ঢাকা, শুক্রবার, ৬ বৈশাখ ১৪৩১, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫

পর্যটন

পাহাড় ট্যুরে গাইডিং হয়রানিতে পর্যটকরা

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৭৫৫ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১৮, ২০১৭
পাহাড় ট্যুরে গাইডিং হয়রানিতে পর্যটকরা বান্দরবান উপজেলা প্রশাসনের গাইড ও গাড়িভাড়ার রেট

ফেরদৌস হাসান আর তার বন্ধুরা যাবেন বান্দরবানের থানচির নাফাখুম ঝরনা দেখতে। কিন্তু থানচিতে গাড়ি থেকে নেমে পড়লেন মহা ফ্যাসাদে। সেখান থেকে বাধ্যতামূলক গাইড নিতে হবে। রোজ দিতে হবে ৭০০ টাকা করে। কেউ কেউ আবার আরও অনেক বেশি চাচ্ছে। পরিকল্পনা ছিলো রেমাক্রি বাজার পর্যন্ত নৌকায় লোকালে ২শ টাকা করে চারজন চলে যাবেন।

ঘাটে বলা হলো লোকাল যাওয়া যাবে না। যাওয়া-আসা বাবদ দিতে হবে সাড়ে পাঁচ হাজার টাকা।

তাও চারজনের বেশি যাওয়া যাবে না। ‘তখন মনে হচ্ছিল আমার দেশ না এটি অন্য কোনো দেশ, যেখানে আমাদের ভিনদেশি পেয়ে এভাবে হয়রানি করা হচ্ছে। ’

আক্ষেপ নিয়ে বলছিলেন ফেরদৌস। তার মতো হাজারো পর্যটক প্রতিদিন গাইডদের হয়রানির স্বীকার হচ্ছেন। প্রতিনিয়ত বান্দরবান তথা পার্বত্য চট্টগ্রামের অদেখা সৌন্দর্য সামনে আসছে। তার স্বাদ নিতে ছুটছেন পর্যটকরা। দুর্গম সেই অঞ্চলে যেতে স্থানীয় মানুষদের সাহায্য নিতে হয়। সেই সুযোগে রুমা, থানচির মতো উপজেলা সদরের এক শ্রেণীর লোক গাইডিংয়ের ব্যবসা ফেঁদে বসেছে। যাদের গাইডিংয়ের ব্যাপারে নেই কোনো যথাযথ প্রশিক্ষণ।

থানচির নাফাখুমসহ পর্যটন স্পটগুলোতে প্রতিদিন অসংখ্য মানুষ আসেন। থানচি ঘাট থেকে রেমাক্রি বাজার পর্যন্ত মাত্র সোয়া এক ঘণ্টার নৌকা ভাড়া ২শ টাকা। সেখানে পর্যটকদের উপর বাধ্যতামূলকভাবে চাপিয়ে দেওয়া হচ্ছে ৫ হাজার ৫শ টাকার প্যাকেজ। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, গাইড ও নৌকা চালকরা সিন্ডিকেট করে পর্যটকদের পকেট কাটার ব্যবস্থা করছে। পর্যটকদের অভিযোগ, এতো টাকা খরচ করে থানচি থেকে গাইড নিয়ে গেলেও সে আসলে কোনো সাহায্যই করছে না।

রেমাক্রি বাজার থেকে নেওয়া গাইড পথ দেখিয়ে নিয়ে যায়। হাদী মুন নামে এক পর্যটক বলেন, আমি থানচি ঘাট থেকে লোকাল রেটে যেতে চেয়েছিলাম। কিন্তু তারা যেতে তো রাজি হয়নি উল্টো রেট বাড়িয়ে দেয়। তাছাড়া এই রুটে আসলে দু’জন গাইডের কোনো প্রয়োজনই নেই। শুধু সিন্ডিকেটের কারণে হয়রানির স্বীকার হচ্ছি আমরা।

থানচি উপজেলা পর্যটন গাইড সমিতির সভাপতি রামজাথাং বম বলেন, গাইডদের রেট উপজেলা প্রশাসন থেকে বেঁধে দেওয়া। তবে নৌকার রেটের ব্যাপারে প্রশাসন থেকে কিছু বলা হয়নি।

