'আজ আর হবে না। তোরাই খেল। মায়ের শরীরটা ভালো নেই কয়দিন। থেমে থেমে জ্বর উঠছে। দেখি, সালমা বাসায় কিভাবে কী করছে। ফেরার পথে ডাক্তারের সাথে কথা বলে যাওয়ার চেষ্টা করবো। উপর তলার রফিক সাহেবের মেয়ের জামাই ডাক্তার, ইংল্যান্ডে চাকরি করেন। বেড়াতে এসেছেন সেদিন। রফিক সাহেবকে বলে এসেছি। দেখি আজ নিয়ে যেতে পারি কিনা।'
চল্লিশ পার হওয়া কলিম রাস্তার মোড়ে লেখার অযোগ্য খিস্তি করে যাচ্ছে বিকট শব্দে! রাত অনেক হয়েছে। এলাকার ভদ্রলোকেরা অনেকেই বিশেষ করে মুখে কথা ফুটছে এমন বাচ্চার মায়েরা কলিমের খিস্তি শুরু হলেই ধপাধপ দরজা জানালা লাগাতে ব্যস্ত হয়ে পড়ে। পাছে বাচ্চারা এইসব খিস্তি মুখস্ত করে ফেলে এই ভয় তাদের মনে।
ঢাকা: দেশের অন্যতম নাট্যসংগঠন ঢাকা পদাতিক। সময়ের সিঁড়ি বেয়ে এই নাট্যসংগঠনটি প্রতিষ্ঠার ৩৮ বছরে এবার অতিক্রম করলো। এ উপলক্ষে শিল্পকলা একাডেমির জাতীয় নাট্যশালায় চলছে আট দিনব্যাপী নাট্যোৎসব।
বাংলাদেশ থেকে ফিরে ভারতে এসেই যার অভাব খেতে বসলেই অনুভব করছি তার নাম “বিরিয়ানি”! এ হেন রাজকীয় খাবারের প্রভাব চিন্তা-চেতনায় এমনভাবে প্রকাশ করেছে যে, বাংলাদেশের প্রাসঙ্গিকতা আসলে তা ছাপিয়ে যাচ্ছে। তবে দেশভিত্তিক নাম করে খাবারের ব্যাপ্তি কমানো ভুল হবে। আসলে দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোতে বিরিয়ানির প্রচলন প্রায় ৪শ বছর পুরনো; এর মধ্যে পাকিস্তান, ভারত, বাংলাদেশ উল্লেখযোগ্য!
খবরটা গ্রামের সীমা ছাড়িয়ে পুরো রাষ্ট্রে ছড়িয়ে পড়ল! আর সেই খবরে লোকাল এমপি ও মন্ত্রী আবু মকসুদের বিরোধী শিবিরে খুশির বন্যা বয়ে গেল, পুরো জাতি হয়ে পড়ল বিস্ময়ে হত-বিহ্বল! অথচ খবরটা শুরুতে এমন বড় কিছুই ছিল না, নিদেন পক্ষে মিডিয়ার সংবাদ গুরুত্বের বিবেচনায়।
হাতে একটা ফুলতোলা লাঞ্চের ব্যাগ ঝুলিয়ে ভোরে বাসা থেকে বের হতে হয় রফিক সাহেবকে। পেশায় চাকুরে। পরিবারের ছোট ছেলে। ছাত্রজীবনে বন্ধুবান্ধব দুই/একজন থাকলেও চাকরি পাবার পর থেকেই কাজই তার একমাত্র বন্ধু। শহরের এক মাথা থেকে আরেক মাথায় আসেন অফিস করতে। প্রথমে পাঁচ মিনিট পায়ে হেঁটে গলির মোড়ে, সেখান থেকে রিকশা করে প্রধান সড়কে। এরপর চেপে বসেন পাঁচ নম্বর লোকাল বাসে। সেই বাসযাত্রা প্রায় এক ঘণ্টা কখনো বা তারও বেশি।
যেকোনো নতুন জিনিস উদ্ভাবিত হলে ধীরে ধীরে তার ভালো-মন্দ প্রকট হয়। সেলফি (SELFIE) শব্দটি ২০১৩ সাল নাগাদ অক্সফোর্ড অভিধানে যুক্ত হয়। এই সেলফি বিষয়টির ভাবনা যে খুব নতুন তা কিন্তু নয়। প্রচলিত অর্থে প্রভাব অবশ্যই নতুন। এখন বিপদ, স্টাইল যে অর্থেই হোক এই শব্দের সঙ্গে আমরা অধিক পরিচিত। সবাই বর্তমানে এটাতে এতোই মজেছে যে, শুধু এই শব্দবহুল বাক্য ব্যবহার করে সে এক উদ্ভট গান যা শ্রবণ ইন্দ্রিয়কে বিপর্যস্ত করে তুলেছে— তাও বিখ্যাত হয়ে যাচ্ছে। অসুবিধে হচ্ছে এই ভার্চুয়াল এককটি একা-কে মাহাত্ম্য দিচ্ছে, কিন্ত একার মুহূর্ত খুব বেশীক্ষণের জন্য সফল হতে পারে না।
