ঢাকা, শুক্রবার, ১২ বৈশাখ ১৪৩১, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫

ট্রাভেলার্স নোটবুক

সান্দাকফু ট্রেক-১

ভালোয় ভালোয় পার বাংলাবান্ধা সীমান্ত

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০২৫২ ঘণ্টা, মে ২২, ২০১৭
ভালোয় ভালোয় পার বাংলাবান্ধা সীমান্ত ভালোয় ভালোয় পার বাংলাবান্ধা সীমান্ত

স্ক্যানিয়া বাসের যান্ত্রিক গর্জন ছাপিয়ে বৃষ্টির ঝমঝম শব্দ। আধো অন্ধকারে ঘুমের রোশনাইয়ে বুঁদ হয়ে থাকা চোখটা হালকা আলোর আভায় খুলে বোঝার চেষ্টা করলাম।

পর্দাটা একটু সরাতে নজরে এলো চরাচর। ভোরের প্রথম প্রহরে বৈশাখী বৃষ্টির ছাঁটে ভিজছে ক্রমশ পেছনে যেতে থাকা ফসলের ক্ষেত, খামার, গ্রামের দোচালা ঘর।

সকালে পুব আকাশে লাল থালাটির আর দেখা পাওয়ার সম্ভাবনা নেই। পাশের সিটে প্রেমিকাকে নিয়ে পাড়ি দিচ্ছি তেপান্তরের মাঠ, এমন ইউটোপিয়ান স্বপ্ন দেখতে বাধা দিচ্ছে বাস্তবতা, কারণ পাশের সিটে মধ্য চল্লিশের চিরতরুণ মোস্তাফিজ ভাই জেগে উঠেছেন!

আধো ঘুম আর জাগরণের এই ব্রাহ্ম মুহূর্ত স্বপ্নীল হতে গিয়েও হলো না। ঠিক কে যেন পানি ঢেলে দিলো। উপরে তাকিয়ে দেখি নাবিল পরিবহনের বিলাসবহুল বাসের ছাদ চুইয়ে আসলেই পানি পড়ছে। সুপারভাইজার তো আকাশ থেকে পড়লেন। এমন কাণ্ড নাকি এই প্রথম। যাই হোক গণ্ডারের চামড়া নিয়ে এই দেশে জন্মেছি। সহ্য তো করতেই হবে। ভালোয় ভালোয় পার বাংলাবান্ধা সীমান্তসকাল সাড়ে আটটায় বাস এসে থামলো ঠাকুরগাঁও শহরে। আমাদের পঞ্চগড়ে পৌঁছে দিতে আরেকটি বিলাসবহুল ব্যবস্থা রয়েছে। মাইক্রোবাস এখনও এসে পৌঁছেনি। সেই ফাঁকে হাত মুখ ধুয়ে নেওয়া হলো। ২৪ এপ্রিল পর্যন্ত ভারী বর্ষণের পূর্বাভাস মাথায় নিয়ে বের হয়েছি। সব সময়ের অনিশ্চিত আবহাওয়ার পূর্বাভাস এবার কীভাবে যেন তার সত্যতা প্রমাণ করতে উঠে পড়ে লেগেছে। ঠাকুরগাঁও শহরের আকাশের মুখ ভার। পথে মুষলধারে বৃষ্টি ফেলে এসেছি। এখানেও টিপটিপ বৃষ্টি। যদি এই আবহাওয়া আমাদের সাথে সীমান্ত পেরিয়ে পাহাড়েও গিয়ে উপস্থিত হয়?

