ঢাকা, বুধবার, ১১ বৈশাখ ১৪৩১, ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ শাওয়াল ১৪৪৫

এভিয়াট্যুর

শাহ আমানতের উন্নয়নে পুকুরচুরির পাঁয়তারা!

মফিজুল সাদিক, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০২১৫ ঘণ্টা, মার্চ ২৩, ২০১৭
শাহ আমানতের উন্নয়নে পুকুরচুরির পাঁয়তারা!

ঢাকা: শুরুতেই ধাক্কা খেল `চট্টগ্রাম শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের বিদ্যমান রানওয়ে ও ট্যাক্সিওয়ের শক্তি বৃদ্ধিকরণ প্রকল্প। কিন্তু প্রকল্পের আওতায় অফিস সাজসজ্জা, যানবাহন ও পরামর্শকদের আবাসনের জন্য যে প্রাক্কলিত ব্যয় ধরা হয়েছে, এক কথায় তা অকল্পনীয়। ফলে এ নিয়ে আপত্তি তুলেছে পরিকল্পনা কমিশন।
 
 

প্রকল্পের জন্য একটি জিপ, একটি পিক আপ এবং দুটি মোটর সাইকেলের জন্যই ব্যয় ধরা হয়েছে এক-দুই কোটি নয়, বরং পাঁচ কোটি টাকা! অথচ অনুরূপ অন্যসব প্রকল্পে স্বাভাবিকভাবে একই সংখ্যক যানবাহন কেনা বাবদ ধরা হয় ১ কোটি টাকা বা তার কিছু বেশি। এরকম ক্ষেত্রে পরিকল্পনা কমিশন ১ কোটি  ২৫ লাখ টাকা অনুমোদন দিয়েছে এমন নজির আছে।

এর মানে রানওয়ে ও ট্যাক্সিওয়ের শক্তি বৃদ্ধিকরণ প্রকল্পের যানবাহন খাতে যে প্রাক্কলন ব্যয় ধরা হয়েছে তা স্বাভাবিকের চারগুণ বেশি।  
 
অন্যদিকে, বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়-সূত্র থেকে পাওয়া তথ্যে দেখা গেছে, ঠিকাদারদের অফিস ও আবাসন নির্মাণ বাবদ প্রাক্কলিত যে ব্যয় ধরা হয়েছে, তা-ও স্বাভাবিকের চেয়ে অনেক বেশি----২ কোটি ৮৮ লাখ ৫০ হাজার টাকা।
আর সাজসজ্জা, আসবাবপত্র ও আনুষঙ্গিক মালামাল কেনার জন্য ব্যয় ধরা হয়েছে ২ কোটি ৭৩ লাখ টাকা।  

মোদ্দাকথা, ১ লাখ ৯৮ হাজার ৩৬০ বর্গমিটার রানওয়ে ও ট্যাক্সিওয়ে শক্তিশালীকরণের জন্য যে ব্যয় ধরা হয়েছে তাতে রয়েছে বড় অসঙ্গতি। এতে ব্যয় ধরা হয় ৪৩৮ কোটি ১৫ লাখ টাকা। অথচ প্রকিউরমেন্ট প্ল্যানে এ খাতে ব্যয় উল্লেখ করা হয়েছে ৫০৯ কোটি ৩৯ লাখ টাকা। ফলে এই খাতেও ৭১ কোটি ২৪ লাখ টাকার অসঙ্গতি স্পষ্ট।

কেন প্রাক্কলিত ব্যয় স্বাভাবিকের চেয়ে অনেক বেশি ধরা হলো বা এমন অসঙ্গতিইবা কেন সেই মর্মে বেবিচক (বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ)-এর কাছে ব্যাখ্যা চেয়েছে পরিকল্পনা কমিশনের ভৌত অবকাঠামো বিভাগ।  
বেবিচকের আকাশছোঁয়া ব্যয়ের ব্যাপারে আপত্তি তুলেই ক্ষান্ত হয়নি তারা। চেয়েছে যৌক্তিক ব্যাখ্যাও।
 
বেবিচকের অযৌক্তিক ব্যয়ের অঙ্ক শেষ পর্যন্ত ডিপিপিতে (উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাব) থাকবে কিনা এ নিয়ে যথেষ্ট সংশয় দেখা দিয়েছে।


প্রকল্প প্রসঙ্গে পরিকল্পনা কমিশনের ভৌত অবকাঠামো বিভাগের ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বাংলানিউজকে বলেন, প্রকল্পের আওতায় অফিস সাজসজ্জা, আসবাবপত্র ও যানবাহন কেনা বাবদ অহেতুক অধিক ব্যয় নির্ধারণ করা হয়েছে। এগুলোর জন্য যে অযৌক্তিক ব্যয় ধরা হয়েছে তা আমরা কাটছাঁট করছি। এই প্রকল্পের উপর আবারও পিইসির (প্রকল্প মূল্যায়ন কমিটি) সভা হবে। সভায় প্রকল্পের ব্যয় কমানোর প্রস্তাব করা হবে। কেননা প্রকল্পের আওতায় নানা ধরনের খাত সংযুক্ত করে অতিরিক্ত ব্যয় নির্ধারণ করেছে বেবিচক (বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ)। অথচ যৌক্তিক ব্যয় ধরে প্রকল্প গ্রহণ করা গেলে এর চেয়ে অনেক কম অর্থব্যয় করেই প্রকল্প বাস্তবায়ন সম্ভব। ঠিকাদারদের অফিস নির্মাণে আলাদাভাবে ব্যয় দেখানোর কোনো যৌক্তিকতা আমরা দেখছি না।
 
