ঢাকা, শুক্রবার, ৬ বৈশাখ ১৪৩১, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫

ট্রাভেলার্স নোটবুক

কাঁঠালবাড়ির হাওর দ্বীপে

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৪১২ ঘণ্টা, আগস্ট ১৩, ২০১৭
কাঁঠালবাড়ির হাওর দ্বীপে কাঁঠালবাড়ির হাওর দ্বীপে

বেড়ানোর জন্য আমরা সাধারণত বর্ষাকালকে উপযুক্ত মনে করি না। কিন্তু সিলেটের ‘রাতারগুল’ আর ‘মায়াবন’ জানিয়ে দিলো ভ্রমণ শুধু শুষ্ক মৌসুমেই উপভোগ্য নয়, বর্ষাকালেও উপভোগ্য হতে পারে যদি তেমন স্থান হয়।

পর্যটন সম্ভাবনার এ জেলার এমন আরেকটি স্থান হতে পারে 'কাঁঠালবাড়ি হাওর দ্বীপ’। কানাইঘাট উপজেলার রাজাগঞ্জ ইউনিয়নে এর অবস্থান।

হরিপুর গ্যাসফিল্ড থেকে হাওরপথে দূরত্ব মাত্র চার কিলোমিটার।

হাওরের মাঝখানে অনেকগুলো টিলার উপর ও টিলার আশপাশে পানির মধ্যে গাছ-পালায় ভরপুর ‘কাঁঠালবাড়ি হাওর দ্বীপ’ ভ্রমণপিপাসুদের মন কাড়তে পারে। হতে পারে সিলেটের আরেক পর্যটনকেন্দ্র।

হাওরের মাঝেও গ্রামের অস্তিত্ব নতুন কিছু নয়। কিন্তু হাওরের মাঝে টিলা, টিলার মাঝে গাছ, পানিতে গাছ, চারিদিকে অথৈ পানির মাঝে অনেকগুলো টিলার উপর জনবসতি- সম্পূর্ণ ভিন্ন এক দৃশ্য। বাংলাদেশের ভিন্ন এক গ্রাম।

৯ নম্বর রাজাগঞ্জ ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ফখরুল ইসলাম জানান, লুন্তির পাহাড় ও কুচিয়া নামে দুটি মৌজা নিয়ে কাঁঠালবাড়ি। ২০০ জনসংখ্যার এ গ্রামে রয়েছে প্রায় ৩০টির মতো টিলা। কাঁঠালবাড়ির হাওর দ্বীপে১৫-১৬টি টিলায় বাস করে প্রায় ২৫টি পরিবার। বেশির ভাগ টিলায় রয়েছে একটি করে পরিবার। এখানকার ৯০ বছর বয়সী আব্দুল মুকিতের তথ্যমতে, কাঁঠালবাড়ির আয়তন প্রায় চার কিলোমিটার। জনবসতি শুরু হয় প্রায় ৫০ বছর আগে। ফখরুল চেয়ারম্যান জানান, কাঁঠালবাড়িতে পর্যটনের সব সম্ভাবনা বিদ্যমান। তিনি এ বিষয়ে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন।    

বর্ষায় সেখানকার মনোরম দৃশ্য উপভোগ্য বটে। বর্ষা বলতে প্রায় ৭/৮ মাস। শুষ্ক মৌসুমের ৩/৪ মাস ছাড়া বাকি সময়টা। এক বাড়ি থেকে আরেক বাড়ি যেতে হয় নৌকায়। টিলা ছাড়া সবই ডুবে যায়। টিলার উপর নির্মিত বাড়িগুলোর মধ্যে আবহমান বাংলার প্রায় হারিয়ে যাওয়া গ্রামগুলোর একটা প্রতিচ্ছবি রয়েছে।

বর্ষায় এক টিলা থেকে আরেক টিলার মাঝখানের পানিতে সারি সারি হাঁসের সাঁতারের দৃশ্য- সে যে এক ভিন্ন অনুভূতি। আবার পানিবেষ্টিত টিলাগুলোর মধ্যে মহিষ আর মহিষ। টিলার মধ্যে নানান জাতের গাছ। আম, জাম, কাঁঠাল, পেয়ারাসহ নানা ফলের গাছ। কাঁঠাল গাছের আধিক্য বেশি বলে নামকরণ কাঁঠালবাড়ি। এক একটা টিলা যেন একেকটা রাজ্য। কাঁঠালবাড়ির হাওর দ্বীপেটিলা ছাড়াও স্বচ্ছ পানির মাঝে বিভিন্ন প্রজাতির গাছ, হিজল গাছ, শাপলা ফুল, কাঞ্চন ফুলের গাছ যেন রাতারগুল আর মায়াবনের প্রতিচ্ছবি। কাঞ্চন ফুল এখানকার বাইরে অন্য কোথাও দেখা যায় না। এটা ভারতের পশ্চিমবঙ্গের বর্ধমানের একটা ফুল। সব মিলিয়ে প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের এক অপরূপ লীলাভূমি। টিলাগুলোর গঠনপ্রকৃতিও এমন যে, এর উপর দাঁড়িয়ে যখন পুরো হাওর উপভোগ করবেন, মনে হবে যেন বঙ্গোপসাগর দর্শন করছেন। আর নিজে দাঁড়িয়ে রয়েছেন কক্সবাজার সৈকতে।

বড়ই বিচিত্র সুন্দরের অধিকারী এ জলের রাজ্য। কোনো গাছের অর্ধেক, আবার কোনো গাছের আরো বেশি ডুবে আছে পানিতে। স্বচ্ছ পানির নিচে ডুবে থাকা গাছগুলোর ভিন্ন রূপ বড়ই উপভোগ্য। ঘন গাছ-পালার কারণে অন্ধকার অন্ধকার পরিবেশ পুরো কাঁঠালবাড়ি জুড়ে। মাঝে-মাঝে গাছের ডালপালা আটকে দেবে পথ। হাত সরিয়ে পথ চলতে হবে। পানির নিচের জগতও অপূর্ব। নানা প্রজাতির মাছের আধার। কাঁঠালবাড়ির হাওর দ্বীপে

যাবেন কীভাবে? সিলেট শহর থেকে সিলেট-তামাবিল রোডের হরিপুর থেকে নৌকায় পূর্ব দিকে প্রায় ৪ কিলোমিটার পাড়ি দিলেই কাঁঠালবাড়ি। অন্যদিকে, সিলেট-কানাইঘাট গাজী বোরহান উদ্দিন রোডে গেলে রাজাগঞ্জ বাজার, তালবাড়ি, ঝিংগাবাড়ি বা গাছবাড়ির কোনো একটা জায়গা থেকে পশ্চিম দিকে যে হাওর দেখা যায়, সে হাওরের মাঝখানে কাঁঠালবাড়ি হাওর দ্বীপ।

নৌকার পথ ৫/৬ কিলোমিটার। যে রাস্তায়ই যান, সিলেট শহর থেকে দুরত্ব ৩০ কিলোমিটারের বেশি। নিজস্ব উদ্যোগে নৌকার ব্যবস্থা করতে হবে। অবশ্য পর্যটন কেন্দ্র হিসেবে বিবেচনায় চলে আসলে তখন হরিপুর, নারাইনপুর, গাছবাড়ি, তালবাড়ি, রাজাগঞ্জ থেকে নিয়মিত নৌকা চলাচলের ব্যবস্থা হযে যাবে।

বাংলাদেশ সময়: ১০১০ ঘণ্টা, আগস্ট ১৩, ২০১৭
এএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
welcome-ad
welcome-ad