থ্রি কার্ড খেলা চলছে নাবালক মিয়া বাইলেনের সেমি-পাকা ঘরের মধ্যে। বাইরে আকাশ কালো করে ঢিমে তালে গত কয়েকদিন ধরে বৃষ্টি পড়ছে। আষাঢ় মাসের কান্না। জেদ ধরা বাচ্চা ছেলের মতো বায়না মেটার আগ পর্যন্ত থামার কোনো লক্ষণ নাই। এলাকার বাসিন্দারা নিম্ন আয়ের মানুষ। কুলি থেকে কাজের বুয়া, রিকশা চালক, সিএনজি ড্রাইভার, বন্দরের ডক শ্রমিক আর অফিস পিয়নদের জন্য যুতসই আবাসিক এলাকা।
তিনতলা বাসা থেকে নামার সময় যতোবারই শেষ ধাপটিতে পা দেয় একটা জিনিসের কথা মনে পড়ে যায় সোলেমানের। হরলিক্সের বৈয়াম।
“মা, গল্প বলো” আবদার সাত বছরের ছোট্ট নিয়ন্তার।
“এক যে ছিলো রাজকন্যা”
“মা, বাবা আসবে কখন?”
“একটু রাত হবে।”
“বাবা এতো রাতে আসে আর এতো ভোরে চলে যায় যে আমার সঙ্গে দেখাই হয় না।” অভিমান নিয়ন্তার কণ্ঠে।
এক.
পাগলটা মুতে দিলো। এমনভাবে মুতলো কী আর বলব, আমার বলতেও বমি পাচ্ছে। সে মুত কি না সরাসরি ঢুকে গেল শাদা শার্ট পরা ভদ্রলোকটির মুখে! মুখে ঢোকার কারণ অবশ্য ছিলো। তা পরেই বলছি।
এই সময়ের গল্প-১৯
অফিস থেকে বাসায় ফিরে মুমুর সঙ্গে কথা কাটাকাটি হয় রাথিনের। রাথিনের ব্যস্ততাই এর জন্য দায়ী বলে দাবি মুমুর। দাম্পত্য জীবনের সাত বছর পার করে এ সময়ে কেউ কাউকে যেনো সহ্য করতে পারছে না। সহ্য করাটা ঠিক সেই অর্থে নয়। কথায় কথায় ঝগড়া বেঁধে যাচ্ছে। রাথিনের দাবি, মুমু তাকে নজরবন্দি করে রাখতে চাইছে। বৃত্তবন্দি করে ফেলছে রাথিনের ক্যারিয়ার।
এই সময়ের গল্প-১৬
শাহানা শুয়ে ছিলো। ক্লান্তিতে চোখ খুলতেও কষ্ট হচ্ছে তার। ঘুম আর জাগরণের মধ্যবর্তী একটা অবস্থায় আছে সে। তীক্ষ্ণ যন্ত্রণা বিষাক্ত কীটের মতো উরুসন্ধি বেয়ে ক্রমশই মস্তিষ্কে উঠে আসছে আর নেমে যাচ্ছে। ঘুমালেও এড়ানো যাচ্ছে না সেই ওঠা-নামা।
এই সময়ের গল্প-১৫
১.
হারুন। সাদামাটা গড়ন। চুলে তেল। হারুনকে দেখলেই তার কবি-কলিগ দাঁত কেলিয়ে বলেন, “হারুন, একদিন খবর পাবেন আপনার চাকরি চলে গেছে। বউ ভেগেছে। মেয়ের ভিডিও বেরিয়েছে। ছেলে জেলে”।
প্রথমবার এই রসিকতায় হারুন হতভম্ব হয়ে তাকিয়েছিল।
এই সময়ের গল্প-১০
আয়না খোলা আছে। ডান পাশে কেউ নেই। বায়ে আমি। একা। গাড়িটা সামান্য দুলছে। সামনে ট্রাক, যে কিনা বিশাল এক টমেটো ক্ষেত তুলে এনেছে। গা খোলা টমেটো। সামান্য একটা জালি-কাপড়ে ঢাকা। কোনো ডাল-পাতা নেই। এক কণা মাটিও নেই ট্রাকে। শুধু টমেটো আর টমেটো। টসটসে! লাল। গাড়িগুলো চলছে। কখনও-বা দুলছে। ধীর লয়ে।