ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ২০, ২০১২
আপনস্মৃতি আপনকথা

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম থেকে অনুজপ্রতিম কবি ও সাংবাদিক রহমান মাসুদ ফোন করেছে- ফারুখ ভাই, আপনের ওপর একটা লেখা দিতে হবে আপনাকে। রহমানকে বলেছি- চেষ্টা করব ভাই, কথা দিতে পারছি না।

সে বলেছে- হ্যাঁ, চেষ্টা করবেন; আমি জানি, বিষয়টা আপনার জন্য কতটা প্যাথেটিক।
 
রহমান মাসুদরা জানে, আজ যে আপনকে সবাই চেনে তাকে আমিই প্রথম বুকে নিয়েছিলাম।   সেদিনটা ছিল ২০০৩-এর নভেম্বর কোনো একদিন। চট্টগ্রামের লিটলম্যাগ কর্মীরা তাকে আমাদের কথা বলেছিল; বলেছিল- আজিজ সুপার মার্কেটে তাদের পাওয়া যাবে...। শুধু সেই সূত্রে সে এসেছিল ঢাকায়; সারাদুপুর পাবলিক লাইব্রেরি চত্বরে, সারাবিকেল শাহবাগে, কাটিয়েও আজিজ মার্কেট খুঁজে পায়নি।

প্রতিদিনের মতো সেদিনও, আজিজের সন্ধ্যায়, আড্ডায় মশগুল ছিলাম আমরা। অশোক দাশগুপ্ত, আমজাদ সুজন, রুদ্র আরিফ, বিজয় আহমেদ প্রমুখ ছিল সেই আড্ডার সদস্য। আমাদের নিয়মিত আড্ডার অন্যতম সদস্য মাসুদ হাসান তখনো এসে পৌঁছেনি। অশোক তার ভারতভ্রমণের অভিজ্ঞতা শেয়ার করছে আমার সাথে। আমার ডানপাশেই আমজাদ সুজন ও অন্যান্য কবি। তারা কথা বলছে, যতদূর মনে পড়ে, সদ্যপ্রকাশিত একটা লিটল ম্যাগাজিন নিয়ে। পাঠক সমাবেশের সামনে দাঁড়িয়ে আমরা আড্ডা দিচ্ছি। মাসুদ অফিস থেকে ফিরলেই আমরা একসাথে চা-পান করব, সেজন্যে সিগারেট হাতেই অপেক্ষা করছি। এমন সময় খুব সাদামাটা একটা ছেলে, ক্লান্ত-ভঙ্গিতে, আমাদের সামনে এসে দাঁড়ায় এবং ‘এক্সকিউজ মি’ ব’লে বিনীত সালাম দেয়। তার চোখে-মুখে রাজ্যের ক্লান্তি; গায়ে, আকাশি প্যান্টের সাথে ইন করা, শাদার ভেতরে খয়েরি চেক গেঞ্জি; কাঁধে খাকি ঝোলাব্যাগ- হাতে একটা বই; সবই পুরনো, ব্যবহারে জীর্ণ ও মলিন। অনতিদূর থেকে কেউ তাকে দেখিয়ে দিয়েছে, তাই সরাসরি সুজনের দিকেই তাকিয়ে সে বলে, ‘প্লিজ, আপনি কি আমজাদ সুজন?’
     সুজন অবাক হয়ে বলে, আপনাকে তো ঠিক...
আপনি আমাকে চিনবেন না, আমি আপন মাহমুদ, চট্টগ্রাম থেকে এসেছি। ওখানকার লিটলম্যাগ কর্মীরা আপনার কথা বলেছে।
তাদের নাম?
আপন, সবিনয়ে, কয়েকজনের নাম বলে।
সুজন আমাদের দেখিয়ে বলে,- এনাদের চেনেন?
আপন একটু হেসে বলে,- আমি তো দেখে কাউকেই চিনব না, কেবল আন্দাজে দুয়েকটি নাম বলতে পারি। তা-ও কার কী নাম, বলতে পারব না, স্যরি। আজই প্রথম এসেছি কি-না।
ঠিক আছে, সুজন বলে, ইনি ফারুখ সিদ্ধার্থ; আর উনি অশোক দাশগুপ্ত...
আমি কিছুটা সম্মানিত বোধ করি। আপন আমার সাথে হাত মিলিয়ে বলে- আপনি বোধহয় বড়কাগজেই বেশি লেখেন।
যতই লিখি, ছোটকাগজই আমাদের দাঁড়ানোর জায়গা- আমাদের প্রাণকেন্দ্র।
আমার কথাটা বোধহয় ওর ভালো লাগে। আমি, মুঠোর মধ্যে ওর হাতটা আবেগে গ’লে যাচ্ছে টের পাই। আন্তরিকভাবেই জিজ্ঞেস করি- ঢাকায় বেড়াতে এসেছেন? আমার এ-প্রশ্নে তার হাতটা আমার মুঠোর মধ্যেই একটু দৃঢ় হয়ে ওঠে; বলে- বেড়াতে নয়, আমি কবিতাকে ভালোবেসে বেরিয়ে পড়েছি, কিছু একটা করতে চাই।
    তার এমন কথা শুনে আমরা একটু ন’ড়েচ’ড়ে দাঁড়াই। আমি বলি- ও, আচ্ছা।
ভোরের কাগজের সাহিত্য বিভাগের সহকারী সম্পাদক অশোকের পরিচয় পেয়ে আপনের হাত-দুটো জোড়া হয়ে বুকের সাথে মিশে যায়। অশোক তার অফিসে আপনকে আমন্ত্রণ জানায়।
    আমরা দুজন ফিরে আসি আমাদের আগের কথায়। আপন সুজনদের সাথেই কথা বলে। কিছুক্ষণ পর সুজন বলে- ফারুখ ভাই, আজ রাতটা উনাকে আপনার কাছেই রাখতে হবে।
    সে-আমি ভেবেই রেখেছি, তোমাকে আর ভাবতে হবে না, উনি আমার কাছেই থাকবেন।

