ঢাকা, শুক্রবার, ৬ বৈশাখ ১৪৩১, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫

শিল্প-সাহিত্য

তরুণ কবিকে লেখা রিলকের চিঠি [পর্ব-২]

ভূমিকা ও অনুবাদ : জাহানারা পারভীন | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৪২৫ ঘণ্টা, এপ্রিল ১৭, ২০১২
তরুণ কবিকে লেখা রিলকের চিঠি [পর্ব-২]

তরুণ কবিকে লেখা রিলকের চিঠি [পর্ব-১]

 

১৯০২ সাল। শরতের এক বিকেল।

ভিয়েনার মিলিটারি অ্যাকাডেমি পার্কে বয়সী বাদাম গাছের ছায়ায় পাঠে নিমগ্ন এক তরুণ। ফ্রানজ কাপুস। হাতে একটি কাব্যগ্রন্থ। পাশ দিয়ে যাচ্ছিলেন অধ্যাপক হোরাচেক। বইটি হাতে নিয়ে দু-একটি পৃষ্ঠা নেড়েচেড়ে বললেন— শেষ পর্যন্ত আমাদের রেনে রিলকে কবি হয়ে গেল? কাপুসকে বলেন, ১৫ বছর আগে তিনি যখন সেন্ট পল্টনে লোয়ার মিলিটারি স্কুলে কর্মরত, রিলকে তখন সেই স্কুলের ছাত্র। ও ছিল শান্ত, গভীর বোধসম্পন্ন, মেধাবী। সামরিক স্কুলে পড়াশোনার সূত্রে কাপুস প্রিয় কবিকে পাঠায় নিজের কবিতা, জানতে চায় তাঁর মূল্যায়ন, উপদেশ। অনেকদিন পর আসে উত্তর। নীল খামের ওপর প্যারিসের সিলমোহর। শুরুটা এভাবেই।  

কখনো দেখা হয়নি তাদের। শুধুই পত্রালাপ। ভক্তের সাথে কবির। মিলিটারি অ্যাকাডেমির ছাত্র কাপুসের বয়স তখন উনিশ, রিলকের সাতাশ। রিলকের কাছে এ রকম চিঠি নতুন কিছু নয়। প্রায়ই আসত অপরিচিত, তরুণ ভক্তের চিঠি। প্রতিটি চিঠির উত্তর দিতেন ধৈর্য ও আন্তরিকতার সঙ্গে। তবে কাপুসের চিঠিতে অধ্যাপক হোরাচেকের প্রসঙ্গ তাকে মনে করিয়ে দেয় সেই মিলিটারি স্কুলের কথা, যেখানে কেটেছে জীবনের সবচে’ তিক্ত সময়। সেই সূত্রেই কাপুসের সঙ্গে গড়ে ওঠে চমৎকার এক পত্র-সম্পর্ক। এসব চিঠিতে উঠে এসেছে নারী-পুরুষের সম্পর্ক, প্রেম, বিয়ে, ধর্ম, দর্শন— জীবনের সব গূঢ়বোধ, রহস্য নিয়ে কবির মতাদর্শের। এক একটি চিঠি যেন কবিতার সমার্থক। লেখার সময়কাল ১৯০৩ থেকে ১৯০৮ সাল। এই দশটি চিঠি বিশ্বের অন্যতম সেরা পত্রসাহিত্য হিসেবে বিবেচিত। রিলকের মৃত্যুর তিন বছর পর কাপুস এই দশটি চিঠি প্রকাশ করে।

পড়তে গিয়ে মনে হয়েছে যেন আমার জন্যই লেখা। যাপিত জীবনের হাজারো ব্যস্ততায় আমার ঝিমিয়ে পড়া কাব্যবোধ কখনো কখনো জাগিয়ে দিয়েছে এসব চিঠি। তাগিদ দিয়েছে সাহিত্যের প্রতি আরও বেশি মনোযোগী হতে। মনে হয়েছে যারা লিখছেন বা লিখতে চান, সৃষ্টিশীলতা যার জীবনের অংশ; বিশেষ করে তরুণ কবিদের এই চিঠিগুলো কাজে আসতে পারে। ইংরেজি থেকে অনুবাদের ক্ষেত্রে চেষ্টা করেছি মূলের কাছাকাছি থাকতে। রিলকেকে নিয়ে লেখা নিবন্ধে কোনো তাত্ত্বিক আলোচনা নয়, কবির নিঃসঙ্গ, কাব্যভ্রমণের পথে আলো ফেলে, তুলে আনতে চেয়েছি তাঁর কবি হয়ে ওঠার গল্প।

 

চিঠি--৩

শিল্পী হয়ে ওঠার মানে হল, সংখ্যা বা সময়ের হিসেবে নয়, বরং বৃক্ষের মতো নীরবে পরিণতির দিকে যাওয়া
                                                                                                     ভিয়ারগিয়ো, পিসার কাছে (ইতালি),

