ঢাকা, বুধবার, ১১ বৈশাখ ১৪৩১, ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ শাওয়াল ১৪৪৫

কৃষি

ভাগ্যের লিখন মেনেই রোপা-আমন চাষে কৃষক

বেলাল হোসেন, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৪৫৩ ঘণ্টা, আগস্ট ২৩, ২০১৯
ভাগ্যের লিখন মেনেই রোপা-আমন চাষে কৃষক

বগুড়া: ‘বন্যায় এবার সবচেয়ে বেশি ক্ষতির মুখে পড়েন যমুনা বেষ্টিত বগুড়ার সারিয়াকান্দি, সোনাতলা ও ধুনট উপজেলার কৃষকরা। যমুনার ধাক্কা সামলে না উঠতেই বাঙালি নদীর পানি বাড়তে থাকে। এতে জেলার সদর, গাবতলী, শাজাহানপুর, শেরপুর ও শিবগঞ্জ উপজেলায় তলিয়ে যায় ব্যাপক পরিমাণ ফসলি জমি। ক্ষতিগ্রস্ত হয় অসংখ্য কৃষক পরিবার।'

‘এসব উপজেলার অনেক জমি এখনো বন্যার পানির নিচে। দ্রুত সময়ে পানি না নামলে চলতি রোপা-আমন মৌসুমের ধান এসব জমিতে লাগাতে পারবেন না কৃষকরা।

আর নতুন করে বৃষ্টিপাত হলে বা বাঙালির পানি বাড়লে এসব জমিতে রোপা-আমন লাগানো সম্ভব হবে না। তখন বিকল্প ফসল চাষের বিষয়টি ভাবতে হবে। ’
 
চলতি রোপা-আমন মৌসুমের ধান চাষ সম্পর্কে বাংলানিউজের সঙ্গে আলাপকালে এসব কথাই জানালেন জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালকের কার্যালয়ের উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা ফরিদুর রহমান।
 
তিনি বলেন, বিকল্প হিসেবে পরিস্থিতির আলোকে সময় উপযোগী ফসল চাষের পরামর্শ দেওয়া হবে সংশ্লিষ্ট এলাকার কৃষকদের। এজন্য কৃষি বিভাগ আগাম প্রস্তুতি নিয়ে মাঠে কাজ করছে। তবে, সবকিছুই নির্ভর করছে আবহাওয়ার ওপর যোগ করেন এই কৃষি কর্মকর্তা।  
ক্ষেতে কাজ করছেন কৃষক।  ছবি: আরিফ জাহানসংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, চলতি মৌসুমে জেলায় রোপা-আমন চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ১ লাখ ৭৪ হাজার হেক্টর জমি। ইতোমধ্যেই ১ লাখ ৩৩ হাজার হেক্টর জমিতে রোপা-আমন লাগানো হয়েছে। ধানের বয়স হয়েছে ১০ থেকে এক মাস পর্যন্ত। ১৫ জুলাই থেকে শুরু করে পুরো আগস্ট মাস অবধি ধান লাগানো চলবে ও চলছে। অবশ্য কিছু জাতের ধান ১৫ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত লাগানো যায়। সেক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় বীজ পাওয়াটা মুশকিল। তবে, কৃষক চাইলে এখনো চাহিদা অনুযায়ী বীজতলা তৈরি করতে পারেন দাবি কৃষি বিভাগের।
 
এদিকে, এবারের বন্যায় কোমর ভেঙে যাওয়া কৃষকদের কথায় ওঠে আসে নানামুখী দুর্দশার যত সব করুণ চিত্র।
 
