ঢাকা, শুক্রবার, ৬ বৈশাখ ১৪৩১, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫

ভোটের-কথা

খুলনা-১ আসন

‘সুযোগ’ কাজে লাগাতে চায় বিএনপি

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১২৫৮ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ১৬, ২০১৮
‘সুযোগ’ কাজে লাগাতে চায় বিএনপি নির্বাচনের মনোনয়নপ্রত্যাশীরা

খুলনা: দক্ষিণের উপকূলীয় উপজেলা দাকোপ ও বটিয়াঘাটা নিয়ে খুলনা-১ আসন। একাদশ সংসদ নির্বাচনকে ঘিরে দেশের অন্যান্য আসনের মতো এ আসনেও বইছে নির্বাচনী হাওয়া। নির্বাচনকে সামনে রেখে দলীয় নেতাকর্মীদের নিয়ে সভা-সমাবেশের মাধ্যমে নিজের অবস্থান জানান দিচ্ছেন সম্ভাব্য প্রার্থীরা।

আসনটি বরাবরই আওয়ামী লীগের শক্ত ঘাঁটি হিসেবে পরিচিত। তবে এই আসনে বর্তমানে আওয়ামী লীগের কোন্দল চরমে।

আর এই ‘সুযোগটাই’ কাজে লাগাতে চায় দীর্ঘদিন ক্ষমতার বাইরে থাকা বিএনপি।

এ আসনে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের ৬ সম্ভাব্য প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতার তালিকায় রয়েছেন। তারা হলেন- বর্তমান সংসদ সদস্য (এমপি) ও খুলনা জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি পঞ্চানন বিশ্বাস, দুইবারের সাবেক এমপি বর্তমান খুলনা জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ও জেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হারুনুর রশীদ, বঙ্গবন্ধু শিশু কিশোর মেলার উপদেষ্টা শিল্পপতি শ্রীমন্ত অধিকারী রাহুল, বিগত নির্বাচনে দলের বিদ্রোহী প্রার্থী ও সাবেক এমপি ননী গোপাল মণ্ডল, বটিয়াঘাটা উপজেলা চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আশরাফুল আলম খান এবং দাকোপের দুইবারের উপজেলা চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ আবুল হোসেন ।  

অপরদিকে গত দুইবারের বিএনপি দলীয় প্রার্থী খুলনা জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আমির এজাজ খান এবার দলের একক প্রার্থী হতে যাচ্ছেন বলে দলটির একাধিক সূত্র নিশ্চিত করেছে।  

এছাড়া জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য ও দলীয় চেয়ারম্যানের প্রেস অ্যান্ড পলিটিক্যাল সেক্রেটারি সুনীল শুভ রায়, বটিয়াঘাটা উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান নিতাই গাইন সিপিবি থেকে প্রার্থী হওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন।

অভিযোগ রয়েছে, বর্তমান সংসদ সদস্য পঞ্চানন বিশ্বাস আইলা দুর্গত এ আসনে নদীভাঙন রোধে তেমন কোনো কাজ করতে পারেননি। ননী গোপাল মন্ডল আওয়ামী লীগের সংস্কারপন্থি নেতা হওয়ায় দল তাকে বহিষ্কার করেছিল। আইলা পরবর্তী সময় দুর্নীতির অভিযোগসহ নানা অনিয়ম করায় কোনঠাসা হয়ে পড়েছিলেন তিনি। যে কারণে নেতাকর্মীরাও তার কাছ থেকে দূরে সরে গিয়েছিলেন। এ আসনে সাবেক ও বর্তমান সংসদ সদস্যর মধ্যে দ্বন্দ্বের জেরে নতুন মুখ আসতে পারে বলে মনে করছেন দলীয় নেতাকর্মীরা।

বর্তমান সংসদ সদস্য পঞ্চানন বিশ্বাস বাংলানিউজকে বলেন, নির্বাচনে অংশগ্রহণে আমার প্রস্তুতি ভালো। দু’টি জাতীয় দৈনিকে প্রকাশিত সংসদ নির্বাচনের আওয়ামী লীগের প্রাথমিক প্রার্থী তালিকায় আমার নাম আছে। আমি আশাবাদী মনোনয়ন পাবো। এমপি থাকাকালে বটিয়াঘাটা ব্রিজ করছি। আমার এলাকায় কোনো কাঁচা রাস্তা নেই বললেই চলে। নদীভাঙন প্রতিরোধেও চেষ্টা চালানো হচ্ছে।

জেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হারুনুর রশীদকে মোবাইল ফোনে না পাওয়া গেলেও তার ঘনিষ্টরা জানান, অনগ্রসর এলাকা হিসেবে পরিচিত দাকোপ ও বটিয়াঘাটায় হারুনুর রশীদের প্রচেষ্টায় ব্যাপক উন্নয়ন হয়েছে। প্রবীণ রাজনীতিবিদ হিসেবেও তিনি সবার কাছে অধিক জনপ্রিয়। যে কারণে এ আসনে নৌকা প্রতীকের দাবিদার তিনি।  

