ঢাকা, শুক্রবার, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৮ রমজান ১৪৪৫

বছরজুড়ে দেশ ঘুরে

মহিষের পিঠে নাটোর!

আসিফ আজিজ ও শুভ্রনীল সাগর | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১২৪১ ঘণ্টা, জানুয়ারি ২৪, ২০১৬
মহিষের পিঠে নাটোর! ছবি: শুভ্রনীল সাগর/বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

নাটোর থেকে ফিরে: নাটোরের অর্থনীতির চালিকা শক্তিই শিরোনামের সার্থকতা। ঐতিহাসিক এ জেলার প্রধান অর্থনৈতিক স্তম্ভ ধান ও আখ।

আক্ষরিক অর্থেই এ দুই স্তম্ভকে বহন করে চলেছে ম্যামালিয়া শ্রেণীর প্রাণী মহিষ। এ অঞ্চলের পথে-প্রান্তরে পা পড়লে স্পষ্ট হয় সেটি।

ধান দিয়েই শুরু করা যাক। জেলায় ধান উৎপাদনের প্রধান ক্ষেত্র হলো বিখ্যাত চলনবিল ও বিলের বহুবিভক্ত অংশগুলো। এর মধ্যে হালতি বিল অন্যতম।

বগুড়া, নাটোর, সিরাজগঞ্জ ও পাবনা জেলা জুড়ে বিস্তৃত চলন বিল। শুধু নাটোর অংশে বিলের বিস্তৃতি প্রায় সাড়ে সাত হাজার একর। এর মধ্যে সিংড়া থেকে সিরাজগঞ্জ অব্দি সাড়ে তিন হাজার ও হালতি অংশে পড়েছে প্রায় চার হাজার একর।

শুকনো সময়ে বিলের অধিকাংশ অঞ্চল জুড়েই চাষাবাদ হয় ধান। চাষ হয় ইরি, আমন ও বোরো। গম, ভুট্টাও হয় তবে ধানের তুলনায় ‍অনেক কম।

যাই হোক, ধান ভানতে শিবের গীত না গাই- ফিরে আসি মূল পর্বে। হ্যাঁ, ধানের শুরু থেকে শেষ, মানে চারা রোপণের জন্য বীজতলা তৈরি থেকে শুরু করে পাকা ধান কেটে বয়ে নেওয়া, মাড়াই ও বাজার অব্দি বহন- সবকিছুতেই মহিষেই ভরসা। কুয়াশাজড়ানো ভোরে কাকের সঙ্গে জেগে ওঠে মহিষও। আঁকাবাঁকা রাস্তা ধরে শীতের তীব্রতাকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে শুরু হয় ‍তার কর্ম দিন। বেলা হলে মহাসড়কে ট্রাক, অটোরিকশা বা অন্য যানের সঙ্গে, সেও রাস্তা ভাগাভাগি করে নেয়।

এখন শুকনো মৌসুম, ধান লাগানোর সময়। মহিষকে তাই পাওয়া গেলো বীজতলার মাটি তৈরির কাজে। এ কাজ গরু দিয়েও হয়, কিন্তু বিলে তো হাজার হাজার একরের কাজ। কাজেই দীর্ঘসময় অনেক বেশি অঞ্চলে কাজ করার সক্ষমতা গরুর চেয়ে মহিষের অনেকগুণ বেশি বলে মত চাষিদের।

এরপর আসা যাক আখে। নাটোরে রয়েছে দু’টি সরকারি চিনিকল। বেসরকারিভাবেও আখ থেকে গুড় তৈরির কারিগর কম নয়। চিনির প্রধান কাঁচামাল হলো আখ। এ অঞ্চলে ধানের পর সবচেয়ে বেশি রয়েছে আখখেত।