সবাই খুশি হয়। আমাকে ধন্যবাদ জানিয়ে সুজন বলে, মাসুদ ভাই এসে গেছেন, চলেন- চায়ের দিকে যাই। খুশির রেশ ধরেই সামনের দিকে পা বাড়াই। আপনকে কিছু খাওয়ানো দরকার- আমরাও খাব, এতক্ষণ মাসুদ ছিল না, তাই খাইনি কিছু। কথায়-কথায় আমরা চ’লে আসি পিজির পেছনের রাস্তায়, দেয়াল ঘেঁষো চায়ের দোকানে। প্রতিদিন চা-নাশতা ঘিরে আমাদের যেটুকু সময় তার বেশিরভাগ আজকাল এখানেই কাটে।

অনেক অনুরোধ সত্ত্বেও একটা কলা ও বনরুটিকেই যথেষ্ট মনে করে আপন। লাল-চায়ের সাথে বেনসনের ধোঁয়ায় জমে ওঠে আড্ডা। প্রথম আড্ডাতেই, যেটুকু কথা হয় তার সাথে, তাতে অনেকটাই ফুটে ওঠে তার ব্যক্তিত্ব। তার মৃদুভাষায় অথচ সুদৃঢ় উচ্চারণে চমৎকার গুছিয়ে কথা-বলা আমাকে মুগ্ধ করে। তার স্বপ্নের কথা শুনে ইতোমধ্যে মাসুদও তাকে আপন ভাবতে শুরু করেছে।

আজিজপাড়ার আড্ডা-শেষে অন্যদিনের মতো শাহবাগের মোড়ে না গিয়ে পিজির পেছন দিয়ে আমি চ’লে আসি নিজের আস্তানায়। আজ বেশি রাত করা যাবে না, কারণ আপন রয়েছে সাথে। তাকে ভাত খাওয়াব। আমার বাসার কাছেই একটা বাসায় আমি পেইংগেস্ট হিসেবে খাওয়া-দাওয়া করি। ওখানে আমার সাথে আরো খায় কবি সুফিয়ান সজল ও আজাদ আলাউদ্দিন; আশুতোষ সুজনও কিছুদিন খেয়েছে; ইদানীং ফারুকী ভাইর সাথে পরিচালনার কাজেই বেশি ব্যস্ত হয়ে পড়েছে সে, তাই এদিকে খুব একটা আসে না আর। সজলটাও বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রের কাজে, মাসের বেশির ভাগ সময় ঢাকার বাইরেই, বিভিন্ন জেলা শহরে, কাটায়। শুধু আজাদ আর আমিই নিয়মিত। আমরা চারজনই, একবছর আগে এখানে, একসাথে উঠেছিলাম।

