ঢাকা, শুক্রবার, ১২ বৈশাখ ১৪৩১, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫

আগরতলা

অনাবিষ্কৃত অপরূপ সৌন্দর্যের লীলাভূমি ত্রিপুরা

সোলায়মান হাজারী ডালিম, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৩৩০ ঘণ্টা, আগস্ট ৪, ২০১৭
অনাবিষ্কৃত অপরূপ সৌন্দর্যের লীলাভূমি ত্রিপুরা অনাবিষ্কৃত অপরূপ সৌন্দর্যের লীলাভূমি ত্রিপুরা/ছবি: বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

ফেনী: ত্রিপুরায় আজ তিন দিন। বাংলানিউজের ‘ত্রিপুরা পেজ’-র উদ্বোধন উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে যোগ দিতেই আসা। শুক্রবার (২৮ জুলাই) ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়া সীমান্ত পেরিয়ে এ জনপদে ঢোকার সাথে সাথেই সবুজ আর পরিচ্ছন্ন পরিকল্পিত নগরের অভ্যর্থনায় যেন প্রাণ জুড়িয়ে যায়।

এ তিনদিন প্রদেশের বিভিন্ন এলাকা ঘুরে এসে মনে হয়েছে শান্ত. সরল ও মনোরম পরিবেশের জন্য ভ্রমণের একটি আদর্শ জায়গা হিসেবে বিবেচিত হতে পারে এই জনপদ।

এখানে ভ্রমণকালে ঘূর্ণায়মান সবুজ উপত্যকা, ঘন-নিবিড় অরণ্য, সুরম্য প্রাসাদ এবং প্রাচীন বৌদ্ধ-স্থল—সব কিছু দিয়ে ত্রিপুরা নজর কেড়েছে, বিমোহিত করছে।

নানা জাতি, ধর্ম, সম্প্রদায়ের মিলনস্থল এ প্রদেশটি যেকোনো পর্যটকের দৈনন্দিন জীবনের উদ্বেগকে ভুলিয়ে দিতে পারে নিমেষে।

স্থানীয়দের সাথে কথা বলে জানা যায়, এ প্রদেশটিকে একসময় উত্তর-পূর্ব ভারতের সবচেয়ে দূরর্বতী স্থান হিসাবে গণ্য করা হতো। কিন্তু সময়ের পরিবর্তনের সাথে সাথে এবং রাজ্য সরকারের প্রচেষ্টায় এখন আর ভারতের কোনো দূর প্রান্ত থেকেই খুব একটা দূরে বলে মনে হয় না।

ছোট হলেও খুবই সুন্দর একটি রাজ্য ত্রিপুরা । পুরাতন বৌদ্ধ ধর্মীয় স্থান ও হিন্দু মন্দির, বন্য উদ্ভিদ ও প্রাণীকুলের আবাসস্থল এবং বিভিন্ন উপজাতিদের স্পন্দনশীল গঠনের সমন্বয়ে ত্রিপুরা অনাবিষ্কৃত এক সৌন্দর্যকে প্রকাশ করে।

ত্রিপুরার পরিবেশ সবুজ উপত্যকা, পাহাড়ি স্রোতধারা, পাহাড় এবং উপত্যকা দ্বারা পরিবেষ্টিত।

এরপর আসা যাক প্রাচীন সব প্রাসাদের কথায়। প্রদেশটিতে রয়েছে উজ্জয়ন্ত প্রাসাদ, যে প্রাসাদে বাস করতেন এই রাজ্যে রাজন্য শাসন আমলের রাজারা। এটি আগে ছিল ত্রিপুরা বিধানসভা ভবন। এখন এই প্রাসাদকে স্টেট মিউজিয়ামে পরিণত করা হয়েছে। রয়েছে কুঞ্জবন প্রাসাদ, ত্রিপুরা সরকারী যাদুঘর ও রুদ্র সাগরের মাঝে অপরুপ নীরমহল প্রাসাদ।

আপনি যদি ত্রিপুরার বন্যপ্রাণী দেখতে চান তাহলে যেতে হবে সিপাহীজলা অভয়ারণ্যে। যা দেখতে অনেকটা আমাদের দেশের লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যানের মতোই। শনিবার (৩০ জুলাই) নিজ চোখে দর্শনের সৌভাগ্য হয়।

এছাড়াও প্রকৃতিপ্রেমীদের জন্য রয়েছে গোমতী অভয়ারণ্য, তৃষ্ণা অভয়ারণ্য ও রোয়া অভয়ারণ্য। এসব অভয়ারণ্য স্পষ্টভাবে উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় ভারতীয় রাষ্ট্রের বিভিন্ন প্রাকৃতিক ঐতিহ্যকে ব্যাখ্যা করে।

সবশেষে আসি ধর্মীয় তীর্থস্থানের কথায়। যারা ধর্মীয় স্থান ভ্রমণ করতে চান তাদের জন্য এখানে রয়েছে মন্দির ও বৌদ্ধ বিহার।
স্থানীয়দের সাথে কথা বলে জানা যায়, মন্দির আর বিহারগুলো হল এই রাজ্যের পর্যটনের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। এ মন্দিরগুলোর স্থাপত্য এবং ভাস্কর্য'র জন্য সারাবিশ্বের হাজার হাজার পর্যটককে আকর্ষিত করে।

এসবের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো, ত্রিপুরা সুন্দরী মন্দির, কমলাসাগর কালীমন্দির, ভুবনেশ্বরী মন্দির, দক্ষিণ ত্রিপুরার মনু বকুল বৌদ্ধমন্দির, আগরতলার বেণুবন বিহার বৌদ্ধমন্দির, উত্তর ত্রিপুরার পেচারথাল বৌদ্ধমন্দির, উদয়পুরের মাতাবাড়ি, কসবা কালীবাড়ি।

সংক্ষিপ্ত সফর শেষে সোমবার (০১ আগস্ট) নিজ দেশে ফিরে আসি। তিনদিনের এ ভ্রমণে মনে হয়েছে সমৃদ্ধ সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য, সুন্দর প্রাসাদ, অভয়ারণ্য, পবিত্র মন্দির এবং জাদুঘরের জন্য একদিন বিশ্বজুড়ে বিখ্যাত হবে আমাদের বাড়ির পাশের ভারতের এ রাজ্যটি।

আর তাই দেখতে যেতে পারেন ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের ক্ষুদ্র পার্বত্য রাজ্য ত্রিপুরা। বিশ্বাস রাখি, এর সৌন্দর্যে বিমোহিত হবেন আপনিও।

বাংলাদেশ সময়: ০৯২২ ঘণ্টা, আগস্ট ০৪, ২০১৭
এসএইচডি/জেএম

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।