ঢাকা, রবিবার, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১, ২৮ এপ্রিল ২০২৪, ১৮ শাওয়াল ১৪৪৫

কৃষি

গাছ থেকে ছিঁড়ে কেনা যাবে কমলা-মাল্টা!

শরিফুল ইসলাম, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট  | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৩১৬ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১০, ২০২৪
গাছ থেকে ছিঁড়ে কেনা যাবে কমলা-মাল্টা!

ঠাকুরগাঁও: এমন এক বাগান, যেখানে সারি সারি কমলা আর মাল্টা গাছ। গাছে গাছে ঝুলছে কমলা রঙের কমলা আর সবুজ রঙা মাল্টা।

আপনি বাগানে ঘুরে বেড়াচ্ছেন আর গাছ থেকে ছিঁড়ে ছিঁড়ে কমলা কিনছেন, ভাবুন তো এমন হলে কেমন লাগবে? না, অসাধারণ এ অভিজ্ঞতা নিতে বিদেশে যাওয়ার প্রয়োজন নেই, ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার রাজাগাঁও ইউনিয়নের দক্ষিণ বঠিনা গ্রামে গেলেই চলবে।  

বঠিনা গ্রামের জয়নাল আবেদীন কাস্টমসে চাকরি করেন। চাকরির সুবাদে বিভিন্ন জেলায় ঘুরেছেন তিনি। এর মধ্যে চুয়াডাঙ্গা জেলায় মাল্টার বাগান দেখে শখের বশে চার বছর আগে বাড়ির পাশে শুরু করেন বাগান।  
পরে তিনি চুয়াডাঙ্গা থেকে নিয়ে আসেন মাল্টা ও কমলার চারা। সেই চারা বাড়ির পাশে টাঙ্গন ব্রিজের পাশে নিজস্ব জমিতে লাগান। এক বছর পর চারা থেকে ফল ধরতে শুরু করে। গত বছর কমলা ও মাল্টার ফলন কম হয় হলেও এ বছরে অনেক বেশি ফলন হয়েছে।  

দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে তার কমলা বাগান দেখতে আসেন অনেকে।  

ঠাকুরগাঁও শহর থেকে আসা রবিউল হাসান রিপন বলেন, ঠাকুরগাঁও সদরে এতো সুন্দর কমলা বাগান রয়েছে, এটা নিজের চোখে না দেখলে বিশ্বাস হবে না। ঠাকুরগাঁওয়ের মাটিতে এতো সুন্দর কমলা ও মাল্টা চাষ হয়, তা আগে আমরা জানতাম না। আজ জয়নুল ভাইয়ের বাগানে এসে বোঝা গেল যে আমাদের বাংলাদেশের মাটিতেও এখন বিদেশি ফলের চাষাবাদ করা যাবে। প্রতিটি কমলার গাছের নিচ থেকে ওপর পর্যন্ত থোকায় থোকায় কমলা দেখে মন ভরে যায়।  
কমলা বাগান দেখতে আসা আরেক দর্শনার্থী ইয়াসমিন আক্তার ইভা বলেন, আমি মানুষের মুখে শুনছি যে টাঙ্গন ব্রিজের পাশে একটা কমলা বাগান হয়েছে। আজ তাই আমি আমার পরিবার সবাই মিলে দেখতে এসেছি। কমলা বাগানে এতো সুন্দরভাবে কমলা ঝুলে আছে, যা দেখে মন জুড়িয়ে যায়। নিজের হাত দিয়ে গাছ থেকে কমলা ছিঁড়ে খেলাম, অনেক সুস্বাদু।

কমলার বাগানের ম্যানেজার খালেদ বলেন, এ কমলার বাগানটি আমার চাচার। চাকরি সূত্রে তিনি ঠাকুরগাঁওয়ের বাইরে থাকেন। তাই সম্পূর্ণ বাগানটি আমিই দেখভাল করি। বাগানটির বয়স চার বছর। এর আগের বছর তেমন কমলা আসনি। তবে এবার প্রতিটি গাছে এতো কমলা হয়েছে যে আমি নিজেই অবাক। পাঁচ/সাতজন প্রতিদিন এ বাগানে কাজ করেন। প্রতিদিন ঠাকুরগাঁও জেলা থেকে এবং বাইরের জেলাগুলো থেকে দর্শনার্থীরা বাগানটি দেখতে আসেন। নিজের হাতে কমলা ছিঁড়ে তারা কিনে নেন। আমরা প্রথম হিসেবে প্রচারের জন্য দামটা একটু কম রাখি। আশা করছি, এবার অনেক লাভবান হবো।

 

 


মালিক জয়নাল আবেদীন বলেন, আমি চাকরি করি এবং চাকরির সুবাদে বিভিন্ন জায়গায় যেতে হয়। কমলা বাগান দেখে আমি মুগ্ধ হয়েই নিজে বাগান করেছি। আমার বাগানে এখন দার্জিলিং কমলা গাছ রয়েছে ১৭০টি, চায়না কমলা গাছ রয়েছে ১৩০টি এবং মাল্টা গাছ রয়েছে ১৩৫টি। এর আগের বছর তেমন লাভ করতে পারিনি। তবে এবার ছয়/সাত লাখ টাকার কমলা বিক্রি করতে পারব বলে আশা করছি। এবার পাইকারিতে ২৬০ থেকে ২৮০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।  পরের বছরে বাগানের পরিধি আরও বাড়িয়ে কমলার বাগানে চমক সৃষ্টি করতে চাই। আর কেউ কমলা চাষের উদ্যোগ নিলে সার্বিক সহযোগিতা করব।

ঠাকুরগাঁও কৃষি অফিসের উপ-পরিচালক সিরাজুল ইসলাম বলেন, ঠাকুরগাঁও জেলায় ছোট বড় মিলে সাতটি কমলা বাগান রয়েছে। জমির পরিমাণ ৭.২ হেক্টর। জমি উপযোগী হওয়ায় জেলায় কমলা ও মাল্টা বাগানের পরিধি বেড়েই চলেছে। বাগান করে সফল হচ্ছেন কৃষকেরা। কমলা চাষে যুক্ত হচ্ছেন নতুন নতুন উদ্যোক্তা। আমরা কৃষি অফিস থেকে তাদের সব ধরনের সহযোগিতা করব।

বাংলাদেশ সময়: ১৩০৮ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১০, ২০২৪
এসআই

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।