ঢাকা, শুক্রবার, ৬ বৈশাখ ১৪৩১, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫

থাইল্যান্ড

থাইল্যান্ড থেকে জাহিদুর রহমান

কোন স্যাটার ডে, সান ডে নেই!

জাহিদুর রহমান, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১১১৫ ঘণ্টা, আগস্ট ২০, ২০১৬
কোন স্যাটার ডে, সান ডে নেই!

পাতায়া (থাইল্যান্ড) থেকে: ‘প্রবাসে সৎভাবে বেঁচে থাকতে হলে অনেক মেহনত করতে হয়। মাথার ঘাম পায়ে ফেলতে হয়।

আমার মতো মানুষদের কোন স্যাটার ডে, সান ডে নেই। ’

বলছিলেন প্রায় তিন যুগ আগে থাইল্যান্ডে পাড়ি জমানো ব্যবসায়ী মাহবুব আলম তালুদার (৫০)। প্রবাসীদের কাছে ডাক নামে যার পরিচয় ‘ডন’। জন্ম বরিশালের পুরানপাড়ায়। পাঁচ ভাই,তিন বোনের মধ্যে মেঝো। বাবা আমান উল্লাহ তালুকদার ছিলেন বাংলাদেশ বিমানের সেলস অ্যান্ড পারচেজ বিভাগের সিনিয়র অফিসার। সেই সুবাদে বেড়ে ওঠা রাজধানীর মোহাম্মদপুরের বাবর রোডের বিজলী মহল্লায়।
১৯৮০ সাল। ভাগ্য অন্বেষণে থাইল্যান্ডে আসেন তিনি। রাতের অাঁধারে জেগে ওঠা শহর পাতায়ার সৌন্দর্যে মুগ্ধ হয়ে শেকড় গাড়েন এই নগরীতেই। পেটেভাতে। তিন বেলা খাওয়া ও থাকার সুবিধার বিনিময়ে প্রবাসে তার কর্ম জীবনের সূচনা হয় একটি ভিনদেশী দর্জির দোকান থেকে। তারপর নিজের মেধা ও যোগ্যতায় এই শহরে স্বতন্ত্র অবস্থান গড়ে তোলেন তিনি।

হানিমুন সিটি পাতায়ায় রাতের গভীরতার সাথে বাড়তে থাকে আলোর ঝলকানি। যেখানে পর্যটকদের উন্মাদনার তালে তালে চলে সংগীতের মূর্ছনা। সমুদ্রতীরের এই ছিমছাম শহরটি বরাবরই পর্যটকদের কাছে বিনোদনের স্বর্গরাজ্য। ভারত মহাসাগরের উত্তর-পূর্বের উপকূলীয় এলাকায় থাইল্যান্ডের পাতায়ায় গড়ে প্রতিদিন ভিড় করেন ১০ হাজারের বেশি পর্যটক।

সৈকতে কক্সবাজারের মতো বিশাল ঢেউ নেই। তবে পর্যটকদের নিরাপত্তা আর ডিস্কো, পাব, গোগো ক্লাব উন্মাদনাময় নানা আয়োজন গোটা রাতই মাতিয়ে রাখে এই শহরকে।
সেই শহরে প্রথমে টেইলারিং,রেস্টুরেন্টসহ নানা ব্যবসার সূচনা করলেও চারটি পাঁচ তারকা হোটেলে রয়েছে তার টেইলারিং ব্যবসা। দোকান, কারখানা মিলে রয়েছে অর্ধ শতাধিক কর্মচারী।

প্রায় তিনযুগ দেশটিতে থেকে দেশটির অর্থনৈতিক উন্নয়ন কর্মকাণ্ডে থেকেও আক্ষেপ আর কষ্ট ছাড়েনি তার।

মাহবুব আলম তালুদার বাংলানিউজকে জানান, শিক্ষার্থী ছাড়া বড়জোড় হাজার খানেক বাংলাদেশি বাস করে দেশটিতে। এখন ইউরোপের পর্যটকদের আনাগোনা কম। তাই ব্যবসাটাও মন্দা। কিন্তু কাস্টমার না থাকলে কি হবে! দোকান খুলে বসে থাকতে হবে। এটাই নিয়ম।

নিজের কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, ইউরোপ বা আমেরিকায় ৫ থেকে ১০ বছর বসবাস করলেই নাগরিকত্ব মেলে। এখানে সেটা সম্ভব না। আমাদের ওয়ার্ক পারমিট নিয়েই থাকতে হয়। ফি বছর উচ্চ ফি দিয়ে ভিসা নবায়ন করতে হয়। সেটার খরচ কখনো ৭০ হাজার থেকে গড়ায় এক লাখ টাকায়।

অনেকে ভিসা নবায়ন করতে না পেরে দেশে গিয়ে আর ফিরতে পারেননি। দেখা গেলো তাকে ভিসাই দেয়া হলো না। তখন এখানে তিল তিল করে গড়ে ওঠা সবকিছুকেই জলাঞ্জলি দিতে হয়।

এমন ঘটনার অসংখ্য উদাহরণ আছে। বিষয়টি আমরা এ্যাম্বাসিকেও জানিয়েছি।
সবকিছু মিলিয়ে পরিবার ছেড়ে এই প্রবাসে থাকা যে কতটা কষ্টের তা কেবল ভুক্তভোগীরাই জানে।

সবাই দেখে অর্জন। দেশে পাঠানো রেমিটেন্স। কিন্তু বিনিময়ে নীরব কষ্টগুলোই বা দেখে ক'জনা!

*বাংলানিউজের জাহিদ এখন ব্যাংককে

বাংলাদেশ সময়: ১১১৩ ঘণ্টা, আগস্ট ২০, ২০১৬
আরআই

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।