ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১৪ চৈত্র ১৪৩০, ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৭ রমজান ১৪৪৫

কৃষি

পাট কিনতে অনাগ্রহ ব্যবসায়ীদের, ন্যায্যমূল্যবঞ্চিত কৃষক

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৯১৩ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ২, ২০১৯
পাট কিনতে অনাগ্রহ ব্যবসায়ীদের, ন্যায্যমূল্যবঞ্চিত কৃষক

মাগুরা: বছরের পর বছর মিল মালিকদের কাছে বকেয়া টাকা পড়ে থাকায় এবার পাট কিনতে তেমন আগ্রহ দেখাচ্ছে না মাগুরার পাট ব্যবসায়ীরা। এতে পাটের ন্যায্যমূল্য থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন সাধারণ কৃষকরা।

পাট ব্যবসায়ীরা জানান, এ বছর মূলধনের অভাবে পাট কিনতে পারছি না। অনেক পাট ব্যবসায়ী ব্যাংক লোন ও বিভিন্ন মাধ্যমে টাকা নিয়ে ব্যবসা করছেন।

মাগুরা নতুন বাজারের পাট ব্যবসায়ী বলাই সাহা বাংলানিউজকে বলেন, বিভিন্ন পাটকল মালিকদের কাছে প্রায় দুই কোটি টাকা বকেয়া পড়ে রয়েছে। এজন্য এ বছর পাট কিনতে পারছি না। সরকারের নির্ধারিত দাম থাকলেও মূলধনের অভাব রয়েছে।

বলাই সাহা বলেন, বর্তমান শ্যামলা পাট ১৫০০ টাকা মণ ও লালি পাট ১৭০০ টাকা মণে ক্রয় করছি। নগদ টাকা দিয়ে পাট কিনতে হয়। বিক্রি করতে হয় বাকিতে। এবার আমি প্রায় ২০ গাড়ি পাট ডেলিভারি দিয়েছি। যার মূল্য প্রায় এক কোটি টাকা। দেনা রয়েছি প্রায় ৫ লাখ টাকা।  

তিনি আরও বলেন, পাট চাষিরা অধিকাংশ সময় স্থানীয় বাজারে পাট বিক্রি করেন। পরিবহন এবং আর্থিক সংকটের কারণে প্রান্তিক কৃষকেরা ন্যায্যমূল্য না পেয়ে আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
 
মাগুরা জেলা পাট ও ভূষিমাল ব্যবসায়ী আব্দুস সালাম বাংলানিউজকে বলেন, সাধারণ ব্যবসায়ীরা যদি সরকারি ক্রয় কেন্দ্রে পাট দিতে পারে তাহলে কিছুটা হলেও লাভবান হবে।  কিন্তু সেখানে একটি গ্রুপ আছে তারা পাট বিক্রি করে থাকে। এ কারণে ব্যবসায়ীরা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।

মাগুরা জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, চলিত মৌসুমে মাগুরায় পাট চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয় ৩৬ হাজার ১১০ হেক্টর। পাট চাষ হয়েছে ৩২ হাজার ৫৫৫ হেক্টর। উৎপাদন লক্ষ্যমাত্র নির্ধারণ করা হয়েছে ১ হাজার ১৮৩ বেল (১ বেল= ১৮৭ কেজি)। মাগুরা সদর উপজেলায় পাট চাষ হয়েছে ৯ হাজার ৭০০ হেক্টর জমিতে। শ্রীপুর উপজেলায় আবাদ হয়েছে ৮ হাজার ৭৩০ হেক্টর, শালিখায় ৩ হাজার ৯২৫ হাজার হেক্টর, মহম্মদপুরে ১ হাজার ২০০ হেক্টর জমিতে। চলতি মৌসুমে পাট চাষ হয়েছে ৩২ হাজার ৫৫৫ হেক্টর জমিতে। যা লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ৩ হাজার ৫৫৫ হেক্টর কম। গত বছরের তুলায় এ বছর জেলায় পাট চাষ কমেছে।

কৃষক সফি মণ্ডল বাংলানিউজকে বলেন, এ বছর ১০বিঘা জমিতে পাট চাষ করতে বোনা থেকে শুরু করে আঁশ ছাড়ানো পর্যন্ত প্রায় খচর ২ হাজার টাকা খরচ হয়েছে। পাটের চাষ শুরু থেকে রোদে শুকাতে প্রায় ১৫টা শ্রমিক লাগে। শ্রমিকদের মজুরি দিতে হয় জনপ্রতি ৫০০-৭০০ টাকা। এতে প্রায় ১০-১২ হাজার টাকা খরচ হয়। তবে বাজারে পাট বিক্রি করতে গেলে ভালো দাম পাওয়া যায় না।

মাগুরা জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ-পরিচালক জাহিদুল আমিন বাংলানিজউকে বলেন, এ বছর সকারিভাবে ভাল পাটের দাম ১৮৮০ টাকা, আর শ্যামলা পাট ১৬৮০ টাকা পর্যন্ত নির্ধারণ করা হয়েছে। তবে মিল মালিকদের কাছে বকেয়া টাকা পাওয়ায় ব্যবসায়ীরা পাট কিনতে পারছে না। চলতি মৌসুমে কৃষকদের মধ্যে বিনামূল্যে পাট বীজ, সার, কীটনাশক বিতরণ ও পাট চাষের ওপর উঠান বৈঠকসহ বিভিন্ন ধরনের পরামর্শ দিয়ে থাকি। এ জেলার মাটি পাট চাষের উপযোগী।  তবে গতবারের চেয়ে এবার জেলায় পাটের চাষ কম হয়েছে। আশা করি, এ বছর কৃষকরা ভালো দামে পাট বিক্রি করতে পারবেন।

বাংলাদেশ সময়: ১৪৩৪ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ০২, ২০১৯
এনটি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।