ঢাকা, শুক্রবার, ১৪ চৈত্র ১৪৩০, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৮ রমজান ১৪৪৫

ক্রিকেট

এক নির্মাণশ্রমিকের ক্রিকেটার হওয়ার গল্প

স্পোর্টস ডেস্ক | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৮০৬ ঘণ্টা, এপ্রিল ২৪, ২০১৮
এক নির্মাণশ্রমিকের ক্রিকেটার হওয়ার গল্প শাকিল-ছবি: সংগৃহীত

আসলে গল্প লিখলে ভুল, দেশের বাইরে মরুভূমিতে কঠোর শ্রম দেয়া সালাউদ্দিন সাকিল দারুণ কিছুই করেছেন। স্বপ্নকে বাস্তবে রূপ দিয়ে জাতীয় পর্যায়ের ক্রিকেটে পথচলা শুরু করেছেন। যেখানে একটা সময় দুবাইয়ে কঠোর পরিশ্রম করতে হয়েছিল তাকে।

কম করে হলেও প্রায় এক যুগ পরে শাকিলের জীবনে এখন তৃপ্তি এসেছে। গত সপ্তাহে বাংলাদেশ ক্রিকেটের প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে অভিষেক হলো তার।

কষ্টের সেই জীবনের কথা স্মরণ করে শাকিল বলেন, ‘সেখানে (দুবাই) আমাদের প্রতিদিন ভোর ৪টায় কাজের জন্য বেরিয়ে যেতে হতো। আমরা আমাদের খাবার পলিথিন ব্যাগে বয়ে নিয়ে যেতাম। মরুভূমির ঝড়ের কারণে আমরা প্লেটে কখনো খেতে পারতাম না। নইলে বাতাসে ভাত উড়ে যেত। গরমের তাপমাত্রা কখনো ৫০ ডিগ্রিও স্পর্শ করে। ফলে তরকারিগুলো নষ্ট হয়ে যেত। এটা ছিল খুবই কঠিন সময়। ’

সেই জীবন পেরিয়ে শাকিল এখন বাঁহাতি পেসার, রাজশাহীর কামারুজ্জামান স্টেডিয়ামে নিজ দল মধ্যাঞ্চলের হয়ে মাঠে আছেন। যেখানে মঙ্গলবার (২৪ এপ্রিল) থেকে বাংলাদেশ ক্রিকেট লিগের পঞ্চম রাউন্ডে (বিসিএল) পূর্বাঞ্চলের বিপক্ষে মাঠে নেমেছে মধ্যাঞ্চল। অভিষেকে শাকিলকে ক্যাপ পরিয়ে দেয়া হচ্ছে-ছবি: সংগৃহীতএর আগে গত সপ্তাহে দক্ষিণাঞ্চলের বিপক্ষে অভিষেক হয় শাকিলের। প্রথম ইনিংসে দুটি উইকেটও পেয়েছিলেন। যার একটি আবার তারকা ব্যাটসম্যান ইমরুল কায়েসের। এটা আসলে স্বপ্ন পূরণই বলা চলে, যেখানে সে ম্যাচে মধ্যাঞ্চলে তার দলনেতা বাংলাদেশ জাতীয় দলের অন্যতম সদস্য মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ তাকে আবু হায়দার রনির সঙ্গে প্রথম স্পেলে বোলিং শেয়ার করতে বলেন।

শাকিল বলেন, ‘এটা আমার অন্যরকম একটি জীবন, এর আগে আমি মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ ভাইকে শুধু টিভিতেই দেখেছি। এখন তিনি আমার সঙ্গে কথা বলছেন, তিনি আমার অধিনায়ক। এটা আমার জন্য অসাধারণ একটি ব্যাপার। ’

২৮ বছর বয়সী শাকিল ইতোমধ্যে বাংলাদেশ ক্রিকেটের বেশ কয়েকজনের নজর কেড়েছেন। এ বছরের শুরুতে ফতুল্লাহ ক্রিকেট স্টেডিয়ামে নেটে বল করার সময় কোচ মিজানুর রহমান তাকে দেখেন। পরে নামকরা এই কোচের অধীনেই ঢাকা প্রিমিয়ার লিগে প্রাইম দোলেশ্বরের হয়ে পাঁচটি ম্যাচ খেলেন শাকিল। পরবর্তী সময়ে এই কোচের পরামর্শেই মধ্যাঞ্চলে সুযোগ পান তিনি।

এর আগে অবশ্য অনেক চড়াই-উতরাই পেরিয়েই শাকিলকে এই জায়গায় আসতে হয়েছিল। টানা চার বছর দুবাইয়ের মরুভূমিতে কঠোর শ্রম দিতে হয়েছিল তাকে।

এ প্রসঙ্গে তিনি আরও বলেন, ‘আমাকে সেখানে ওয়েল্ডিংয়ের কাজ করতে হয়েছিল। কিন্তু একেবারে মরুভূমিতে স্টিলের কাজ করাটা ছিল খুবই কঠিন। আমি সব সময় আল্লাহ’র কাছে বলতাম, আমি যেন এখান থেকে মুক্তি পাই। এটা ছিল খুবই যন্ত্রণাদায়ক। ’

‘২০০৬ সালে যখন আমার সব বন্ধুরা এসএসসি পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করে, তখন আমি বিদেশে চলে যাই। তখন আমি আসলে ভালো-খারাপ বঝুতাম না। কিন্তু আমার পরিবারের খারাপ অবস্থার জন্য আমাকে যেতে হয়েছিল। ’-যোগ করেন শাকিল।

ঢাকা থেকে ৪০ কিলোমিটার দূরে মুন্সিগঞ্জে শৈশব কেটেছে শাকিলের। ছোট থাকতেই টেপ-টেনিস বলে ক্রিকেট খেলতেন তিনি। তবে মধ্যপ্রাচ্যে চলে যাবার পর ক্রিকেটার হওয়ার স্বপ্নকে ভুলে যান।

তবে চার বছর পর ভিসার মেয়াদ শেষ হয়ে গেলে কোম্পানি তাকে দেশে পাঠিয়ে দেয়। আর দেশে ফিরেই নিজেকে নতুনভাবে আবারও পরিচয় করিয়ে স্বপ্নকে বাস্তব করেন।

বাংলাদেশ সময়: ১৩৫৮ ঘণ্টা, ২৪ এপ্রিল, ২০১৮
এমএমএস/জেএম

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।