জিজ্ঞেস না করলে কোনো কথাই বলে না আপন; তাই সে-রাতে আর বেশি কথা হয় না আমাদের; খাওয়ার পর, সারাদিনের ক্লান্তি আর অবসাদে ঘুমিয়ে পড়ে আপন।
 
সকালে নাশতা ক’রে, আপনকে নিয়ে, বের হই। পরীবাগেই, ‘সংস্কৃতি বিকাশ কেন্দ্র’-এ যাওয়ার গলির মুখেই, একটা চায়ের দোকান। সেখানে বেঞ্চিতে ব’সে চায়ে চুমুক দিতে-দিতে আপনকে বলি- এবেলা আজিজে ভালো না-ও লাগতে পারে, সেক্ষেত্রে বিকাশ কেন্দ্রে ঢুকেও আপনি সময় কাটাতে পারেন। আমি নিজেও একটা সময় ওখানে চমৎকার কাটিয়েছি। এখনো মাঝেমধ্যে যাই। ওখানে ব’সে যেমন পড়া যায়, তেমনি লেখাও যায়। দুপুরে, যেখানেই থাকেন, সোজা চ’লে আসবেন বাসায়। দুজন একসাথে খাব। এই নিন রুমের চাবি। হাসিমুখে ধন্যবাদ দিয়ে আপন আমাকে সিগারেট অফার করে। আমি তার মুখের দিকে তাকিয়ে, চোখের ভেতরও, বহুদূর দেখতে পাই।

দুপুরে ফিরে এসে দেখি আপন ঘরেই, বিছানায় শুয়ে, কী যেন পড়ছে। কখন এসেছেন, জিজ্ঞেস করতেই মিষ্টি হেসে বলে, এই তো- কিছুক্ষণ আগে।
কোনো অসুবিধে হয় নি তো?
না, না, বরং ভালোই কেটেছে সময়। চায়ের দোকানদার ওই মামার সাথে গল্প করেছি, তার কাছে আপনাদের সবার কথা শুনেছি। তাছাড়া সঙ্গে সিগারেট তো ছিলই।
চলুন লাঞ্চ করা যাক।
খাওয়ার পর আপনকে বলি- আপনি রুমে গিয়ে রেস্ট নিন, আমি অফিস থেকে বেরিয়ে সরাসরি আজিজে চ’লে আসব; ওখানেই দেখা হবে- কেমন? আমার আগেই দেখবেন সুজন, বিজয়, মামুন... ওরা চলে আসবে।
আপন হাসিমুখে বলে, ঠিক আছে- আপনি ভাববেন না, আপনার ঘরেও তো অনেক বই- আমি ভালোই থাকব।

আপনের একাকীত্ব নিয়ে আর ভাবতে হয়নি, তবে একটা কাজ না পাওয়ায় তাকে বারবার হতাশ মনে হয়েছে, যেটা ভাবনার বিষয় হয়ে ওঠে। পাক্ষিক অন্যদিনে আমি, আর দৈনিক আজকের কাগজে মাসুদ- দুজনে চেষ্টা করি। এরমধ্যে সময় পেলেই আপনকে নিয়ে ঘুরে বেড়াই; বিভিন্ন সামাজিক ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে যাই। এভাবে কাটে প্রায় দেড় মাস। অতঃপর মাসুদের প্রচেষ্টাই জয়ী হয়। তার অফিসেই, ইভনিং শিফটে, আপনের একটা ব্যবস্থা হয়।

ইভনিং শিফট হওয়ায় আপন এখন আমারও পরে এসে আড্ডায় যোগ দেয়। এখন আমরা আরো রাত ক’রে ঘরে ফিরি। আজাদও আমাদের সাথেই ফেরে। আজাদ আর আপন, দুজনই, রাত-জেগে লেখে। আমি গভীর রাতেও ঘুম ভেঙে শুনি তারা একে অপরকে প’ড়ে শোনাচ্ছে তাদের সদ্যলেখা কবিতা।