                                                                                                          ২৩ এপ্রিল, ১৯০৩      

                                                                           
প্রিয় কাপুস,

তোমার ইস্টারের চিঠি পেয়ে খুব ভালো লেগেছে। ব্যক্তিগত অনেক কথা জানতে পেরেছি। আর যেভাবে তুমি জেকবসন সম্পর্কে মূল্যায়ন করেছ, মনে হয়েছে তোমাকে ভুল নির্দেশনা দেয়া হয়নি। জীবন সম্পর্কে তোমার বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তরে যে পরামর্শ দিয়েছি তা ব্যর্থ হয়নি।
 
এখন ‘নিলস লিহনে’  উপন্যাসটি তোমার কাছে তুলে ধরবে বিস্ময় ও গভীরতা। যতই পড়বে মনে হবে এর দুই মলাটের মধ্যে সব কিছুই আছে, জীবনের ক্ষুদ্র অংশ থেকে শুরু করে পূর্ণাঙ্গ সব উপাদান। এখানে এমন কিছু নেই যা বোঝা যায় না। সবই জীবন্ত। যেন স্মৃতির আন্দোলিত প্রতিধ্বনি। জীবনের সব অভিজ্ঞতারই আলাদা মূল্য আছে। সামান্য একটি ঘটনাও ভাগ্যের মধ্যে উন্মোচিত হয়ে ওঠে। ভাগ্য নিজেই আলাদা এক সৌন্দর্য, যেন বিশাল এক কাপড়; কোমল দক্ষ হাতে বোনা প্রতিটি সুতার বন্ধন; পারস্পরিক নির্ভরতার এক অনিবার্য কোরাস। প্রথম পাঠেই তুমি হয়ে যাবে মুগ্ধ পাঠক। এরপর তোমার জন্য অপেক্ষা করবে বিস্ময় ও স্বাপ্নিক এক ঘোর। প্রথম পাঠের ঘোর ফিরে আসবে বারবার। সে একই উপলব্ধিতে আক্রান্ত হবে তুমি। প্রতিটি পাঠে নতুন অভিজ্ঞতা। পাঠকের কাছে স্পষ্ট হয়ে উঠবে জীবনের জটিল দর্শন। মজবুত হয়ে উঠবে জীবনের প্রতি বিশ্বাসের শেকড়। স্পষ্ট  হবে আনন্দ ও মহত্ত্বের মাঝে বাঁচার অর্থ।

এরপর তুমি পড়তে পার ম্যারি গ্রুবের ভাগ্য ও প্রত্যাশা নিয়ে বইটা। সেই সাথে পড়বে জেকবসনের চিঠিপত্র, কলাম, টুকরো কথা, সব শেষে তার কবিতা। হোক না তা অনুবাদ। তবুও জেনো, কবিতা বেঁচে থাকে অসীম শব্দ সাগরে। সম্ভব হলে জেকবসনের পুরো সমগ্রটাই কিনে ফেল। তিন খণ্ডে প্রকাশিত এই সংস্করণটির প্রকাশক ইউজিন ডাইবেরিস। অনুবাদও ভালো হয়েছে। দাম প্রতি খণ্ডে পাঁচ-ছয় মার্ক করে পড়বে।

‘গোলাপগুলো এখানে থাকতে পারতো’ সস্পর্কে তোমার মন্তব্যের সাথে আমি একমত। সত্যিই সৌন্দর্য ও ফর্মের দিক থেকে লেখাটি সেরা। তোমার মূল্যায়ন যথার্থ। তবে যিনি ভূমিকা লিখেছেন তার দৃষ্টিভঙ্গি অবশ্য আলাদা। তোমাকে একটা অনুরোধ করি, সমালোচনা যতটা সম্ভব কম পড়ার চেষ্টা করবে, সমালোচনা অধিকাংশ ক্ষেত্রেই হয়ে থাকে একপেশে, আংশিক, অর্থহীন বাকচাতুরির খেলা। আজ যে মতের জয়জয়কার, কাল তা খারিজ হয়ে যায় অনায়াসেই।

