ঢাকা, শুক্রবার, ৬ বৈশাখ ১৪৩১, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫

ট্রাভেলার্স নোটবুক

বর্ষায় জেগে থাকা ‘সুপ্ত ধারা’য় ‘ঘুরঘুরান্তিস’দল!

সোলায়মান হাজারী ডালিম, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০০৩৭ ঘণ্টা, আগস্ট ২১, ২০১৭
বর্ষায় জেগে থাকা ‘সুপ্ত ধারা’য় ‘ঘুরঘুরান্তিস’দল! সীতাকুণ্ড ইকোপার্কের সুপ্তধারা ঝর্না/ছবি: বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

সীতাকুণ্ড (চট্টগ্রাম) থেকে ফিরে: ফেনী শহরের রাজাঝির দিঘির পাড়ে বসেই ছুটির দিনে বেরিয়ে পড়ার পরিকল্পনা। অগ্রজ উৎপল সুজন দাদার নেতৃত্বে তৈরি হয়ে গেল ‘ঘুরঘুরান্তিস’ নামের ১০ জনের টিম।

 

শুক্রবার (১৮ আগস্ট)সকাল সাড়ে ৮টায় শহরের মহীপাল থেকে আমাদের যাত্রা শুরু। টিমের সকল সদস্য উপস্থিত হলেও মাহতাব ভাই উপস্থিত হতে না পারায় সবার মন কিছুটা খারাপ।

সেই খারাপ লাগা থেকেই সীতাকুণ্ডের উদ্দেশ্যে বাসে চেপে বসেছি টিমের বাকি ৯ সদস্য।

বাসে ওঠার পর গল্প-আড্ডা আর ঘুমের মধ্যে কোন ফাঁকে ঘন্টাখানেক চলে গেল টেরই পাইনি। বাস আমাদের নামিয়ে দিল সীতাকুণ্ড ইকোপার্কের মূল ফটকে। সীতাকুণ্ড ইকোপার্কের সুপ্তধারা ঝরনা/ছবি: বাংলানিউজবেশ ক’টি সিএনজিচালিত অটোরিক্সার সাথে দর-দামে না মেলায় হাঁটা শুরু করে দিলাম সবাই। সবুজে মোড়ানো পিচঢালা পথে ১ কিলোমিটার হাঁটার পর ইকোপার্কের টিকেট কাউন্টার।

১০ টাকায় টিকেট কেটে আবার হাঁটা শুরু। গন্তব্য বর্ষায় জেগে ওঠা সুপ্তধারা ঝর্না। কিছু পথ হাঁটার পর একটি সাইনবোর্ডে চোখে পড়ল। এ থেতে বোঝা গেল ‘সুপ্ত ধারা’র দূরত্ব আরো দেড় কিলোমিটার। দলনেতা উৎপল দাদার সিদ্ধান্তমতে গাড়ি ভাড়া না করেই আবারও হাঁটা শুরু। কিছুদূর যাওয়ার পর টিমের আরেক সদস্য সমিতদা, জাকারিয়া জয় ও আমি খানিকটা হাঁপিয়ে পড়ায় রাস্তার পাশেই জিরোতে হয়।

আরো ১ কিলোমিটার হাঁটার পর একটি সাইনবোর্ডে চোখে পড়ল: ‘সুপ্ত ধারা’ ঘুমিয়ে থাকি, জেগে উঠি বরষায়। সেখানেই রয়েছে বসার জায়গা। খানিকটা সময় পার করে আবার হাঁটা শুরু। কিছুটা পাহাড়ি ট্রেইল পার হওয়ার পর পড়লো গোল ঘর। সেখানে আবার কিছুটা সময় বসতে হলো দলের সবাইকে। এরপর আবার হাঁটা শুরু। আধাঘন্টা মত ট্রেইল করে পৌঁছে গেলাম। পাহাড়ি জঙ্গল দিয়ে খাড়া সিঁড়ি বেয়ে  নামতে বেশ বেগ পেতে হয়েছে দলের সবাইকে। অবশেষ দেখা পেলাম ‘সুপ্ত ধারা’র। আহা সে কী রূপ!সীতাকুণ্ড ইকোপার্কের সুপ্তধারা ঝরনা/ছবি: বাংলানিউজ

প্রায় দুইশো ফিট ওপর থেকে বইছে স্বচ্ছ জলের ধারা। পর্যটকরা সেই জলে ভিজিয়ে নিচ্ছেন উষ্ণ দেহ।

