ঢাকা, শনিবার, ৭ বৈশাখ ১৪৩১, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫

শিল্প-সাহিত্য

বর্ষবরণে প্রস্তুত সারাদেশ

ডেস্ক রিপোর্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২০৫১ ঘণ্টা, এপ্রিল ১৩, ২০১২
বর্ষবরণে প্রস্তুত সারাদেশ

ঢাকা: রাত পোহালেই বাংলা নতুন বছর ১৪১৯। নুতন বছরকে বরণ করতে চলছে নানা উদ্যোগ-আয়োজন।

অনেক জায়গায় চলছে বর্ষবিদায়ের আয়োজন।

বোশেখের প্রথম দিনে প্রিয়জনদের মিষ্টিমুখ, হালখাতা, লোকজমেলা আর মুড়ি-মুড়কির আতিথেয়তায় উৎসবে রূপ নেবে দিনটি। ইতোমধ্যে সারাদেশের মানুষ প্রস্তুতি নিয়েছে পহেলা বৈশাখ উদযাপনের। বাংলানিউজের প্রতিনিধি ও সংবাদদাতাদের পাঠানো এ সংক্রান্ত প্রতিবেদন:

পাবনা: পাবনা জেলা প্রশাসনসহ বিভিন্ন সংগঠন নানা আয়োজনের মধ্য দিয়ে ১৪১৮ বর্ষবিদায় ও ১৪১৯ বর্ষবরণ পালনের কর্মসূচি হাতে নিয়েছে।

বর্ষবরণ উপলক্ষে জেলা প্রশাসনের সকাল ৯টায় জেলা প্রশাসকের কার্যালয় থেকে মুক্তমঞ্চ পর্যন্ত বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রা বের করা হবে।

এছাড়া সন্ধ্যা ৭টায় রয়েছে রফিকুল ইসলাম বকুল পৌর মিলনায়তনে আলোচনা সভা, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ও পুরস্কার বিতরণী।

বর্ষবিদায় ও বর্ষবরণ উপলক্ষে দেশের অন্যতম শিল্প প্রতিষ্ঠান স্কয়ার গ্রুপ আয়োজন করেছে দু’দিনব্যাপী কর্মসূচি।

এর মধ্যে রয়েছে শুক্রবার বিকেল চারটায় স্কয়ার টয়লেট্রিজের মেরিল রিভাইভ’র উদ্যোগে পাবনা সরকারি এডওয়ার্ড কলেজ মাঠে ‘রিভাইভ বর্ষবিদায় ১৪১৮’ শীর্ষক অনুষ্ঠান।

এ অনুষ্ঠানে গান পরিবেশন করেন দেশের বিশিষ্ট রবীন্দ্র সংগীত শিল্পী অদিতি মহসিন ও লোকসংগীত শিল্পী জহির আলিমসহ আরও অনেকে। বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেল মাছরাঙা অনুষ্ঠানটি সরাসরি সম্প্রচার করছে।

এছাড়া স্কয়ার গ্রুপের উদ্যোগে ‘হৃদয় নাচে বৈশাখী সাজে’ এই সেøাগানে শনিবার সকালে ১৪১৯ বর্ষবরণ উদযাপন উপলক্ষে অনুষ্ঠিত হবে ‘রুচী বৈশাখী উৎসব’।

নেত্রকোনা: শুক্রবার চৈত্রের শেষদিনে বাংলা ১৪১৮ কে বিদায় জানাতে নেত্রকোনা বর্ষবিদায় উদ্যাপন পরিষদ দিনব্যাপী কর্মসূচি নেয়।

জেলা শহরের বরবাজার এলাকায় ১০টায় থেকে বর্ষ বিদায় অনুষ্ঠান শুরু হয়।

এছাড়া দিনব্যাপী অনুষ্ঠানের মধ্যে ছিল সকাল সাড়ে ১০টায় চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতা, বিকেল ৪টায় আবৃত্তি, ৫টায় মুক্ত আলোচনা, সাড়ে ৫টায় পুরস্কার বিতরণ, সন্ধ্যা ৬টায় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ও রাত ৯টায় বাউল গানের আসর।

নোয়াখালী: বাংলা নববর্ষকে বরণ করতে নোয়াখালীতে জেলা প্রশাসনসহ বিভিন্ন সংগঠন ব্যাপক কর্মসূচি হাতে নিয়েছে। জেলার অন্তত ৫০টি স্থানে বসবে বৈশাখী মেলা।

জেলা শিল্পকলা একাডেমী মুক্তমঞ্চে সূর্যোদয়ের সঙ্গে সঙ্গে পহেলা বৈশাখের অনুষ্ঠান উদ্বোধন করবেন জেলা প্রশাসক মো. সিরাজুল ইসলাম।

সেখানে পান্তা-ইলিশের আপ্যায়ন শেষে বের করা হবে বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রা। দিনভর বিভিন্ন দেশীয়  খেলাধুলা এবং বিকেলে মুক্তমঞ্চে থাকবে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান।

