ঢাকা, শুক্রবার, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৮ রমজান ১৪৪৫

বছরজুড়ে দেশ ঘুরে

সুন্দরবনে রহস্যময় খোলপেটুয়া

মাজেদুল নয়ন, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০১৪৬ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ৩০, ২০১৬
সুন্দরবনে রহস্যময় খোলপেটুয়া নৌকার ভেতর থেকে দেখা খোলপেটুয়া। ছবি: বাংলানিউজ

গেলো বর্ষায় খোলপেটুয়া পার হতে বুকের ভেতর দুরু দুরু করতো। উত্তাল ঢেউকে পাশ কাটিয়ে যেতে হতো ইঞ্জিন নৌকাকে। ঘোলা পানি যেন অদৃশ্য করে নিতে চায় সব। ভাঙ্গতে চায় গাবুরা বা মুন্সীগঞ্জের রক্ষা বাঁধ। তবে এই শীতে খোলপেটুয়া দেখালো এক শান্ত রূপ। উত্তরের বাতাসে পানিও যেন নড়তে চায়না শীতের ভয়ে।

শ্যামনগর (সাতক্ষীরা) থেকে ফিরে: গেলো বর্ষায় খোলপেটুয়া পার হতে বুকের ভেতর দুরু দুরু করতো। উত্তাল ঢেউকে পাশ কাটিয়ে যেতে হতো ইঞ্জিন নৌকাকে।

ঘোলা পানি যেন অদৃশ্য করে নিতে চায় সব। ভাঙ্গতে চায় গাবুরা বা মুন্সীগঞ্জের রক্ষা বাঁধ। তবে এই শীতে খোলপেটুয়া দেখালো এক শান্ত রূপ। উত্তরের বাতাসে পানিও যেন নড়তে চায়না শীতের ভয়ে।
 
বাংলাদেশের দক্ষিণ-পশ্চিমের বড় নদীগুলোর একটি খোলপেটুয়া। গঙ্গার স্রোতধারাই পদ্মা হয়ে বয়ে গেছে এই নদীতে। সাতক্ষীরার আশাশুনি আর শ্যামনগর উপজেলা জুড়েই এই নদীর বিস্তৃতি।
 
পদ্মপুকুর থেকে যে খোলপেটুয়া দক্ষিণ-পূর্বে গেছে সেথানে ইংরেজি ওয়াই আকৃতি নিয়েছে। নীলডুমুরের পূর্ব পাড়ে গাবুরা ইউনিয়ন আর দক্ষিণেই শুরু সুন্দরবন।
 
নীলডুমুর, মুন্সীগঞ্জ, পদ্মপুকুর, গাবুরার মানুষের জীবনে অনেক গল্পই বইয়ে দিয়েছে এই খোলপেটুয়া। এ অঞ্চলের অনেক প্রাণ কেড়ে নিয়েছে এই নদী। আবার দিয়েছে জীবিকাও। খোলপেটুয়া নদী।  ছবি: বাংলানিউজ
 
আইলা বা সিডরে শ্যামনগর আর আশাশুনি উপজেলার বাঁধগুলো ভেঙ্গে দৈত্যের রূপ ধারণ করেছিল এই নদী। মানুষ গাছের আগায় উঠেও পরিত্রাণ পায়নি। সব কিছু ভাসিয়ে নিয়ে গেছে। গাবুরা আর পদ্মপুকুরকে দুমড়ে মুচড়ে করেছে বিদ্ধস্ত। যার ফলে আইলার ৭ বছরেও মাথা তুলে দাঁড়ানো পরের কথা, পিঠ সোজা করে দাঁড়াতে পারেনি এই অঞ্চলের মানুষ।
 
খোলপেটুয়ার রহস্য মায়াভরা। পূর্ণিমায় ভরা জোছনায় এক অপূর্ব রুপ ধারণ করে এই নদী। আর ভয় থাকে না। বরং মাছেরা ভেসে ওঠে আনন্দে।
 
খোলপেটুয়া এই অঞ্চলের মানুষকে দিয়েছে জীবিকা। এই নদীতে প্রায় সারা বছরই মাছ ধরে দ্বীপের মানুষ। মোহনায় ধরা পড়ে প্রচুর মাছের পোনা। যা পরবর্তীতে চাষের জন্যে বিক্রি হয়।
 
এই নদীতে সারা বছর ধরেই কাঁকড়া  পাওয়া যায়। সুন্দরবন ঘেঁসে জাল ফেললে মাছও অনেক।
 
বৈশাখ-জৈষ্ঠ্যের খোলপেটুয়ার বিধ্বংসী চেহারাকে অনেকটাই প্রতিরোধ করে সুন্দরবন। দক্ষিণ থেকে আসা ঝড়কে আর উত্তরে যেতে দেয় না।
 
পৌষে নদীর ওপর সকালের সূর্যটাকে লাল বর্ণের দেখায়। কুয়াশাকে ঠেলে রোদ ছড়াতে অনেক সময় নেয় সূর্য। সেই আলো অবশ্য খুব বেশি তাপ ছোড়ে না। নদীর ওপরের কুয়াশার সঙ্গে লুকোচুরি খেলতে থাকে সূর্য। খোলপেটুয়ার বাঁকে বাঁকে সূর্যের রুপ পরিবর্তন হতে থাকে। যত বেলা গড়াতে থাকে তত পরিষ্কার হতে থাকে চারিপাশ। সেখানে সকালের শুভ্রতা থাকে। সকালের রোদকে আলিঙ্গন করে খোলপেটুয়া। খোলপেটুয়া নদীতে জেলে নৌকা।  ছবি: বাংলানিউজ
 
সুন্দরবনের পাড় ধরে খোলপেটুয়ার বাঁক ধরে ঘুরতে থাকলে হরিণের দৌড়, লাফ দিয়ে গাছের পাতায় মুখ দেয়া, বানরের বাঁদরামি আনে চঞ্চল ভাব।
 
গাবুরা আর পদ্মপুকুরের বাসিন্দারা পাড়ি দেয় খোলপেটুয়া। নৌকা এসে ভেড়ে, আবার ঘাট থেকে ছেড়ে যায়। ব্যস্ত হয়ে ওঠে নদী। শীতে খুব বেশি ঢেউয়ের শব্দ শোনা যায় না। বরং ইঞ্জিনের মোটরের শব্দই ঘাটে বেশি।
 
বাংলাদেশ সময়: ০৭৫০ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ৩০, ২০১৬
জেডএম

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।