চট্টগ্রাম শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের রানওয়েটি ২০০০ সালে নির্মিত। ১৭ বছর আগে নির্মিত রানওয়ের অ্যাসফল্ট ওভারলের ২ হাজার ৯৪০ মিটার অংশ অনেকটাই  ক্ষয়প্রাপ্ত হয়ে গেছে। এই ক্ষয়প্রাপ্ত রানওয়েতে বোয়িং-৭৭৭ এয়ারক্রাফট সীমিত লোডে ঝুঁকি নিয়ে ওঠানামা করছে বলে বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়সূত্রে জানা গেছে।
 
মন্ত্রণালয়সূত্র আরও জানায়, ১৭ বছর আগে নির্মিত রানওয়ের অর্থনৈতিক আয়ুষ্কাল শেষ হয়ে এসেছে। দ্রুত সময়ে রানওয়ের সংস্কার করা জরুরি। যেহেতু রানওয়ের অ্যাসফল্ট ওভারলে প্রায় ক্ষয়প্রাপ্ত হয়ে গেছে। টেকসই বিমান পরিচালনা ও ব্যবস্থাপনার জন্য বিমানবন্দরটির আধুনিকায়ন করা বড় বেশি প্রয়োজন। বিমান ওঠা-নামার সুবিধা বাড়াতে ১ লাখ ৯৮ হাজার ৩৬০ বর্গমিটার রানওয়ে ও ট্যাক্সিওয়েটির আশু উন্নয়ন করা জরুরি। তা না হলে যে কোনো সময় দুর্ঘটনা ঘটার আশঙ্কা রয়েছে।
 
 প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করবে বেবিচক। কিন্তু তারা অযৌক্তিক ব্যয় নির্ধারণ করায় একনেক সভায় উপস্থাপনের আগেই ধাক্কা খেলো প্রকল্পটি। পরিকল্পনা কমিশনের আপত্তির প্রসঙ্গে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হয় বেবিচকের প্রধান প্রকৌশলী সুখেন্দু বিকাশ গোস্বামীর।

 বাংলানিউজকে তিনি বলেন, অফিস সাজসজ্জা, যানবাহন ও পরামর্শকদের আবাসনের অতিরিক্ত ব্যয়ের বিষয়ে পরিকল্পনা কমিশন আমাদের কাছে ব্যাখ্যা চেয়েছে। আমরাও ‘চট্টগ্রাম শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে বিদ্যমান রানওয়ে ও ট্যাক্সিওয়ের শক্তি বৃদ্ধিকরণ’ প্রকল্পের কতিপয় ব্যয়ের ব্যাখ্যা এরই মধ্যে পরিকল্পনা কমিশনকে দিয়েছি।  আশা করছি, প্রকল্পটি একনেক সভায় অনুমোদন পাবে।
 
চট্টগ্রাম থেকে ১১ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত দেশের অন্যতম আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর এটি। অথচ রানওয়ের অ্যাসফল্ট ওভারলে প্রায় ক্ষয়প্রাপ্ত হয়ে যাওয়ায় পর্যাপ্ত সংখ্যক যাত্রী থাকা সত্ত্বেও বোয়িং-৭৭৭ এয়ারক্রাফট-এর ফ্লাইট সংখ্যা বাড়ানো যাচ্ছে না। এমনকি বিমানবন্দরটির সাইড স্ট্রিপ গ্রেডিং এবং ড্রেইনেজ ব্যবস্থারও উন্নয়ন করা জরুরি। এয়ারফিল্ড লাইটিং সিস্টেমকে ঢেলে সাজানোও জরুরি হয়ে পড়েছে বলে জানায় মন্ত্রণালয়।
 
প্রসঙ্গত, একটি রানওয়ের অর্থনৈতিক আয়ুষ্কাল নির্ভর করে মূলত আবহাওয়া ও মাটির গুণাগুণ কেমন তার ওপর। চট্টগ্রাম শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরটি দেশের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এক বিমানবন্দর। এ অঞ্চলের অনেক মানুষ যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য,ইউরোপীয় ইউনিয়নের দেশগুলো ছাড়াও মালয়েশিয়া, জাপান, দক্ষিণ কোরিয়া ও  মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশে কর্মসূত্রে প্রবাসী। এদের অনেকেই এই বিমানবন্দরটি ব্যবহার করে থাকেন। কিন্তু বিপুল চাহিদা থাকলেও বোয়িং-৭৭৭-এর মতো পর্যাপ্ত সংখ্যক বৃহদাকার যাত্রীবাহী  উড়োজাহাজের ওঠানামা এখানে সম্ভব হচ্ছে না। এ অবস্থায় যাত্রী-চাহিদার পরিপ্রেক্ষিতে  ও অবতরণ-ঝুঁকির কথা বিবেচনা করে রানওয়ের উন্নয়ন ও আধুনিকাযন এখন সময়ের দাবি।   
 
বাংলাদেশ সময়: ০৮১৬ ঘণ্টা, মার্চ ২৩, ২০১৭
এমআইএস/জেএম

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।