এদিকে সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোট নোয়াখালী জেলা নতুন বছর বরণ করতে ৯ দিনব্যাপী অনুষ্ঠানমালার আয়োজন করেছে। পহেলা বৈশাখ সকালে বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রা বের হবে। জেলার সর্বস্তরের মানুষ শোভাযাত্রায় অংশ নেবে।

প্রতিদিন শহীদ মিনার সংলগ্ন বিজয়মঞ্চে লোকগান, আঞ্চলিক গান, লোকনৃত্য ছাড়াও  লোকজ খেলা, পুঁথিপাঠ, কবিতাপাঠ, আবৃত্তি, নাটক, যাত্রা, বাঁশি ও ঢোলের সমারোহ থাকবে। শহীদ মিনার চত্বরে বসবে ৯ দিনব্যাপী বৈশাখী মেলা।

শুক্রবার বিকেলে মেলার উদ্বোধন করবেন নোয়াখালী ৪ সংসদ সদস্য একরামুল করিম চৌধুরী এমপি।

সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোট নোয়াখালী শাখা সভাপতি বিমলেন্দু মজুমদারের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি থাকবেন জেলা প্রশাসক মো. সিরাজুল ইসলাম ও পুলিশ সুপার হারুন অর রশিদ হাযারী।

বাগেরহাট: বাগেরহাটে বর্ষবরণ উপলক্ষে সপ্তাহব্যাপী কর্মসূচি হাতে নিয়েছে জেলা প্রশাসন।

এছাড়া বাগেরহাট প্রেসক্লাবসহ বিভিন্ন সামাজিক সাংস্কৃতিক সংগঠন ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান নিজস্ব পরিম-লে বিভিন্ন কর্মসূচির মধ্য দিয়ে নববর্ষ উদযাপন করবে। জেলা সদরের বাইরে ৯ উপজেলাতেও নববর্ষ উপলক্ষে সরকারি-বেসরকারি পর্যায়ে বিভিন্ন কর্মসূচি নেওয়া হয়েছে।

জেলা প্রশাসনের সপ্তাহব্যাপী কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে, পহেলা বৈশাখ ভোরে জেলা স্টেডিয়াম থেকে বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রা, জেলা কারাগার, হাসপাতাল ও শিশু পরিবারে (সরকারি এতিমখানা) ঐতিহ্যবাহী বাঙালি খাবার পরিবেশন, জেলা কারাগারে কারাবন্দিদের তৈরী পণ্য সামগ্রী প্রদর্শনী, শহরের স্বাধীনতা উদ্যানে প্রতিদিন বৈশাখী মেলা, বাগেরহাট বহুমুখী উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে প্রতিদিন বিকেলে দেশীয় খেলা, সন্ধ্যায় স্বাধীনতা উদ্যান মঞ্চে আলোচনা ও সাংষ্কৃতিক অনুষ্ঠান।

এ ছাড়া পহেলা বৈশাখ বিশ্ব ঐতিহ্য ষাটগম্বুজ মসজিদ যাদুঘর সর্বসাধারণের পরিদর্শনের জন্য বিনা টিকিটে উন্মুক্ত থাকবে।

ঈশ্বরদী (পাবনা): ঈশ্বরদীতে ৭দিনব্যাপী বৈশাখী মেলা শুরু হবে শনিবার। ঈশ্বরদীর সাঁড়াগোপালপুর স্কুল মাঠে ইতোমধ্যে মেলার প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে।

পাবনা-৪ আসনের জাতীয় সংসদ সদস্য শামসুর রহমান শরীফ শনিবার বাংলা নববর্ষের দিন সকালে এই মেলার উদ্বোধন করবেন বলে বাংলানিউজকে নিশ্চিত করেছেন কমিটির সভাপতি সিরাজুুল ইসলাম।

বেনাপোল (যশোর): বর্ষবরণ উদযাপন উপলক্ষে বেনাপোল ও শার্শার বিভিন্ন সামাজিক, সাংস্কৃতিক সংগঠন ব্যাপক প্রস্তুতি নিয়েছে।

নাভারন ফজিলাতুননেছা মহিলা কলেজ ক্যাম্পাসে সকালে শোভাযাত্রা, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, আলোচনাসভার পাশাপাশি পান্তা-ইলিশের আপ্যায়নের ব্যবস্থা থাকবে। যশোর-১ শার্শার সংসদ সদস্য শেখ আফিল উদ্দিনের নিজস্ব উদ্যোগে আয়োজিত মহিলা কলেজের এই কর্মসূচিতে উপজেলার ৭টি বালিকা বিদ্যালয়ের তিন হাজার ছাত্রী অংশ নেবে।

কলেজের উপাধ্যক্ষ লায়লা আফরোজা বানু মলি বাংলানিউজকে জানান, পহেলা বৈশাখ কলেজ ক্যাম্পাসে আয়োজিত অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি থাকবেন স্থানীয় সংসদ সদস্য শেখ আফিল উদ্দিন। তিনি শোভাযাত্রায় নেতৃত্ব দেবেন।

