ঢাকা, শুক্রবার, ১৪ চৈত্র ১৪৩০, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৮ রমজান ১৪৪৫

বছরজুড়ে দেশ ঘুরে

নাটোর থেকে ‍আসিফ ও শুভ্রনীল

ঘরে সিরিয়াল, বাজারে তুমুল আড্ডা

আসিফ আজিজ ও শুভ্রনীল সাগর | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৯০২ ঘণ্টা, জানুয়ারি ২১, ২০১৬
ঘরে সিরিয়াল, বাজারে তুমুল আড্ডা ছবি : বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

হালতি বিল (নাটোর থেকে): সন্ধ্যা সাড়ে ৬টা কী ৭টা। আমাদের পা তখন খোলাবাড়িয়া গ্রাম থেকে বাজারের দিকে।

ঝিঁঝিঁ পোকারা তাদের রোজকার মহান দায়িত্ব পালন শুরু করে দিয়েছে। সুনসান আঁধার, যাকে বলে গভীর রাত।

শহরাঞ্চলের বিবেচনায় সন্ধ্যা ৭টা কিছুই নয়, তবে গ্রামের হিসেব সম্পূর্ণ উল্টো। তাও যদি হয় নাটোরের হালতি বিলের মধ্যে, তাহলে তো কথাই নেই। বিলটি বিখ্যাত চলনবিলের একটি অংশ।

যাই হোক, রাত নিয়ে কথা হচ্ছিলো। লোকালয় থেকে বেরিয়ে এলে নিজের হাত-পা দেখা যায় না। একটু এগিয়ে গেলে টিমটিমে কিছু আলোর দেখা মেলে। দূর থেকে দেখলে মনে হয়, অজানা কোনো বন্দরের উদ্দেশে পারি দিয়েছে কোনো জাহাজ আর তার আলোর ছায়া পড়েছে শান্ত সমুদ্রে। আলোর আরও কাছে গেলে পৌঁছে যাই খোলাবাড়িয়া বাজারে। গিয়ে এক বিশেষ অভিজ্ঞতা। একে ‘আড্ডার বাজার’ বলবো না ‘বাজারের আড্ডা’ এ নিয়ে আলোচনা আবশ্যক।

চায়ের দোকান তো বটেই, চপ-বেগুনি, মুদি দোকান, ওষুধ-পত্র বা অন্য সব দোকানের সামনে জমাটি আড্ডা। কে বলবে রাত ৮টায় মধ্যরাত বনে যাওয়া গ্রামের পুরুষরা এমন জমিয়ে দেবে!

স্থানীয় ভুট্টো ভাইয়ের ভাষ্য যেমন, বিকেলের পর তো এখানে তেমন কিছু করার থাকে না। অবসর কাটাতে সবাই বাজারে চলে আসে। এসে সবাই গল্প-আড্ডা দিয়ে রাত ৮টা বা ৯টার দিকে বাড়ি যায়।

নাটোর বাসস্ট্যান্ড থেকে পাটুল হয়ে একটি সড়ক খোলাবাড়িয়া বাজারের উপর দিয়ে মাধনগরের দিকে চলে গেছে। বাজারের ঠিক আগে হাতের ডানে চলে গেছে একাডালা গ্রামের পথ। যে পথ যেদিকে গেছে, সবই বিলের বুক চিরে। এখনকার পরিবেশ ঠিক উল্টো রূপ নেয় বরষার সময়। তখন চারদিকে থইথই পানি, রাস্তাঘাট সব পানির নিচে আর আড্ডাপ্রিয়-অপ্রিয় পুরুষরা সব বাড়ির ভেতর।

বছরের অক্টোবর-নভেম্বর থেকে এপ্রিল-মে অব্দি শুকনো মৌসুম। এসময় বিলের পানি একদমই শুকিয়ে যায়। অন্যদিকে, মে-জুন থেকে শীতের আগ পর্যন্ত বিল দেখা দেয় স্বরূপে।

স্থানীয় ব্যবসায়ী এনামুল হকের আবার কৌতুকময় অভিযোগ, “বাড়িত সৈন্দা বেলা ভারতীয় সিরিয়াল চলে। আমি আর কী কবো, সব কাজ শেষ করে বাজারে চলে আসি”।

নানা বিষয়ে সবার সঙ্গে কথা হয়। আশপাশের গ্রাম থেকেও কেউ কেউ আসে আড্ডা দিতে।

তবে আড্ডার বিষয়বস্তু দেশ, কাল, আবহাওয়া, রাজনীতি, ইত্যাদি ঘুরে একটি বিষয়ে এসে অবশ্যই মেলে, সেটি হলো আগামী বরষা কেমন কাটবে বা কতো ফুট পানি হতে পারে। হলে কী হবে...এভাবে চলে নিত্যদিন।

বিলের পানি বাড়লে এই গ্রামগুলো হয়ে যায় এক-একটা বিচ্ছিন্ন দ্বীপ। ভাঙন থেকে বাঁচাতে গ্রামের চারপাশে রয়েছে ইটের চওড়া দেয়াল, তারপরও দেয়ালের নোনা ধরা ইটের দিকে তাকালে শঙ্কা জাগায় বরষার উত্তাল হালতি।

বাংলাদেশ সময়: ০৯০০ ঘণ্টা, জানুয়ারি ২১, ২০১৬
এসএস/এএ/এটি

** বৃষ্টিতে কনকনে শীত, প্যান্ট-লুঙ্গি একসঙ্গে!
** ভরদুপুরে কাকভোর!
** ডুবো রাস্তায় চৌচির হালতি
** হঠাৎ বৃষ্টিতে শীতের দাপট

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।