ঢাকা, সোমবার, ১৬ বৈশাখ ১৪৩১, ২৯ এপ্রিল ২০২৪, ১৯ শাওয়াল ১৪৪৫

কৃষি

পাহাড়ে সূর্যমুখী চাষে আগ্রহ বাড়ছে কৃষকদের

মঈন উদ্দীন বাপ্পী, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৮৪৮ ঘণ্টা, এপ্রিল ২, ২০২৪
পাহাড়ে সূর্যমুখী চাষে আগ্রহ বাড়ছে কৃষকদের ছবি: বাংলানিউজ

রাঙামাটি: পার্বত্য জেলা রাঙামাটিতে বেশ কয়েক বছর ধরে সূর্যমুখী চাষে আগ্রহ বাড়ছে কৃষকদের। যে জমিতে এক সময় জুম এবং তামাক চাষের আধিক্য থাকতো সেই জমি এখন সূর্যমুখীর হলুদ রঙে সেজে উঠেছে।

দেশে দিন দিন ভোজ্য তেলের চাহিদা বাড়ছে। উৎপাদন কম থাকায় সেই চাহিদা মেটাতে হিমশিম খেতে হচ্ছে। ফলে আমদানি নির্ভর হতে হচ্ছে সরকারকে। দেশের বাইরে চলে যাচ্ছে কোটি কোটি টাকা।  

সরকার দেশে ভোজ্য তেলের চাহিদা মেটাতে এবার পাহাড়ের মাটিকে আদর্শ হিসেবে বেছে নিয়েছে। কৃষকদের মধ্যে প্রণোদন সুবিধা, প্রযুক্তি সেবা, বিনামূল্যে বীজ বিতরণ, যান্ত্রিক এবং বিপণনের সুযোগ দিয়ে পাহাড়ি মাটিতে সূর্যমুখী চাষে আগ্রহী করে তুলছে কৃষকদের। কৃষকরা এমন লোভনীয় প্রস্তাব সাদরে গ্রহণ করছেন এবং নিজেদের মাঠে বাড়িয়েছেন সূর্যমুখীর আবাদ।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর রাঙামাটি জেলা কার্যালয় থেকে জানা যায়, গত ২০২২-২৩ অর্থ বছরে রাঙামাটির পুরো ১০ উপজেলা মিলে ২৭ হেক্টর জমিতে সূর্যমুখীর আবাদ করা হয়েছে। সেখান থেকে পাওয়া গেছে ৮১ মেট্রিক টন ফলন। চলতি মৌসুম ২০২৩-২৪ অর্থ বছরে তা ছয়গুণ বেড়ে ১৬০ হেক্টর জমিতে সূর্যমুখীর আবাদ হয়েছে। এখান থেকে ৪৮০ মেট্রিক টন ফলন পাওয়ার আশা করা হচ্ছে।

সরকারি এ প্রতিষ্ঠানটি আরও জানায়, সরকারের লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে তেল ফসলের চাষাবাদ বাড়ানো।  জেলায় চার হাজার জমি পতিত রয়েছে বলা হলেও বাস্তবে এখানে ২০ হাজার পতিত জমি রয়েছে। দুর্গম এলাকা হওয়ায় শুষ্ক মৌসুমে এখানে সেচ সুবিধা পাওয়ার সুযোগ নেই। অনেক কৃষক সেখানে পৌঁছাতে পারে না। সেচের আওতা বাড়াতে পারলে ১০ হাজার হেক্টর জমিতে সূর্যমুখীর চাষ বাড়ানো সম্ভব বলে যোগ করে প্রতিষ্ঠানটি।

জেলা সদরের সাপছড়ি ইউনিয়নের মধ্যপাড়া এলাকার কৃষক সোনামণি চাকমা বলেন, আমি দুই কানি জমিতে সূর্যমুখীর আবাদ করেছি। কৃষি অফিস আমাদের বীজ, সার, প্রযুক্তি সহায়তা, পরামর্শ দিয়েছে।

তিনি আরও বলেন, আগে এই জমিতে তামাকের চাষ করতাম। এখন সূর্যমুখীর চাষ করছি। এ জমিতে উৎপাদিত ফলন নিয়ে আপাতত কোনো চিন্তা করছি না। কৃষি বিভাগ আমাদের উৎপাদিত ফলন বিক্রি করার ব্যবস্থা করে দেবে।

একই এলাকার কৃষক সোনাধন চাকমা বলেন, কৃষি বিভাগের পরামর্শে আমিও দুই কানিতে সূর্যমুখীর চাষ করেছি। আগে এই জমিতে বিলাতি ধনিয়া পাতা চাষ করতাম।

এ কৃষক আরও বলেন, মানুষ আমার কাছ থেকে সূর্যমুখী তেলের অর্ডার নিচ্ছে। আশা করছি আমরা ভালো ফলন পাব এবং লাভের মুখ দেখব।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর রাঙামাটি জেলা কার্যালয়ের উপ-পরিচালক মো. মণিরুজ্জামান বলেন, পার্বত্য এলাকার মাটি সূর্যমুখী চাষের উর্বর ভূমি। কৃষকরা কৃষি বিভাগের দিক নির্দেশনা মেনে এ ফসলটির চাষ করলে কম পরিশ্রমে আয়ের চাকা বহুগুণ বাড়বে।

কৃষি কর্মকর্তা আরও বলেন, কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর থেকে জেলার এক হাজার ২০০ জন কৃষকের মধ্যে প্রণোদনার কর্মসূচির আওতায় সূর্যমুখীর বীজসহ সার দেওয়া হয়েছে। যারা সময় মতো সেচ দিয়ে যত্ন করেছে, এসব মাঠ থেকে আমরা হেক্টর প্রতি তিনটন ফলন পাব বলে প্রত্যাশা করছি। এছাড়া যেসব জমিতে সেচ ও সার দিতে পারে নাই সেখান থেকে ফলন কম হবে। তবে পুরো এলাকায় যদি সেচ ব্যবস্থার আওতায় আনা যায় তাহলে সূর্যমুখী চাষের বিরাট সম্ভাবনা তৈরি হবে।

রাঙামাটিতে যে হারে সূর্যমুখীর চাষ বাড়ছে, এতে অল্প সময়ে এখান থেকে উৎপাদিত ফসল দিয়ে দেশের ভোজ্যতেলের চাহিদা অনেকাংশে মেটানো সম্ভব হবে বলে মনে করছে জেলার কৃষি বিভাগ।

বাংলাদেশ সময়: ০৮৪৩ ঘণ্টা, এপ্রিল ০২, ২০২৪
এসআইএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।