নাভারণ চেয়ারম্যান বাড়িতে নববর্ষের দিন বসবে সব শ্রেণীপেশার মানুষের মিলন মেলা।

নাভারণ দিশারী সংঘ ও পাঠাগার পুরাতন বাজারে কার্যালয়ে কর্মসূচি পালন করবে।

এছাড়াও ছোট-বড় একাধিক সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠন, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান পহেলা বৈশাখ সামনে রেখে প্রস্তুতি নিয়েছে।

ভোলা: নতুন বছরকে স্বাগত জানতে বিভিন্ন সংগঠনের পক্ষ থেকে ৩ দিনব্যাপী কর্মসূচি নেয়া হয়েছে।
কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে, প্রভাতী সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, পান্তা-ইলিশ, শোভাযাত্রা, বৈশাখী উৎসব, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান,  মেলা ও কনসার্ট।

ইতোমধ্যে শহরের বাংলা স্কুল মাঠ, গজনবী স্টেডিয়াম ও বটমূলকে বাহারী সাজে সাজানো হয়েছে। সেখানে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ছাড়াও বসছে মেলা।

এদিকে, পহেলা বৈশাখ শনিবার জেলা প্রশাসন আয়োজনে অফিসার্স ক্লাব বটমূল প্রঙ্গনে প্রভাতী সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, পান্তা ইলিশ ভোজ ও গ্রাম বংলার ঐতিয্যবাহী হা-ডু-ডু খেলার আয়োজন করেছে।

অপরদিকে, পৌরসভার মেয়র মনিরুজ্জামন মনির আয়োজন করেছেন ৩দিন ব্যাপী মেয়র বৈশাখী উৎসব।
 
প্রায় এক কিলোমিটার দীর্ঘ বর্ণাঢ্য মঙ্গল শোভা যাত্রায় থাকছে গরুর গাড়ি, ঘোড়ার গাড়ি, পালকিসহ দেশীয় ঐতিহ্যের নানা স্মারক।

সকালে শহরের বাংলাস্কুল মাঠ থেকে শোভাযাত্রার মাধ্যমে উৎসবের উদ্বোধন করবেন শিল্প মন্ত্রণালয়ের সংসদীয় কমিটির সভাপতি সাবেক মন্ত্রী ও ভোলা-২ আসনের সংসদ সদস্য তোফায়েল আহমেদ।

প্রতিদিন সন্ধ্যার পরে গজনবী স্টেডিয়ামে দেশ সেরা শিল্পীরা সংগীত পরিবেশন করবেন।

কক্সবাজার: পহেলা বৈশাখের জন্য প্রস্তুত কক্সবাজার। ইতোমধ্যে নানা অনুষ্ঠানে বৈশাখ পালনের প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে। একই সংগে বাণিজ্যিকভাবেও গ্রহণ করা হয়েছে নানা প্রস্তুতি। বৈশাখকে ঘীরে বিপুল পর্যটক কক্সবাজার এসেছেন।

কক্সবাজার সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের সভাপতি তাপস রক্ষিত বাংলানিউজকে জানিয়েছেন, ভোর সাড়ে ৬টায় মঙ্গল শোভাযাত্রার মধ্য দিয়ে দিনব্যাপী কর্মসূচির সূচনা হবে। সকাল এবং সন্ধ্যা দুই পর্বে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান পরিবেশন করবে সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটভুক্ত ১৪টি সংগঠন।

উদ্বোধন অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি থাকবেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ইতিহাসবিদ ড. মুনতাসির মামুন।

এছাড়া জেলাব্যাপী বিভিন্ন সংগঠন নানা কর্মসূচি গ্রহণ করেছে বলে বাংলানিউজকে জানান তিনি।

কক্সবাজার শহরের শহীদ সরণির ফুল ব্যবসায়ী আবুল কালাম বাংলানিউজকে বলেন, নববর্ষের শুভেচ্ছা জানানো হয় ফুল দিয়ে। ফলে প্রতিবছরের মতো এবারো যথেষ্ট ফুল বিক্রি হয়েছে।

কক্সবাজারের পুলিশ সুপার সেলিম জাহাঙ্গীর বাংলানিউজকে জানান, বৈশাখের অনুষ্ঠানে পর্যটকদের নিরাপত্তা দিতে পুলিশ সার্বিক প্রস্তুতি নিয়েছে। শুক্রবার সন্ধ্যা থেকে টহল জোরদার, বিশেষ তল্লাশি চৌকি স্থাপন করা হয়েছে।

বাংলাদেশ সময়: ২০৪৬ ঘণ্টা, এপ্রিল ১৩, ২০১২

প্রতিবেদন: শাহীন রহমান/সোহাগ আহম্মদ/মুহাম্মদ রহমত উল্যাহ/এম আকবর টুটুল/সেলিম সরদার/আজিজুল হক/ছোটন সাহা/নুপা আলম
সম্পাদনা: রোকনুল ইসলাম কাফী, নিউজরুম এডিটর

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।