ঢাকা, মঙ্গলবার, ৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৯ মার্চ ২০২৪, ০৮ রমজান ১৪৪৫

মালয়েশিয়া

মালয়েশিয়ায় বাংলাদেশি হারুনের স্বপ্নের কৃষিখামার

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৬০৮ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১৪, ২০১৭
মালয়েশিয়ায় বাংলাদেশি হারুনের স্বপ্নের কৃষিখামার নিজের আলিশান খামারবাড়িতে বাংলাদেশি হারুন; ছবি: বাংলানিউজ

জহুরবারু (মালয়েশিয়া) থেকে ফিরে : মালয়েশিয়ার জহুরবারু স্টেটের বিউটিফুল গ্রাম মার্চিং। গোলাপরাঙা বাড়িঘর দেখিলেই চোখ জুড়িয়ে যায়। এরপরেই বাড়ির আঙিনায় নানা রঙের ফুল। ছোট ছোট পিচঢালা মসৃণ পথ বেয়ে শুধুই হাঁটতে ইচ্ছে করবে। সমতল ভূমি না হওয়ায় পথগুলো কখনও ওপরে উঠে গেছে, কখনও আবার নীচে। পথের ধারে সারি সারি পাম গাছ। জহুরবারুর মার্চিং গ্রাম পেরিয়েই বিশাল মাঠ চোখে পড়বে।

মার্চিং গ্রাম নামেই কেবল গ্রাম। উন্নয়নশীল দেশের শহরের তুলনায় কোনো অংশে কম নয়।

এসব গ্রামে বিএমডব্লিউ গাড়ি হাঁকিয়ে কৃষি খামার দেখতে আসেন মালিকেরা। সবজি ফার্মের পাশ ঘেষেই চলে গেছে ঝকঝকে মসৃণ সড়ক। এসব মাঠের চারপাশে যেন সবজির মিলনমেলা। কিছু স্থানে রয়েছে ড্রাগনফলের বিস্তীর্ণ মাঠ। আর মাঠে মাঠে বাঁধাকপি, ফুলকপি, টমেটো, বেগুন, মূলা, শিম, লাউ, মিষ্টিকুমড়া, করলা,কাঁকরোল, ঝিঙ্গা, চালকুমড়া, ঢেঁড়স, বরবটি, পুঁইশাক ও ধনেপাতার চোখ জুড়ানো মনভরানো শোভা। মাঠে ঢুকতেই  দেখা গেল কিছু কৃষিশ্রমিক কাজ করছেন এক চীনা মালিকের খামারে। এই শ্রমিকদের একটা বড় অংশ বাংলাদেশি। প্রতিদিন এই বাংলাদেশিকদের দেওয়া হয় ৬০ রিঙ্গিত করে। বাংলাদেশি মুদ্রায় প্রায় ১ হাজার ২০০ টাকা।

বাংলাদেশি কৃষিশ্রমিকদের একজন সাইফুল মল্লিক। বাংলানিউজকে তিনি বললেন, প্রতিদিন ৮ ঘণ্টা ডিউটি। চীনা বস প্রতিদিন ৬০ রিঙ্গিত দেয়। আমাদের এই বস অনেক ভালো মানুষ। বাংলাদেশিদের কাজে চীনা বস খুশি। ’

শুধু সাইফুল মল্লিক নন, এসব কৃষি খামারের শ্রমিকেরা বলতে গেলে সবাই বাংলাদেশি। এসব বাংলাদেশির হাতের ছোঁয়ায় আর শ্রমে-ঘামে মালয়েশিয়ায় সবজি খামারগুলোতে রীতিমতো বিপ্লব ঘটে গেছে।

হারুনের খামারে কর্মরত বাংলাদেশি কৃষি শ্রমিকেরা; ছবি:বাংলানিউজশুধু বাংলাদেশিরা শুধু যে কৃষি খামারের শ্রমিক হিসেবেই কাজ করেন, তা কিন্তু নয়।  অনেক বাংলাদেশি আবার নিজেদের চেষ্টা, উদ্যম আর শ্রম-মেধা খাটিয়ে মালিকও বনে গেছেন। এমনই একজন বাংলাদেশি হচ্ছেন হারুন অর রশিদ। একই সঙ্গে মানবাধিকারকর্মীও। প্রায় ২১০ একর জমির উপর চলতি বছর কৃষি খামার গড়ে তুলেছেন। সরকারের সঙ্গে ২৪ বছরের চুক্তি করে এই জমিতে সবজি চাষ করছেন তিনি। ইচ্ছা করলে মেয়াদ শেষে চুক্তির মেয়াদ বাড়াতে পারবেন তিনি।