এদিকে মনোনয়নে আশাবাদী শিল্পপতি শ্রীমন্ত অধিকারী রাহুলও।  বাংলানিউজকে তিনি বলেন, আমি শতভাগ আশাবাদী সভানেত্রী আমাকে মনোনয়ন দিবেন।  

কেন আপনাকে মনোনয়ন দেবে এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এলাকার মানুষ পরিবর্তন চায়। উন্নয়ন যতটা হওয়ার কথা ছিল তা হয়নি, বিশেষ করে দাকোপ উপজেলায়।  

শ্রীমন্তের দাবি, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশ অনুযায়ী সাধারণ মানুষের কাছে আওয়ামী লীগের উন্নয়ন ও সাফল্যের কথা পৌঁছে দিতে তৃণমূল নেতাকর্মীদের সঙ্গে নিয়ে কাজ করে যাচ্ছেন তিনি।  

নির্বাচনী এলাকায় গণসংযোগ চালানো মনোনয়ন প্রত্যাশী এই আওয়ামী লীগ নেতা বলেন, মানুষের সুখে দুঃখে আমি ও আমার পরিবার সবসময় এলাকাবাসীর পাশে ছিলাম এবং রয়েছি। যে কারণে মনে করছি ভোটের মাঠেও তারা আমার পাশে থাকবে।  

তবে জাতীয় দৈনিকে সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রাথমিক প্রার্থী তালিকা প্রকাশের বিষয়টি ভুয়া ও ভিত্তিহীন দাবি করে তিনি বলেন, দলের শীর্ষ পর্যায়ে যোগাযোগ করে আমি তাই জেনেছি।  

তৃণমূলের নেতা-কর্মীরা জানান, খুলনা-১ আসনে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ভোট বেশি। এখানকার বর্তমান সংসদ সদস্য পঞ্চানন বিশ্বাস এলাকার উন্নয়ন করতে পারেননি। সাবেক এমপি ননী গোপাল মণ্ডল দল থেকে বিচ্ছিন্ন। যে কারণে এ আসনে নতুন প্রার্থী হিসেবে সাড়া জাগিয়েছেন তরুণ শিল্পপতি শ্রীমন্ত অধিকারী রাহুল।  

খুলনা-১ আসনের সাবেক এমপি ও দাকোপ উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি ননী গোপাল মণ্ডল বাংলানিউজকে বলেন,  মনোনয়ন পাওয়ার ব্যাপারে উপরে ঈশ্বর নিচে সভানেত্রী শেখ হাসিনা যা করেন। তাই মেনে নেবো।  

বর্তমান এমপির সমালোচনা করে তিনি বলেন, নদী ভাঙন প্রতিরোধে ওনার (পঞ্চানন) কোনো ভূমিকা নেই। প্রতিনিয়ত নদীভেঙেই চলছে। তিনি উল্লেখযোগ্য কোনো কাজ করেছেন বলে জানা নেই। আর যেটুকু হয়েছে তা আমার সময়ে।  

খুলনা জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আমীর এজাজ খান বাংলানিউজকে বলেন,  ঘরে ঘরে আমাদের প্রস্তুতি রয়েছে, শুধু ভোট দেওয়ার সুযোগ ও পরিবেশ থাকতে হবে। ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি নির্বাচনের পর আমাদের এই অঞ্চলে কোথাও কোনো সভা, সমাবেশ, ধর্মীয় বা সামাজিক অনুষ্ঠান পুলিশ ও সরকার দলীয়রা করতে দেয়নি। পাঁচজন লোক নিয়ে কোথাও দাঁড়াতে পারছি না। এ নিয়ে সাধারণ মানুষের ভেতর একটা ক্ষোভ রয়েছে। মানুষ সুযোগ পেলেই প্রতিফলন ঘটাবে। মাঠে নামতে না দিলেও স্থানীয় নেতাকর্মীদের নিয়মিত খোঁজ-খবর রাখছি। তারা কোনো মামলা বা বিপদে পড়লে সহযোগিতার চেষ্টা করি।

আসন্ন নির্বাচনের বিষয়ে জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য সুনীল শুভ রায় বাংলানিউজকে বলেন, আমার নির্বাচনের প্রস্তুতি আছে। এতে জাতীয় পার্টি হোক বা জোটগতভাবে হোক আমি মনোনয়ন পাবো।  

জাতীয় দৈনিকে সংসদ নির্বাচনের প্রাথমিক প্রার্থী তালিকা প্রকাশের বিষয়টি ভুয়া ও ভিত্তিহীন বলে উল্লেখ করেন তিনি।

খুলনা জেলা নির্বাচন অফিসের তথ্যানুযায়ী, খুলনা-১ (বটিয়াঘাটা-দাকোপ) আসনের বটিয়াঘাটা উপজেলায় মোট ভোটার সংখ্যা ১ লাখ ৩৭ হাজার ২২৪ জন। আর দাকোপ উপজেলায় মোট ১ লাখ ২১ হাজার ৯৮৮ জন ভোটার রয়েছেন।

বাংলাদেশ সময়: ০৮৫৪ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ১৬, ২০১৮
এমআরএম/জেডএস

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

ভোটের-কথা এর সর্বশেষ