অন্তহীন নিঃসঙ্গতার আতুর ঘরে জন্ম যে শিল্পের, অর্থহীন সমালোচনা তাকে কখনোই ছুঁতে পারে না। একমাত্র ভালোবাসাই পারে তাকে স্পর্শ করতে, ধারণ করতে; পারে এর প্রতি সুবিচার করতে। সব সময় বিশ্বাস রেখো নিজের উপর। নিজের অনুভূতির উপর। অন্যদের মূল্যায়ন, আলোচনা কিংবা বিচারের উপর নয়। তোমার মনের স্বাভাবিক বিকাশই তোমাকে পথ দেখাবে। দেবে অন্তর্গত সত্যের সন্ধান। তোমার বিচারবোধকে বেড়ে উঠতে দাও নীরবে। কোন বাধা যেন সৃষ্টি না হয়। প্রকৃত প্রগতি, বিচারবোধ তৈরি হয় মনের গভীরে। এ ব্যাপারে কোনো জোর-জবরদস্তি চলে না। এমনকি একে ত্বরান্বিতও করা যায় না। যে কোনো সৃষ্টিরই আগে চাই গর্ভকালীন বাস। সম্পূর্ণ গর্ভবাসের পর যে জন্ম সে জন্মই সার্থক। মনের প্রতিটি উপলব্ধি ও চিন্তার ভ্রুণকে লালন করতে হয়। আড়ালের অন্ধকারে বেড়ে উঠতে দিতে হয় পরিপূর্ণতা লাভের জন্য। অপ্রকাশযোগ্য এই বোধ। বোধের নাগালের পুরোপুরি বাইরে। বিনীত ধৈর্যের সাথে প্রতীক্ষা করতে হয় সেই মুহূর্তটির জন্য। দেখবে, জন্ম নেবে নির্মল, স্পষ্ট প্রত্যয়। উপলব্ধি ও সৃষ্টির সৃজনশীল বৃত্তে এভাবেই একজন শিল্পীর বেঁচে থাকা।
     
এক্ষেত্রে সময়ের কোনো সীমারেখা নেই। এক বছর এমন কি এক দশকও কোনো বড় সময় নয়। শিল্পী হয়ে ওঠার মানে হল, সংখ্যা বা সময়ের হিসেবে নয়, বরং বৃক্ষের মতো নীরবে পরিণতির দিকে যাওয়া। যে শেকড়ের রসকে নিয়ে জবরদস্তি করে না, আত্মবিশ্বাসের সাথে মোকাবেলা করে বসন্তের ঝড়কে। সামনের গ্রীষ্মকাল আদৌও আসবে কি না তা ভেবে উদ্বিগ্ন হয় না। গ্রীষ্মকাল ঠিকই আসে— শুধু তাদের জন্য, যারা ধৈর্যশীল, যারা অমরত্বের কথা জেনেও নির্লিপ্ত; অমরত্ব তাদের পায়ের নিচে অপেক্ষা করছে জেনেও নিশ্চুপ থাকে। এসব আমি শিখি প্রতিদিনের জীবন থেকে। বড় বেদনাহত এই জ্ঞান। এর কাছে আমার কৃতজ্ঞতার শেষ নেই। একই সাথে আরো একটি বিষয় জেনেছি— ধৈর্যই হলো সবকিছুর মূল।
   
রিচার্ড ডেহমেল, তার বই সম্পর্কে আমার মতামত জানতে চেয়েছ। এই লেখকের সাথে আমার কিছুটা জানাশোনা রয়েছে। তার লেখার ভালো কিছু পড়ার সময় কেবলই মনে হয়েছে পরের পৃষ্ঠা না আবার আগের সুন্দর অনুভূতিকে নষ্ট করে দেয়। যা প্রশংসাযোগ্য তা না আবার অর্থহীন মনে হয়। তুমি তার লেখার মেজাজ ঠিকই চিনতে পেরেছ। তার সম্পর্কে তোমার মন্তব্যই ঠিক— ‘প্রবল উত্তাপে লেখা ও বাঁচা’। যৌনতার সঙ্গে লেখকের অভিজ্ঞতা এত আশ্চর্য নিবিড় যে তার বেদনা ও যৌনসুখ সমার্থক বলে মনে হয়। তার কাছে যৌনাকাঙ্ক্ষা ও চরম সুখ যেন একই বিষয়। যদিও এ দুটি বিষয় সম্পূর্ণ ভিন্ন। উত্তপ্ত না বলে যদি যৌনতা বলা হয় মহান এবং শুদ্ধ অর্থে, ধর্ম যাকে পাপহীনতার সার্টিফিকেট দিয়েছে, তাহলে তার কবিত্বশক্তি অবশ্যই মহৎ ও শক্তিশালি আদিম প্রবৃত্তির মতো। আগ্নেয়গিরির মতোই ধ্বংসের অন্তহীন ছন্দে সে ছড়িয়ে পড়ে চারপাশে।

