ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১২ বৈশাখ ১৪৩১, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫

খেলা

কক্সবাজারে ক্রিকেট স্টেডিয়াম হবে তো?

স্পোর্টস করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৮২৫ ঘণ্টা, অক্টোবর ২৯, ২০১০
কক্সবাজারে ক্রিকেট স্টেডিয়াম হবে তো?

কক্সবাজার: পর্যটন কেন্দ্র হিসেবে দরিয়ানগর সমুদ্র দর্শনার্থীদের জন্য বেশ লোভনীয়। উঁচু পাহাড়ে দাঁড়িয়ে দূর সমুদ্র দেখা যায়।

অথচ বিকাশের আগেই অস্তিত্ব হারানোর ভয়ে পাহাড়ের বুক কেঁপে উঠছে। দরিয়ানগর ক্ষতবিক্ষত করে স্টেডিয়াম তৈরির পরিকল্পনা হাতে নিয়েছে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড।

কক্সবাজার শহর থেকে পাঁচ কিলোমিটার দক্ষিণের দরিয়ানগরে শিলা মাটির পাহাড়ে প্রায় ১২ একর খাস জমি পাওয়া গেছে। সেখানে একটি আন্তর্জাতিক ক্রিকেট ভেন্যু করা গেলে মন্দ হয় না। দেশ বিদেশের মানুষের কাছে বিশ্বের দীর্ঘতম সমুদ্র সৈকতের পরিচিতি অনেকগুণ বেড়ে যাবে বৈকি। খেলা দেখার পাশাপাশি সমুদ্র দর্শনের সুযোগ পাবেন দর্শনার্থীরা। হোটেল বাণিজ্য বেড়ে যাবে। ওয়েস্ট ইন্ডিজে যেমন হয়। বিসিবি সহ-সভাপতি আহমেদ সাজ্জাদুল আলম ববি কক্সবাজারে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়াম তৈরির পক্ষে এতগুলো যুক্তি দেখিয়েছেন।

কিন্তু পাহাড়ের সবুজ গাছগুলোর কী হবে? এ নিয়ে ভাবার সময় নেই বিসিবির। জেলা প্রশাসনও চায় দরিয়ানগরেই তৈরি করা হোক ক্রিকেট স্টেডিয়াম। জেলা প্রশাসক আবুল কালাম আজাদ সেভাবেই ভাবছেন। শুক্রবার জেলা ক্রীড়া সংস্থার কর্মকর্তাদের কাছ থেকেও পাওয়া গেলো একই তথ্য। যদিও বিসিবি সহ-সভাপতি ববি জানিয়েছেন এখনও চুড়ান্ত সিদ্ধান্ত হয়নি। পর্যবেক্ষণের পরে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।

কক্সবাজারে আন্তর্জাতিক স্টেডিয়াম নির্মাণের জন্য তিনটি জায়গা (স্পট) দেখেছে বিসিবি। প্রথমটি বিমানবন্দরের পাশে। অন্যটি শহরের গা ঘেষে পরিত্যক্ত গলফ কোর্সে। বিমানবন্দরের রানওয়ের দক্ষিণ পাশে জেলে পাড়ায় ৫০ একর খাস জমি পাওয়া গেছে। পুরোটাই সমতল। ইচ্ছে করলেই দুই থেকে তিন বছরের মধ্যে একটি আন্তর্জাতিক মানের ক্রিকেট কমপ্লেক্স গড়ে তোলা সম্ভব। যদিও সেখানে বাঁধা হয়ে দাঁড়াতে পারে বিয়ামের স্কুল এবং উঁচু গ্যালারি নির্মাণ।

বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ বিসিবি সহ-সভাপতিকে জানিয়েছে ১০ থেকে ১২ ফিটের বেশি গ্যালারি উঁচু করা যাবে না। এতে বিমান চলাচলে বাঁধাগ্রস্ত হওয়ার সম্ভাবনা দেখা দিতে পারে। এনিয়ে ববির মতামত অন্যরকম,“এখানে উঁচু গাছ আছে। আমার মনে হয় ১৮ ফুট পর্যন্ত ফ্লাডলাইট পোস্ট তোলা যাবে। বিশেষজ্ঞ দলদিয়ে বিষয়টি যাচাই করে দেখা হবে। ”

কিন্তু বিয়াম স্কুল অপসারণের বিষয়টি সহজ হবে না। জেলার সরকারি কর্মকর্তাদের পছন্দের স্কুল বিয়াম। সেখানে কর্মকর্তাদের স্ত্রীরাই সাধারণত শিক্ষকতা করেন। অতএব জেলা কর্মকর্তাদের পরিবারের ভেতর থেকেই আপত্তি আসতে পারে।

