ঢাকা, শুক্রবার, ৬ বৈশাখ ১৪৩১, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫

প্রবাসে বাংলাদেশ

খুনিদের গ্রেফতার দাবিতে বার্লিনে প্রতিবাদ সভা

আরাফাতুল ইসলাম, বার্লিন থেকে | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২১১৮ ঘণ্টা, মার্চ ১৮, ২০১২
খুনিদের গ্রেফতার দাবিতে বার্লিনে প্রতিবাদ সভা

সাংবাদিক দম্পতি সাগর সরওয়ার এবং মেহেরুন রুনি হত্যাকাণ্ডে জড়িতদের এখনো গ্রেফতার না করায় ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন বার্লিনে বসবাসরত বাঙালিরা৷ জার্মানির রাজধানী বার্লিনে শনিবার আয়োজিত এক প্রতিবাদ সভায় বক্তারা খুনিদের অবিলম্বে গ্রেফতারের দাবি জানান৷

বাংলাদেশে সাংবাদিকদের মহাসমাবেশের সঙ্গে সংহতি প্রকাশ করে বার্লিনে এই প্রতিবাদ সভার আয়োজন করা হয়৷ সভায় প্রবাসী বাঙালিরা সাগর-রুনির প্রকৃত খুনিদের দ্রুত গ্রেফতার করার দাবি জানান৷ একইসঙ্গে নৃশংস ওই হত্যাকাণ্ডের বিচারের নামে প্রহসন বন্ধের আহ্বান জানান৷

বাংলাদেশের সাবেক ছাত্রনেতা খালেদ নোমান নমি বলেন, ‘খুনিদের বিচারের দাবিতে বাংলাদেশ সাংবাদিকরা যে প্রতিবাদ কর্মসূচি পালন করছেন, তার প্রতি সমর্থন জানাচ্ছি৷ বাংলাদেশের সাংবাদিকরা একা নন, আমরা তাদের সঙ্গে আছি৷ আমরাও খুনিদের বিচারের দাবিতে সোচ্চার। ’

জার্মানির হাইলব্রন বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী অধ্যাপক হাসিব মাহমুদ বলেন, ‘আরেকটি জজ মিয়া খুঁজছে বাংলাদেশ- শিরোনামে লেখা প্রকাশের প্রেক্ষাপটে উচ্চআদালত কর্তৃক সাংবাদিকদের সতর্ক করে দেয়া হয়েছে৷ এটা সাংবাদিকদের স্বাধীন মতামত প্রকাশে বিঘ্ন সৃষ্টি করবে ও ভবিষ্যতে আরেক জজমিয়ার চেহারা উন্মোচনে সাংবাদিকদের তৎপরতায় বাধা সৃষ্টি করবে৷

নির্বাসিত লেখক এবং সাংবাদিক দাউদ হায়দার বলেন, ‘এই হত্যাকাণ্ডের পর আমাদের প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, কারো বেডরুম পাহারা দেওয়া সম্ভব নয়৷ কাউকে বেডরুম পাহারা দিতে বলা হচ্ছে না৷ সরকারের দায়িত্ব হচ্ছে জনগণকে নিরাপত্তা দেওয়া৷ সেই নিরাপত্তা দিতে না পারলে কোনো সরকারই যোগ্য সরকার নয়৷’

জার্মান প্রবাসী বাংলাদেশি গবেষক ড. সাইফুল ইসলাম বলেন, ‘সাগর-রুনিকে হত্যার মাধ্যমে কার্যত সাংবাদিকদের স্বাধীনতাকে হত্যা করা হয়েছে৷ এই নির্মম হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িতদের গ্রেফতারের মাধ্যমে শুধু অপরাধীদের বিচারই নয় বরং সাংবাদিকদের স্বাধীনতাও ফিরিয়ে দেওয়ার জন্য বাংলাদেশ সরকারের কাছে আমার আকুল আবেদন জানাচ্ছি।