কিন্তু এই শক্তি সবসময় ত্রুটিহীন, সরল ও বিরতিহীন হয় না। লেখকের জন্য এটা একটা কঠিন পরীক্ষা। এই শক্তির সারল্য ধরে রাখতে হলে তাকে হতে হবে অবচেতন। নিজের সেরা সাফল্য সম্পর্কে হতে হবে উদাসীন। নিজের মধ্যে ঝড় তুলে যখন যৌনতার কাছে পৌঁছবে, দেখবে এমন একজনকে যে পুরোপুরি শুদ্ধ নয়। শুদ্ধ ও পরিণত যৌনতার বদলে সে পৌঁছে যাবে এমন এক যৌন জগতে যা মোটেও মানবিক নয়, শুধুই পুরুষের কামতৃষ্ণা, ভোগ, লালসার প্রকাশ। শুধুই উত্তাপ, বজ্রপাত, অস্থিরতা এবং প্রাচীন দৃষ্টিভঙ্গি, পৌরুষের আষ্ফালন। আবহমান কাল থেকে পুরুষ প্রেমকে বিকৃত ও ভারাক্রান্ত করেছে। কারণ ভালোবাসাকে সে দেখে পুরুষের দৃষ্টিতে, মানুষের চোখে নয়। তাই তার যৌন অনুভূতি সংকীর্ণ, বিদ্বেষভাবপূর্ণ ও ক্ষণিকের। অমরত্বের কোনো সম্ভাবনা নেই এতে। তবে তা সৃষ্টিকে প্রভাবিত করে, করে তোলে সংকীর্ণ। নিজের মনেই জাগিয়ে তোলে সন্দেহের ঘূণ। মনে মনে সে হয়ে ওঠে অনিশ্চিত। ক্ষণিকের আবেগ বলেই তা স্থায়ী হয় না। নিশ্চিহ্ন হয়ে যায় কালের গর্ভে। অবশ্য অধিকাংশ সৃষ্টির ভাগ্যেই ঘটে এই পরিণতি। অধিকাংশ শিল্পসৃষ্টিই এমন। তবে এর ভেতরের যা কিছু ভালো তা হয়ত পাঠক উপভোগ করবে; তবে মুহূর্তের সেই উত্তেজনার জগতে হারিয়ে না যাওয়াটাই হবে পাঠকের জন্য বুদ্ধিমানের কাজ। আর ডেহমেলের লেখার জগতকেও যেন সে নিজের জীবনের অবলম্বন না ভেবে বসে। কারণ এই জীবন বাস্তবতা থেকে অনেক দূরে, বিভ্রান্তিপূর্ণ, ভীতিকর। ক্ষণিকের আবেগি আনন্দের বিনিময়ে তা দীর্ঘস্থায়ী দুঃখভোগের বিপর্যয় ডেকে আনে। তবে এমনও হতে পারে এই দুঃখবোধের বিপর্যয় সাহস যোগাবে, সুযোগ করে দেবে অমরত্বকে সন্ধান করার।
 
নিজের লেখা বই তোমাকে পাঠাতে পারলে ভালো লাগতো। কিন্তু আমি খুব দরিদ্র লেখক। প্রকাশের পর নিজের বইয়ের প্রতি আর কোনো অধিকার থাকে না। নিজের বই কিনে পছন্দের কাউকে উপহার দেয়ার সামর্থ্যও নেই। আমার সাম্প্রতিক প্রকাশিত বই ও প্রকাশকের ঠিকানা দিচ্ছি। চাইলে দুয়েকটি কিনতে পার। ভাবতে ভালো লাগছে, ঠিক মানুষের হাতে পড়বে আমার বই।

তোমার
রাইনের মারিয়া রিলকে



 

চিঠি— ৪

ভালোবাস তোমার নিঃসঙ্গতাকে, নিজেই হয়ে ওঠ নিজের সেরা বন্ধু
                                                         ওয়ার্পসবেদে, ব্রেমেনের কাছে
                                                                      জুলাই ১৬, ১৯০৩      
                                                                                                                                                                    
                                                                  

প্রিয় কাপুস,      
দশদিন হল ক্লান্ত ও অসুস্থ শরীরে প্যারিস থেকে এসেছি উত্তরের এই সমতলভূমিতে। এখানকার নীল আকাশ আর নির্জন প্রকৃতির সান্নিধ্যে সেরে উঠব ভেবেছিলাম। কিন্তু আমি আসার আগ থেকেই প্রকৃতি এখানে বিরূপ, ম্যারাথন বৃষ্টি হচ্ছে বেশ ক’দিন ধরে। আজই প্রথম দেখি ভালো হয়ে গেছে চিরচেনা আকাশের চেহারা, প্রকৃতির ওপর থেকে সরিয়ে নিয়েছে বিরামহীন জলজ আধিপত্য। এই হাস্যোজ্জ্বল আলোকিত দিনে তোমার প্রতি রইল আন্তরিক শুভেচ্ছা।
       
প্রিয় কাপুস, তোমার আগের চিঠির উত্তর এখনো দিতে পারিনি। ভেবো না ভুলে গেছি। অন্যসব চিঠির মাঝে যতবার তোমার চিঠি চোখে পড়েছে, ততবারই পড়েছি। মনে হয়েছে কাছাকাছিই আছ তুমি। তোমার ২মে’তে লেখা চিঠিটির কথা মনে আছে? এতদূরে এই নির্জন স্থানে বসেও সেটি পড়ছি। পড়তে পড়তে জীবন নিয়ে তোমার উদ্বেগ আমাকে ভাবাচ্ছে। যখন প্যারিসে ছিলাম তার চেয়েও বেশি অনুভব করছি তোমার ভাবনা। কারণ প্যারিসের যান্ত্রিক জীবনের তুলনায় এই পরিবেশ অনেক নির্জন। এখানে চারপাশে বিস্তৃত সবুজের সমারোহ। সমুদ্র থেকে নির্মল বাতাস এসে ছুঁয়ে যাচ্ছে প্রতি মুহূর্তে।