এখানেও তাই, আখখেত থেকে চিনিকল- পুরোটাই মহিষ ও মহিষের গাড়ির দাপট। বিকল্প বাহন হিসেবে ইঞ্জিনচালিত বাহন যে নেই তা নয়, কিন্তু সংশ্লিষ্টরা মহিষের প্রতিই বেশি নির্ভরশীল।

আর মহিষও তাই, ‘বিনা যুদ্ধে নাহি দিব সুচ্যগ্র মেদিনী’র মতো সমানে সমান টক্কর দিচ্ছে ইঞ্জিনের সঙ্গে। এ যেনো প্রকৃতি বনাম মেশিনের লড়াই। নাটোরে এ লড়াইয়ে জিত মহিষেরই।

পিঠে বোঝাই শতকেজি আখ, তার উপর চড়ে বসেছেন চালক- এতোকিছু নিয়ে কি আর এগুনো যায়! মুখে ফেনা উঠে গেছে, হাঁসফাঁস অবস্থা- তবু বিরাম নেই। গন্তব্যে পৌঁছেই তবে ক্ষান্ত।   এতোকিছুর পরও প্রায়ই চালকের চাবুক পড়ছে পিঠে। তাও বুঝি এতোটুকু খেদ নেই।

বোঝা বইতে বইতে ঘাড়ে কড়া পড়ে গেছে, হাড়-চামড়াও দেখার মতো, তবু যেনো দায়িত্ব পালনে সে মোটেও পিছপা  হবে না! এজন্য হয়তো এতো নির্ভরতা তার উপর।

স্থানীয় যানবাহন হিসেবেও কম যায় না মহিষের গাড়ি। এখন তো রাস্তাঘাট উন্নত হয়েছে, তাই অন্যসব যানবাহনের দৌরাত্ম্য বেড়েছে। আগে তো মহিষের গাড়িই ছিলো মূল ভরসা। হালচাষ শেষে পিঠে চড়েই বাড়ি ফেরেন কৃষক।

এছাড়া কম দূরত্বে কাঠ, ধান-চাল ও অন্য জিনিসপত্র বহনের জন্য মহিষের গাড়ি বরাবরই পরম নির্ভরশীলতার জায়গা দখল করে রয়েছে।

গত সপ্তাহজুড়ে বাংলানিউজের বিশেষ টিম ছিলো নাটোরের ‍অলি-গলি, মাঠে-ঘাটে।

কথায় আছে, একটি ছবি হাজারো শব্দের কথা বলে। কাজেই বিভিন্ন পরোপকারী মহিষের ভূমিকার নানা চিত্র দেখে শিরোনামটি দায়িত্ব নিয়েই বলা যায়!

বাংলাদেশ সময়: ১২৪২ ঘণ্টা, জানুয়ারি ২৪, ২০১৬
এসএস/এএ/এটি/জেডএম

** চাঁপাইয়ের কালাই রুটিতে বুঁদ নাটোর

** উষ্ণতম লালপুরে শীতে কাবু পশু-পাখিও!
** পানি নেই মিনি কক্সবাজারে!
** টিনের চালে বৃষ্টি নুপুর (অডিওসহ)
** চলনবিলের রোদচকচকে মাছ শিকার (ভিডিওসহ)
** ঘরে সিরিয়াল, বাজারে তুমুল আড্ডা
** বৃষ্টিতে কনকনে শীত, প্যান্ট-লুঙ্গি একসঙ্গে!
** ভরদুপুরে কাকভোর!
** ডুবো রাস্তায় চৌচির হালতি
** হঠাৎ বৃষ্টিতে শীতের দাপট
** ঝুড়ি পাতলেই টেংরা-পুঁটি (ভিডিওসহ)
** শহীদ সাগরে আজও রক্তের চোরা স্রোত
** ‘অলৌকিক’ কুয়া, বট ও নারিকেল গাছের গল্প
** মানবতার ভাববিশ্বে পরিভ্রমণ
** সুধীরের সন্দেশ-ছানার জিলাপির টানে
** নতুন বইয়ে নতুন উদ্যম

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।