এরমধ্যে একদিন সিঙ্গাপুর থেকে উন্নত চিকিৎসা নিয়ে দেশে ফিরে আসেন মৌলবাদীদের হাতে মারাত্মক আহত লেখক হুমায়ুন আজাদ। এয়ারপোর্টে নেমেই তিনি সাংবাদিকদের কাছে তাঁর প্রতিক্রিয়ায় বলেন- বাঙলাদেশ আজ আমারই মতো ক্ষতবিক্ষত। ... আপনকে খুব ছুঁয়ে যায় সেই কথাগুলো। অচিরেই একটা মুক্তচিন্তার সংগঠন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে হুমায়ুন আজাদকে সংবর্ধনা দেয় এবং তাঁর একটা বিশেষ বক্তৃতার আয়োজন করে। সেদিন ডে-অফ থাকায় সজল আর আমি আপনকে নিয়ে যাই সেই অনুষ্ঠানে। হুমায়ুন আজাদের বক্তব্যের পর তাঁকে বিভিন্ন প্রশ্ন করে দর্শক-শ্রোতারা। তাদের মধ্যে জয়ীতা নামের একটা মেয়ে ড. আজাদের কাছে এক বুদ্ধিদীপ্ত প্রশ্ন রাখে। অনুষ্ঠান থেকে ফিরে এসে আপন আর সহজে ভুলতে পারে না সেই শ্যামাসুন্দরীকে। যখনই মনে পড়ে জয়ীতার কথা, তখনই উজ্জ্বল হয়ে ওঠে আপনের মুখ, তখনই তাকে সুন্দর দেখায়।

ঘুম থেকে একটু বেলা করে উঠলেও, অফিসে যাওয়ার আগ পর্যন্ত, অনেকটা সময় পায় আপন। সময়টা তার পড়া ও লেখায় বেশ কাজে আসে। আমি রাতেই বাসায় ফিরে শুনি তার নতুন কবিতা। এভাবে তার অনেক কবিতার আমি প্রথম শ্রোতা বা পাঠক।

ছোট-বড় পছন্দের সব কাগজেই আসতে থাকে আপনের লেখা- আপনের কবিতা। আমি যত পড়ি সেইসব নতুন কবিতা, অবাক বিস্ময়ে লক্ষ করি, আমার নিজের ভেতর একটা স্ববিরোধী ব্যাপার কাজ করে। একবার কবি হিসেবে আপনের পাশে নিজেকে বড় অসহায় মনে হয়, আরেকবার আপনের জন্যে গর্ববোধ করি। তখন বুকটা ফুলে ওঠে।

জীবনানন্দের পর আবুল হাসান আমার সবচে প্রিয় কবি; শুধু আমার নয়, আমার অনেক বন্ধুরও তিনি প্রিয়তম কবি। আমাদের সংকট-সংগ্রাম-স্বপ্ন- অন্তর্নিহিত প্রায় সকল ভাবনা তিনি ধারণ করেছেন তাঁর কবিতায়। যেটুকু পারেননি তিনি, তার জন্যে তাঁকে দায়ী করি না। কেননা তিনি জন্মেছিলেন আমাদের এক প্রজন্মেরও আগে। তাই তাঁর কবিতায় আমাদের চাওয়া-পাওয়ার যেটুকুমাত্র অনুপস্থিত, আমার বিবেচনায়, তার জন্যে দায়ী কেবল সময়। আপনের ক্ষেত্রে তো সে-সমস্যা নেই। সে এ-সময়ের, আমাদের সময়ের কবি; আর সময়টাকে সে ধরতেও পেরেছ, যেটুকু পেয়েছে। তাই সে আমাদের সময়ের আবুল হাসান।

২০০৫-এ পরীবাগের আস্তানা ছেড়ে আমি আর সজল চলে আসি বাংলামটর, ৬ ময়মনসিংহ রোডের একটা বাড়িতে। আপনকে রেখে আসি আজাদের কাছে। আপন মন-খারাপ করে; আবার মনে-মনে খুশিও হয়। তার খুশির কারণ, আমার কাছে থাকলে সে-বাসার খরচাপাতির কোনো পে-করতে পারে না, আমি তাকে সে-সুযোগ দিই না। আমার বাসাবদলের মাধ্যমে তার সে-সমস্যা দূর হয়।