 কারো পক্ষেই তোমার প্রশ্নের উত্তর দেয়া সম্ভব নয়, ব্যাখ্যা করা সম্ভব নয় তোমার গভীর অনুভূতির, যার ভেতরে রয়েছে স্বতন্ত্র সত্তা। এমনকি সবচে স্পষ্টভাষী ব্যক্তিও এক্ষেত্রে কোনো সাহায্য করতে পারবে না তোমাকে। কারণ শব্দ বা কথায় সব বোঝানো যায় না। কিছু কিছু বিষয় সত্যিই অপ্রকাশযোগ্য। তবুও এটুকু বলতে পারি, আমার চোখ এই মুহূর্তে যা দেখছে এর ওপর যদি ভরসা করতে পার, হয়তো পেয়েও যেতে পার কোনো সহজ সমাধানের সূত্র। যদি প্রকৃতিকে বিশ্বাস কর, সহজ সরল প্রকৃতির সামান্য উপাদান যা সহজে কারো চোখেই পড়ে না, দেখো— তোমার কাছে তা ধরা দেবে বিপুল সম্ভাবনায়। অনেক বড় কিছু খুঁজে পাবে সেখানে। এসব সাধারণ উপকরণকে যদি ভালোবাসতে পার, সরল মনে যদি পাশে দাঁড়াতে পার সাধারণ মানুষের, বিশেষ করে দরিদ্রদের, সবকিছুই সহজ ও সামঞ্জস্যপূর্ণ হয়ে উঠবে তোমার কাছে। তোমার অবচেতনেই ঘটবে এসব। তোমার আড়ালে থাকা সচেতন মন বিস্মিত হয়ে দেখবে তোমার অন্তর্গত চেতনার ধার। এই জাগ্রত চেতনাই তোমার কাছে মেলে ধরবে এতকালের আড়ালে থাকা অজানা সব গুপ্ত কুঠুরি।
     
বয়সে তুমি এখনো তরুণ। মাত্র তো হাতেখড়ি হয়েছে জীবনের। তাই তোমার প্রতি একান্ত অনুরোধ— ধৈর্য ধর, মনের যেসব প্রশ্নের উত্তর এখনো পাওনি তার জন্য অধৈর্য হয়ো না। প্রশ্নগুলোকে বুঝতে চেষ্টা কর, ভালোবাস, মনে কর তারা আটকে আছে তালাবদ্ধ ঘরের কোনো বইয়ের পৃষ্ঠায়, যা লেখা হয়েছে অজানা কোনো বিদেশি ভাষায়। উত্তরের জন্য ব্যস্ত হয়ো না। উত্তর খোঁজার যথার্থ সময় এটা নয়। উত্তরের সঙ্গে একাত্ম হওয়া ও এগুলোকে মনে লালন করা এখন তোমার পক্ষে সম্ভব নয়। আসল কথা হলো, সমাধানের সঙ্গে একাত্ম হওয়ার আগে প্রশ্নগুলোর সাথে একাত্ম হও, এদের মধ্যে বাঁচার চেষ্টা কর। তাহলে ভবিষ্যতে দেখবে নিজেই পেয়ে গেছ কাঙিক্ষত সব প্রশ্নের উত্তর।   হয়তো তোমার মধ্যেই রয়েছে সৃষ্টিশীলতার বীজ। শুদ্ধভাবে বাঁচার জন্য হয়তো তুমি বিশেষভাবে আশীর্বাদপ্রাপ্ত। নিজেকে তৈরি করে নাও সেভাবে। কান পাত হৃদয়ে। মনের অন্তঃস্থল থেকে আসা সব চিন্তাকে বরণ কর গভীর বিশ্বাসের সাথে। কোনো কিছুকে ঘৃণা করো না।

সত্যি যৌনকর্ম খুব কঠিন কাজ। কিন্তু আরো যেসব কাজ আমাদের প্রতিদিন করতে হয় সেগুলোও কঠিন। সত্যি বলতে কি গুরুত্বপূর্ণ কোনো কাজই সহজ নয়। আর কোনো কিছুই গুরুত্বহীন নয়। যদি তা বুঝে থাক নিজের মেধায়, আপন রুচির স্বাতন্ত্র্যে, প্রচলিত প্রথার স্রোতে গা না ভাসিয়ে যৌনতাকে চিনতে শেখো। এক্ষেত্রে তোমার কাজে আসতে পারে তোমার ব্যক্তিত্ব, অভিজ্ঞতা, শক্তি ও ফেলে আসা শৈশব। ফলে আর নিজস্বতাকে হারানোর ভয় থাকবে না। কিংবা মনে হবে না যে কাঙিক্ষত কোনো কিছুর যোগ্য নও তুমি।
     
