ঢাকা, শুক্রবার, ৫ বৈশাখ ১৪৩১, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫

আগরতলা

ত্রিপুরায়ও এনআরসি চালুর পক্ষে-বিপক্ষে চলছে বিতর্ক

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২০৩৮ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ১৪, ২০১৯
ত্রিপুরায়ও এনআরসি চালুর পক্ষে-বিপক্ষে চলছে বিতর্ক

আগরতলা (ত্রিপুরা): ভারতের আসাম রাজ্যে এনআরসি (জাতীয় নাগরিকত্বের তালিকা) চালুর পর থেকে উত্তরপূর্ব ভারতের বিভিন্ন রাজ্যের রাজনৈতিক দলগুলোও চাচ্ছে সেখানেও এনআরসি চালু করা হোক। যার জেরে একই দাবি জানাচ্ছে ত্রিপুরা রাজ্যের জনজাতিভিত্তিক দল ও সংগঠনগুলোও।

ত্রিপুরা রাজ্যের জনজাতি অধ্যুষিত এলাকা নিয়ে আলাদা ‘তিপ্রাল্যান্ড’ রাজ্য গঠনের দাবিকে সামনে রেখে ২০০৯ সালে গঠিত হয়েছিল রাজ্যের ক্ষমতাসীন দল ইনডিজেনাস পিপলস ফ্রন্ট অব ত্রিপুরা (আইপিএফটি)। অথচ এখন সেই দলও এআরসি চালুর দাবিই করছে।

হঠাৎ করে আইপিএফটি-ও কেন ত্রিপুরা রাজ্যে এনআরসির দাবি করছে? তবে কী তারা তাদের আলাদা রাজ্যের দাবি থেকে সরে এসেছে?- এমন প্রশ্নই এখন জনসাধারণের মনে।  

এই বিষয়ে দলের মুখপাত্র মঙ্গল দেব বর্মাকে জিজ্ঞাসা করলে তিনি বাংলানিউজকে জানান, তিপ্রাল্যান্ড রাজ্য গঠন ও এনআরসি- এই দু’টি বিষয় আলাদা। তিপ্রাল্যান্ডের দাবিটিই তাদের মূল দাবি। এই দাবিতে তাদের দল এখনও অটল। এটি রাজ্যের দাবি। অন্যদিকে এনআরসি হচ্ছে জাতীয় দাবি। তাই তারা এনআরসি’র দাবি করছেন।  

‘এই দু’টি দাবির একটির সঙ্গে অপরটির কোনো সংঘাত নেই। কারণ দু’টি দাবি সম্পূর্ণ আলাদা,’ যোগ করেন তিনি।

তিনি আরও বলেন, যেহেতু এটি জাতীয় একটি ইস্যু, তাই এই বিষয়টি নিয়ে আমরাও দাবি জানিয়েছি। যারা ১৯৭১ সালের পর ত্রিপুরা রাজ্যে এসেছেন, তাদের বহিরাগত হিসেবে চিহ্নিত করতে হবে।  

বিভিন্ন জঙ্গিগোষ্ঠীর আত্মসমর্পণকারী সদস্যদের সংগঠন ত্রিপুরা ইউনাইটেড ইন্ডিজেনাস পিপলস কাউন্সিলও (টিইউআইপিসি) এখন রাজ্যে এনআরসি চালুর দাবি করছে।

সংগঠনের সভাপতি অনন্ত দেববর্মা বাংলানিউজকে বলেন, ত্রিপুরা রাজ্যের জঙ্গিগোষ্ঠী অল ত্রিপুরা টাইগার ফোর্সের (এটিটিএফ) সঙ্গে ভারত ও ত্রিপুরা সরকারের ত্রিপাক্ষিক চুক্তি হয়। চুক্তির শর্তের মধ্যে ছিল- রাজ্যে অবৈধভাবে বসবাসকারী বিদেশিদের রাজ্য থেকে বিতাড়িত করতে হবে।  

১৯৬৪ সালের পর যেসব লোক ত্রিপুরায় এসে স্থায়ীভাবে বসবাস করছে, তাদেরকে বিদেশি হিসেবে চিহ্নিত করতে হবে। অথচ এখনও সেটি করা হয়নি। তবে আমরা গণতান্ত্রিকভাবে এখনও আমাদের দাবি জানিয়ে যাবো। পরবর্তীতে আমরা কোন কর্মসূচি নেব, সেটির জন্য আইন বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে কথা বলে তা ঠিক করা হবে।

অন্যদিকে ত্রিপুরা রাজ্যে এনআরসি চালুর তীব্র বিরোধীতা করে আসছে ভারতের বাঙালি রাজনৈতিক দল ‘আমরা বাঙালি’। এই দলের ত্রিপুরার রাজ্য কমিটির সহ-সচিব গৌরাঙ্গ রুদ্রপাল বাংলানিউজকে বলেন, বাঙালিদের কোণঠাসা করার জন্য নানা সময় নানা চক্রান্ত হয়েছে। এই কোণঠাসা করার শুরু হয়েছিল বঙ্গভঙ্গের সময়। এরপর পূর্ব পাকিস্তানের আমলেও বাঙালিরা নানাভাবে নির্যাতিত হয়েছে। এনআরসি-ও উত্তরপূর্ব ভারতের সাধারণ মানুষকে হেনস্থা করার একটি কৌশল।  

তার মতে, এই অবস্থা থেকে মুক্তি পাওয়ার একটাই পথ। বাঙালিদের জন্য আলাদা রাজ্য গঠন করতে হবে। যার নাম হবে ‘বাঙালিস্থান’।  

তিনি আরও বলেন, বাঙালিদের পিঠ দেওয়ালে ঠেকে গেছে। এটা আর খুব দূরে নয় যে, এর বিরুদ্ধে পাল্টা প্রতিরোধ গড়ে উঠবে। এখন দেখার বিষয়, ত্রিপুরা রাজ্যে এনআরসি’র ভবিষ্যত কী? কারণ ইতোমধ্যে ত্রিপুরা থেকে ভারতের সর্বোচ্চ আদালতে তিনটি আলাদা মামলা করা হয়েছে। সর্বোচ্চ আদালত কী রায় দেন, সেই দিকেই তাকিয়ে আছেন এনআরসি পক্ষ ও বিরোধী, উভয় দিকের মানুষ।

বাংলাদেশ সময়: ১৬৩৮ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ১৪, ২০১৯
এসসিএন/এসএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।