তবে আমরা ঝর্নার প্রথম ধাপে তেমন সময় ব্যয় করিনি। আমাদের গন্তব্য ঝর্নার দ্বিতীয় ধাপ। প্রথম ধাপ থেকে দ্বিতীয় ধাপে উঠতে হয় পাহাড়ি জঙ্গলের মধ্য দিয়ে উচুঁ-নিচু পথ ধরে। আমাদের হাঁটা শুরু। তবে দলের সবার মনে একটাই ভয়, জঙ্গলে রয়েছে রক্তখেকো জোঁক। তাই একটু সতর্কতার সাথেই পা ফেলছে সবাই। আগের দিন বৃষ্টি ছিল। আজ বৃষ্টি না থাকায় ২০ মিনিট হাঁটার পরই ভালোয় ভালোয় দ্বিতীয় ধাপে পৌঁছে গেলাম।

উঠেই সবাই মুগ্ধ। সবুজ আর সবুজ! প্রাণ ভরে দেখছিলাম সবুজের ক্যানভাস আর স্বচ্ছ জলের খেলা। এত সুন্দর একটা জায়গা। মনে হল চারপাশে পাহাড়ি জঙ্গলে ঘেরা মাঝখানের এই জায়গাটা কোনো এক শিল্পী ক্যানভাসে ফুটিয়ে তুলেছেন তুলির আঁচড়ে। বড় বড় পাথর, ঝর্নার স্রোত। সবুজের মেলায় সাজানো প্রকৃতি।

তবে মনে ভয়ও কাজ করছে। কারণ ভীষণ পিচ্ছিল জায়গা। খুব সাবধানে দেখেশুনে পা ফেলতে হচ্ছিল। একদম কিনারায় ঝর্না নেমে গেছে প্রায় ২০০/২৫০ ফুট নিচে।

ওপর থেকে দেখা যাচ্ছিল ঝিরিপথ আর দূরের এবং চারপাশের পাহাড়ের গায়ে নকশী কাঁথার মত ঘন-গাঢ় সবুজে ভরা সব গাছপালা। সীতাকুণ্ড ইকোপার্কের সুপ্তধারা ঝরনা/ছবি: বাংলানিউজ সে এক দম-বন্ধ-করা সৌন্দর্য। এ ঝর্নায় আসা ছাড়া কেউ কল্পনা করতেও পারবে না প্রকৃতি এতো সুন্দর আর নিরিবিলি হয়! হারিয়ে যেতে ইচ্ছে করবে প্রকৃতির ভাঁজে। অল্প সময়ের জন্য হলেও।

ঝর্নার এ ঠাণ্ডা জলে স্নান না করলে যেন সব কষ্টই বৃথা। তাই দলের সব সদস্যই সে সুযোগ মিস করলেন না। প্রায় ঘন্টাব্যাপী চলে জলে তাপিত দেহ ভেজানো-জুড়ানো। এরই মধ্যে দলনেতা উৎপলদার কাছে ফোনকল এল দল থেকে ছিটকেপড়া মাহতাব ভাইয়ের। তিনি একটু দেরিতে হলেও ঝর্নার প্রথম ধাপে এসে পৌঁছেছেন। তাই এবার অমাদেরও নামতে হবে। নেমে যাচ্ছিলাম, তবু এত রূপ ছেড়ে আসতে ভালো লাগছিল না মোটেও। তবু কী আর করা! পরের গন্তব্যে যাওয়ার জন্যে তো একে ছেড়ে যেতেই হবে!

সতর্কতা:
সাথে থাকা ভারী ব্যাগগুলো উপরের গোল ঘরে কিংবা কোনো দোকানে রেখে যেতে হবে। যাওয়ার পথে দীর্ঘ সিঁড়ি বেয়েই নিচে নামতে হয়। তাই ভারী ব্যাগ নিয়ে উঠতে কষ্ট হবে। ৩

সিঁড়িগুলো বৃষ্টিতে পিচ্ছিল হয়ে যায়। তাই সাবধানে সময় নিয়ে ধীরে ধীরে নামতে হবে। ভাল গ্রিপওলা বেল্ট-স্যান্ডেল অথবা কেডস পরতে হবে।

ঝর্নায় পথে যেতে পথে জঙ্গলে রয়েছে রক্তখেকো জোঁক। তাই এর থেকে বাঁচার জন্য সাথে করে লবণ নিতে ভুলবেন না।

যেভাবে যাবেন
ঢাকা থেকে বাসে গেলে সীতাকুণ্ড বাজারে নেমে সেখান থেকে সি.এন.জিচালিত লোকাল অটোরিক্সা বা ইজি বাইক অথবা রিকশায় সীতাকুণ্ড ইকোপার্কের গেটে চলে আসবেন। পার্কের ভেতরে সাইনবোর্ডে নির্দেশনা দেওয়া আছে। সেটা অনুসরণ করে গেলে ঝর্না পর্যন্ত পৌঁছে যাবেন সহজেই।

বাংলাদেশ সময়: ০৬২৭ ঘণ্টা, আগস্ট ২১, ২০১৭
এসএইচডি/জেএম

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
welcome-ad
welcome-ad