শারীরিক আনন্দ হলো ইন্দ্রিয়ের সংবেদনশীল অনুভূতি। এই অভিজ্ঞতা ভিন্ন কিছু নয়। কোনো কিছুর দিকে গভীর দৃষ্টিতে তাকানো কিংবা সুস্বাদু ফল খেলে জিভে যেমন তৃপ্তি হয় তেমনই এক চমৎকার অনুভূতি। এ যেন পৃথিবীকে, সীমাহীনকে জানার প্রক্রিয়া; পৃথিবীরই জ্ঞান, সকল জ্ঞানের পরিপূর্ণতা। এ বিষয়ে কোনো সংকোচ বা অস্বস্তি থাকা ঠিক নয়। দুঃখজনক হচ্ছে—  অধিকাংশ মানুষই এই শিক্ষার অপব্যবহার করে। জীবনের সেরা মুহূর্তগুলোকে একসঙ্গে জড়ো করে তাকে ভুলে থাকতে চায়। উত্তেজনায় খরচ করে জীবনের সব ক্লান্তি। খাওয়াদাওয়া ব্যাপারটিকেও আজকাল বদলে ফেলা হয়েছে। প্রয়োজন বনাম আধিক্যের ভারসাম্য নেই। তাই চাওয়ার ব্যাকরণও ঘোলাটে হয়ে গেছে। অথচ আমরা ভুলে যাই— সহজ-সরল চাওয়াই জীবনকে ভরে তোলে কানায় কানায়, নতুনভাবে চিনতে শেখায়। তাই প্রকৃত, স্বচ্ছ জীবনযাপনের সুবিধার্থে যে কোনো ব্যক্তির উচিত এসব বিষয় সম্পর্কে ষ্পষ্ট ধারণা নেওয়া। অন্তত নিজের জন্য হলেও। তবে এসব পরামর্শ সেই নিঃসঙ্গ ব্যক্তির জন্য যে বেঁচে থাকে আত্মানুসন্ধানের মাঝে। পরনির্ভর ব্যক্তির জন্য এসব কথা নয়। নিঃসঙ্গ মানুষ আবিষ্কার করবে পশু-পাখি, গাছ-পালার ভেতরে থাকা সব নীরব সৌন্দর্য। সে বুঝবে জীবন সম্পর্কে এদের ভালোবাসা টেকসই, আকাঙক্ষাও মৌনতায় ঘেরা, তার চোখে পড়বে গাছপালা ও প্রাণীকূল ধৈর্যের সাথে একাত্ম হচ্ছে, বংশ বিস্তার করছে। বেড়ে উঠছে আপন মহিমায়। শারীরিক উত্তেজনা কিংবা বেদনার চেয়ে এখানে বড় ভূমিকা পালন করছে প্রয়োজন। এই প্রয়োজন ইচ্ছার চেয়েও শক্তিশালী। মানুষেরা যদি এই প্রকৃতির রহস্য থেকে শিক্ষা নিত, যে রহস্য সামান্য তুচ্ছ বিষয়ের মধ্যেও বিস্তৃত; হালকাভাবে নয় একটু গভীরভাবে শ্রদ্ধার সাথে ভাবতো বিষয়টা নিয়ে! মানসিক বা শারীরিক বিষয়ের পরিণতি একই। মানসিক অনুভবের উৎসও তো শরীর। দেহের প্রতিক্রিয়ার কারণেই পরিবর্তন ঘটে মনে। চিরায়ত আনন্দে ও কোমলতায় একই প্রকৃতি তাদের। স্রষ্টা হয়ে কোনো সৃষ্টির জন্ম দিয়ে তাকে সঠিকভাবে বেড়ে উঠতে দেয়া জগতের চলমান প্রক্রিয়ারই মূর্ত প্রকাশ। বস্তু ও প্রাণী হলো ধারাবাহিক প্রজননের উদাহরণ। এই প্রজনন মানব জীবনের আনন্দ উপভোগকে বাড়িয়ে তোলে, সমৃদ্ধ করে। জীবনের ধর্মই এমন। একটি প্রাণ থেকে জন্ম হয় কোটি নতুন প্রাণের। এবং তা বেড়ে ওঠে আপন উত্তরাধিকারের ছায়ায়।