তাদের ভাষ্য, ‘দুর্যোগ যেন কোনোভাবেই তাদের পিছু ছাড়ছে না। মনুষ্য সৃষ্ট ও প্রাকৃতিক দুর্যোগ যেন লেগেই আছে। ধানের ফলন ভালো হলে বাজারে দাম পাওয়া যায় না। সরকার তাদের কাছ থেকে ধান কেনার ঘোষণা দিয়ে ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে ধান কেনেন। যেমন গেলো বোরো মৌসুমের ধান চাষ করে প্রত্যেক কৃষককে চরম লোকসান গুণতে হয়েছে। অনেক কৃষকের মূলধন গায়েব হয়ে গেছে। ঋণের বোঝা মাথায় নিয়ে এখনো ঘুরছেন অনেক কৃষক। কিন্তু গুটি কয়েকজন কৃষক ছাড়া সিংহভাগ কৃষকই সরকারের কাছে ধান বিক্রি করতে পারেননি। ’
 
‘আবার অনেক বছর বর্ষায়ও বৃষ্টির দেখা মেলে না। তখন সেচ দিয়ে ধান চাষ করতে হয়। এতে বেড়ে যায় উৎপাদন ব্যয়। কিন্তু ধানের দাম তো ক্রমেই কমতির দিকে যাচ্ছে। গত কয়েক বছরের পরিসংখ্যান অনন্ত তাই বলছে। গেলো বোরের অবস্থা ছিল আরও করুণ। এরইমধ্যে আবার বন্যার হানা। বন্যায় সর্বস্ব হারিয়ে অনেক কৃষক এখন পাগলপ্রায়। এভাবে প্রতিনিয়ত মনুষ্য সৃষ্ট ও প্রাকৃতিক দুর্যোগের সঙ্গে লড়াই করতে হচ্ছে প্রত্যেক কৃষককে। ’ কিন্তু এভাবে আর কতদিন– প্রশ্ন কৃষকদের।  
ক্ষেতে কাজ করছেন কৃষক।  ছবি: আরিফ জাহানকৃষক সাদেকুল ইসলাম বাংলানিউজকে জানান, অন্য কোনো পেশা জানা নেই। আবার ব্যবসা বা অন্য কিছু করার পুঁজিও নেই। তাই অনেকটা লোকসান স্বীকার করেই ধারদেনার টাকায় রোপা-আমন চাষে মাঠে নেমেছেন এই কৃষক। প্রায় ১৫ বিঘা জমির মধ্যে ১২ বিঘা জমিতে ধান লাগানোর কাজ শেষ করেছেন তিনি।
 
কৃষক আরমান আলী বাংলানিউজকে জানান, পাঁচ বিঘা জমিতে ধান লাগানোর কাজ শেষ করেছেন। তার ক্ষেতের ধান বয়স প্রায় মাসখানেকের মতো। জমির ধান পরিচর্যায় এখন ব্যস্ত সময় পার করছেন তিনি।
 
একই সুরে কৃষক আব্দুল হামিদ ও ফরিদ হোসেন বাংলানিউজকে জানালেন, ফসল ফলিয়ে জীবিকা নির্বাহ করতে হয় তাদের। কারণ সামনে তো কোনো বিকল্প নেই। এছাড়া তাদের মতো কৃষকদের কিউবা করার আছে। তাই বিগত দিনের লোকসানের বিষয়টি মাথায় রেখে ঝুঁকি নিয়েই আবারও রোপা-আমনের মাঠে পা রেখেছেন তারা।  
 
এসব কৃষকরা জানান, জেলায় বিভিন্ন উপজেলায় চলতি রোপা-আমন মৌসুমের ধান চাষে ব্যস্ত সময় পার করছেন সংশ্লিষ্ট এলাকার কৃষকরা। অনেকেই জমি প্রস্তুত করছেন। ধানের চারা রোপণ করছেন অনেকেই। বীজতলা থেকে বীজ তুলছেন। আবার অনেকেই জমির ধান পরিচর্যা করছেন। সবমিলে ভাগ্যের লিখন মেনেই রোপা-আমন চাষে মাঠে নেমেছেন উত্তরাঞ্চলের শস্য ভাণ্ডারখ্যাত বগুড়ার কৃষকরা।
 
বাংলাদেশ সময়: ১০৪৮ ঘণ্টা, আগস্ট ২৩, ২০১৯
এমবিএইচ/এএটি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।