ঢাকা, শুক্রবার, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫

ক্রিকেট

দুই হাত হারানো ক্রিকেটভক্ত রইসের মাসিক আয় ১৫ হাজার

মফিজুল সাদিক, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৩২২ ঘণ্টা, নভেম্বর ২২, ২০১৯
দুই হাত হারানো ক্রিকেটভক্ত রইসের মাসিক আয় ১৫ হাজার রইস উদ্দিন। ছবি: বাংলানিউজ

ঢাকা: মোহাম্মদ রইস উদ্দিন (৩৫)। জন্মস্থান ময়মনসিংহের নান্দাইল উপজেলার মুশুল্লী ইউনিয়নের চরপাড়া গ্রামে। শৈশব থেকেই ক্রিকেট ‘পাগল’ রইস। টেস্ট, ওয়ানডে ও টি-২০ সব সংস্করণের ক্রিকেটই তার পছন্দ। তিনি স্বপ্ন দেখেন সাকিব, তামিমরা একদিন বিশ্বকাপ জয় করবেন। সাকিবের এক বছরের নিষেধাজ্ঞার খবর এখনো তাড়িয়ে বেড়ায় জীবন যুদ্ধের ফেরিওয়ালা রইসকে।

অথচ ক্রিকেটের প্রতি প্রেমই কাল হয়েছে রইসের। যে কারণে অকালে হারাতে হয়েছে দু’টি হাত।

সেদিন ছিল ২০০৫ সালের ৫ জানুয়ারি। চট্টগ্রামে চলছিল বাংলাদেশ-জিম্বাবুয়ের টেস্ট। শুরু থেকেই টেলিভিশনে খেলা দেখছিলেন রইস। কিন্তু হঠাৎ করেই টিভিতে সমস্যা দেখা দেয়, খেলা দেখা যাচ্ছিল না ঠিকমতো। এসময় টেলিভিশনের এন্টেনা ঠিক করতে বাঁশ বেয়ে উপরে উঠেন রইস। কিন্তু দুর্ভাগ্য তার। বাঁশ ভেঙে তিনি পড়ে যান বিদ্যুতের লাইনে। এতে পুড়ে যায় তার দু’টি হাত। গুরুতর আহত অবস্থায় প্রথমে তাকে ময়মনসিংহ মেডিক্যাল কলেজে ভর্তি করা হয়। পরে ভর্তি করা হয় ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ও প্ল্যাস্টিক সার্জারি ইউনিটে। তার হাত দু’টোর অবস্থা ভালো না হওয়ায় এগুলো কেটে ফেলতে বাধ্য হন চিকিৎসকরা।

তিন বছর বয়সে বাবা সুন্দর আলীকে হারান রইস। আর ২০১৪ সালের শুরুতে হারান মা রাবেয়া খাতুনকে। পড়ালেখা করতে পারেননি। ছিল না জমানো কোনো টাকা। জায়গা-জমিও নেই।

এতসব নেই টলাতে পারেনি রইসের মনোবল। মনোবল ও আত্মবিশ্বাসের জোরেই চলছে তার সংগ্রামী জীবন। অভাবের কারণে ২০১৪ সালে স্ত্রী সোনিয়া আক্তারকে নিয়ে ময়মনসিংহ থেকে ঢাকায় আসেন তিনি। বর্তমানে পরিবার নিয়ে থাকছেন মহাখালীর হাজিরবাড়ি মহল্লায়। একমাত্র ছেলে আল সাবিলকে (৬) ভর্তি করিয়েছেন স্থানীয় একটা স্কুলে।

ক্রিকেট পাগল রইস।  ছবি: বাংলানিউজ

বিজয় সরণি মোড়ে পণ্য ফেরি করেন রইস। ব্রাশ, পেন্সিল, কলম, নেল কাটার, চাবির রিং, আইডি কার্ড কাভার, ঝুলন্ত আঙুর, কাচি ইত্যাদি পণ্য পাওয়া যায় তার কাছে। সব পণ্যই শরীরে ঝোলানো থাকে। ক্রেতার যদি কোনো পণ্য পছন্দ হয় নিতে হয় নিজ থেকেই। পাশে রাখা থাকে ছোট একটা ব্যাগ। ওখানে টাকা দিতে হয় নিজ দায়িত্বে।

রইস জানান, ফেরি করে সারাদিনে গড়ে এক থেকে দেড় হাজার টাকার পণ্য বিক্রি হয়। লাভ হয় গড়ে ৫০০ টাকা।

দুই হাত হারানো রইস এখন স্বাবলম্বী। শারীরিক প্রতিবন্ধকতা তাকে দমিয়ে রাখতে পারেনি। অদম্য মনোবলের কারণে থেমে নেই তার জীবন সংগ্রাম। মনে প্রাণে ভিক্ষাবৃত্তি ঘৃণা করা রইস দৃঢ় মনোবলের অধিকারী।

রইস উদ্দিন বাংলানিউজকে বলেন, দুই হাত হারিয়েছি সমস্যা নেই। কিন্তু পা দু’টো তো আছে। এমনকি আমি পাগল তো হয়ে যাইনি। দুই পায়ে ভর করে শ্রম দিয়ে ঢাকায় ফেরি করি। আল্লাহ দিলে দৈনিক ৫০০ টাকা আয় হয়। মাসে ১৫ হাজার টাকা আয় করি। সাড়ে তিন হাজার ঘর ভাড়া ও বাচ্চার পড়ালেখার খরচ দিয়ে সংসার চলে যায়।

‘আমি মনে প্রাণে ভিক্ষা করা ঘৃণা করি। যার ভিক্ষা করেন তাদের সবার উচিত ভিক্ষা ছেড়ে নিজের পায়ে দাঁড়ানো। দুই হাত হারিয়েছি। পথ চলতে সমস্যা হয়। এরপরও সারাদিন ঘুরে ঘুরে ব্রাশ, কলমসহ ১০টি আইটেমের পণ্য ফেরি করি। দুই হাত হারালেও মান সম্মান হারাইনি। তাই ভিক্ষা না করে ঢাকায় ফেরি করি। ’

বাংলাদেশ সময়: ০৮১৯ ঘণ্টা, নভেম্বর ২২, ২০১৯
এমআইএস/এইচএডি/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।