শুক্রবার (২২ জুন) বাংলাদেশ সময় বিকেল ৬টায় শুরু হওয়া খেলার নির্ধারিত ৯০ মিনিটে বারবার গোলের জন্য মাথা কুটে মরেছে ব্রাজিল। ৯০ মিনিট পার হতেই যেন আসল রূপে দেখা দিলেন নেইমাররা।
প্রথম গোলের পর খুশিতে মাঠেই গড়াগড়ি খেলেন কোচ তিতেও। দ্বিতীয় গোল এতোটাই আকস্মিক যে মুহূর্তেই সচকিত হয়ে গর্জে উঠে পুরো স্টেডিয়াম। খুশিতে হাঁটু গেড়ে কেঁদে ফেলেন নেইমার। ইনজুরিতে দীর্ঘ সময় মাঠের বাইরে থাকার পর বিশ্বকাপের গ্রুপ পর্বে সুইজাল্যান্ডের বিপক্ষে ম্যাচে ১০ বার ফাউলের শিকার হয়েছিলেন। সেই ম্যাচে তাকে আনফিট অবস্থায়ই ৯০ মিনিট খেলতে দেখা গেছে। কিন্তু আজকের ম্যাচে তার ফিটনেসের উন্নতি নজর কেড়েছে। কুতিনহো আর তার শেষ মুহূর্তের দারুণ নৈপুণ্যেই ২-০ গোলের জয় নিশ্চিত হয় ব্রাজিলের।
ম্যাচের প্রথম ৯০ মিনিট শক্ত রক্ষণে ব্রাজিলকে বেশ ভুগিয়েছে কোস্টারিকা। তারপরও বেশ কয়েকবার গোল করার সুযোগ হাতছাড়া করেন ব্রাজিলের জেসুস, ফিরমিনো ও নেইমার। অথচ ম্যাচের অধিকাংশ সময় ব্রাজিলের নিয়ন্ত্রণে ছিল বল। কিন্তু কোস্টারিকার রক্ষণ আর গোলরক্ষক কেইলর নাভাসের দৃঢ় ভূমিকায় গোলবঞ্চিত হন জেসুসরা।
নির্ধারিত ৯০ মিনিটের মাত্র ১ মিনিট পরেই গোলের দেখা পায় ব্রাজিল। এর আগে ফিরমিনোর হেড গোলবার পেরিয়ে গেছে, জেসুসের শট অফসাইডের ফাঁদে পরে বাতিল, কিন্তু আসল কাজটা করে দেখালেন ফিলিপে কুতিনহো। ফিরমিনোর হেড থেকে জেসুসের পায়ে বল গেলেও কন্ট্রোল করতে পারেন নি তিনি। কিন্তু বল চলে যায় কুতিনহোর পায়ে। সুযোগটা দারুণভাবে কাজে লাগিয়ে দলের ও নিজের প্রথম গোল করেন কুতিনহো।
কুতিনহোর গোলের মাত্র ৭ মিনিট পরেই গোল করেন নেইমার। মার্সেলোর বানিয়ে দেওয়া বলে খেলার ৯৭তম মিনিটে কোস্টারিকার জালে ব্রাজিলের দ্বিতীয় ও এবারের বিশ্বকাপে নিজের প্রথম গোল করেন এই পিএসজি তারকা।
ব্রাজিলের হয়ে নেইমারের এটি ৫৬তম গোল। এই গোলের মাধ্যমে ব্রাজিলের ইতিহাসে সর্বোচ্চ স্কোরার রোমারিওর পাশে নাম লেখালেন নেইমার।
এর আগে খেলার ৭৯ মিনিটে কোস্টারিকার ডি বক্সে বল দখলের লড়াইয়ে পড়ে যান নেইমার। তাতে পেনাল্টি ডেকে বসেন রেফারি। তাতে প্রায় গোলশূন্য শেষ হতে যাওয়া ম্যাচ যেনো প্রাণ ফিরে পায়। তবে প্রতিপক্ষ ভিএআর মেথডের আবেদন করলে তা থেকে ‘নো পেনাল্টি’ সিদ্ধান্ত এলে ফের হৃদয় ভাঙে নেইমার ভক্তদের।
আজকের ম্যাচে হলুদ কার্ড দেখেছেন নেইমার। ম্যাচের ৮২ মিনিটে কোস্টারিকার ডি বক্সে নাটকীয়ভাবে পড়ে গেলে বলকে ঘুষি মেরে বসেন। রেফারি সঙ্গে সঙ্গে হলুদ কার্ড দেখান। মূলত তার সাথে সহজ সংঘর্ষে কোস্টারিকান একজন ফুটবলার পড়ে গেলে হতাশা থেকে অমন কান্ড করেন নেইমার। রেফারির সিদ্ধান্তের প্রতিবাদ করায় হলুদ কার্ড দেখেন ফিলিপে কুতিনহোও।
গোলের দেখা আরও আগেই পেতে পারতো ব্রাজিল। ৭৯ মিনিটে রেফারির দেওয়া পেনাল্টি ভিডিও রেফারির সিদ্ধান্তে বাতিল হয়ে যায়। কোস্টারিকার গঞ্জালেসের সাথে নেইমারের সংঘর্ষে ফাউলের সিদ্ধান্ত দেন রেফারি। তবে ভিডিও রেফারি রিপ্লে দেখে বাতিল করে দেন।
তবে শেষ হাসি হেসেছে সেলেসাওরাই। সুইসদের বিপক্ষে ড্র করে যে ভয়াবহ চাপ ভর করেছিলো দলের ঘাড়ে, নেইমার-কুতিনহোর গোলে সেই চাপকে জয় করে দেখালো ব্রাজিল। সেই সাথে কোচ তিতের অধীনে বিশ্বকাপে প্রথম জয়ের দেখাও পেলেন নেইমাররা।
এই জয়ে ২ ম্যাচে ৪ পয়েন্ট নিয়ে গ্রুপ ‘ই’র শীর্ষে পৌঁছে গেছে ব্রাজিল। আর টানা দুই পরাজয়ে গ্রুপের শেষ স্থানে থাকা কোস্টারিকা আছে বাদ পড়ে যাওয়ার শঙ্কায়।
২৭ জুন গ্রুপ পর্বে ব্রাজিলের শেষ ম্যাচ সার্বিয়ার বিপক্ষে।
বাংলাদেশ সময়: ২০৩৫ ঘণ্টা, জুন ২২, ২০১৮
এমএইচএম