এ ব্যাপারে থানচি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা জাহাঙ্গীর আলমের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তার ফোন বন্ধ পাওয়া যায়।
একই অবস্থা রুমা উপজেলার পর্যটন স্পটগুলোতে। বগালেক কেওক্রাডংগামী পযটকদের ভিড় এখানে। সেনাবাহিনীসহ অন্য আইনশৃঙ্খলাবাহিনীর উপস্থিতি থাকার কারণে এ রুট সুরক্ষিত থাকলেও গাইড নেওয়া বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। গাইডের দিনপ্রতি রেট ৫শ টাকা থাকলেও বেশিরভাগ ক্ষেত্রে বেশি নেওয়া হচ্ছে। রুমা থেকে বগালেক পর্যন্ত লোকাল জিপ থাকলেও পর্যটকদের রিজার্ভ নেওয়ার ব্যাপারে নিয়ম করা হয়েছে।

রুমা থেকে বগালেক আসা-যাওয়া ছয় হাজার টাকা বেঁধে দেওয়া হয়েছে। অথচ তিন থেকে চারশো টাকা হলো এখানকার লোকাল জিপ ভাড়া। পর্যটকরা বলছেন এ রুটে গাইডের কোনো প্রয়োজন না থাকলেও তা নিয়ম করে চাপিয়ে দেওয়া হয়েছে।

পাহাড়ে ট্যুরপরিস্থিতি সবচেয়ে ভয়াবহ রোয়াংছড়ি উপজেলায়। একবছর যাবত তিনাপ সাইতারসহ বেশ কিছু ঝরনা দেখতে এখানে আসছেন পর্যটকরা। পলাশ তঞ্চ্যঙ্গা নামে উপজেলা সদরের এক ব্যক্তি পর্যটকদের কাছ থেকে ভয়ভীতি দেখিয়ে টাকা আদায় করছেন বলে অভিযোগ রয়েছে। তারসঙ্গে শান্তিবাহিনীসহ পাহাড়ের বিভিন্ন সন্ত্রাসী সংগঠনের সম্পৃক্ততা রয়েছে বলে ভয় দেখান তিনি।

গাইড সিন্ডিকেটেরও নেতৃত্বে দিচ্ছেন তিনি। ঝরনা দেখানোর নাম করে সাত থেকে দশ হাজার টাকা নেওয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে তার বিরুদ্ধে। উপজেলা প্রশাসনের ভুয়া সার্টিফিকেট দেখিয়ে নিজেকে গাইড দাবি করছেন পলাশ। এ ব্যাপারে তাকে জিজ্ঞেস করা হলে অসংলগ্ন কথাবার্তা বলেন তিনি। উপজেলা সদর থেকে সোজা রাস্তা রনিন পাড়া পর্যন্ত গেলেও নিরাপত্তার অজুহাত দিয়ে পর্যটকদের সেখানে যেতে বাধা দেওয়া হচ্ছে। অথচ গাইড নিলে মিলছে অনুমতি।

এ ব্যাপারে রোয়াংছড়ি উপজেলা প্রশাসনের কাছে অভিযোগ জানিয়েও কোনো প্রতিকার পাওয়া যায়নি বলে পর্যটকরা অভিযোগ করেছেন। রোয়াংছড়ি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মাসুদ হোসেনকে ফোন করা হলে ব্যস্ততার কথা বলে তিনি ফোন কেটে দেন। একই অবস্থা পার্বত্য চট্টগ্রামের অন্য দুই জেলা রাঙামাটি এবং খাগড়াছড়িরও। রাঙামাটির দুর্গম বিলাইছড়ি উপজেলায়ও পর্যটকদের গাইডিংয়ের নামে হয়রানির অভিযোগ উঠেছে। আর সাজেকে রয়েছে হোটেল ব্যবসায়ীদের হয়রানি।  
     
বাংলাদেশের বৃহত্তম ফেসবুক ভিত্তিক ভ্রমণ গ্রুপ ট্র্যাভেলার্স অব বাংলাদেশের অ্যাডমিন ফজলে রাব্বী বলেন, পার্বত্য অঞ্চলে ট্রেকিং বর্তমান প্রজন্মের মধ্যে দারুণ জনপ্রিয়। দিন দিন এ ধরনের পর্যটকের সংখ্যা বাড়ছে। আর এর সুযোগ নিচ্ছে গাইডরা। অথচ তাদের এ ব্যাপারে কোনো প্রশিক্ষণ নেই। বাইরে দেশগুলোতে গাইড লাইসেন্স দেওয়া হয়। গাইডদের ফাস্ট এইড, হাত-পা ভাঙা, সাপে কাটার মতো জরুরি চিকিৎসা জানতে হয়। এসব গাইড কিছুই জানেন না। পর্যটকদের গাইড নেওয়া বিষয়টি ঐচ্ছিক করা এবং তাদের দিনপ্রতি রেট নির্ধারণ করা জরুরি। নতুবা পর্যটক হারারে পার্বত্য এলাকা।

বাংলাদেশ সময়: ১৩৫৩ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১৮, ২০১৭
এএ

 

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।