ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১৪ চৈত্র ১৪৩০, ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৭ রমজান ১৪৪৫

প্রবাসে বাংলাদেশ

ফ্রান্সে ‘অ্যাসাইলাম’ বন্ধ: পুনঃ বিবেচনার দাবি বাংলাদেশিদের মানববন্ধন

প্যারিস-ফ্রান্স থেকে নুর ইসলাম হক | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২৩০২ ঘণ্টা, জানুয়ারি ২২, ২০১২
ফ্রান্সে ‘অ্যাসাইলাম’ বন্ধ: পুনঃ বিবেচনার দাবি বাংলাদেশিদের মানববন্ধন

ফ্রান্সে আশ্রয় (অ্যাসাইলাম) নেওয়ার ক্ষেত্রে বাংলাদেশ আর ঝুঁকিপূর্ণ কোনো দেশ হিসেবে গণ্য হবে না বলে ফ্রান্স সরকার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এই সিদ্ধান্তের পুনর্বিবেচনা ও বাংলাদেশিদের ফ্রান্স এ রাজনৈতিক আশ্রয়দানের দাবিতে গত ৫ জানুয়ারি ২০১২,  ফ্রান্সের রাজধানী প্যারিসে ফ্রান্স প্রবাসী বাংলাদেশিরা এক মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করেন।



মানববন্ধনে অংশ গ্রহণকারীরা বাংলাদেশে নির্যাতন-নিপীড়ন, ক্রসফায়ার, গুপ্ত হত্যা, সাংবাদিক নির্যাতনের ছবি সংবলিত ফেস্টুন, প্ল্যাকার্ড, ব্যানার প্রদর্শন করেন। বক্তারা বাংলাদেশের আইন-শৃংখলা পরিস্থিতির চরম অবনতি ও মানবাধিকার লঙ্ঘনের সমালোচনা করেন। একইসঙ্গে বক্তারা দেশীয় ও আন্তর্জাতিক মানবধিকার সংস্থার বরাতে বিভিন্ন তথ্য উপস্থঅপন করে বাংলাদেশকে  (সেফ) নিরাপদ  রাষ্ট্র তালিকা থেকে বাদ দিয়ে বাংলাদেশিদেরকে ফ্রান্স এ ক্যাটাগরিতে আশ্রয়দানের জন্য জোর দাবি জানান।

এখানে উল্লখো যে,  গত ৯ ডিসেম্বর  ফ্রান্স সরকার  বাংলাদেশসহ  চারটি দেশকে  আপাতত ‘নিরাপদ’ (সেফ) রাষ্ট্র হিসেবে ঘোষণা করে বিষয়টি গেজেট আকারে প্রকাশ করে। এর ফলে বাংলাদেশিদের জন্য রাজনৈতিক কারণসহ নানা সমস্যায় পড়ে সে দেশে আশ্রয় লাভের দরজা প্রায় বন্ধ হয়ে গেছে বলে মনে করা হচ্ছে।
 
এ ঘোষণার পর থেকে বাংলাদেশি আশ্রয়প্রাথীদের মধ্যে নেমে এসেছে অমানিশার অন্ধকার আর চরম হতাশা

ফরাসী  মিডিয়া  সূত্রে  জানা যায়, গত ২ ডিসেম্বর ফ্রান্সের শরণার্থী ও রাষ্ট্রহীন নাগরিক বিষয়ক দপ্তর (OFPRA ) থেকে এ আদেশ জারি করা হয়। এতে চারটি  দেশকে সেফ দেশ হিসাবে নতুন তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করা হয়। বাংলাদেশ ছাড়াও নিরাপদ ঘোষিত অন্য তিনটি দেশ হলো: আর্মেনিয়া, মালদোভা ও মন্টিনিগ্রো।

সরকারি সূত্রে জানা যায় যে, ২০০৬ সালের ১৬ মে ফ্রান্সে বাংলাদেশকে ঝুঁকিপূর্ণ দেশের তালিকায় স্থান দেওয়া হয়েছিল। এর আওতায় গত ৫ বছরে বাংলাদেশ থেকে প্রায় ৩০ হাজার মানুষ যে কোনো উপায়ে ফ্রান্সে প্রবেশের পর দেশটিতে বসবাসের সুযোগ চেয়ে আবেদন করে। প্রচলিত নিয়ম অনুযায়ী এসব আবেদনকে ‘অ্যাসাইলাম’ বলা হয়।

রাজনৈতিক কারণে জীবনের হুমকি, সামাজিক কারণে বসবাস করতে না পারা, পারিবারিক সহিংসতার শিকারসহ নিজদেশে বসবাসে জীবনের হুমকি রয়েছে, এমন নানা কারণ দেখিয়ে মূলত অ্যাসাইলামের আবেদন করা হয়। সব আবেদনের নিষ্পত্তি করে ফ্রান্স সরকারের শরণার্থী ও রাষ্ট্রহীন নাগরিক বিষয়ক দপ্তর ‘অফপরা’। এদের মধ্যে প্রায় ৫ হাজার বাংলাদেশিকে দেশটিতে বৈধভাবে বসবাসের সুযোগ দিয়ে রাজনৈতিক আশ্রয় দেওয়া হয়েছে বলেও জানা যায়। কারো কারো আবেদন ইতিমধ্যে প্রতাখ্যান হয়েছে আবার অনেকের অবেদন প্রসেসিং অবস্থায় রয়ছে।   এ অবস্তায়, বাংলাদেশকে নিরাপদ দেশ হিসাবে তালিকাভুক্ত করার ফলে অ্যসাইলাম প্রত্যাশী সবাই অনিশ্চয়তার মধ্যে দিন কাটছে।  