তবে আরেকটা সমস্যা টের পাই অচিরেই। আজকের কাগজে কাজ করে সে নিজে দাঁড়াতে পেরেছে ঠিক, কিন্তু মা-বাবার বড় ছেলে হিসেবে তাদের বর্তমান চাহিদার যোগান দিতে পারছে কই? সেই কষ্ট তাকে অহর্নিশ কুরে-কুরে খাচ্ছে।

তাহলে কী করা যায়? ভাবতেই মনে পড়ে, আমার অফিসে তার জন্যে একটা আবেদন আগেই করা আছে; তার ভিত্তিতেই সম্পাদককে অনুরোধ করি, এবং তাতেই কাজ হয়। সম্পাদক সাহেব আপনের সাক্ষাৎকার নিয়ে আমাকে ডেকে পাঠান তাকে বুঝিয়ে দিতে।

আমার পাশের ডেস্কে বসেই আপন কাজ করে। সকাল এগারটায় এসে, চার ঘণ্টা কাজ ক’রে, গ্রিনরোড থেকে চ’লে যায় সাতমসজিদ রোডে। এভাবেই ব্যস্ততায় পেয়ে বসে তাকেও।

২০০৬-এ নতুন কর্মসূত্রে আমি চ’লে আসি খুলনায়। আজো আছি। এর মধ্যে মুঠোফোনে কথা হলেও দেখাসাক্ষাৎ নিয়মিত হয়নি আর আপনের সাথে। শুধু ২০১১-য়, ফেব্রুয়ারিতে, একবার খুব ভালোভাবে দেখা হয়েছিল। সেদিন একসাথেই অনেক সময় ও সুখবর দিয়েছিল আপন। ফেরার আগে, বইমেলা থেকে তার সদ্য প্রকাশিত ‘সকালের দাঁড়ি কমা’ বইয়ের দুটো কপি নিয়েছিলাম- এক কপি বন্ধু আসাদ ফিরোজের, আরেক কপি নিজের জন্যে।

খুলনায় ফিরে এসে, এখানকার কবিদের দেখিয়েছিলাম ‘সকালের দাঁড়ি কমা’। বইটা নিয়ে তাদের মধ্যে কাড়াকাড়ি পড়ে গিয়েছিল। একজন তো নিয়ে আর ফেরত দেন নি। পরে আমাকে আরো কপি সংগ্রহ করতে হয়েছে; ফটোকপিও করে দিতে হয়েছে কয়েকজনকে।

আপনের কবিতা তো এর আগে কতই পড়েছি, কিন্তু সমস্যায় পড়েছি তার বইটা হাতে নিয়ে; যতবারাই শুরু করেছি, শেষ করতে পারিনি। পড়া শুরু করলেই ‘মা প্রজাপতি ও অন্যান্য ছায়া’তেই বসে থাকি; বেলা গড়িয়ে যায়, তবুও উঠতে পারি না। এবার সিদ্ধান্ত নিয়েছি আসমানি কিতাবের ন্যায় উল্টোদিক থেকেই শুরু করব ‘সকালের দাঁড়ি কমা’।

অনেক না-পাওয়ার পাশে, আপনকে পাওয়ার পর, একটা বড় আনন্দ আমি এতদিন পেয়ে এসেছি; তা আবার দু-দিক থেকে: একদিকে তার অগাধ সৃষ্টিশীলতা, অন্যদিকে তাকে আবিষ্কারের আনন্দ। আপনের আকস্মিক অকাল প্রয়াণ, বড় অসময়ে এইভাবে চলে যাওয়া, সেই অনাবিল আনন্দের সামনে টাঙিয়ে দিয়েছে মৃত্যুর কালোপর্দা।

বাংলাদেশ সময়: ১৮৪০ ঘণ্টা, ২০ সেপ্টেম্বর, ২০১২
সম্পাদনা: এমে জে ফেরদৌস [email protected]

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।