বংশানুক্রমিকভাবেই আমরা দেখে আসছি এই ধারাবাহিক জন্মক্রম। সৃজনশীল মনে কোনো কিছু সৃষ্টির চিন্তার আগে মনের ভেতর পুনরুজ্জীবিত হয়ে ওঠে, জীবন্ত হয়ে ওঠে ফেলে আসা অতীতের হাজারো রাতের মুগ্ধ ভালোবাসার স্মৃতি। এসব স্মৃতি মনকে ভরে তোলে পূর্ণ মর্যাদায়। এসব মুহূর্ত মনকে ঘিরে রাখে আনন্দ, শ্রদ্ধা, মমত্ব, গভীরতায়। ভবিষ্যৎ কবির জন্য শক্তি যোগায় এসব অপ্রকাশযোগ্য উপকরণ। কবির কাজ তখন ভবিষ্যতকে স্বাগত জানানো। সে যদি তা নাও করে তবুও অনিবার্য ভবিষ্যৎ আসবেই, তাকে জড়িয়ে ধরবে অন্ধ আলিঙ্গনে। এই দুর্ঘটনার ভিত্তিমূলেই সৃষ্টি হবে শিল্পের, এই সংকল্পের অংকুর প্রবল শক্তিতে এগিয়ে যাবে নিজস্ব কোনো আবরণ বা অবলম্বনের দিকে। যার ভেতর থেকে জাগতিক নিয়মে বাহ্যিকভাবে জন্ম নেবে সে। এই বাইরের আবরণ দেখে বিভ্রান্ত হয়ো না। সবকিছুর ভেতরেই রয়েছে নির্মাণের নিজস্ব প্রথা।
 
এই রহস্যের মাঝে যারা মিথ্যাকে আশ্রয় করে নকল মুখোশে বাঁচে, সংখ্যায় তারা মোটেও কম নয়। তাদের কাছে সেই রহস্য রহস্যই থেকে যায়। কখনো খোঁজ পায় না এর। যেন ডাকে আসা চিঠি না খুলে ফেরত পাঠিয়ে দেয়া হয়েছে ভুল ঠিকানায়। তাদের কাছে রহস্য যেন সেই চিঠির মতো, চিরকাল থেকে যায় অনাবৃত। মানুষের জীবনে অনেক জটিলতা। বিচিত্র তার রূপ। এসব নিয়ে অস্থির হয়ে কাজ নেই।

তবে সব কিছুর পরও দেশ-কাল-গোত্র ভেদে সব জাতির কাছেই মাতৃত্ব সবার উপরে। মাতৃত্বেই পূর্ণতা পায় মেয়েদের সৌন্দর্য। মাতৃত্বের মাধমেই প্রকাশ ঘটে একজন নারীর যার জন্য সে অপেক্ষা করে, প্রস্তুতি নেয় এবং একদিন জন্ম দেয় এক নতুন জীবনের। আর মাতৃত্বই মায়েদের প্রকৃত সৌন্দর্য। যে সন্তান সে লালন করে নিজের ভেতর, জন্মের পর বড় করে তোলে এবং বৃদ্ধ বয়সে স্মৃতিচারণ করে এসব দিনের। শুধু নারীরই নয় পুরুষর মধ্যেও মাতৃত্ব রয়েছে। সেটা শারীরিক ও মানসিক দুরকমই। নিজের প্রজননক্রিয়ার মাধ্যমে সেও সন্তান জন্মদানের অংশীদার। আর মনের ভেতরেই সে সৃষ্টি করে পূর্ণতা। এবং হয়তো যৌনতা সম্পর্কে মানুষের প্রচলিত ধারণা থেকে তা আলাদা। মানুষের যেমন ধারণা, নারী-পুরুষের যৌনতার সাদৃশ্য তার চেয়ে অনেক বেশি। আবারো পৃথিবীকে নতুনভাবে নির্মাণ করা যাবে এক নতুন আদর্শ প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে। যেখানে নারী-পুরুষ সকল ভুলবোঝাবুঝি, বিরোধ পেছনে ফেলে দুজন স্বতন্ত্র, পরিপূর্ণ, মুক্ত মানুষ হিসেবে স্বাভাবিক নিয়মে ভাইবোনের মতো, প্রতিবেশীর মতো, মানুষের মতো মেলামেশা করবে পরস্পরের সাথে। যৌনতার যে গুরুভার তাদের ওপর চাপানো, যারা তা মেনে আসছে আবহমান কাল থেকে তাও তারা পালন করবে সমান দায়িত্বে, স্বাভাবিক ধৈর্য ও আগ্রহের সাথে।

