ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১৪ চৈত্র ১৪৩০, ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৭ রমজান ১৪৪৫

কৃষি

শিমের রাজ্যে চাষিদের মুখে হাসি

ফয়জুল ইসলাম জাহান, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১২৫৯ ঘণ্টা, জানুয়ারি ২৯, ২০২২
শিমের রাজ্যে চাষিদের মুখে হাসি

নোয়াখালী: নোয়াখালীর উপকূলীয় উপজেলা সূবর্ণচরে চলতি শীতে শিমের বাম্পার ফলন হয়েছে। শত শত হেক্টর জমিতে শুধু শিম আর শিম।

যেন শিমের রাজ্য সূবর্ণচর! শিমের ভালো বাজার মূল্য পেয়ে খুশি চাষিরা। কৃষি বিভাগের পরামর্শ ও সহযোগিতায় শিম চাষ করে এখন হাজারও চাষির মুখে হাসি ফুটেছে।

শীত মৌসুমের অন্যতম প্রধান সবজি শিম। চলতি মৌসুমে নোয়াখালীর শস্যভাণ্ডার খ্যাত সূবর্ণচরের বিস্তীর্ণ মাঠ, জমি ও ঘেরের আইলে সর্জন পদ্ধতিতে মাচায় শিম চাষ করা হয়েছে। উপজেলার মোহাম্মদপুর ও চরকার্ক ইউনিয়নের যেদিকে দৃষ্টি যায়, সেদিকেই সবুজ-বেগুনী রংয়ের শিমের সৌন্দর্য। চলতি মৌসুমের পুরোটা জুড়ে থাকবে শিমের এই আবাদ। যদিও এ পর্যন্ত কয়েক দফা শিমের ফলন তোলা হয়েছে। তবে এখনও ফুল আসায় ফেব্রুয়ারি-মার্চ পর্যন্ত প্রায় একইরকম ফলন হবে।

এবার সূর্বণচরে কৃষি অফিস থেকে সরবরাহ করা উচ্চ ফলনশীল জাত হইট্রা, বারি শিম, বিইউ শিম, ইপসা শিমসহ দেশীয় জাতের শিমের আবাদ করা হয়েছে। আগে বৃষ্টির পানিতে অথবা শিশিরে ফুল ভিজে শিম পঁচে যেত। বর্তমানে শিমের উন্নত জাত উদ্ভাবনের কারণে ওই সমস্যা নেই, কোনও ধরনের ঝামেলা ছাড়াই চাষ করা যাচ্ছে।

উপজেলা কৃষি অফিস জানায়, সূবর্ণচরে চলতি শীত মৌসুমে দুই হাজার ১০০ হেক্টর জমিতে শিমের চাষ করেছেন সহস্রাধিক চাষি। প্রতি হেক্টর জমিতে গড়ে ২৫ টন করে প্রায় পাঁচ হাজার ২৫০ টন শিম উৎপাদন হবে। বর্তমানে বাজারে শিমের ভালো দাম রয়েছে। মাসখানেক আগে শিমের প্রতি কেজি বিক্রি হয়েছে ১০০-১২০ টাকায়, এখন তা নেমেছে ৪০-৫০ টাকায়।

কিছুদিন আগেও বাড়ির আঙ্গিনায় সীমিত পরিসরে শিম চাষ করা হতো। এখন চাহিদা বেড়েছে, ফলনও বেড়েছে। ফলে কৃষি বিভাগের পরামর্শে অনাবাদী পতিত জমিকে আবাদী জমিতে রূপান্তরিত করে শিমের আবাদ করা হচ্ছে।

স্থানীয় শিম চাষিরা জানান, সূবর্ণচরের যে চাষি আগে এক একর জমিতে শিমের আবাদ করতেন, এখন তিনি তিন-চার একর জমিতে শিমের আবাদ করছেন। তারা জানান, কৃষি অফিস থেকে পরামর্শের পাশাপাশি সার ও বীজ পাচ্ছেন তারা। আর এবার শিমের ভালো দাম পেয়েছেন। বাকি মৌসুমেও লাভবান হবেন বলে আশা তাদের।

উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা মো. নাজমুল হুদা বাংলানিউজকে বলেন, কম খরচে বেশি লাভ হওয়ায় চাষিরা শিম চাষে আগ্রহী হয়ে উঠেছেন। চলতি মৌসুমে শুধুমাত্র উপজেলার মোহাম্মদপুর ইউনিয়নেই ৯০০ হেক্টর জমিতে শিমের আবাদ হয়েছে। আগামী বছর তা ১২০০-১৫০০ হেক্টর পর্যন্ত বাড়ানের লক্ষ্য রয়েছে। তখন উৎপাদন আরও বাড়বে।

সূবর্ণচর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. হারুন অর রশিদ বাংলানিউজকে বলেন, ২০২১-২২ অর্থবছরে সর্জন পদ্ধতিতে শিমের আবাদ হয়েছে। এর সিংহ ভাগ আবাদ হয়েছে চরকার্ক ও মোহাম্মদপুর ইউনিয়নে। সর্জন পদ্ধতিতে নিচে মাছ, ওপরে মাচায় শিম। দুর্যোগপ্রবণ ও লবণাক্ত এলাকা হওয়ায় চাষিরা জমিগুলোকে চার ফসলি জমিতে রূপান্তর করেছে।

তিনি আরও বলেন, সরকারের কৃষি বান্ধব নীতি ও পরিকল্পনার কারণে বিভিন্ন প্রকল্পের মাধ্যমে চাষিদের শিমসহ নানা ধরনের সবজি চাষে আগ্রহ বাড়ছে। তারা লাভবানও হচ্ছেন। কৃষিতে থেকে অর্জিত আয় দিয়েই তাদের পরিবার চলছে। পড়ালেখা করছে সন্তানরা। সব ব্যয় মিটিয়ে প্রতিবছর তাদের হাতে  পুঁজিও থাকছে। এ কারণেই চাষিদের মুখে হাসি ফুটেছে। কারণ কৃষকের উন্নয়ন হলেই কৃষির উন্নয়ন হয়।

বাংলাদেশ সময়: ১২৫৯ ঘণ্টা, জানুয়ারি ২৯, ২০২২
এনএসআর

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।