ঢাকা, শুক্রবার, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫

ক্রিকেট

সাকিবকে দেখেও শেখেন রাজা

মহিবুর রহমান, স্পেশাল করেসপনডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৩১২ ঘণ্টা, জানুয়ারি ২১, ২০১৮
সাকিবকে দেখেও শেখেন রাজা ছবি: বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম (ফাইল ফটো)

এই মুহূর্তে জিম্বাবুয়ের ক্রিকেটে সিকান্দার রাজা এক অনন্য নাম। এই শতকের শুরুতে (২০০৩) দেশটিতে শ্বেতাঙ্গ বিরোধী সেন্টিমেন্ট আন্দোলনে রূপ নিলে অ্যালিস্টার ক্যাম্পবেল, ক্রেগ উইশার্ট, ফ্লাওয়ার ভাইদের (অ্যান্ডি ফ্লাওয়ার, গ্র্যান্ট ফ্লাওয়ার) মতো ক্রিকেটারদের হারায় এক সময়ের দাপুটে জিম্বাবুয়ে।

ফলে দেশটির ক্রিকেটে এক অচলাবস্থার সৃষ্টি হয়। তবে সেই দুঃসময় কাটিয়ে ওঠে স্থিতিশীল হয়েছে দেশটির ক্রিকেটও।

দেশতো বটেই দেশের বাইরেও প্রায়ই জয় পাচ্ছে রোডেশিয়ানরা। তাদের সেই জয়ের অন্যতম এক কারিগর সিকান্দার রাজা।

পাকিস্তান বংশোদ্ভূত ৩১ বছর বয়সী এই সুদর্শন অলরাউন্ডার তার ব্যাটিং ও বোলিং নৈপুণ্যে দেশেতো বটেই মুগ্ধতা ছড়িয়েছেন দেশের বাইরেও। টেস্ট ক্রিকেটে ২০১৩ সালে অভিষেক হওয়ার পর এই পর্যন্ত খেলেছেন মাত্র ১০টি ম্যাচ। এর মধ্যে একটি সেঞ্চুরিও আছে। গড়ও ভালো (৩৮.১০)। একই বছর ওয়ানডেতে অভিষিক্ত এই ব্যাটিং অলরাউন্ডার এরই মধ্যে ম্যাচ খেলেছেন ৭২টি। সেঞ্চুরি হাঁকিয়েছেন ৩টি। গড় ৩৪.৬৮।

ব্যাটে রান পাচ্ছেন। বল হাতে পাচ্ছেন উইকেটও। ব্যাটে বলে তার এমন ধারাবাহিক পারফরম্যান্সেও অনেকেই তাকে ‘জিম্বাবুয়ের সাকিব আল হাসান’ বলে মনে করেন।

কিন্তু বিনয়ী রাজা তা মোটেও মনে করেন না। বরং সাকিবকে দেখে তিনি ক্রিকেটের অনেক কিছুই শেখেন। ত্রিদেশীয় সিরিজ খেলতে এসে বাংলানিউজকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে সেকথাই বললেন। বলেছেন আরও অনেক কিছুই। পাঠকদের জন্য তা তুলে ধরা হলো।

নিঃসন্দেহে আপনি বাংলাদেশে আসতে পছন্দ করেন। এদেশে আপনার অসংখ্য বন্ধু আছে। এখানে আসতে পারাটা কেমন?

সিকান্দার: আমি খুবই স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করি। বিসিবি আমাদের জন্য সুব্যবস্তা রাখে এবং ক্রিকেটীয় বিবেচনায় এদেশের সুযোগ সুবিধাগুলো অসাধারণ। তাছাড়া ক্রিকেট ও ক্রিকেটের বাইরে এদেশে আমার অসংখ্য বন্ধু আছে। এটা সবসময়ই দারুণ।

ছবি: বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম (ফাইল ফটো)এই মুহূর্তে আপনি ব্যাটে বলে ধারাবাহিক পারফর্ম্ করছেন। কখনও কখনও এমন শোনা যায় যে আপনিই হচ্ছেন জিম্বাবুয়ের সাকিব আল হাসান। বিষয়টিকে কীভাবে দেখেন?

