হযরত আয়িশা (রা.) বলেছেন, “আমি রাসূল (সা.) কে রমজান মাসের পর শাবান মাস ব্যতীত অন্যকোন মাসে এতো সিয়াম পালন করতে দেখিনি” যে রামজানের আগের মাস হলো শাবান আর সেই মাসে রাসূল (সা.) রোজা রেখে প্রস্তুতি গ্রহণ করতেন।
তাছাড়া হাদিস ও ইতিহাসের বিভিন্ন ঘটনা পাঠ করলে লক্ষ্য করা যায় যে সেই প্রজন্ম ও তার পরবর্তী প্রজন্মের মধ্যে রমজানের আগেই তারা বিভিন্ন উদ্যোগ গ্রহণ করতেন মর্মে প্রমাণ পাওয়া যায়।
রমজানের প্রস্তুতি নিয়ে ইরাকের বিখ্যাত মনীষী আবুবকর আল বালখি যাকে আমরা ইমাম আল বালখি নামে চিনি তার তার একটি বিখ্যাত উক্তি রয়েছে যা হাদিস ও সাহাবায়ে কেরামের আমলের সঙ্গে মিল রাখে তিনি বলেন, “রজব মাস হলো বীজ বোনার মাস, শাবান মাস হলো তাতে সেচ দেওয়ার মাস ও রমাদন মাস হলো সেই ফসল ঘরে তোলার মাস”। সুতরাং আমরা বলতে পারি যে আমাদের প্রস্তুতি গ্রহণের অবশ্যই কিছু আছে। নিম্নে পাঠকদের উদ্দেশে কিছু পরামর্শ রাখছি যাতে আপনাদের রমজান মাস সুন্দরভাবে কাটে। তাছাড়া এর বাইরে আপনারা নিজেরাও ভাল উদ্যোগ গ্রহণ করতে পারেন।
পাচঁ ওয়াক্ত সালাত জামায়াতে আদায় করুন। আজানের আগে বা সঙ্গে সঙ্গে মাসজিদে প্রবেশের চেষ্টা করুন। নফল সালাত ও কুরআন বেশী বেশী পড়ুন।
ঈদের শপিং রমজানের আগেই করে ফেলুন। এই গরমে ও রমজানের গুরুত্বপূর্ণ সময় মার্কেট থেকে দূরে থাকার চেষ্টা করুন। “শেষ সময়ের নতুন কালেকশন” নামক বিজ্ঞাপন ও চিন্তা থেকে বেরিয়ে আসুন। আপনার ঈমান, চোখ, শরীর সবই ভালো থাকবে। প্রতিবছর এরকম করবেন বলে মানসিকতা তৈরি করুন এবং আর্থিকভাবে প্রস্তুতি নিন।
ইফতারিতে সুস্বাদু খাবার থেকে ওই সময়ের আমল ও দোয়াকে গুরুত্ব দিন। মা-বোনদের জন্য এই গুরুত্বপূর্ণ সময়কে ইবাদত উপযোগী করে দিন। তাদের দোয়া ও আমল করার উৎসাহ দিন।
যিনি কোরআন পড়তে পারেন না তিনি পড়া শিখুন। যিনি পড়তে পারেন তিনি অর্থ বোঝার চেষ্টা করুন। যার ১০টি সূরা মুখস্ত সে ২০টি মুখস্ত করার চেষ্টা করুন। এক কথায় নিজের জীবনে কোরআনের অবস্থানের উন্নয়নমূলক পরিবর্তন ঘটান।
পরিকল্পনা করুন যে কত সুন্দরভাবে রমজান মাস কাটাবেন। সেই পরিকল্পনা বাস্তবায়নের জন্য জোর প্রচেষ্টা চালান।
শাবান মাসে সিয়াম পালন করে রমজানের প্রথম প্রথম হওয়া কষ্টকে সহজ করে নিন।
মহিলারা বাড়ির বিভিন্নকাজ রমজানের আগেই করে রাখুন যাতে ওই সময় কোরআন পড়া, সালাত আদায়, তাসবীহ-তাহলীল করতে পারেন।
অধীনস্ত কর্মচারীদের তাদের কাজের ক্ষেত্রে সহজীকরণ করুন।
এক কথায়, আমরা নিজেকে নিজে সবচেয়ে ভালোভাবে চিনি, জানি আমি কেমন। সেই অবস্থার উন্নয়নমূলক পরিবর্তন ঘটানোর চেষ্টা করুন।
গীবত, পরচর্চা সহ যাবতীয় ব্যক্তিত্বহীন কর্মকাণ্ড থেকে বেচে চলুন। বেশি বেশি দান সদকা করুন। অপরকে খাওয়ানোর অভ্যাস করুন।
নিজের ভুলগুলো শনাক্ত করুন এবং সেগুলো সংশোধনের জন্য প্রচেষ্টা চালান। সেই সঙ্গে নিজের মধ্যে থাকা খারাপ গুনগুলো পরিত্যাগ করার জন্য প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হন।
জহিরুল আমিন
লেখক ও ইসলামী গবেষক
পরিচালক, কোরআনিক ল্যাংগুয়েজ প্রোগ্রাম, খুলনা
বাংলাদেশ সময়: ১৪৩৯ ঘণ্টা, মে ১১, ২০১৮
এসএইচ