তবে ভবিষ্যতে এমন দিনও আসবে, যেদিন অনেকের জন্যই সহজ হয়ে উঠবে সবকিছু। তবে নিঃসঙ্গ মানুষের ভবিষ্যতের দিকে তাকিয়ে কাজ নেই। এখনই তারা এর জন্য প্রস্তুতি নিতে পারে। সবকিছু নিজ হাতে তৈরির জন্য। তাতে হোক না সামান্য ভুল। ক্ষতি নেই। তাই বন্ধু, ভালোবাস তোমার নিঃসঙ্গতাকে, নিজেই হয়ে ওঠ নিজের সেরা বন্ধু, সঙ্গী। আপন করে নাও মনের সব কষ্টকে। কাছে টেনে নাও ব্যথিত মুহূর্তকে। যারা কাছের মানুষ তারাও যেন তোমার কাছ থেকে অনেক দূরে। কারণ আর কিছুই নয়, তোমার লেখালেখি। তুমি কবি, তাই তোমার চারপাশের সবকিছুর বিস্তৃতি ঘটছে অনেক দূর পর্যন্ত। কাছের জিনিস বা মানুষকে যদি আবিষ্কার করো সীমাহীন দূরত্বে, তাহলে ধরে নিও দূর আকাশের তারাদের মধ্যে ছড়িয়ে গেছে তোমার হৃদয়ের গভীরতা ও পরিধি। এই বিস্তৃতিকে আনন্দের সাথে গ্রহণ করো। সেখানে তোমার সাথে কেউ নেই। তোমার সঙ্গী তুমি নিজেই। যারা পিছিয়ে আছে তাদের প্রতি বিরক্ত হয়ো না। তাদের প্রতি তোমার আচরণ হওয়া চাই বিনয়ী, ভদ্র। শান্তভাবে আত্মবিশ্বাসী হয়ে তাদের মুখোমুখী হও। তাদের সম্পর্কে সন্দেহের প্রকাশ ঘটিয়ে তাদের ঝামেলায় ফেলো না।

তোমার বিশ্বাস ও আনন্দে তাদের কিছুই এসে যায় না। তারা বুঝবে না বরং ঘাবড়ে যাবে। নিজের সঙ্গে মিলিয়ে তাদের মধ্য থেকে এমন কয়েকজনকে খুঁজে বের কর যাদের মন খাঁটি, অনুভূতি নিখাদ। তাদেরকে বদলানোর চেষ্টা করো  না। কারণ তুমি নিজেইতো বদলে যাচ্ছো প্রতি মুহূর্তে। তাদের সাথে দেখা হলে তাদের বেঁচে থাকা, জীবনযাপন, যার সাথে তোমার অনেক দূরত্ব, সে জীবনকে ফেলনা মনে করো না। তাকে গুরুত্ব দিও, ভালোবেসো। প্রশ্রয় দিও তাদের যারা একাকীত্বের মুখোমুখী হতে ভয় পায়। অথচ এই একাকীত্বেই তোমার বিশ্বাস। বাবা-মা ও সন্তানের মধ্যে চলতে থাকা সম্পর্কের টানাপড়েনকে নতুন করে উস্কে দিও না। ঘি ঢেলো না এই উত্তপ্ত আগুনে। এই টানাপড়েনের নাটকে ছেলেমেয়েরা হারিয়ে যায়, তাদের প্রতি পরিবারের মুরব্বিদের স্নেহে চিড় ধরে। বয়োজ্যেষ্ঠদের কাছে পরামর্শ চেয়ে কাজ নেই। তাদের সঙ্গে তোমার ভালো বোঝাপড়া হওয়া কঠিন। নতুন প্রজন্মের আচরণ বোঝাও তাদের পক্ষে সহজ নয়। তবে জেনে রাখো, তাদের মনে সব সময় সঞ্চিত আছে চিরায়ত স্নেহের উত্তরাধিকার। অনেকদূর পর্যন্ত ছড়ানো এই স্নেহের শেকড়। এই আশীর্বাদের অনেক শক্তি, এর ছায়ার মধ্যে থাকলে তুমি যেতে পারবে বহুদূর; তোমার কাঙিক্ষত গন্তব্যে।
    
কদিন পরই তুমি পেশাগত জীবনে প্রবেশ করছ জেনে ভালো লাগল। এর ফলে তুমি নিজের পায়ে দাঁড়াবে, স্বাবলম্বী হবে। সবদিক থেকেই। তবে একটা বিষয় ভালো করে ভেবে নিও। পেশা তোমার লেখক জীবনকে বিড়ম্বনায় ফেলবে না তো? আমার বিবেচনায় জীবিকা ও লেখালেখির মাঝে সমন্বয় করা কঠিন। পেশাগত কাজের ক্ষেত্রে নিজস্ব মতের কোনো মূল্য থাকে না। এখানে ব্যক্তিস্বাতন্ত্র্য বজায় রাখা মুশকিল। তবে এক্ষেত্রে তোমার পাশে দাঁড়াবে তোমার একাকীত্ব। সব প্রতিকূল পরিবেশে সে তোমাকে পথ দেখাবে। তোমাকে জানাচ্ছি আমার সবটুকু শুভেচ্ছা। আর জেনো তোমার প্রতি আছে আমার পূর্ণ আস্থা।    

                                                                                                                                 তোমার
                                                                                                                     রাইনের মারিয়া রিলকে

[চলবে]

বি.দ্র : চিঠিগুলি  জাহানারা পারভীন অনূদিত  ‘রিলকে নৈশব্দ্যে ও নিঃসঙ্গতায়’ বইয়ের সৌজন্যে প্রকাশ করা হলো।

বাংলাদেশ সময় ১৪০৩, এপ্রিল ১৭, ২০১২

সম্পাদনা : ফেরদৌস মাহমুদ, শিল্প-সাহিত্য সম্পাদক

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
welcome-ad