ফ্রাঙ্কফুর্ট থেকে প্রতিবাদ সভায় অংশ নেওয়া সোশ্যাল অ্যাক্টিভিস্ট অপু আলম বলেন, ‘এই খুনের দায় সরকারের, এটা আমরা বলছি না৷ কিন্তু খুনি কে বা কারা তা খুঁজে বের করার এবং এই হত্যাকাণ্ডের বিচারের ব্যবস্থা করা অবশ্যই সরকারের দায়িত্ব৷ আমরা আশা করি, সরকার সেই দায়িত্ব খুব দ্রুত পালন করবে। ’

সুমনা পারভীন বলেন, ‘সাংবাদিক দম্পতি সাগর-রুনি হত্যাকাণ্ডের দ্রুত বিচার হওয়া উচিত৷ এটা একটি মানবিক ব্যাপার। ’

জার্মান প্রবাসী লেখক, প্রকাশক শাহ আলম শান্তি বলেন, ‘স্বাধীনতার পর থেকে এখন পর্যন্ত ৩০০’র বেশি সাংবাদিক নিহত হয়েছেন৷ এরমধ্যে ৯০ শতাংশের বিচার হয়নি৷ এই পরিস্থিতি চলতে পারে না৷ খুনিদের বিচারে এই ব্যর্থতা এক দুর্বল রাষ্ট্রের পরিচয়। ’

প্রবাসী মানবাধিকার কর্মী আব্দুল্লাহ আল-মামুন মিলন বলেন, ‘সাংবাদিক দম্পতি হত্যাকাণ্ডের পর ৩৮ দিন পেরিয়ে গেছে অথচ খুনি গ্রেফতারতো হয়ইনি, এখন পর্যন্ত নাকি খুনি সনাক্তও করা যায়নি৷ এই ঘটনায় আমরা অত্যন্ত ক্ষুব্ধ৷ আমার মনে হয়, এই হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িতদের গ্রেফতারে সরকারের আরো সচেতন হওয়া উচিত। ’  

প্রসঙ্গত, সাংবাদিক সাগর সরওয়ার চাকরি সূত্রে তিন বছর জার্মানিতে ছিলেন৷ শুরুতে সাগর একা জার্মানিতে অবস্থান করলেও একসময় দেশের চাকরিক্ষেত্র থেকে ছুটি নিয়ে সাংবাদিক মেহেরুন রুনি একমাত্র ছেলে মেঘসহ চলে আসেন জার্মানিতে৷ এই সাংবাদিক দম্পতি গত বছরের মে মাসে দেশে ফিরে যান৷

গত ১১ ফেব্রুয়ারি ভোররাতে সাংবাদিক দম্পতি সাগর সরওয়ার ও মেহেরুন রুনি ঢাকার রাজাবাজারে তাদের ভাড়া বাসায় খুন হন। এই হত্যাকাণ্ডের প্রতিবাদে সোচ্চার হয়ে ওঠে  বাংলাদেশসহ জার্মানিতে বসবাসরত প্রবাসী বাংলাদেশি এবং বিশ্বের বিভিন্ন দেশের নাগরিকরা৷ খুনিদের দ্রুত গ্রেফতারের দাবিতে ইতোমধ্যে জার্মানির বন, ডুইসডর্ফ এবং ফ্রাঙ্কফুর্ট শহরে প্রতিবাদ কর্মসূচি পালন করা হয়েছে৷

প্রকৃত খুনিরা গ্রেফতার না হওয়া পর্যন্ত ইউরোপের বিভিন্ন শহরে প্রতিবাদ কর্মসূচি চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন জার্মান প্রবাসী বাংলাদেশিরা।

বাংলাদেশ সময় : ২১০৮ ঘণ্টা, ১৮ মার্চ, ২০১২

সম্পাদনা: আহ্সান কবীর, আউটপুট এডিটর

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।