ঢাকা, শুক্রবার, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৮ রমজান ১৪৪৫

এভিয়াট্যুর

বিপিসি’র পথেই হাঁটছে বিটিবি

ইশতিয়াক হুসাইন, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৬১৭ ঘণ্টা, মে ২৪, ২০১৪
বিপিসি’র পথেই হাঁটছে বিটিবি

ঢাকা: বাংলাদেশ পর্যটন করপোরেশনের (বিপিসি) ব্যর্থতার কারণে স্বাধীনতার কয়েক দশকেও দেশের পর্যটন শিল্পে আশানুরূপ উন্নতি হয়নি।

তাই এর বিকল্প হিসেবে বিগত মহাজোট সরকারের আমলে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে বাংলাদেশ ট্যুরিজম বোর্ড (বিটিবি)।

অনেক আশা নিয়ে ট্যুরিজম বোর্ড গঠিত হলেও দিন দিন বোর্ডের ওপর আস্থায় ফাটল ধরছে এ খাতের সঙ্গে সংশ্লিষ্টদের।
 
এই খাতের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ও পর্যটন বিশেষজ্ঞদের কথায় এ অনাস্থার চিত্র স্পষ্ট হয়েছে। বাংলাদেশে পর্যটন শিল্পের অপার সম্ভাবনা রয়েছে- এ ধরনের বক্তব্য দিয়ে এসেছে সব পর্যটন মন্ত্রী। তবে কথা আর কাজের মিল ঘটাতে পারেননি কেউ। কয়েক দশকে দেশের পর্যটনের অগ্রপথিক হিসেবে পরিচিত পর্যটন করপোরেশন এ খাতের উন্নতি কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যে পৌঁছাতে পারেনি।

যাতে দেশের পর্যটন খাত এগিয়ে যেতে পারে সেজন্যই বিগত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে প্রথম ট্যুরিজম বোর্ড গঠনের উদ্যোগ নেওয়া হয়। এরই অংশ হিসেবে শুরু হয় পর্যটন করপোরেশনের বিকল্প একটি প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলার। ওই সরকারের আমলে ট্যুরিজম বোর্ড গঠনের কাজটি শুরু হলেও পরবর্তীকালে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন বিগত মহাজোট সরকারের  আমলে এটি আইনি কাঠামো পায়। যাত্রা শুরু হয় ট্যুরিজম বোর্ডের।

যে লক্ষ্য নিয়ে এর যাত্রা শুরু হয়েছিল শুরুতেই তা হোঁচট খায়। বলা হয়েছিল পর্যটন খাতের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট একজন পেশাদার প্রধান নির্বাহী দিয়ে এ প্রতিষ্ঠান পরিচালিত হবে। সংস্থার পরিচালনা পর্ষদেও পর্যটন শিল্পের লোকদের প্রাধান্য থাকবে। কিন্তু বাস্তবে এর কিছুই হয়নি।

ট্যুরিজম বোর্ডের ওপর আস্থা রাখতে পারছেন না দেশের ট্যুরিজম খাতের অন্যতম পথিকৃত পর্যটন ভিত্তিক পাক্ষিক বাংলাদেশ মনিটরের সম্পাদক কাজী ওয়াহিদুল আলম। তার মতে, যে লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য নিয়ে ট্যুরিজম বোর্ডের যাত্রা শুরু হয়েছিল তা অর্জিত হচ্ছে না। বিগত কয়েক বছরে কিছু আন্তর্জাতিক মেলায় অংশ নেওয়া ছাড়া উল্লেখ করার মতো কোনো কাজ হয়নি। আসলে আমলা নির্ভর পরিচালনা পর্ষদ দিয়ে ট্যুরিজম বোর্ড পর্যটনের উন্নয়নে ভূমিকা রাখতে পারবে না।
 