সিকান্দার: না, না। দেখেন, সাকিবের প্রতি আমার অগাধ সম্মান। সে বাংলাদেশকে অনেক দুর্লভ এক একটি অর্জন এনে দিয়েছে। শুধু আমিই না পুরো ক্রিকেট দুনিয়া একথা নির্দ্বিধায় স্বীকার করে যে সে বিশ্বসেরা অলরাউন্ডার। আমি কখনওই এটা পছন্দ করবো না কেউ আমাকে জিম্বাবুয়ের সাকিব নামে সম্বোধন করুক। সাকিব একজন গ্রেট পারফরমার। সে এমনই একজন ক্রিকেটার যার কাছ থেকে সবসময়ই শেখার আছে।

ইদানিং আমরা দেখছি আপনি মিডল অর্ডারে ব্যাটিং করলেও সমসময়ই আপনার ভেতরে একটি আগ্রাসী মনোভাব দৃশ্যমান। নিজেকে এভাবে গড়ে তুলতে আপনি কী কী কাজ করেছেন?

সিকান্দার: আমার মনে হয় অভিজ্ঞতা একটা বড় ব্যাপার। তার ওপর সম্প্রতি বাংলাদেশ সফরগুলোও এই ক্ষেত্রে আমাকে বেশ সহায়তা করেছে। টেকনিক্যাল বিষয়ের পাশাপাশি মানসিক একটি বিষয় কিন্তু এমন ব্যাটিংয়ে সাহায্য করে। তার চাইতেও বড় বিষয় হলো ম্যাচ সিচুয়েশন। আমার মনে হয় সিচুয়েশন বুঝে ব্যাটিং করি বলেই এমন হয়।

এই মুহূর্তে জিম্বাবুয়ে দলে টাটেন্ডা টাইবু প্রধান নির্বাচক, হিথ স্ট্রিক হেড কোচ। তাছাড়া অভিজ্ঞ ব্রেন্ডন টেইলর এবং জার্ভিসও দলে ফিরেছে। আপনার কি মনে হয় এখন জিম্বাবুয়ে সঠিক অবস্থায় আছে?

সিকান্দার: অবশ্যই তাই। হিথ ও টাইবু জুটি আমাদের বিশ্বমানের কিছুই শেখাবে। এছাড়া আমাদের চেয়ারম্যান তাভেঙ্গা মুকুলানি এবং ব্যবস্থাপনা পরিচালক ফ্যাজেল জুটিও জিম্বাবুয়েকে বর্তমান অবস্থায় আনতে ভূমিকা রেখেছে। এটা সবাই জানে কিছুদিন আগেও আমরা কঠিন সময় পার করছিলাম। কিন্তু তারা আমাদের একটি সুসংগঠিত অবস্থানে এনে দিয়েছেন। এতে করে আমরা নির্ভার হয়ে খেলতে পারছি এবং আমাদের কাজে ফোকাস করতে পারছি।

আপনার দলের প্রতিটি সদস্যই দিন দিন উন্নতি করছেন। একজন ক্রিকেটার হিসেবে সামনে আপনি নিজেকে কোথায় দেখতে চান?

সিকান্দার: সবারই একটি লক্ষ্য আছে। তেমনি আমারও আছে। এ মুহূর্তে আমার জন্য সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হলো একটি সফল দলের সদস্য হওয়া। যেভাবে আমরা জিতে চলেছি তাতে আরও ধারাবাহিক হতে চাই। কারণ একটি বিষয়কে আমি সবসময়ই বড় করে দেখি সেটি হলো, আমি যখন ক্রিকেট থেকে চলে যাবো, তখন আমার জুনিয়ররা যেন একটি গোছালো জিম্বাবুয়েকে পায়, যেখানে জয়ের চর্চাটি থাকবে।

বিশ্বকাপ বাছাই আপনাদের জন্য চ্যালেঞ্জ হতে পারে। যদিও আপনারা আপনাদের ঘরেই খেলবেন। কিন্তু তারপরেও সেখানে ওয়েস্টইন্ডিজ ও আফগানিস্তান থাকবে। আপনি কতটুকু আশাবাদী?

