ঢাকা, শুক্রবার, ১৪ চৈত্র ১৪৩০, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৮ রমজান ১৪৪৫

ক্রিকেট

মানুষের বিনাশ অনিবার্য: রুবেল হোসেন

স্পোর্টস ডেস্ক | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২১৩৯ ঘণ্টা, জুন ৩, ২০২০
মানুষের বিনাশ অনিবার্য: রুবেল হোসেন ছবিটি বিরাট কোহলির ফেসবুক পেজ থেকে সংগৃহীত

ভারতের দক্ষিণাঞ্চলের রাজ্য কেরালায় একটি অন্তঃসত্ত্বা হাতিকে নিষ্ঠুরভাবে হত্যার ঘটনায় পুরো ভারতে তীব্র সমালোচনা শুরু হয়েছে। জানা গেছে, আনারসের মধ্যে বিস্ফোরক ভরে হাতিটিকে খাইয়ে দেওয়া হয়েছিল। কয়েকদিন পর তীব্র যন্ত্রণায় শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করে হাতিটি। 

এই ঘটনায় স্তব্ধ পুরো বিশ্ব। সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে এই নিয়ে ঝড় বয়ে যাচ্ছে।

অনেকে এই ঘটনায় জড়িতদের বিরুদ্ধে শক্ত ব্যবস্থা গ্রহণ করতে বলেছেন। এবার এই ঘটনায় মুখ খুললেন ভারতীয় ক্রিকেট দলের অধিনায়ক বিরাট কোহলি। এই দুঃখজনক ঘটনা নিয়ে কোহলি এক টুইটে লিখেছেন, ‘কেরালায় যা হয়েছে তা শুনে আমি হতভম্ব হয়ে গেছি। আসুন আমরা আমাদের প্রাণীদের প্রতি সদয় হই এবং এধরনের কাপুরুষিত কর্মকাণ্ডকে রুখে দিই। ’

কোহলির মতো এই ঘটনায় ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন বাংলাদেশ জাতীয় দলের পেসার রুবেল হোসেনও। এক ফেসবুক পোস্টে রুবেল লিখেছেন, ‘বেশি কিছু লেখার ক্ষমতা নেই.... কীই বা বলবো!!!

‘১৫ বছরের অন্তঃসত্ত্বা হাতি টিকে কেরলের মানুষেরা যেভাবে হত্যা করেছে, তাতে বলা কি কিছু সাজে??? আনারসের মধ্যে বাজি পটকা ভরে নৃশংস হত্যা!! আর অবলা হাতি টি নিজের বাচ্চা কে বাঁচাতে পুকুরে গেল, যাতে পেটের বাচ্চাটার ক্ষতি না হয়... যতই হোক, মা তো.... কিন্তু শেষ রক্ষা হয়নি
কেরলের মানুষেরা কতটা শিক্ষিত-অশিক্ষিত সে প্রশ্ন থাক!! প্রশ্নটা উঠুক মানুষের মনুষ্যত্ব নিয়ে।

‘করোনার ভ্যাকসিন হয়তো তৈরি হবে কোনোদিন, জীবন যুদ্ধে মানুষ আরো একধাপ এগিয়ে যাবে আবার, কিন্তু মানবিকতার দিক থেকে আমরা একদম তলানিতে পৌঁছে যাবো না তো? এই ধরনের নিকৃষ্টতম বীভৎসতা কেবলমাত্র মানুষের পক্ষেই দেখানো সম্ভব। এইসব ইতরদের শাস্তির আওতায় আনুন না হলে জনগণের সামনে ছেড়ে দেন। তারপর..............। এরপরেও মানুষ পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ জীব বলে দাবি করে? আমরা এই পৃথিবী ডিজার্ভ করি না। যে অন্যায়, যে অবিচার ক্রমশ মানুষ করে যাচ্ছে তার শাস্তি অবশ্যই পাবে। প্রকৃতি কারো ঋণ রাখে না। সৃষ্টিকর্তা সব সুদে আসলে ফেরত দিয়ে দেয় । আজ যে পৃথিবীর এই অবস্থা সেটার জন্যও মানুষই দায়ী। মানুষের বিনাশ অনিবার্য।

মানুষ তুই মানুষ হবি কবে। ’