ট্যুরিজম বোর্ডের পরিচালনা পর্ষদের চেয়ারম্যান পর্যটন সচিব, এছাড়া পর্ষদ সদস্যদের বেশিরভাগই আমলা। এছাড়া এর প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তাও একজন আমলা। শুধু তাই নয়, ট্যুরিজম বোর্ডের পুরো অর্গানোগ্রামে উচ্চ পদস্থ কর্মকর্তাদের সবাই আমলা।  

পর্যটনের উন্নয়নে ট্যুরিজম বোর্ড যথাযথ ভূমিকা রাখতে না পারার কারণ ব্যাখ্যা করতে গিয়ে কাজী ওয়াহিদুল আলম বাংলানিউজকে বলেন, একজন আমলা দুই থেকে তিন বছরের জন্য ট্যুরিজম বোর্ডে আসছেন। পর্যটনের বিষয়টি ভালোভাবে রপ্ত করতে না করতেই তাকে আবার এখান থেকে বিদায় নিতে হচ্ছে। অর্থ্যাৎ তিনি নিজেকে তৈরির করার সুযোগ পাচ্ছেন না। তাছাড়া পর্যটন করপোরেশন দিয়ে পর্যটনের উন্নতি না হওয়ায় তৈরি হয়েছে ট্যুরিজম বোর্ড।

এখানেও তিনি বড় একটি বৈষম্য দেখেন। এ সম্পর্কে তিনি বলেন, পর্যটন করপোরেশনের চেয়ারম্যান একজন অতিরিক্ত সচিব পদমর্যাদার কর্মকর্তা। আর দেশের পর্যটনের ভার যার ওপরে ন্যস্ত সেই ট্যুরিজম বোর্ডের প্রধান একজন অতিরিক্ত সচিবের নিচে যুগ্মসচিব পদমর্যাদার কর্মকর্তা। এটি হতে পারে না।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্যুরিজম অ্যান্ড হসপিটালিটি বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক মুজিব উদ্দিন আহমেদ ট্যুরিজম বোর্ড পরিচালনাকারীদের মধ্যে ভিশনারি লোকের উপস্থিতি নেই বলে মন্তব্য করে বলেন, এখানে যারা রয়েছেন তাদের দৃষ্টি কবে কোন দেশে মেলা হবে, আর কীভাবে ওইসব মেলায় অংশ নিয়ে একটি দেশ ভ্রমণ করা যাবে সেদিকে। পর্যটনের উন্নয়নে কোন ধরনের নীতিমালা করা যায়- সে পরিকল্পনা করার মতো লোক সেখানে নেই। আবার এই পরিচালনা পর্ষদে থাকা সদস্যদের কতটুকু ক্ষমতা রয়েছে তা নিয়েও সন্দেহ প্রকাশ করেন তিনি।
 
অধ্যাপক মুজিব উদ্দিন আহমেদ বাংলাদেশ ট্যুরিজম বোর্ডের পরিচালনা পর্ষদের একজন সদস্য। বোর্ডের সদস্য হিসেবে তিনি এও বলেন, শুধুমাত্র ট্যুরিজম বোর্ডের ভরসায় বসে থাকলে দেশের পর্যটনের উন্নতি হবে না। এজন্য সবাইকেই কাজ করতে হবে।

ট্যুর অপারেটরস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (টোয়াব) পরিচালক ও বেঙ্গল ট্যুরস লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মাসুদ হোসেন বাংলানিউজকে বলেন, আমরা যেভাবে চেয়েছিলাম সেভাবে ট্যুরিজম বোর্ড হয়নি। ট্যুরিজম বোর্ড ট্যুরিজম অ্যাডভারটাইজিং, ট্যুরিজম প্রমোশন, রোড শো করবে, ট্যুর অপারেটরদের ও বেসরকারি উদ্যোক্তাদের মধ্যে সেতুবন্ধন তৈরি করবে। কিন্তু ট্যুরিজম বোর্ডের মাথাভারী প্রশাসনের পক্ষে এসব করা সম্ভব হচ্ছে না।   
 
বাংলাদেশ সময়: ০৬১৫ ঘন্টা, মে ২৪, ২০১৪

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।