দ্বিতীয়ত, গলফ কোর্স পরিত্যক্ত হলেও প্রতিবছর সেখানে মেলা বসে। পিকনিক স্পট হিসেবে কাজে লাগায় জেলা প্রশাসন। এই জায়গাটি নিয়েও সামান্য আপত্তি আছে বলেও নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক জেলার একজন কর্মকর্তা বাংলানিউজকে জানিয়েছেন। তবে সরকার অনুমোদন দিলে গলফ কোর্সে ক্রিকেট কমপ্লেক্স গড়ে তোলার জন্য ৬০ একর খাস জমি পাওয়া যাবে।

এদিকে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে বিসিবিকে খাস জমি দেওয়ার বিষয়ে বলা হয়েছে। ববি জানিয়েছেন তিন মাস আগেই ভূমি মন্ত্রণালয়কে চিঠি দিয়েছে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়। দেড় মাস আগে চার সদস্যের একটি কমিটি গঠনের নির্দেশনাও দেওয়া হয়েছে। কমিটিতে থাকবেন ভূমি মন্ত্রণালয়, জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ, যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয় এবং বিসিবি থেকে একজন করে প্রতিনিধি। ববি হলেন বিসিবির প্রতিনিধি। বাকি তিনজনের নাম এখনো জানা যায়নি। সে কারণে বিসিবি প্রতিনিধি ববি একাই কাজ করছেন। এনিয়ে তৃতীয়বারের মতো কক্সবাজারে জমি দেখেছেন তিনি।

বিসিবি সহ-সভাপতি আশা করছেন আগামী ডিসেম্বরের মধ্যে স্টেডিয়াম নির্মাণের জন্য ভূমি পরীক্ষা করা হবে। বিশেষজ্ঞরা যে স্থানে স্টেডিয়াম নির্মাণের পরামর্শ দিবেন সেখানেই তৈরি হবে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট কমপ্লেক্স।

সেই ২০০০ সাল থেকে কক্সবাজারে একটি স্টেডিয়াম নির্মাণের চেষ্টা করে আসছে বিসিবি। এখন পর্যন্ত সফল হতে পারেনি। ভবিষ্যতের কথাও বলা মুশকিল। জমি বুঝে না পাওয়া পর্যন্ত হয়তো বিসিবির পরিকল্পনা ঝুলে থাকবে আরো কয়েক বছর।
ববির মতে,“আমরা অনেক আগেই কক্সবাজারে স্টেডিয়াম নির্মাণের কাজ শুরু করে দিতে পারতাম। কিন্ত তৎকালীন সরকার একটি বিশেষ জেলায় স্টেডিয়াম নির্মাণ করায় তা সম্ভব হয়নি। ” আসলে বগুড়া শহীদ চান্দু স্টেডিয়ামের কথা বোঝাতে চেয়েছেন ববি।

দশ বছর হয়ে গেছে কক্সবাজারে স্টেডিয়াম নির্মাণের জন্য এখনও ভূমি অধিগ্রহণ করতে পারেনি বিসিবি। ২০১৪ সালে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের আগে সম্পূর্ণ নতুন একটি স্টেডিয়াম নির্মাণ প্রায় অসম্ভব। কারণ স্টেডিয়াম নির্মাণের বিশাল খরচ নিজস্ব তহবিল থেকে ব্যয় করবে ক্রিকেট বোর্ড। স্টেডিয়ামটি একান্তই নিজের করে পাওয়ার জন্যই এই উদ্যোগ হাতে নিয়েছে বিসিবি।   

অবশ্য সব বাঁধা মোকাবেলা করে কক্সবাজারে একটি স্টেডিয়াম নির্মাণ করা গেলে দারুণ কাজ হবে। খেলা চলাকালে টিভি দর্শকরা মাঝে মাঝে দেখতে পাবেন বঙ্গোপসার দিয়ে ভেসে চলা জাহাজ বা স্পিড বোর্ট, জেলে নৌকা, সমুদ্রের ঢেউ। যারা মাঠে বসে খেলা দেখবেন তাদের আনন্দ একটু বেশিই থাকবে। জাতীয় স্বার্থে বিসিবি নিশ্চিয় এবার সফল হতে চেষ্টা করবে।

বাংলাদেশ সময়: ১৮০৫ ঘন্টা, অক্টোবর ২৯, ২০১০

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।