ঢাকা, মঙ্গলবার, ৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৯ মার্চ ২০২৪, ০৮ রমজান ১৪৪৫

থাইল্যান্ড

থাইল্যান্ড থেকে জাহিদুর রহমান

সুরের মূর্ছনায় ঢাকে বোমার আতঙ্ক!

জাহিদুর রহমান, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৮৪০ ঘণ্টা, আগস্ট ২৬, ২০১৬
সুরের মূর্ছনায় ঢাকে বোমার আতঙ্ক! ছবি: বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

পাতায়া (থাইল্যান্ড) থেকে: চুনবুড়ি সড়কের ঠিক শেষ মাথায় নিয়ন লাইটে লেখা যুগল শব্দ- ‘ওয়াকিং স্ট্রিট’। আসলেই পায়ে হাঁটা পথ।

তবে সময়ের নিয়মে বাঁধা। সেটা বিকেল ৫টা থেকে ভোর পর্যন্তই।

অন্য সময়ে এ পথে চলে যানবাহন। বিকেল না হতেই সব পথ এসে মিশে যায় এ পথে। তখন প্রবেশমুখে ব্যারিকেড। পুলিশ আর সহকারী পর্যটন পুলিশ। বিশ্বের নানা দেশ থেকে আসা হাজারো মানুষের বিনোদন উন্মাদনায় গোটা সড়কটাই রূপ নেয় যেন বিনোদনের স্বর্গে।

‘দক্ষিণ পাতায়ায় স্বাগতম। ভালো ছেলেদের জন্যে স্বর্গ। মন্দদের জন্যে এই পাতায়া’- এমন একটি বাক্য কৌতুহল বাড়িয়ে দেয় শতগুনে।

ওয়াকিং স্ট্রিটে প্রবেশের সঙ্গে সঙ্গে নানা ভাষায় ভেসে আসা সুরের মূর্ছনার ধারাটাই যেন সার্বজনীন এখানে। অঙ্গে ঢেউ তোলা ছন্দ। সঙ্গে বিনোদনের স্বর্গে ডুবে যেতে তরুণীদের হাতছানি। আরো আছে নানা স্বাদের মজার সব খাবার আর বাহারি রঙের পানীয়। সব মিলিয়ে রাতভর দৌঁড়ে চলে এই সড়ক।

কোথাও ইংলিশ, কোথাও আরব, থাই আবার কোথাও বা ভারতীয় কিংবা রাশিয়ান। তরুণীরা যেন পর্যটকদের অপেক্ষায়। পর্যটকরাই যে লক্ষ্মী।

রয়েছে ভারতীয় মুজরা বা তৃতীয় লিঙ্গের বিনোদনও। এভাবে ভিন্ন ভিন্ন বর্ণ, সংস্কৃতি আর ভাষাভাষিদের অফুরন্ত আনন্দের সম্ভার নিয়ে পর্যটকদের কাছে হাজির এই সৈকত নগরী।

প্রয়োজনটা কেবল জানতে চাওয়া। তারপর বিনোদন আর মাস্তির সব বাণিজ্যের ডালাই খুলে বসে আছে পাতায়া।

একদিকে মানবীয় রূপ, অনদিকে অসাধারণ প্রকৃতির সৌন্দর্য। সঙ্গে প্যারাগ্লাইডিং, সি-বাইক, স্কুবা ড্রাইভিংসহ বাঘ বা কুমিরের সঙ্গে সেলফি- সবই মিলবে এখানে। এক কথায় রোমাঞ্চকর।

যৌবনের উন্মাদনাই এখানে শেষ কথা। যৌবন না থাকলেও সমস্যা নেই। ক্ষণিকের জন্যে ফিরিয়ে আনার সব কৌশলই জানা আছে পাতায়ার।

নেশা ধরানো নানা দেশের মেয়েদের গো গো শো’। এমন সব বিনোদন মূর্ছনার সকল আয়োজনে এখানে হারিয়ে গেছে বোমার শব্দ।

মাত্র সপ্তাহ দুয়েক আগের ঘটনা। থাইল্যান্ডের পর্যটন শহর হুয়া হিনসহ চারটি স্থানে ফাটলো সিরিজ বোমা।

দক্ষিণাঞ্চলীয় ত্রাং ও সুরাট থানি প্রদেশ, বাদ পড়েনি ফুকেটও। নিহত চারজন। আহতদের মধ্যে ছিলেন জার্মানি, ইতালি, নেদারল্যান্ডস ও অস্ট্রিয়ার নাগরিক।

কিছুদিন পর পরই বোমায় কেঁপে ওঠে থাইল্যান্ডে। শিরোনামে খবর হয়ে উঠে আসে বিশ্বে। গত বছরের বিস্ফোরণের ক্ষতটাও মোছেনি এখনো।

২০১৫ সালের ১৭ আগস্ট থাইল্যান্ডের একটি পর্যটন এলাকায় স্মরণকালের  সবচেয়ে ভয়াবহ বোমা হামলায় ২০ জন নিহত হন। নিহতদের বেশিরভাগই ছিলেন চীনের নাগরিক।

তারপরও কি দেশটিতে আসা চীনা পর্যটকদের সংখ্যা কমে গেছে? উত্তরটা এক কথায় না। নিরাপত্তার নামে বাড়াবাড়ি নেই এখানে। পাতায়ার সস্তা দরের হোটেলগুলো দেখে বলাই যায়, কমেনি, বরং বেড়েছে, আরো বাড়বে।

কারণ, চীনারা জানেন- সন্ত্রাস আর বোমাবাজির ঢেউটা এখন এশিয়া থেকে ইউরোপ হয়ে যুক্তরাষ্ট্রেও আছড়ে পড়েছে।

‘তাই বলে কি থেমে থাকবে জীবনের আনন্দ? মোটেই না’- ওয়াকিং স্ট্রিটের প্রবেশমুখে বাংলানিউজকে এ কথাই বলছিলেন থাইল্যান্ড টুরিস্ট পুলিশের স্বেচ্ছাসেবক আলেক্স।

কথা বলার আগে নিশ্চিত হতে চাইলেন সাংবাদিক পরিচয় নিয়ে। পরে বাংলানিউজের পরিচয়পত্র দেখে কথার শুরু।

আলেক্স ইউরোপের নাগরিক। বেশ কয়েক বছর ধরেই থাইল্যান্ডে। নিজ দেশের পর্যটকদের স্বার্থ সুরক্ষায় সপ্তাহের একটি দিনে স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে কাজ করেন তিনি।

আলেক্সের কথার ফাঁকেই আনমনে ভেসে ওঠে গুলশানের চেহারাটা। হলি আর্টিজানের ক্ষত কতোটা কাটিয়ে উঠতে পেরেছে ঢাকা? মনের অগোচরে সে প্রশ্নটাই ঘুরে-ফিরে উঁকি দিয়ে  যায় থাইল্যান্ডের ঘটনা প্রবাহ!

বাংলাদেশ সময়: ০৮৩৫ ঘণ্টা, আগস্ট ২৬, ২০১৬
জেডআর/এএসআর

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।