সিকান্দার: সত্যি কথা বলতে আমি এখনই অতদূর ভাবতে চাচ্ছি না। আমরা যখন বাংলাদেশে আসি তখন একটি বার্তা সবাইকে দিতে চেষ্টা করেছি যে, আমরা বিশ্বকাপ বাছাইয়ের জন্য পুরোপুরি প্রস্তুত। আমরা যদি এই সিরিজে সত্যিই ভালো করি তাহলে আমার মনে হয় ফলাফল নিয়ে আমাদের ভাবতে হবে না। আমাদের দল এবং কম্বিনেশন যদি ঠিক থাকে তাহলে আমি নিশ্চিত ফলাফল এমনিতেই আসবে।

ক্যারিয়ারে এমন কোন মেন্টর বা কোচ কী আপনি পেয়েছেন যিনি আপনার উন্নতিতে ভূমিকা রেখেছেন?

সিকান্দার: আমি সত্যিই ভাগ্যবান যে অনেক বড় বড় প্লেয়ারদের সংমিশ্রণে আসতে পেরেছি। আমার মনে আছে যখন আমি খেলা শুরু করি তখন টাটেন্ডা টাইবু তার ক্যারিয়ারের শেষের দিকে। বলতে দ্বিধা নেই তিনি আমার আজকের এই অবস্থানে আসতে বড় ভূমিকা পালন করেছেন। কিন্তু আমার সত্যিকারের রোল মডেল আমার দাদা। আমার বাবার ভূমিকাও কম নয়। তবে একজন মানুষের কথা আমি কখনই ভুলবো না। যে মানুষটি আমাকে ব্যাটিং দীক্ষা দিয়েছেন, তিনি গ্র্যান্ট ফ্লাওয়ার। তিনি এমনই একজন মানুষ যিনি সবসময়ই আমার পূজ্য। এমনও দিন গিয়েছে দলের অনুশীলন নেই, তাকে বলেছি আমি ব্যাটিং অনুশীলন করবো কিন্তু তিনি আমাকে না বলেননি।

ছবি: শোয়েব মিথুন - বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কমবাংলাদেশের ক্রিকেটকে আপনি কীভাবে দেখেন?

সিকান্দার: দেখেন, ইনজুরি থেকে ফিরে মাশরাফি দলের দায়িত্ব নেয়ার পর গত আড়াই বছরে আমি যে বাংলাদেশকে দেখছি সেটা দুর্দান্ত। ঘরে এবং ঘরের বাইরে বৈশ্বিক টুর্নামেন্ট বলেন, সিরিজ বলেন যে কোনো দলকেই তারা এখন হারাতে সক্ষম। বিশেষ করে ঘরের মাঠে তারা এখন শক্তিশালী একটি দল।

বাংলাদেশের কোন ক্রিকেটারকে আপনি সবচেয়ে বেশি পছন্দ করেন?

সিকান্দার: বলা মুশকিল। তবে আমি যদি একজনের নাম বলতে চাই তিনি অবশ্যই মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ। সে আমার বন্ধুর মতোই। ২০১৩ সালে বাংলাদেশের বিপক্ষে আমার অভিষেকের আগে থেকেই ওর সাথে আমার বন্ধুত্ব।

ক্রিকেট থেকে অবসরের পর কোন পেশায় নিজেকে দেখতে চান?

সিকান্দার: আসলে ওভাবে আমি এখনও ভাবিনি। তবে এটা ঠিক ক্রিকেট ছেড়ে দিয়ে আমি প্রথমেই আমার পরিবারকে সময় দেব। এরপর ভাববো কি করবো।

বারবার বাংলাদেশে আসতে চান?

সিকান্দার: যদি কেউ বলে কেন নয়?

বাংলাদেশ সময়: ১৯১০ ঘণ্টা, ২১ জানুয়ারি, ২০১৮
এইচএল/এমআরএম

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।