মার্চিংয়ের সবজি খামারের চারিদিকে চীনা ও মালয়েশীয়দের খামার। একমাত্র হারুন অর রশিদ সবার খামারের মাঝখানে গড়ে তুলেছেন নিজের খামারটি। তার খামারের বয়স এক বছর। এই খামারে ঢেঁড়স, বাঁধাকপি, ধনেপাতা ও পুঁইশাক থেকে শুরু করে সবকিছুই ফলছে। এখন মালয়েশীয় খামার মালিকদের মধ্যমণি হয়ে উঠেছেন বাংলাদেশি হারুন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বৃত্তি নিয়ে ইন্টারন্যাশনাল ইসলামিক ইউনিভার্সিটি থেকে ইংলিশ ল্যাঙ্গুয়েজ অ্যান্ড লিটারেচারের ওপর উচ্চতর ডিগ্রি অর্জন নিয়েছেন। এরপর যুক্তরাষ্ট্রের কলাম্বিয়া ইউনিভার্সিটি থেকে মানবাধিকারের ওপরে বিশেষ ডিগ্রি নিয়েছেন।

২০ বছর ধরে মালয়েশিয়ায় সপরিবারে বসবাস করছেন হারুন তিনি। উচ্চ শিক্ষা লাভ করে হারুন এখন জহুরবারুতে কৃষি খামারের নামকরা মালিক। এখানে সবাই তাকে একনামে চেনে, মানে। মাত্র এক বছরেই জঙ্গল পাহাড় কেটে সবজির জন্য জমি প্রস্তুত করে কাজে নেমে পড়েন হারুন। প্রথমে ছোট আকারে কাজ শুরু করায় লোকজন অবাকই হয়েছিল। পরে খামারের আয়তন বাড়িয়েছেন একটু একটু করে। এখন ১০ থেকে ১২ জন বাংলাদেশি শ্রমিক কাজ করেন হারুনের খামারে। তবে সময় বিশেষে আরও অধিক সংখ্যক শ্রমিকের প্রয়োজন হয়। সেটা যখন কাজের চাপ বেড়ে যায় তখন।

হারুনের খামারে ঢেঁড়স ক্ষেতের দৃশ্য; ছবি: বাংলানিউজপ্রবাসে কৃষি ফার্ম প্রসঙ্গে হারুন বলেন, আমরা কৃষি প্রধান দেশে বড় হয়েছি। বাবাও কৃষিকাজ করতেন। কৃষিকাজের নানা স্মৃতি, অভিজ্ঞতা তাই জন্মলগ্ন থেকেই পাওয়া। নিরাপদ খাদ্য উৎপাদনের লক্ষেই মালয়েশিয়ায় কৃষি খামার গড়ে তুলেছি। আমরা বিদেশেও কৃষিকাজ করে, খামার গড়ে তুলে বাংলাদেশি পরিচয়ে বুক টান করে, মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে পারি। সেটাই প্রমাণ করেছি। আমাকে দেখে অনেক মালয়েশীয় কৃষি খামার গড়ে তোলার স্বপ্ন দেখছে। এছাড়া আমার চারপাশে যে মালয়েশীয়দের খামারগুলো রয়েছে, তাদের সবার মধ্যমণি বনে গেছি আমি। অনেকে আমার কাছ থেকে বিভিন্ন ধারণা ও পরামর্শ নিতে আসেন। এখানে বাংলাদেশি এবং মালয়েশীয় খামার মালিকদের মধ্যে একটা বন্ধুত্ব ও সোহার্দ্যের অমলিন সম্পর্ক গড়ে উঠেছে। ’

বাংলাদেশ সময়: ১১৪২ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১৪, ২০১৭
এমআইএস/জেএম

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।