ঢাকা, শুক্রবার, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫

ফুটবল

খেলোয়াড়দের যত কুসংস্কার!

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২২০৯ ঘণ্টা, জুন ২৩, ২০১৮
খেলোয়াড়দের যত কুসংস্কার! খেলোয়াড়দের যত কুসংস্কার

বিশ্বাস আর অভ্যাসের প্রয়োগগুলোয় আপাতদৃষ্টিতে হয়ে ওঠে কুসংস্কার। এগুলো যেমন অন্ধ বিশ্বাস, ঠিক তেমনি অযৌক্তিকও। তবে মাঝে মাঝে এসব অযৌক্তিকতাই হয়ে ওঠে দারুণ সব সফলতার কারণ। সাধারণ মানুষের পাশাপাশি কুসংস্কার মেনে চলেন বিশ্ববিখ্যাত খেলোয়াড়রাও।

সব সময় ডান পা
ব্রাজিলের অনন্য ফুটবল তারকা রোনাল্ডোর সংস্কার ছিল মাঠে ঢোকার সময় প্রথমে ডান পা ফেলা। এমনকি পর্তুগাল ও রিয়াল মাদ্রিদের ক্রিস্টিয়ানো রোনাল্ডোও এক সাক্ষাতকারে স্বীকার করেছেন যে, তিনিও এটা মেনে চলেন।

২০১৬ সালে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, অন্য অনেক খেলোয়াড়ের মতো আমারও কিছু কুসংস্কার আছে। এর একটা হলো প্রথমে ডান পা ফেলে মাঠে প্রবেশ করা। আমি আরো কিছু রুটিন অনুসরণ করি। বিশেষ করে আগের ম্যাচে যেসব মানায় ভাল ফল হয়েছে, সেগুলো মেনে চলার চেষ্টা করি।


মাঠে প্রস্রাব করতেন গয়কোচিয়া
ইতালিতে ১৯৯০ বিশ্বকাপে যুগোশ্লাভিয়ার বিরুদ্ধে ম্যাচে পেনাল্টির আগে বাথরুমে যাবার দরকার হয়েছিল আর্জেন্টাইন গোলরক্ষক সেরজিও গয়কোচিয়ার। খেলার আগে তিনি প্রচুর পরিমাণে পানি খেয়ে মাঠে নেমেছিলেন। কিন্তু পেনাল্টির আগে তার টয়লেটে যাবার সময় ছিল না। ফলে সে সময় তিনি মাঠের মধ্যেই প্রস্রাব করেছিলেন।

সে ম্যাচটিতে আর্জেন্টিনা পেনাল্টিতে জিতে যায়। এরপর সেমিফাইনালে আর্জেন্টিনার খেলা পরে ইতালির বিরুদ্ধে এবং সে খেলাও পেনাল্টিতে যায়। তখন গয়কোচিয়া ঠিক সেটাই করলেন, যা তিনি আগের ম্যাচে করেছিলেন। তিনি আবার মাঠের মধ্যে প্রস্রাব করলেন।

আর্জেন্টাইন সাবেক এ গোলরক্ষক সেরজিও গয়কোচিয়ার এ সংস্কারে অবশ্য পেনাল্টিতে আবার আর্জেন্টিনাই জিতেছিল। আর এ বিষয়ে গয়কোচিয়া এক সাক্ষাৎকারে বলেছিলেন, তিনি এমনভাবে কাজটা করতেন যে, কেউ তা বুঝতে পারতো না।


মাঠে চিহ্ন দিয়ে রাখা
দক্ষিণ আফ্রিকায় ২০১০ সালের বিশ্বকাপ জেতা স্পেন এবং রিয়াল মাদ্রিদের গোলকিপার ইকার কাসিয়াসও নানা রকমের কুসংস্কার মেনে চলেন। তার নানা রকমের সংস্কার এতই বেশি যে, মারকা নামে একটি স্প্যানিশ ওয়েবসাইট একবার মন্তব্য করে, কাসিয়াস হচ্ছেন পৃথিবীর সবচেয়ে বেশি কুসংস্কারাচ্ছন্ন খেলোয়াড়দের অন্যতম।

তিনি তার জার্সির হাত কেটে বাদ দেন, মোজা উল্টো করে পরেন, আর প্রতি খেলার আগে তিনি গোল লাইন পর্যন্ত তার এলাকায় বাঁ পা দিয়ে দাগ টেনে চিহ্নিত করে রাখেন। তা ছাড়া তার দল যখনই গোল করে, তখন তিনি গোল মুখে ফিরে এসে ছোট একটা লাফ দেন এবং বাঁ হাত দিয়ে গোল পোস্ট স্পর্শ করেন।


খেলার আগে রুশ ক্লাসিক
ইতালি আর এসি মিলানের এক দুর্দান্ত মিডফিল্ডার ছিলেন গেন্নারো গাত্তুসো। ২০০৬ সালের জার্মানি বিশ্বকাপে ইতালির শিরোপা জয়ের পেছনে বড় ভুমিকা ছিলো এই খেলোয়াড়ের।

মজার ব্যাপার হচ্ছে, ম্যাচ শুরু হবার আগে গাত্তুসো রুশ লেখক ফিওদর দস্তয়েভস্কির বই পড়তেন। দস্তয়েভস্কির 'ক্রাইম এ্যান্ড পানিশমেন্ট', 'দি ব্রাদার্স কারামাজভ' এবং 'দি ইডিয়ট। ' তিনি মনে করতেন, এটা তার জন্য ভাল ফল বয়ে আনবে।

