ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১১ বৈশাখ ১৪৩১, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫

শিল্প-সাহিত্য

অদ্বৈত মল্লবর্মণের ৬২তম মৃত্যুবার্ষিকী সোমবার

আশরাফুল ইসলাম, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১২২৯ ঘণ্টা, এপ্রিল ১৬, ২০১২
অদ্বৈত মল্লবর্মণের ৬২তম মৃত্যুবার্ষিকী  সোমবার

ঢাকা: সাহিত্যিক ও সাংবাদিক অদ্বৈত মল্লবর্মণের ৬২তম মৃত্যুবার্ষিকী সোমবার। মাত্র ৩৭ বছর বয়সে যক্ষ্মা রোগে আক্রান্ত হয়ে ১৯৫১ সালের আজকের এই দিনে কলকাতার নারকেলডাঙ্গার ষষ্ঠীপাড়ার নিজ বাড়িতে মৃত্যুবরণ করেন তিনি।



চল্লিশের দশকের গুরুত্বপূর্ণ লেখক অদ্বৈত মল্লবর্মণ ‘তিতাস একটি নদীর নাম’ উপন্যাস রচনা করে বাংলাসাহিত্যে আজও অমর হয়ে রয়েছেন।

হিন্দুদের নিন্মবর্ণ ‘মালো’ সম্প্রদায়ে জন্ম নিয়েছিলেন তিনি,  শৈশব ও কৈশোরে খুব কাছ থেকেই প্রত্যক্ষ করেছেন মৎস্যজীবী মানুষের জীবন-সংগ্রাম। তাই ধীবর সমাজের (মৎস্যজীবী) কঠোর জীবনসংগ্রামকেই অসাধারণ বর্ণনায় জীবন্ত করে ফুটিয়ে তুলেছেন অদ্বৈত মল্লবর্মণ।

তিতাস নদী ও তার দু’কূলের মানুষের জীবনযাত্রাকে ঘিরে রচিত উপন্যাসটিতে কিশোর, সুবল, অনন্ত, বনমালী প্রমুখ চরিত্রগুলো আবহমান গ্রাম-বাংলার চিরায়ত দৃশ্যপটকেই অঙ্কিত করার প্রয়াস পেয়েছেন লেখক।  

স্বল্পকালীন জীবনে অদ্বৈত মল্লবর্মণ রচনা করে গেছেন বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ গ্রন্থ। রচনা করেছেন বহু শিশুপাঠ্য কবিতাও। বিভিন্ন পত্র-পত্রিকায় তার লেখা বেরোলেও চল্লিশের দশকে মানিক বন্দ্যোপাধ্যায় প্রমুখের পাশাপাশি বুদ্ধদেব বসু সম্পাদিত ‘এক পয়সায় একটি’ গ্রন্থ সিরিজ আকারে লিখে বিশেষভাবে সকলের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন তিনি।

লেখকের অন্যান্য গ্রন্থের মধ্যে সাদা হাওয়া (উপন্যাস), দলবেঁধে (গল্পগ্রন্থ), জীবনতৃষ্ণা (অনুবাদ গ্রন্থ) উল্লেখযোগ্য।
   
১৯১৪  সালের ১ জানুয়ারি তৎকালীন কুমিল্লা জেলার অন্তর্গত ব্রাহ্মণবাড়িয়া মহকুমার গোকর্ণঘাট গ্রামে জেলে পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন অদ্বৈত মল্লবর্মণ।  

তার বাবার নাম অধরচন্দ্র বর্মণ। শৈশবেই পিতৃ-মাতৃহীন হয়ে পড়ায় গ্রামের মালোদের চাঁদার টাকায় লেখাপড়া করেন অদ্বৈত।

১৯৩৩ সালে বর্তমান ব্রাহ্মণবাড়ীয়া জেলা সদরে অবস্থিত অন্নদা উচ্চ ইংরেজী বিদ্যালয় থেকে প্রথম বিভাগে ম্যাট্রিকুলেশন পাশ করেন তিনি। কুমিল্লা জেলার ভিক্টোরিয়া কলেজে কিছুদিন আইএ ক্লাসে অধ্যয়ন করে আর্থিক সঙ্কটের কারণে পরীক্ষা না দিয়েই বন্ধ করে দিতে হয় তার পড়াশুনা।

১৯৩৪ সালে জীবিকা নির্বাহের উদ্দেশ্যে কলকাতায় পাড়ি জমান অদ্বৈত। সেখানে মাসিক ‘ত্রিপুরা’ পত্রিকার সাংবাদিক হিসেবে কর্মজীবন শুরু করেন তিনি। এরপর ১৯৩৬ সালে যোগ দেন ক্যাপ্টেন নরেণ দত্ত পরিচালিত ‘নবশক্তি’ পত্রিকায়। পত্রিকাটির সম্পাদক কবি প্রেমেন্দ্র মিত্রের সহকারী হিসেবে সহ-সম্পাদক পদে দায়িত্ব পালন করেন তিনি।
 
নবশক্তির প্রকাশনা বন্ধ হয়ে গেলে তিনি মওলানা মোহাম্মদ আকরম খাঁর ‘মাসিক মোহাম্মদী’ পত্রিকার সম্পাদকের সহকারী হিসেবে যোগ দেন। তিন বছর এ পদে দায়িত্ব পালন করেন অদ্বৈত। এ সময়ে একই সঙ্গে দৈনিক আজাদ পত্রিকায় সাংবাদিকতা করেন তিনি।

নবযুগ, কৃষক ও যুগান্তর পত্রিকায় সহকারী সম্পাদক হিসেবে নিষ্ঠার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করেন অদ্বৈত মল্লবর্মণ। আমৃত্যু এ পদেই বহাল ছিলেন তিনি। এছাড়াও বিশ্বভারতীর প্রকাশনা শাখায় খণ্ডকালীন চাকরিও গ্রহণ করেন তিনি।

চিরকুমার অদ্বৈত মল্লবর্মণ জীবনের উপার্জনের সিংহভাগই ব্যয় করে গেছেন দুঃস্থ মানুষের কল্যাণে আর বই কিনে।  

এদিকে ৯৮তম জন্মবার্ষিকীতে ২০১২ সালে ব্রাহ্মণবাড়ীয়ার গোকর্ণঘাটে স্থানীয় জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে অদ্বৈত মল্লবর্মণের পৈতৃক বাড়িতে আবক্ষ মূর্তি নির্মাণ করা হয়।

বাংলাদেশ সময়: ১২২২ ঘণ্টা, ১৬ এপ্রিল, ২০১২

এআই/সম্পাদনা: ওবায়দুল্লাহ সনি, নিউজরুম এডিটর

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।