বাংলাদেশ দুতাবাস ফ্রান্স এর একজন জৈষ্ঠ কূটনীতিক জানান, বাংলাদেশ থেকে ফ্রান্সে যাওয়া অবৈধ অভিবাসীরা এখন থেকে রাজনৈতিক আশ্রয়ের ক্ষেত্রে আর গত কয়েক বছরের মতো প্রাধান্য ও সহানুভূতি পাবেন না। ইতিমধ্যে বাংলাদেশি আশ্রয় প্রার্থীদের আবেদনপত্র ১৫ কার্যদিবসের মধ্যেই ফয়সালা করা শুরু করেছে ফ্রান্স সরকার। এখানে উল্লেখ্য যে, নিরাপদ দেশ ঘোষণা হওয়ার আগে ১৪৫ কার্যদিবসের মধ্যে এসব আবেদন সুরাহা করার নিয়ম ছিল। সেইসঙ্গে ওই সময়ের মধ্যে ফ্রান্স সরকার আবেদনকারীদের বাসস্থানের ব্যবস্থা করাসহ খাওয়া-দাওয়া ও অন্যান্য খরচের জন্যও কিছু ভাতা দিতো। এখন আর এসব দেওয়া হবে না।

বাংলাদেশে ক্রম বর্ধমান রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা,  সহিংসতা ও বেকারত্বের অভিশাপ থাকে মূক্তির জন্য, উন্নত জীবন ও পরিবারের সচ্ছলতার জন্য সুদীর্ঘ পথ পাড়ি দিয়ে নান কৌশলে বাংলাদেশিরা ফ্রান্সে আসছেন। অনেকে সত্যি সত্যি রাজনীতিক প্রতিহিংসা, হামলা-মামলার শিকার হয়ে জীবন বাঁচানোর জন্য ফ্রান্সে এসেছেন এবং ফ্রান্স সরকারের কাছে রাজনৈতিক আশ্রয় পার্থনা করছেন। তারা অনেকেই ফ্রান্সের জীবনযাত্রা ও কালচারের সাথে একাকার হয়ে মিশে গেছেন। এখন ফ্রান্স তাদের আশ্রয় না দিলে কোথায় যাবেন তারা? তাদের কাছে এ প্রশ্ন এখন সবচেয়ে বড় হয়ে দেখা দিয়েছে।

বাংলাদেশকে নিরাপদ দেশ ঘোষণা সম্পর্কে ফ্রান্সে আশ্রয়প্রার্তী বাংলাদেশিদের এ বিষয়ে প্রতিক্রিয়া কী? জানতে চাইলে আশ্রয়প্রার্থী মুহিবুর রহমান বলেন, আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থাগুলো যখন বাংলাদেশের ক্রসফার্য়ার, গুপ্ত  হত্যা নিয়ে  গভীরভাবে উদ্বিগ্ন্ন ঠিক সেই সময়ে ফ্রান্স বাংলাদেশকে নিরাপদ রাষ্ট্র ঘোষণা করলো- আমরা এখন কোথায় যাব?’

সাবেক ছাত্রলীগ নেতা ইসতিয়াক মইনুল ইমরান বলেন- বাংলাদেশে  ক্ষমতার পালাবদল হয় কিন্তু জনগণের ভাগ্যের উন্নতি হয়না, যখন যে সরকাই ক্ষমতায় আসুক আইন-শৃঙ্খলার অবনতি হয়, আমি বিএনপি-জামায়াত জোট সরকার দ্বারা নির্যাতিত হয়ে জীবন বাঁচনের জন্য ফ্রান্স সরকারের  কাছে আশ্রয়  প্রার্থণা করছি। কিন্তু আমার আবেদন এখনো ফ্রান্স সরকার গ্রহণ করে নাই। আমি চরম হতাশার মধ্যে দিন কাটাচ্ছি।

ফ্রান্সে অপর আশ্রয় প্রার্থী গ্রাম সরকার ও মুছাপুর যুবদল এর সাবেক সভাপতি  নুর ইসলাম আজাদ মিয়া বলেন,  বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার পর থেকে আমার এলাকা মুছাপুর তথা সারা কোম্পানিগঞ্জে চুরি-ডাকাতি, খুন-জবাই করে হত্যা উদ্বেগজনক হারে বেড়ে যাবার কারণে- জীবনের নিরাপত্তার জন্য ফ্রান্স এ আশ্রয় প্রার্থনা করছি। ফ্রান্স সরকারের এই সিদ্ধান্তের পর আমি গভীরভাবে  চিন্তিত।

মানবাধিকার এর লীলাভূমি, বিশ্ব বিজয়ী বীর নেপোলিয়নের এর দেশ ফ্রান্সে নির্যাতিত-নিপীড়িত বাংলাদেশীরা আশ্রয় পাবে এই প্রত্যাশা সকল ফ্রান্স প্রবাসীর। কিন্তু তাদের সে প্রত্যাশা এখন হতাশার পায়ে হুমড়ি খেয়ে পড়েছে!

বাংলাদেশ সময়: ২২৫৪ ঘণ্টা, ২২ জানূয়অরি, ২০১২

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।