এর ফাঁকে গাড়ি এসে উপস্থিত। বরেন্দ্রভূমির মায়া মাখা ক্ষেত ফসলের মাঠ চিরে যাওয়া রাস্তা ধরে চল্লিশ পঁয়তাল্লিশ মিনিটের মধ্যে পঞ্চগড়ে উপস্থিত হলাম। এরপর শহরের এক হোটেলে মহাভোজ। কিন্তু পকেট থেকে এক পয়সাও খসছে না। কি আনন্দ!! স্পন্সর মোস্তাফিজ ভাই। ইতোমধ্যে ঘড়ির কাঁটা দশটার ঘর অতিক্রম করেছে। আমাদের যেতে হবে বাংলাবান্ধা। দেরি হলে ওপারের শিলিগুড়িতে গন্তব্যের বাহন পেতে অসুবিধা হবে।

অবশ্য প্রায় জনমানব, যানজটহীন মসৃণ পঞ্চগড় বাংলাবান্ধা মহাসড়ক ধরে আমাদের যান ত্রিশ মিনিটের মধ্যে নিয়ে এলো বাংলাদেশ ইমিগ্রেশনের সামনে। জীবনে প্রথম সীমান্ত পার হচ্ছি। হোক ভারত, বিদেশ তো! একটু ভয় করছে। কিন্তু বাংলাদেশি ইমিগ্রেশনে উল্টো নিজেদের ভিআইপি মনে হলো। ইমিগ্রেশন সম্পর্কে এতো যে কথা শোনা যায় তার কিছুই তো দেখলাম না। এতোজন সাংবাদিক আবার পাসপোর্টে সার্ক স্টিকার। খাতিরের কারণ বুঝলাম। বিশ-পঁচিশ মিনিটে এপারের সব কাজ সেরে ব্যাক প্যাক কাঁধে ওপারের পথে।

এবার কিন্তু সত্যিই ভয় করছে। পাসপোর্ট হাতে নিয়ে ইয়া বড় মোচওয়ালা বিএসএফ জওয়ান নেড়ে চেড়ে দেখলেন। তার ছাড়পত্র মিললে ভারতীয় ইমিগ্রেশন এবং কাস্টমসের মোকাবেলা করতে হলো। এবার সময় কিন্তু বেশি লাগলো। উপরন্তু বেরিয়ে যাওয়ার পথে কাস্টমসের এক কর্মচারীকে তিনশো টাকাও দিতে হলো। ভালোয় ভালোয় পার বাংলাবান্ধা সীমান্ত কিন্তু দু’মিনিট পরই জিভ কেটে টাকা ফেরত দিয়ে গেলেন। যা খুশি আপনারা বুঝে নিন। আমরা কিন্তু এই ফাঁকে ভারতে। অন্য এক দেশ, আলাদা সংস্কৃতি। কিন্তু চারপাশের সঙ্গে মিলিয়ে নিতে গিয়ে দেখলাম বাংলাদেশের সঙ্গে পার্থক্য তেমন নেই। পাশেই মুদ্রা বিনিময়ের দোকান। সব আনুষ্ঠানিকতা সেরে পাঁচশো টাকা ভাড়ায় ছোট মাইক্রোবাসে চললাম শিলিগুড়ি। সেই শিলিগুড়ি!!

সুনীল সমরেশ আরও কত শত সাহিত্যের স্মৃতি মাখানিয়া সেই ভালোবাসার শহর। পানিহীন খটখটে মহানন্দা স্বাগত জানালো। নামলাম দার্জিলিং মোড়ে। আমরা চলেছি মানেভঞ্জনের পথে। অনেকক্ষণ ধরে চললো জিপওয়ালাদের সঙ্গে দরদাম। সহযাত্রীদের কেউ বলছে শেয়ারে যাওয়ার কথা, কারও মত আস্ত জিপ ভাড়া করার। এর ফাঁকে সেই নেপালি ড্রাইভারটি ১৫শ টাকায় মানেভঞ্জন পৌঁছে দেওয়ার প্রস্তাব দিলো। নিঃসন্দেহে লোভনীয় প্রস্তাব। আমরা রাজি।

দুপুরের খাওয়া হয়নি, অভুক্ত পেটে উঠে বসলাম জিপে। মিনিট বিশেক পরেই শুরু হলো শুকনো সংরক্ষিত অরণ্য। স্বপ্নের পাহাড় বাস্তবেও দেখা যাচ্ছে কিন্তু!

বাংলাদেশ সময়: ০৮৫২ ঘণ্টা, মে ২২, ২০১৭
এএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।