তিনি ফিফাকে একবার বলেছিলেন, আমার মনে ছিল কুসংস্কারের বাসা। যেমন, চেক প্রজাতন্ত্রের বিরুদ্ধে খেলার আগে আমি দেশে ফিরে যাবার জন্য ব্যাগ গুছিয়েছিলাম। আর এর পর থেকে প্রতিটি খেলার আগেই আমি এ কাজ করতে শুরু করলাম। কিছুতেই নিজেকে থামাতে পারছিলাম না। এটা চলেছিল টুর্নামেন্ট শেষ হওয়া পর্যন্ত।


জাদুর ব্যান্ডেজ
চিলির ফুটবলার হুয়ান কার্লোস পেরাল্টাের সংস্কার হচ্ছে ডান পায়ে ব্যান্ডেজ বেঁধে রাখা। তার দল কোলো কোলো-র আরেক খেলোয়াড় ইভান জামোরানোও ব্যান্ডেজ বেঁধে খেলতে নামতেন। তবে তিনি ব্যান্ডেজ বাঁধতেন ডান হাতের কব্জিতে।

জামোরানো হাতে চোট পাবার কারণে একদিন ব্যান্ডেজ বেঁধে মাঠে নেমেছিলেন। আর সেদিনই সে দলের হয়ে করেছিলো তিনটি গোল। এরপর থেকেই এটা তার স্থায়ী কু-সংস্কারে পরিণত হয়।

এ সংস্কারের ব্যাপারে কার্লোস পেরাল্টাে বলেছিলেন, এটা এ জন্য নয় যে আমি আহত হয়েছে। কিন্তু প্রথম যেদিন আমি পায়ে ব্যান্ডেজ বেঁধে খেলতে নেমেছিলাম, সেদিন জিতেছিলাম। তার পর থেকে আমি এটা করে আসছি।


নীল অন্তর্বাস
এটা একটা খুবই সাধারণ সংস্কার। কলম্বিয়ার গোলকিপার ছিলেন রেনে হিগুইতা। তিনি প্রত্যেক খেলায় পরতেন নীল আন্ডারওয়্যার।

কারণ হিসেবে তিনি বলেছিলেন, ১৯৮০র দশকের শেষ দিকে তাদের দল এটলেটিকো নাসিওনাল যাতে মিলোনারিওসের বিরুদ্ধে জিততে পারে, সে জন্য আমরা এক মহিলা গণকের কাছে গিয়েছিলাম। তিনি ভাগ্যে কি আছে বলতে পারেন।

ও্ই নারী বলেছিলেন, আমাদের ওপর অভিশাপ লেগেছে। তিনি একটি বেল্ট এবং সব খেলোয়াড়ের পরার জন্য নীল আন্ডারওয়্যার পাঠালেন। এরপরই সব ঠিক হয়ে গেল । আমরা কাপও জিতেছিলাম ।


'মুড আনার জন্য' একই গান শোনা
নিজের মাঠে ফ্রান্স বিশ্বকাপ জিতেছিল ১৯৯৮ সালে। ওই দলে ছিলেন লরাঁ ব্লাঁ, জিনেদিন জিদান, ফ্যাবিয়ান বার্থেজ-এর মতো তারকারা। এ দলেরও সৌভাগ্যের পেছনেও ভুমিকা ছিল সংস্কারের, এমনই মনে করেন তাদের অনেকে।

তাদের সংস্কারের মধ্যে একটা হলো, চেঞ্জিং রুমে দলের খেলোয়াড়রা একটি মাত্র গান বাজাতেন। সেটা হলো গ্লোরিয়া গেনরের 'আই উইল সারভাইভ'।

গানটা ১৯৭৮ সালের একটা হিট গান। কিন্তু ২০ বছর পর এটা বাজাতে বাধ্য করেছিলেন ডিফেন্ডার ভিনসেন্ট কানডেলা। পরে গানটি বিশ্বকাপজয়ী ফেঞ্চ দলের প্রতীকী গানে পরিণত হয়। আর শুধু ফরাসী ড্রেসিংরুমে নয়, টিম বাসে এবং ট্রেনিংএর সময়ও এটা বাজানো হতো।


শটের 'অপচয়'
ইংল্যান্ডের হয়ে বিশ্বকাপে সবচেয়ে বেশি গোল করেছেন স্ট্রাইকার গ্যারি লিনেকার। অথচ ওয়ার্ম-আপের সময় গোলে শট নিতেন না এ খেলোয়াড়। কারণ তার ধারণা ছিল, এতে আসল খেলার সময় তার গোল করার সম্ভাবনা কমে যাবে।

একই সংস্কার ছিল মেক্সিকো আর রিয়াল মাদ্রিদের কিংবদন্তী হুগো সানচেজের। তিনিও ওয়ার্ম-আপে গোলে শট নিতে চাইতেন না। কারণ তিনি মনে করতেন, এতে শটের 'অপচয়' হবে।

বাংলাদেশ সময়:০৪০৯ ঘণ্টা, জুন ২৪, ২০১৮
এইচএমএস

 

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।