ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১৪ চৈত্র ১৪৩০, ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৭ রমজান ১৪৪৫

শিল্প-সাহিত্য

নীরবেই কেটে যায় বঙ্কিমের জন্ম-মৃত্যুবার্ষিকী

আদিত্য আরাফাত, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৬১৮ ঘণ্টা, এপ্রিল ৮, ২০১২
নীরবেই কেটে যায় বঙ্কিমের জন্ম-মৃত্যুবার্ষিকী

ঢাকা: বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়। প্রথম আধুনিক বাংলা ঔপন্যাসিক হিসেবে যাকে গণ্য করা হয়।

বাংলা সাহিত্যে অসামান্য অবদানের জন্য তাকে ‘বাংলা সাহিত্যের সম্রাট’ বলেও অভিহিত করেন অনেকেই।  

কৃষ্ণকান্তের উইল, রাজসিংহ, বিষবৃক্ষ, সীতারাম, দুর্গেশনন্দিনীর মতো বঙ্কিমের কালজয়ী সব উপন্যাস বাংলা সাহিত্য ভাণ্ডারকে করেছে সমৃদ্ধ। বাংলা গদ্য ও উপন্যাসের বিকাশে তার অসমান্য অবদানের জন্যে তিনি বাংলা সাহিত্যের ইতিহাসে অমরত্ব লাভ করেছেন।

রোববার তার ১১৮তম মৃত্যুবার্ষিকী।

বাংলা সাহিত্য ভাণ্ডারকে যিনি সমৃদ্ধ করেছেন তার জন্ম ও মৃত্যুতে রাষ্ট্রীয় কোনো অনুষ্ঠান তো দূরে থাক সাহিত্য ও সাংস্কৃতিক সংগঠনগুলোরও কোনো কার্যক্রম চোখে পড়ার মতো নয়। প্রতি বছরই অনেকটা নীরবে-নিভৃতে চলে যায় বাংলা সাহিত্যের এ অমর পুরুষের জন্ম ও মৃত্যুবার্ষিকী।

পশ্চিম বাংলার নোইহাটির নিকটবর্তী কাঠালপাড়া গ্রামে ১৮৩৮ সালে ২৭ জুন জন্মগ্রহণ করেন বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়। জন্মের পর ছয় বছর বঙ্কিমচন্দ্র কাঁটালপাড়াতেই অতিবাহিত করেন। পাঁচ বছর বয়সে কুল-পুরোহিত বিশ্বম্ভর ভট্টাচার্যের কাছে বঙ্কিমচন্দ্রের হাতেখড়ি হয়। শিশু বয়সেই তার অসামান্য মেধার পরিচয় পাওয়া যায়। হুগলী মোহসীন কলেজ ও প্রেসিডেন্সি কলেজে তিনি লেখাপড়া করেন। ১৮৫৮ সালে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে  কৃতিত্বের সঙ্গে বিএ পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন। নব প্রতিষ্ঠিত কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় হতে সেদিন যারা গ্রাজুয়েট হওয়ার সৌভাগ্য অর্জন করেন বঙ্কিচন্দ্র তাঁদের একজন।

১৮৫৮ সালে বি এ পাস করেই তিনি ডেপুটি কালেক্টর হিসেবে কর্মজীবন শুরু করেন এবং অবসর গ্রহণের আগে পর্যন্ত অত্যন্ত সাফল্যের সঙ্গে এ পদে কাজ করেন। বঙ্কিমচন্দ্রের প্রথম বিয়ে হয় ১৮৪৯ সালে। তখন তার বয়স ছিলো মাত্র ১১ বছর। নারায়ণপুর গ্রামের এক পঞ্চমবর্ষীয়া বালিকার সঙ্গে তার বিয়ে হয়। কিন্তু চাকরি জীবনের শুরুতে যশোর অবস্থান কালে ১৮৫৯ সালে এ পত্নীর মৃত্যু হয়। অতঃপর ১৮৬০ সালের জুন মাসে হালি শহরের বিখ্যাত চৌধুরী বংশের কন্যা রাজলক্ষী দেবীর সঙ্গে তার বিয়ে হয়।

খুলনা, মুর্শিদাবাদ, হুগলি, মেদিনীপুর, বারাসত, হাওড়া, আলিপুর ইত্যাদি স্থানে ডেপুটি ম্যাজিস্ট্রেট পদে সুদীর্ঘ ৩৩ বছর চাকরি করার পর ১৮৯১ সালে অবসর নেন বঙ্কিম। চাকরি থেকে অবসর নেওয়ার পর বঙ্কিমচন্দ্র কলকাতার পটলডাঙ্গায় বসবাস শুরু করেন।

১৮৫২ সালে সংবাদ প্রভাকর কবিতা লিখে তিনি সাহিত্যচর্চা শুরু করেন। ১৮৫৬ সালে তার কাব্যগ্রন্থ ললিতা পুরাকালিক গল্প তথা মানস প্রকাশিত হয়। এরপর কাব্যচর্চা ত্যাগ করে তিনি উপন্যাস রচনায় মনযোগ দেন। মোগল-পাঠান যুদ্ধ ও প্রেম অবলম্বনে তার প্রথম উপন্যাস দুর্গেশনন্দিনী ১৮৬৫ সালে প্রকাশিত হয়। এটি ইংরেজি রোমান্সের আদলে রচিত বাংলা সাহিত্যের প্রথম রোমান্টিক উপন্যাস হিসেবে পরিচিত। এ রচনার মাধ্যমে একদিকে যেমন তার মৌলিক প্রতিভা বিকাশের পথের সন্ধান পান, অন্যদিকে তেমনি বাঙালি মন এক অভিনব সাহিত্যশিল্প রসাস্বাদন করতে সক্ষম হয়েছেন।

কপালকুণ্ডলা তার দ্বিতীয় উপন্যাস।

সামাজিক সমস্যা নিয়ে তিনি রচনা করেন বিষবৃক্ষ ও কৃষ্ণকান্তের উইল।

গীতার ব্যাখ্যাদাতা হিসাবে, সাহিত্য সমালোচক হিসাবেও বিশেষ খ্যাতিমান বঙ্কিমচন্দ্র। ধর্ম, দর্শন, সাহিত্য, ভাষা, সমাজ ইত্যাদি বহু বিষয়ের তিনি প্রবন্ধ রচনা করেন। তিনি বাংলা ভাষার আদি সাহিত্যপত্র বঙ্গদর্শনের প্রতিষ্ঠাতা সম্পাদক ছিলেন। কমলাকান্ত নামেও তিনি লিখতেন।

১৮৯৪ সালের ৮ এপ্রিল তার মহাপ্রয়ান হয়। বাংলা সাহিত্য যতোদিন বেঁচে থাকবে ততোদিন বঙ্কিমচন্দ্রের নাম অক্ষয় থাকবে।

তথ্যসূত্র: বাংলা সাহিত্যের ইতিহাস-মাহবুবুল আলম

বাংলা সাহিত্যের ইতিবৃত্ত-মুহাম্মদ আব্দুল হাই ও সৈয়দ আলী আহসান (সম্পাদিত) , উইকিপিডিয়া, গুণীজন।

বাংলাদেশ সময়: ০৬২০ ঘণ্টা, এপ্রিল ০৮, ২০১২
এডিএ
সম্পাদনা: অশোকেশ রায়, অ্যাসিসট্যান্ট আউটপুট এডিটর

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।