ধারণা করা হচ্ছে, আনারসের মধ্যে বিস্ফোরক ভরে হাতিটিকে খাইয়ে দেওয়া হয়েছিল। হাতিটি তা খাওয়ার সময় মুখের মধ্যেই ফেটে যায়। হাতিটি মারাত্মকভাবে আহত হয়। তারপরও সে লোকালয়ে কোনো তাণ্ডব না চালিয়ে চলে যায়। মৃত্যুর আগে তিন দিন ধরে পানিতে দাঁড়িয়ে থাকার পর হাতিটির সঙ্গে তার গর্ভের সন্তানেরও অকাল মৃত্যু ঘটে।  

এর আগেও পশুদের প্রতি সহিংসতার নানা ঘটনা ঘটলেও হাতিকে বিস্ফোরক খাওয়ানোর সাম্প্রতিক এই ঘটনাটি স্তম্ভিত করেছে স্থানীয়দের।

মোহন কৃষ্ণান নামে বন বিভাগের র্যাপিড রেসপন্স টিমের একজন ফরেস্ট অফিসার ঘটনাটি নিয়ে ফেসবুকে একটি আবেগী পোস্ট করার পর এই ঘটনা সম্পর্কে জানতে পারে মানুষ।

ফেসবুক পোস্টে তিনি লিখেন, আহত হওয়ার পরও হাতিটি কাউকে আঘাত না করে গ্রাম ছেড়ে চলে যায়। তিনি পোস্টে আরো লেখেন যে সোশ্যাল মিডিয়ায় প্রকাশিত ছবিগুলোতে হাতিটির কষ্টের প্রতিফলন হয় না।

বন বিভাগের কর্মকর্তাদের ভাষ্য অনুযায়ী, হাতিটির বয়স আনুমানিক ১৪-১৫ বছর।

আহত হওয়ার পর হাতিটি এতটাই শারীরিক যন্ত্রণার মধ্যে ছিল যে সে টানা তিনদিন ভেলিয়ার নদীতে দাঁড়িয়ে ছিল। এই সময়ের মধ্যে চিকিৎসাসেবা দেওয়ার চেষ্টা করা হলেও হাতিটিকে পানি থেকে সরানো সম্ভব হয়নি।

তিনদিন ধরে হাতিটির মুখ এবং শুঁড় পানিতে ডোবানো ছিল। স্থানীয় একটি খামারের পাশে হাতিটিকে ২৫ মে প্রথমবার লক্ষ্য করে বন বিভাগ।

পালাক্কাড় এলাকার সাইলেন্ট ভ্যালি নাশনাল পার্কের বন্যপ্রাণী বিভাগের ওয়ার্ডেন স্যামুয়েল ওয়াচা বলেন, হাতিটি কোথায় আহত হয়েছিল তা আমরা জানতে পারিনি। পানির নিচে থেকে সে পানি খাচ্ছিল, যা সম্ভবত তাকে কিছুটা আরাম দিচ্ছিল। হাতিটির চোয়ালের দুই পাশই ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। তার দাঁতও ভেঙে গেছে।

পাল্লাকাড়ের মান্নারকাড় অঞ্চলের বন বিভাগ কর্মকর্তা সুনিল কুমার জানান, হাতিটি আহত হয়েছে বুঝতে পারার পর বন বিভাগের কর্মকর্তারা চেষ্টা করেছিলেন নদী থেকে হাতিটিকে সরিয়ে এনে তার চিকিৎসা দেওয়ার। কিন্তু হাতিটিকে কিছুতেই নদী থেকে সরানো যায়নি।

পশু চিকিৎসকদের দিয়ে হাতিটির অপারেশন করানোর চেষ্টা করছিল বন বিভাগ। অবশেষে ২৭ মে নদীতে দাঁড়িয়ে থাকা অবস্থাতেই হাতিটি মারা যায়। তার মরদেহ ময়নাতদন্তের পর জানা যায় যে হাতিটি অন্তঃসত্ত্বা ছিল। স্যামুয়েল ওয়াচা জানান, এই ঘটনায় একটি মামলা করা হয়েছে এবং জড়িতদের শনাক্ত করার চেষ্টা চলছে।  সূত্র: বিবিসি, ডিএনএ

বাংলাদেশ সময়: ২১৩৯ ঘণ্টা, জুন ০৩, ২০২০
এমএইচএম

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।